মহীশূর উদ্যান
মহীশূর উদ্যান হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির একটি। উদ্যানটি চেতলা সেতুর পাশে ১১২এ টালিগঞ্জ রোডে অবস্থিত। দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্যশৈলীতে আর কারুকার্যে নির্মিত বিষ্ণু মন্দির আর নয়নাভিরাম বাগিচা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। তাছাড়া প্রবেশপথে বিশাল সুদৃশ্য তোরণ বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। কলকাতা শহরে বাংলা আর দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে মহীশূর রাজ পরিবার নির্মিত এই মন্দিরে।
মহীশূর উদ্যান | |
---|---|
ধরন | বাগিচা ও হিন্দু মন্দির |
অবস্থান | ১১২ এ,টালিগঞ্জ রোড,সাহানগর, কলকাতা-, ৭০০ ০২৬ পশ্চিমবঙ্গ, |
নিকটবর্তী শহর | কলকাতা |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩১′১২″ উত্তর ৮৮°২০′৩১″ পূর্ব / ২২.৫২০০০° উত্তর ৮৮.৩৪১৯৪° পূর্ব |
নির্মিত | ১৮৯৪ |
পরিচালিত | কলকাতা পৌরসংস্থা |
খোলা | সারাবছর |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে মহীশূরের তৎকালীন মহারাজা শ্রী চামরাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার কলকাতা এসেছিলেন ভাইসরয় লর্ড এলগিনের সঙ্গে দেখা করতে। উঠেছিলেন ১৩ নং চৌরঙ্গী রোডে মিসেস অ্যানি মঙ্কের বোডিং হাউসে, যা পরবর্তীতে গ্র্যান্ড হোটেলে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু মহারাজ চামরাজেন্দ্রের দুর্ভাগ্য এই যে, তিনি কলকাতায় আসার পরেই প্রাণঘাতী ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে সাত দিনের মধ্যেই মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন। রাজপরিবারের সদস্যরা স্থির করেন, কলকাতাতেই মহারাজের রাজকীয় আড়ম্বরে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করা হবে। সেইমত, কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পাশেই মহারাজকে দাহ করার জন্য তৎক্ষণাৎ একলপ্তে অনেকটা জমি কেনা হয়। আদিগঙ্গার ধারে তৈরি করা হল– রাজঘাট। সেই জমি সংস্কার করে তার মাঝখানে যথাযোগ্য রাজকীয় মর্যাদা ও আড়ম্বর সহকারে মহারাজের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। মহীশূরের মহারাজা চামরাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার নিজের রাজ্য ছেড়ে বহুদূরে কলকাতার কালীঘাটের পুণ্য ভূমিতে বিলীন হন। শেষকৃত্য সম্পন্ন করার পর সেই জমিতে দহন স্থলকে কেন্দ্র করে মহীশূর রাজপরিবারের নির্দেশে সুদৃশ্য বিষ্ণু মন্দির সহ বাগিচা বা মহীশূর উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা এবং রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পণ করা হল বার্ন এণ্ড কোম্পানীকে। [১]
কর্ণাটকের বেলুড় হালেবিড়ুর মন্দির হৈসল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয় কারুকার্যমন্ডিত এক বিষ্ণু মন্দির। মন্দিরের শিখরদেশে স্থাপন করা হয়েছিল একটি সোনার কলস। বিষ্ণুমন্দিরের পাশে এক শিবমন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। কথিত আছে, শিকাগো বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন থেকে ফেরার পরে স্বামী বিবেকানন্দ এই শিবমন্দিরে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, স্বামীজি দক্ষিণ ভারত পরিভ্রমণকালে মহীশূরের মহারাজা শ্রী চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ারের আতিথ্য এবং ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো যাত্রার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। মহীশূর উদ্যানের প্রবেশপথে এক বিশাল সুদৃশ্য তোরণ বাগানের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। প্রথম দিকে মহীশূর রাজ পরিবারই মহীশূর গার্ডেনের রক্ষণাবেক্ষনের ব্যয়ভার বহন করতেন এবং মহীশূরের রাণীমা নিয়মিত এই স্থানে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন। বিশ শতকের আটের দশকে মহীশূর উদ্যানের মালিকানা মহীশূর রাজপরিবারের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে হস্তান্তরিত হয়। বর্তমানে কলকাতা পৌরসংস্থা ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব নিয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সামনে থেকেও আড়ালে ভিন্ রাজ্যের রাজার স্মৃতি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০২।