বম
বম পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নাম। বম জাতি মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক। ‘বম’ শব্দের অর্থ হলো বন্ধন। জীবনের যাবতীয় কর্ম, শিকার পর্ব, নৃত্যগীত, পানাহার, দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞ নিবেদন সবকিছুই একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে সম্পাদন করার রীতি থেকে ‘বম‘ বা ‘বন্ধন’-এর ধারণাটি এসেছে। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর থানা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় মোট ৭০টি গ্রামে বম জাতির বসবাস। বমদের সঙ্গে বাংলাদেশের মূলস্রোতের মানুষের যোগাযোগ ও জানাশোনা অতি সামান্যই। বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা ও রাখাইনরা বমদের লাঙ্গি বা লাঙ্গে বলে অভিহিত করে।
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর থানা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা ভারত এবং মায়ানমার | |
ভাষা | |
বম ভাষা | |
ধর্ম | |
খ্রিস্টান ধর্ম |
জনসংখ্যা
সম্পাদনাবম সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে বম জনসংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৮ জন। তাদের পরিবার সংখ্যা ১,৩৪৯টি। ১৯৬৬ সালে বমদের ৮৬% লোক খ্রিস্টান হয় বলে জানা যায়। ২০০১ সালে বমদের প্রায় সকলেই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। তাদের পরিবারে পিতাই হলেন প্রধান ব্যক্তি।
ইতিহাস
সম্পাদনাঅতীতে বম জনগোষ্ঠীর লোকজন নদী থেকে দূরে দুর্গম পর্বত শিখরে তাদের গ্রামগুলি নির্মাণ করত। গ্রামগুলির চারপাশে শক্ত গাছের খুঁটি পুঁতে বেষ্টনী তৈরি করা হতো। বমরা মাটিতে খুঁটি পুঁতে উঁচু পাহাড়ের উপর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তাতে বাড়িঘর নির্মাণ করে। তাদের ঘরকে মাচাং বলা হয়। মাচাং বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়।
সংস্কৃতি
সম্পাদনাসামাজিক আচার-আচরণ, বিচার সালিশ এবং বিবাদ মীমাংসার জন্য এদের নিজস্ব সামাজিক অবকাঠামো আছে। এই কাঠামো সামগ্রিকভাবে সামাজিক আচার-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বম সমাজের কেউ এ যাবৎ নিজেদের মধ্যে সংঘটিত কোন বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালত বা অন্যকোন সরকারি সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছে বলে জানা যায় না। আজও বমরা তাদের জীবন পরিচালনা করে বম কাস্টমারি ল’ গ্রন্থের নির্দেশিকা অনুযায়ী। বমদের বাঁশনৃত্য তাদের জীবনেরই অপরিহার্য অংশ। এটি পরিবেশ থেকে নেওয়া নৃত্যানুষ্ঠান। বমদের চেরাউ নৃত্য ও সঙ্গীত আসলে কোন আনন্দের বা উৎসবের নৃত্য বা গান নয়। এ নৃত্য ও গান পরিবেশিত হয় বম পরিবারের দুঃখ ও শোকের দিনে। বিশেষ করে পরিবারের কারও অকাল বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে এই গান করা হয়। শোকের সময় মানুষকে সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার এটাই বমদের রীতি।
খ্রিস্টান মিশনারিগণ বমদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু করে। তখন থেকে বমরা খ্রিস্টান হতে থাকে। ১৯৫৯ সাল থেকে ব্যাংককের বাইবেল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে লুসাই ভাষায় লিখিত বাইবেল বম ভাষায় অনুবাদের কাজ শুরু হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kim, Roy & Sangma. 2011. The Kuki-Chin Communities of Bangladesh: A sociolinguistic survey. SIL International.
Loncheu, Nathan (২০১৩)। Dena, Lal, সম্পাদক। Bawmzos: A Study Of The Chin-Kuki-Zo Tribes Of Chittagong। Akansha Publishing House। আইএসবিএন 9788183703468। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩।