দোহার উপজেলা

ঢাকা জেলার একটি উপজেলা

দোহার বাংলাদেশের ঢাকা জেলার অন্তর্গত সর্বদক্ষিণের উপজেলা। আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় ঢাকা জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হিসেবেও পরিচিত (১২১.৪১ বর্গ কিলোমিটার)। দোহার উপজেলা ১৯১৭ সালের ১৫ই জুলাই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার পর ১৯১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে দোহার উপজেলা, তৎকালীন দোহার থানার কার্যক্রম শুরু হয়।[]

দোহার
উপজেলা
মানচিত্রে দোহার উপজেলা
মানচিত্রে দোহার উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৫′৪৩″ উত্তর ৯০°৭′৩৫″ পূর্ব / ২৩.৫৯৫২৮° উত্তর ৯০.১২৬৩৯° পূর্ব / 23.59528; 90.12639 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাঢাকা জেলা
সরকার
 • ধরণউপজেলা পরিষদ
 • চেয়ারম্যানআলমগীর হোসেন
আয়তন
 • মোট১২১.৪১ বর্গকিমি (৪৬.৮৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট২,২৬,৪৩৯
 • জনঘনত্ব১,৯০০/বর্গকিমি (৪,৮০০/বর্গমাইল)
 নেতার_দল =
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড১৩৩০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ২৬ ১৮
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দোহারের মৈনটে পদ্মা নদী

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

২৩°৩১' হতে ২৩°৪১' উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০°০১' হতে ৯০°১৩' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। জেলা সদর হতে দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে পদ্মা নদীফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা, পূর্বে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলানবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ, পশ্চিমে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা, পদ্মা নদীফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

দোহার উপজেলায় ১টি পৌরসভা (দোহার পৌরসভা), ৮টি ইউনিয়ন, ৯৩টি মৌজা এবং ১৩৯টি গ্রাম রয়েছে।

দোহার উপজেলার ইউনিয়নগুলোর নাম হচ্ছে

  1. নয়াবাড়ি ইউনিয়ন
  2. কুসুমহাটি ইউনিয়ন
  3. রাইপাড়া ইউনিয়ন
  4. মাহমুদপুর ইউনিয়ন
  5. সুতারপাড়া ইউনিয়ন
  6. নারিশা ইউনিয়ন
  7. মুকসুদপুর ইউনিয়ন
  8. বিলাশপুর ইউনিয়ন

জনসংখ্যা

সম্পাদনা

মোট জনসংখ্যা ২,২৬,৪৩৯ জন (প্রায়)।

যার মধ্যে রয়েছে:

  • পুরুষ ১,০৭,০৪১ জন (প্রায়)।
  • মহিলা ১,১৯,৩৯৮ জন (প্রায়)।
  • লোক সংখ্যার ঘনত্ব ১,৪০২ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)।
  • মোট ভোটার সংখ্যা ১,৫১,৭৭০ জন।
  • পুরুষভোটার সংখ্যা ৭৩,১২০ জন।
  • মহিলা ভোটার সংখ্যা ৭৮,৬৫০ জন।
  • বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০%।
  • মোট পরিবার(খানা) ৪৯,৪০০ টি।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ব্রিটিশ ভারত ও পূর্ববর্তী সময়ে এখানকার জয়পাড়া সহ অনেক স্থানে নীল চাষ করা হতো। কালের পরিক্রমায় নীল চাষের বিলুপ্তি ঘটে।[]

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তি হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে দোহার উপজেলার মাটি ও মানুষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধে দোহারের বিপুলসংখ্যক অধিবাসী আত্মত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হচ্ছেন বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা (বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক), আমির হোসেন (বীর প্রতীক) প্রমূখ।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে (১৯২০-১৯২২) গান্ধীর আদর্শে এখানে গড়ে তোলা হয় অভয় আশ্রম। ১৯৪০ সালে মালিকান্দা নামক গ্রামে গান্ধী সেবা সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সম্মেলনে এখানে আগমন ঘটে মহাত্মা গান্ধীর। তিনি দুই দিন এখানে অবস্থান করেন।[] তার স্মৃতি রক্ষায় এখানকার একটি সড়কের নামকরণ করা হয় 'গান্ধী সড়ক' নামে। এছাড়া মালিকান্দায় অবস্থিত অভয় আশ্রমের নামকরণ করা হয় মহাত্মা গান্ধীর নামে।

শিক্ষা

সম্পাদনা
প্রতিষ্ঠানের ধরণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা
উচ্চ বিদ্যালয় ১৬টি
নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ০৪টি
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০১টি
কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ (স:) ০১টি
উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ০৪টি
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ০২টি
আলিয়া মাদ্রাসা ০১টি
দাখিল মাদ্রাসা ০৩টি
কওমী হাফিজিয়া ও অন্যান্য মাদ্রাসা ২৮টি
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪২টি
রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয় ০৮টি
কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ০৬টি
এবতেদায়ী মাদ্রাসা ০১টি
উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রা: বিদ্যা: ১১টি
বেসরকারী কেজি স্কুল ৮টি
দোহার উপজেলায় উল্লেখযোগ্য উচ্চ বিদ্যালয় সমূহ–
  • কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
  • জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
  • বেগম আয়শা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
  • ইকরাশি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
  • লটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়।
  • মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল ও কলেজ।
  • মুকসুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
  • বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।

