পর্তুগাল
পর্তুগাল (পর্তুগিজ: República Portuguesa) দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এছাড়াও দুইটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণাধীন; এগুলি হল আসোরেস দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ, যারা উভয়েই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। লিসবন পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
পর্তুগীজ প্রজাতন্ত্র República Portuguesa | |
---|---|
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | লিসবন |
সরকারি ভাষা | পর্তুগিজ1 |
সরকার | Parliamentary democracy |
Marcelo Rebelo de Sousa | |
António Costa | |
Formation ২৪ জুন ১১২৮ | |
২৪ জুন ১১২৮ | |
• Kingdom | ২৫ জুলাই ১১৩৯ |
• Recognized | ৫ অক্টোবর ১১৪৩ |
• Republic | ৫ অক্টোবর ১৯১০ |
২৫ এপ্রিল ১৯৭৪ | |
• পানি (%) | ০.৫ |
জনসংখ্যা | |
• জুলাই ২০০৭ আনুমানিক | ১০,৬৪২,৮৩৬ (৭৫তম) |
• ২০২১ আদমশুমারি | ১০,৩৪৩,০৬৬ |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৬ আনুমানিক |
• মোট | $229.881 billion (40th) |
• মাথাপিছু | $23.464 (2007) (34th) |
মানব উন্নয়ন সূচক (2006) | 0.904 ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · 28th |
মুদ্রা | Euro (€)2 (EUR) |
সময় অঞ্চল | WET3 |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি0 (WEST) |
কলিং কোড | 351 |
ইন্টারনেট টিএলডি | .pt4 |
|
পর্তুগাল মোটামুটি আয়তাকৃতির। এর উত্তরের ভূমি পর্বতময় ও সবুজে ছাওয়া; এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া শীতল। এই অঞ্চলটি, বিশেষ করে দোউরু নদীর উপত্যকা আঙুরক্ষেতের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে পর্তুগালের বিখ্যাত পোর্ট ওয়াইনের জন্য আঙুর উৎপাদিত হয়। পর্তুগালের মধ্য ও দক্ষিণ ভাগ উষ্ণতর এবং শুষ্কতর। এখানে আঙ্গুর ছাড়াও গম ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য উৎপাদিত হয়। এখানে কর্ক, ওক ও জলপাই গাছও জন্মে। দেশের একেবারে দক্ষিণে আলগার্ভে নামের অঞ্চলটি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত রৌদ্রোজ্জ্বল বেলাভূমির জন্য পরিচিত।
পর্তুগাল খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। দৌরু নদীর মোহনায় অবস্থিত প্রাক্তন রোমান বসতি পোর্তুস কালে থেকে পর্তুগাল নামটি এসেছে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান শাসনের অবসানের পর ইউরোপের অভ্যন্তরভাগ থেকে জার্মানীয় জাতির লোকেরা এসে পর্তুগাল শাসন করে। এরপর উত্তর আফ্রিকা থেকে মুসলমানেরা এসে দেশটি দখল করে। এরপর এলাকাটি স্পেনীয় রাজাদের অধীনে আসে। ১২শ শতকে পর্তুগাল একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়।
১৫শ শতকে পর্তুগাল ইউরোপের প্রধান সমুদ্রাভিযান কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর পর্তুগিজ নাবিকেরা বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে যান এবং বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। এই নাবিকদের সহায়তায় পর্তুগাল ইউরোপের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের উপনিবেশ ছিল। বর্তমানে পর্তুগিজ ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষার একটি, যা তার অতীতের বিশাল সাম্রাজ্যের পরিচয়বহ। ১৬শ শতকের শেষ নাগাদ পর্তুগালের শক্তি ও সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং দেশটি তার বেশির ভাগ এশীয় উপনিবেশ হারায়। পর্তুগাল তার বৃহত্তম উপনিবেশ ব্রাজিলের উপর ১৯শ শতক পর্যন্ত এবং তার বিশাল আফ্রিকান সাম্রাজ্যের উপর ২০শ শতক পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। পর্তুগালের অধীনে বিশ্বের এক বিশাল স্থলভাগ থাকলেও এটি ইউরোপের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি।
১৯১০ সাল পর্যন্ত পর্তুগালে রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। ঐ বছর পর্তুগালে প্রথম প্রজাতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। এর পরবর্তী বছরগুলি ছিল খুব অশান্ত। ১৯২৬ সালে কু-এর মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এটি পাঁচ দশক ধরে পর্তুগাল শাসন করে। ১৯৬০-এর দশকে আফ্রিকাতে ঔপনিবেশিক যুদ্ধের কারণে পর্তুগালের সম্পদ হ্রাস পায় এবং জাতীয় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে একটি বিপ্লব ঘটে এবং একটি সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৫ সালে পর্তুগাল তার সমস্ত আফ্রিকান উপনিবেশকে স্বাধীনতা দিয়ে দেয়। ১৯৭৬ সালে প্রণীত নতুন সংবিধানে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকে পর্তুগাল ইউরোপের সাথে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং অর্থনীতির আধুনিকায়নে জোর দিয়েছে। পর্তুগাল ১৯৮৬ সালে ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে (পরবর্তীকালে যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিণত হয়) যোগদান করে এবং ১৯৯৯ সালে মুদ্রা হিসেবে ইউরো-কে গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালেই পর্তুগাল এশিয়াতে তার শেষ উপনিবেশ মাকাও-কে চীনের কাছে ফেরত দেয়।
ইতিহাস
সম্পাদনাপর্তুগালের ইতিহাস বলতে আমরা যদি শুধুমাত্র পর্তুগাল দেশটির ইতিহাসকে বুঝি তবে তার সূচনা মধ্যযুগের দ্বিতীয়ার্ধে। এর পূর্বে দেশটির সুদীর্ঘ ইতিহাস ইবেরীয় উপদ্বীপের সামগ্রিক ইতিহাসের সাথেই সংশ্লিষ্ট। কিন্তু মধ্যযুগের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই দেশটির পৃথক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে উত্থান ঘটে; ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগে তার আবিষ্কৃত ও অধিকৃত ভূখণ্ডের ক্রমাগত ব্যাপক বিস্তারের ফলে এক বিশাল সাম্রাজ্যের পত্তন হয় ও খ্রিস্টীয় ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগাল বিশ্বের একটি প্রধান শক্তি হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। কিন্তু ১৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আলকাথারকিবিরের যুদ্ধের পর থেকেই তার পতনের সূচনা ঘটে। তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা হ্রাস পায়, সম্পদে ঘাটতি দেখা দেয়, তার সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে, নৌবাহিনীরও শক্তিক্ষয় ঘটে এবং শেষপর্যন্ত তা স্পেনীয় আর্মাদার অংশে পরিণত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তার পূর্বতন মর্যাদা পুনরুদ্ধার সম্ভব হলেও ১৭৫৫ সালে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তার রাজধানী শহর ভীষণরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে নেপলিয়নীয় যুদ্ধে এবং ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে তার বৃহত্তম উপনিবেশ ব্রাজিল স্বাধীনতা ঘোষণা করলে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় নিমজ্জিত হয় ও রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায়। ১৯১০ সালে এক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটে ও প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়। কিন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, সামাজিক সংঘর্ষে দীর্ণ একটি দেশে সর্বোপরি গির্জার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই প্রজাতন্ত্রের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দীর্ঘদিন স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটে ও দেশে এক একনায়কতন্ত্রী সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই একমায়কতন্ত্রই বজায় থাকে। কিন্তু এইসময় সামরিক বাহিনী বিদ্রোহ করলে একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। পরের বছর পর্তুগাল আফ্রিকায় তার অবশিষ্ট সমস্ত উপনিবেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৮৬ থেকে এই দেশ তৎকালীন ইউরোপীয় ইকনমিক কমিউনিটি, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
রাজনীতি
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনাঅর্থনীতি
সম্পাদনাজনসংখ্যা
সম্পাদনা10.34 million (2021)
সংস্কৃতি
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ The Euromosaic study, Mirandese in Portugal ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মার্চ ২০০৭ তারিখে, europa.eu - European Commission website, accessed January 2007.