নিউক্লীয় বন্ধন শক্তি
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি হচ্ছে সেই শক্তি যেটা কোনো পরমাণুকে তার উপাদানগুলোয় বিভাজিত করতে প্রয়োজন হয়। এই উপাদান অংশকগুলো হল নিউট্রন এবং প্রোটন। এদেরকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলা হয়। নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তির কারণ নিউক্লিয়নগুলোর একে অপরের সাথে আকর্ষণ বল এবং সাধারণত নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রনকে আলাদা করতে প্রয়োজনীয় শক্তি একটি ধনাত্মক মান। একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ভর এদের প্রোটন ও নিউট্রনের পৃথক পৃথক ভরের সমষ্টি অপেক্ষা কম (আইনস্টাইনের ভরশক্তি সমীকরণ E=mc2 অনুসারে)। এই হারানো ভরটুকুকে পদার্থবিজ্ঞানে বলা হয় ভর ত্রুটি এবং এটি নিউক্লিয়াস গঠনের সময়ে বিমুক্ত শক্তির বর্ণনা করে।
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলতে শক্তির ভারসাম্য রক্ষাও বোঝায় যে প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস ভেঙে এক বা একাধিক নিউক্লিয়নে পরিণত হয়। যখন হালকা নিউক্লিয়াসের গলন হয় অথবা ভারী নিউক্লিয়াসের ভাঙন হয় উভয় প্রক্রিয়াতেই এই বন্ধন শক্তি উন্মুক্ত হতে পারে। এই শক্তি নিউক্লিয় শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা বিদ্যুৎ উৎপাদনে বা নিউক্লিয় অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। যখন কোনো বড় পরমাণু ছোট ভাগে ভেঙে যায়, অতিরিক্ত শক্তি ফোটনের (গামা রশ্মি) আকারে এবং নিক্ষিপ্ত বিভিন্ন কণাসমূহের গতিশক্তি হিসেবে নির্গত হয় (নিউক্লিয় ফিশনের উৎপাদ)।
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি এবং বলসমূহ হাইড্রোজেনের মত হালকা পরমাণুর ইলেকট্রন বন্ধন শক্তির চেয়ে ১০ লক্ষ গুণ বেশি।[১]
একটি নিউক্লিয়াসের ভরত্রুটি হচ্ছে ঐ নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি। এটি হল নিউক্লিয়াসের ভর এবং নিউক্লিয়নগুলোর ভরসমষ্টির পার্থক্য।
ভূমিকা
সম্পাদনানিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নিয়মগুলো দিয়ে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তির ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
নিউক্লিয় শক্তি
সম্পাদনাপারমাণবিক বিক্রিয়া বা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ে নিউক্লিয় শক্তি নির্গত বা শোষিত হয়। যেক্ষেত্রে শক্তি শোষিত হয় তাদের অন্তঃতাপীয় প্রক্রিয়া এবং যেসব ক্ষেত্রে শক্তি নির্গত হয় তাদের বহিঃতাপীয় প্রক্রিয়া বলা হয়। প্রবেশকৃত এবং নির্গত কণাদের কারণে নিউক্লিয় রূপান্তরে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তির পার্থক্যের ফলে শক্তি শোষিত বা বিমুক্ত হয়। [২]
সর্বাধিক পরিচিত বহিঃতাপীয় নিউক্লিয় রূপান্তর ফিশন এবং গলন (ফিউশন)। ইউরেনিয়াম প্লুটোনিয়ামের মত ভারী পরমাণুর পারমাণবিক ভেঙে হালকা নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট পরমাণুতে পরিণত হওয়ার সময় নিউক্লিয় শক্তি বিমুক্ত হয়। বিশ্বব্যাপী শতাধিক স্থানে ফিশন থেকে প্রাপ্ত শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয়। পারমাণবিক গলনেও নিউক্লিয় শক্তি বিমুক্ত হয়। এক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের মত হালকা একাধিক নিউক্লিয়াস সংযুক্ত হয়ে অপেক্ষাতর ভারী নিউক্লিয়াস (যেমন, হিলিয়াম) গঠন করে। সূর্য এবং অন্যান্য তারাগুলোও ঠিক এই প্রক্রিয়াতেই শক্তি উৎপন্ন করে যা পরবর্তীতে নক্ষত্রপৃষ্ঠ থেকে তাপীয় শক্তি হিসেবে বিকিরিত হয়। এটা এক ধরনের নাক্ষত্রিক নিউক্লিয় সংশ্লেষণ। যেকোনো নিউক্লিয় প্রক্রিয়ায়, ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা তাপ হিসেবে পাওয়া যায়।