স্বাস্থ্য

সম্পাদনা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৬টি, বেডের সংখ্যা ৫০টি, ডাক্তারের মঞ্জুরীকৃত পদ সংখ্যা ৩৭টি, কর্মরত ডাক্তারের সংখ্যা ইউএইচসি ১৭, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৬, ইউএইচএফপিও ১টি। সিনিয়র নার্স সংখ্যা ১৫ জন। কর্মরত ১৩ জন, সহকারী নার্স সংখ্যা ১ জন।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

দোহার উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নুরুল্লাহপুর ওরস শরীফ এর মেলা সুন্দরীপাড়া, মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট, মিনি পতেঙ্গা নামে পরিচিত পদ্মাপাড়ের বাহ্রাঘাট, কোঠাবাড়ি বিল, পদ্মাপাড়ের নারিশা, আড়িয়াল বিল (নিকড়া), ডাক বাংলো (মুকসুদপুর), দুবলী হতে নবাবগঞ্জ সড়ক, সাইনপুকুর বড়বাড়ি, কাটাখালী পাক দরবার শরীফের উরস উপলক্ষে সুফি অনুসারীদের মাহফিল ও মেলা (২১ শে ফাল্গুন, ৪ঠা মার্চ) ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে বর্তমান সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাটকে পরিকল্পিত ও উন্নতমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এলাকাবাসীর নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।[]

চিত্রশালা

সম্পাদনা

অর্থনীতি

সম্পাদনা

দোহার উপজেলার অর্থনীতির বেশির ভাগ অংশই আসে রেমিটেন্স থেকে। এখানকার কর্মরত বিশালসংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। দ্বিতীয় প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। আড়িয়াল বিল ও কোঠাবাড়ি বিলের বিশাল ভূমি জুড়ে ধান, গম, পেয়াজ, আলু, সরিষা ও টমেটো চাষ করা হয়। দোহারে প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা জয়পাড়ায় মাত্র এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ১৫টিরও অধিক সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক। এছাড়া মেঘুলা, ফুলতলা, পালামগঞ্জ ও কার্ত্তিকপুরে কিছু ব্যাংক রয়েছে। এছাড়াও দোহারের অর্থনীতি নির্ভর করে তাঁত শিল্প, নানাবিধ কুটিরশিল্প ও পদ্মানদীকে কেন্দ্র করে মৎস্য শিকার করার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পদ্মানদীর পাড়ে সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

তাঁত শিল্পে দোহারের একসময় সমৃদ্ধ অতীত ছিল। এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে দোহার ও পাশ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলোতে। এখানকার তাঁতে শুধু লুঙ্গি তৈরি হয়, দোহারের লুঙ্গির দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। হস্তচালিত তাঁতে তৈরি করা লুঙ্গি "জয়পাড়ার লুঙ্গি" বা "রুহিতপুরি লুঙ্গি" হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। হস্তচালিত তাঁতের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পাওয়ারলুম কারখানা রয়েছে, এসব কারখানায় অধিক পরিমাণে লুঙ্গি তৈরি হয়।

বিশেষত্ব

সম্পাদনা

দোহারের তাঁত শিল্পের অনেক সুনাম রয়েছে। দোহারের জয়পাড়া লুঙ্গি সারাদেশ ব্যাপি সুনাম অর্জন করেছে, যার চাহিদা বিদেশেও আছে। বৃহত্তর বিক্রমপুর এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দোহারের মিষ্টিরও বেশ সুনাম রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা

দোহার ২৩°৩৫′৪৫″ উত্তর ৯০°০৭′২০″ পূর্ব / ২৩.৫৯৫৮° উত্তর ৯০.১২২২° পূর্ব / 23.5958; 90.1222--এ অবস্থিত। এখানে ৩১,৬৪৫টি পরিবার আছে এবং মোট এলাকা ১৬১.৪৯  কিমি2 বাংলাদেশের বৃহত্তম নদীগুলির মধ্যে একটি, পদ্মা, দোহারের দক্ষিণ, দক্ষিণ মধ্য-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এই উপজেলাটির সীমানা নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রী নগর এবং সিরাজদিখানের একটি ছোট অংশ (পূর্বে বিক্রমপুর নামে পরিচিত) নিয়ে গঠিত। উত্তর পাশে মানিকগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিম দিকে পদ্মা নদী/ফরিদপুর জেলা।

প্রশাসন

সম্পাদনা

দোহার উপজেলা দোহার পৌরসভা এবং আটটি ইউনিয়ন পরিষদে বিভক্ত: বিলাসপুর, কুশুমহাটি, মাহমুদপুর, মুকসুদপুর, নারিশা, নয়াবাড়ি, রায়পাড়া এবং সুতারপাড়া। ইউনিয়ন পরিষদগুলো ৯১টি মৌজা ও ১৩৩টি গ্রামে বিভক্ত।

দোহার পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড এবং ২৬ টি মহল্লায় বিভক্ত।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে দোহার উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৫ 
  2. "দোহার উপজেলা"dohar.dhaka.gov.bd। ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. "দোহার উপজেলা"banglapedia। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  4. "দোহার উপজেলার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী"Banglapedia। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. "মৈনটে বিদেশী বিনিয়োগকারী নিয়ে সালমান এফ রহমান"news39। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "District Statistics 2011: Dhaka" (পিডিএফ)Bangladesh Bureau of Statistics। ১৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা