মোশাররফ হোসেন (বীর প্রতীক)
মোশাররফ হোসেন (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৫২ - মৃত্যু: ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
মোশাররফ হোসেন | |
---|---|
জন্ম | ১ জানুয়ারি, ১৯৫২ |
মৃত্যু | ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামোশাররফ হোসেনের জন্ম নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার ভীমপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোবারক উল্লাহ এবং মায়ের নাম আম্বিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জাহেদা খাতুন। তাদের দুই ছেলে, এক মেয়ে।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন মোশাররফ হোসেন। মুজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণও নেওয়া ছিল তার। ২৫ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসিক এলাকায় ছিলেন। পরে ঢাকা থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় যান। সেখানে এলাকার ছাত্র-যুবক সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে তাদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। কিছুদিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরে দুই-তিনটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে তিনি মুক্তিবাহিনীর গোলন্দাজ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত আক্রমণে ফায়ারিং সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনীর দুটি গোলন্দাজ দল। দুটি ফিল্ড ব্যাটারির একটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এর নাম ছিল ‘মুজিব ব্যাটারি’। অন্যটির নাম ছিল ‘রওশন আরা ব্যাটারি’। মুজিব ব্যাটারি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘কে’ ফোর্সের অধীনে ছিল। তাদের কাছে ছিল ফিল্ড আর্টিলারি। মোশাররফ হোসেন ছিলেন মুক্তিবাহিনীর গোলন্দাজ দলের সদস্য। মুজিব ব্যাটারির ওপি হিসেবে তিনি শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আক্রমণ পরিচালিত হতো। সফলতার সঙ্গে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের বেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে যান মোশাররফ হোসেন। তার বেশভূষা দেখে সেনারা সন্দেহ করতে পারেনি। গোপনে তিনি পর্যবেক্ষণ করতেন পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। তারপর ফিরে যেতেন নিজেদের শিবিরে। শিবিরে বসে তৈরি করতেন আক্রমনের মানচিত্র। দূরত্ব হিসাব করে তা বুঝিয়ে দিতেন দলনেতার কাছে। দুই-তিন দিন পর নির্ধারিত হয় আক্রমণের সময়। তখন আবার চলে যান পাকিস্তানি অবস্থানের কাছে। এবার অবস্থান নেন উঁচু গাছে। নির্ধারিত সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে শুরু হয় গোলাবর্ষণ। গাছের ওপর বসে মোশাররফ হোসেন লক্ষ করেন সেগুলো সঠিক নিশানায় পড়ছে কি না। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দলের কাছে নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় নিখুঁত নিশানায় গোলা পড়তে থাকে। দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১১-০৩-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪১৯। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৮৬। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।