কোনো নিউক্লিয় রূপান্তরে বিমুক্ত বা শোষিত শক্তির পরিমাণ হিসেব করতে অবশ্যই রূপান্তরে অংশ নেয়া নিউক্লিয় অংশক উপাদানগুলোর নিউক্লিয় বন্ধন শক্তির মান জানতে হবে।
নিউক্লিয় বল
সম্পাদনাইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াস একে অপরকে স্থিরতাড়িত আকর্ষণের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। তাছাড়া, ইলেকট্রন কখনো কখনো অন্য নিউক্লিয়াসের সাথেও আকর্ষণ করে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে। আবার মাঝে মাঝে অন্য পরমাণুতে স্থানান্তরিতও হয়। এর ফলে পরমাণুদের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়। রাসায়নিক যৌগের জন্য দায়ী এই রাসায়নিক বন্ধন।
নিউক্লিয়াসের পদার্থবিজ্ঞান
সম্পাদনাভর ত্রুটি
সম্পাদনাসৌর বন্ধন শক্তি
সম্পাদনানিউক্লিয়াসের মিশ্রণ
সম্পাদনানিউক্লিয় বন্ধন শক্তি
সম্পাদনানিউক্লিয় গলন
সম্পাদনাসর্বোচ্চ বন্ধন শক্তি এবং ক্ষয়ের মাধ্যমে এটি অর্জন
সম্পাদনানিউক্লিয় বন্ধন শক্তি নির্ণয়
সম্পাদনাভর ত্রুটি থেকে শক্তির রূপান্তরের সংরক্ষণশীলতা
সম্পাদনাযদি কোন নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা N এবং প্রোটন সংখ্যা Z হয় ও মোট ভরসংখ্যা A (=N+Z) হয় এবং প্রোটনের ভর MP ও নিউট্রনের ভর MN হয়, তবে বন্ধন শক্তি হবে:
E = Δmc² = [A-(MP+MN)]c²
যেখানে, Δm = ভর বিচ্যুতি বা mass defect ও c = আলোর বেগ (৩×১০৮ মিটার/সেকেন্ড)।
ফিশান এবং ফিউশন
সম্পাদনাপরমাণুর বন্ধনশক্তি
সম্পাদনানিউক্লিয় বন্ধন শক্তির লেখচিত্র
সম্পাদনাবন্ধন শক্তি এবং নিউক্লিয়াসের ভর
সম্পাদনানিউক্লিয় বন্ধন শক্তির প্রাকগবেষণামূলক সূত্র
সম্পাদনানিউক্লিয়াসের ভর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পরিমাপের উদাহরণ-মান
সম্পাদনাnuclide | Z | N | mass excess | total mass | total mass / A | total binding energy / A | mass defect | binding energy | binding energy / A |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
n | 0 | 1 | 8.0716 MeV | 1.008665 u | 1.008665 u | 0.0000 MeV | 0 u | 0 MeV | 0 MeV |
1H | 1 | 0 | 7.2890 MeV | 1.007825 u | 1.007825 u | 0.7826 MeV | 0.0000000146 u | 0.0000136 MeV | 13.6 eV |
2H | 1 | 1 | 13.13572 MeV | 2.014102 u | 1.007051 u | 1.50346 MeV | 0.002388 u | 2.22452 MeV | 1.11226 MeV |
3H | 1 | 2 | 14.9498 MeV | 3.016049 u | 1.005350 u | 3.08815 MeV | 0.0091058 u | 8.4820 MeV | 2.8273 MeV |
3He | 2 | 1 | 14.9312 MeV | 3.016029 u | 1.005343 u | 3.09433 MeV | 0.0082857 u | 7.7181 MeV | 2.5727 MeV |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Dr. Rod Nave of the Department of Physics and Astronomy (জুলাই ২০১০)। "Nuclear Binding Energy"। Hyperphysics - a free web resource from GSU। Georgia State University। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১১।
- ↑ "Nuclear Energy"। Energy Education is an interactive curriculum supplement for secondary-school science students, funded by the U. S. Department of Energy and the Texas State Energy Conservation Office (SECO)। U. S. Department of Energy and the Texas State Energy Conservation Office (SECO)। জুলাই ২০১০। ২০১১-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১০।