চিন্না পিল্লাই
চিন্না পিল্লাই একজন ভারতীয় গ্রামীণ সমাজকর্মী, যিনি নিজের উদ্যোগে একটি সফল ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা শুরু করে স্থানীয় মহিলাদের মহাজনের ঋণের জাল এবং অপরিসীম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখিয়েছেন[১]। গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্যে তাঁর নিরলস সংগ্রামকে স্বীকৃতি জানিয়ে ভারত সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্ব্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেন।
চিন্না পিল্লাই | |
---|---|
জন্ম | ১৯৫০-এর দশক পুল্লুচেরি, মাদুরাই, তামিলনাড়ু |
পেশা | গ্রামীণ সমাজকর্মী |
পরিচিতির কারণ | ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা শুরু |
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাচিন্না পিল্লাইয়ের জন্ম এবং বড় হওয়া তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের কাছে এক অরণ্য প্রধান অঞ্চল পুল্লুচেরিতে ১৯৫০-এর দশকে। সেই সময়ে গ্রামের বেশিরভাগ লোকেই প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ পেতেন না, চিন্না পিল্লাইও তার ব্যতিক্রম ছিলেননা। এই গ্রামের অধিকাংশ ভূমিহীন মানুষের জীবিকা ছিল অন্যের জমিতে চাষ করা। ২ কন্যা এবং ৩ পুত্র সহ চিন্না পিল্লাই এবং তাঁর স্বামী পেরুমলও একই ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সংসার চালানোর সময়েই চিন্না পিল্লাই লক্ষ্য করেন যে ভূমিহীন দিনমজুররা কীভাবে প্রয়োজনের সময় চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ঋণ শোধ করার ব্যর্থতায় তাঁরা মহাজনদের কাছে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে ক্রীতদাসে পরিণত হতে থাকেন। চিন্না পিল্লাই এই চক্র থেকে বের হয়ে আসার অথ খুঁজতে থাকেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৯০ সালে তিনি ‘ধন ফাউন্ডেশন’ এর এম পি ভাসিমালাইয়ের সংস্পর্শে আসেন যাঁর মাধ্যমে তাঁদের স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির পথ সুগম হয়। ধন ফাউন্ডেশন স্বল্প সুদের হারে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে সহায়তা করত। চিন্না পিল্লাই ধন ফাউন্ডেশনের সুবিধা বুঝতে পারলেও, অধিকাংশ মানুষই তা বুঝতে চাইতেন না তাই প্রথমদিকে তাঁকে বহু সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। তিনি দিনের বেলাতে মহিলা সহকর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় এই ব্যবস্থার সুবিধার কথা বোঝাতেন এবং রাতের বেলা কাজের শেষে অন্যান্য গ্রামে গিয়েও অর্থ জমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতেন। এইভাবেই জন্ম হয় "কালানজিয়াম" নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী; যেটি ১৫জন মহিলা মাসে ২০ টাকা অবদান দিয়ে শুরু হয়েছিল। ধন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই সঞ্চয়টি ব্যাঙ্কে রাখা হত, এবং গোষ্ঠীর কোন সদস্যের প্রয়োজনে এই টাকা থেকেই তাঁরা ঋণ নিতে পারতেন। সুদের হার ছিল বার্ষিক ৬০%, যা সাধারণ ব্যাঙ্কের সুদের হার থেকে অনেক বেশি হলেও স্থানীয় মহাজনদের ৩০০% সুদের হারের থেকে অনেক কম ছিল। এর ফলস্বরূপ, ছয় মাসের মধ্যেই, কালানজিয়াম এসএইচজি (স্বনির্ভর গোষ্ঠী) মাসে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে সক্ষম হয়েছিল। সদস্যরা তখন কেবল জরুরি অবস্থার জন্যই ঋণ নিতেন তা নয়, ধীরে ধীরে তাঁরা ব্যবসা শুরু করার জন্যেও ঋণ নিতে শুরু করেছিলেন। ১৯৯৮ সালের মধ্যে, কালানজিয়াম আন্দোলন শেষ পর্যন্ত প্রথাগত ভাবে শুরু হয়েছিল, এবং আন্দোলনের নেতারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কালানজিয়াম গোষ্ঠী ব্যাংকিংয়ের ধারণাটি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের প্রচেষ্টার কারণে, ২৯বছর পরে, এটি ১৩টি রাজ্যের ৬৩টি জেলার ২৫০টি ব্লক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ৬০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ১২ লাখ পরিবার এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। "কালানজিয়াম" অনেক দরিদ্র মহিলাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। এর উপভোক্তারা অনেকেই নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করতে, বিবাহ দিতে এবং পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য হাসপাতালের ব্যয় মেটাতে সক্ষম হয়েছিল কালানজিয়ামের মাধ্যমে। এই স্বনির্ভর প্রকল্পে গর্ভবতী মহিলাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং বর্তমানে "কালানজিয়াম" এর মাধ্যমে মাদুরাইয়ে তিনটি এবং সালেমে একটি "সুগম" হাসপাতাল পরিচালনা করা হয়।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
সম্পাদনাচিনা পিল্লাই ১৯৯৯ সালে নারী শক্তি পুরস্কার প্রাপ্ত পাঁচ মহিলার মধ্যে একজন ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের জন্য এক নিখুঁত মুহুর্তে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে এই পুরস্কার প্রদানের সময় সম্মানের সাথে মাথা নিচু করে তাঁর চরণস্পর্শ করেছিলেন[২]।
২০০১ সালে তিনি জানকীদেবী বাজাজ পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৮ সালে তামিলনাড়ু সরকারের দ্বারা আভাইয়ার পুরস্কারেও ভূষিত হন তিনি।
২০১৯ সালে ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তাঁর অবদানের জন্যে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে[৩]।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Dharmaraj, Vidyashree (২৩ মার্চ ২০০২)। "Woman Achiever"। The Hindu। ২৮ নভেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৩।
- ↑ Rajachandrasekaran, Anitha (৫ মার্চ ২০০৫)। "On an EQUAL footing"। The Hindu। ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩।
- ↑ "Padma Awards 2019 Announced: Full list of awardees"। The NEWS Minute। ২৫ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৯।