তারিখ-ই-বঙ্গালাহ মুন্‌শি সলিমউল্লাহ রচিত একটি ইতিহাস গ্রন্থ যা বাংলার ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র বলে বিবেচিত। গ্রন্থটি আনুমানিক ১৭৬৩ সালে এবং ফার্সি ভাষায় রচিত। এ গ্রন্থে বাংলার সুবাদার ইব্রাহিম খানের (১৬৮৯ - ১৬৯৮) সময় থেকে নবাব আলিবর্দী খানের (১৭৪০ - ১৭৫৬) সময় পর্যন্ত বাংলা ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায়।

মুন্সি সলিমুল্লাহ একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলার নাযিম ও ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গের শাসনকর্তার অধীনে চাকরি করায় সরকারি বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ দেখার সুযোগ হয়। অবশিষ্টাংশ প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে শুনে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।

এই গ্রন্থে বাংলার অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার বর্ণনা দেন। মুর্শিদকুলী খানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,সততা ও সুবিচারের প্রশংসা করেন৷ অত্যাচারী জমিদার ও কর আদায়কারীদের সমালোচনা করেন। দলদস্যু ও বর্গীদের দমনের নিমিত্তে নবাব আলীবর্দী খান তাঁর ১৭ বছরের নাতী সিরাউদ্দৌলাকে নিয়ে বাংলার মাঠ-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য এই গ্রন্থে তিনি ফুটিয়ে তুলেন৷

এছাড়াও এই গ্রন্থে তিনি মুঘল সম্রাজ্যের পতনমুখ, নবাবাদের বিপর্যয়,ইংরেজ শক্তি বাংলায় প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি বিষয়াবলী সবিস্তারে উল্লেখ করেন।ফার্সি ভাষায় রচিত বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের এই গ্রন্থে মুঘলদের পতন পর্ব এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাথমিক পর্যায়ের শাসনের ঘটনাবলীর বিবরণও তিনি তুলে ধরেন।

বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস রচনায় তারিখে বাঙ্গালার ভূমিকা অনস্বীকার্য।