শেখ ফজলল করিম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
+ |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(২৩ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৩৪টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
{{তথ্যছক লেখক |
|||
⚫ | |||
| নাম = শেখ ফজলল করিম |
|||
| চিত্র =শেখ ফজলল করিম.jpg |
|||
| স্থানীয়_নাম = |
|||
| জন্ম_তারিখ = {{জন্ম তারিখ|1882|4|9}} |
|||
| জন্ম_স্থান = কাকিনা বাজার গ্রাম, লালমনিরহাট, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত |
|||
| মৃত্যু_তারিখ = {{মৃত্যু তারিখ ও বয়স|1936|9|28|1882|4|9}} |
|||
| সমাধিস্থল = কাকিনা, লালমনিরহাট, বাংলাদেশ |
|||
| ভাষা = [[বাংলা]] |
|||
| বাসস্থান = |
|||
| জাতীয়তা =ভারতীয় |
|||
| নাগরিকত্ব = {{পতাকা আইকন|British Raj}}[[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতীয়]] |
|||
| উল্লেখযোগ্য_রচনাবলি = ''পথ ও পাথেয়'' (১৯১৩) |
|||
''রাজর্ষি এবরাহীম'' (১৯২৪) |
|||
| পুরস্কার = |
|||
}} |
|||
{{ভাল উৎস}} |
|||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | ছোটবেলা থেকেই কবির লেখা-পড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল, এমনি কি তার যখন তিন-চার বছর তখন তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কাকিনা স্কুলে ভর্তি হন। প্রায় প্রতি বছরেই বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই ''সরল পদ্য বিকাশ'' হাতে লিখে প্রকাশ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি করা হলে তিনি তা ছেড়ে কাকিনা স্কুলে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই ১৮৯৯ সালে মাইনর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর তাকে আবারও রংপুর জেলা স্কুলে দেওয়া হলে স্কুলের বাধাধরা পড়াশোনায় মন বসাতে না পেরে তিনি সেখান থেকে আবারও ফিরে আসেন এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহী হয়ে প্রচুর বই পড়তে থাকেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বসিরন নেসা খাতুনের সাথে ফজলল করিমের বিয়ে হয়। এরপর অনেক কারণে তার স্কুল জীবনের ইতি ঘটে। |
||
⚫ | শেখ ফজলল করিম ১২৮৯ বঙ্গাব্দের (১৮৮২ সাল) ৩০ই চৈত্র বর্তমান [[লালমনিরহাট জেলা|লালমনিরহাট জেলার]]<ref name=palo>[[দৈনিক প্রথম আলো]], ১১তম পাতা, "খোলা পাতা", জন্মদিন, রোববার, ১৩ই এপ্রিল, ২০০৮।</ref> [[কালীগঞ্জ উপজেলা, লালমনিরহাট|কালীগঞ্জ উপজেলার]] কাকিনা ইউনিয়নের কাকিনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাম আমিরউল্লাহ সরদার এবং মাতার নাম কোকিলা বিবি। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলল করিম ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল '''মোনা'''।<ref name="palo"/> |
||
⚫ | ছোটবেলা থেকেই কবির লেখা-পড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল, এমনি কি তার যখন তিন-চার বছর তখন তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কাকিনা স্কুলে ভর্তি হন। প্রায় প্রতি বছরেই বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই ''সরল পদ্য বিকাশ'' হাতে লিখে প্রকাশ করেন।<ref name="palo"/> ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে [[রংপুর জেলা স্কুল|রংপুর জেলা স্কুলে]] ভর্তি করা হলে তিনি তা ছেড়ে কাকিনা স্কুলে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই ১৮৯৯ সালে মাইনর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর তাকে আবারও রংপুর জেলা স্কুলে দেওয়া হলে স্কুলের বাধাধরা পড়াশোনায় মন বসাতে না পেরে তিনি সেখান থেকে আবারও ফিরে আসেন এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহী হয়ে প্রচুর বই পড়তে থাকেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বসিরন নেসা খাতুনের সাথে ফজলল করিমের বিয়ে হয়।<ref name="palo"/> এরপর অনেক কারণে তার স্কুল জীবনের ইতি ঘটে। |
||
⚫ | |||
⚫ | কবির প্রথম বই ''সরল পদ্য বিকাশ'' তার ১২ বছর বয়সেই হাতে লিখে প্রকাশিত হয়েছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখায় মন বসাতে না পেরে তখন তিনি প্রচুর এবং বিভিন্ন রকমের বই পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনা ছাড়ার পর পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা, সংবাদপত্র পাঠে তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। এ সময় আধ্যাতিক ও সাহিত্যচিন্তা তাকে গভীরভাবে দোলা |
||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | কবির প্রথম বই ''সরল পদ্য বিকাশ'' তার ১২ বছর বয়সেই হাতে লিখে প্রকাশিত হয়েছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখায় মন বসাতে না পেরে তখন তিনি প্রচুর এবং বিভিন্ন রকমের বই পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনা ছাড়ার পর পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা, সংবাদপত্র পাঠে তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। এ সময় আধ্যাতিক ও সাহিত্যচিন্তা তাকে গভীরভাবে দোলা দিতে থাকে। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে তিনি নানা পত্রপত্রিকা, পুস্তক সংগ্রহ করতেন। সে সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে তিন ১৮৯৬ সালে নিজ বাড়িতেই করিম ''আহামদিয়া লাইব্রেরী'' নামে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি করেন। এভাবে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে তিনি অনেক ঠাট্টা উপহাসের শিকার হন কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির কারণে দূর্বার গতিতে চলতে থাকে তার সাহিত্য চর্চা। |
||
⚫ | সাহিত্যের প্রতি |
||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | সাহিত্যের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহের কারণে কর্মজীবন ফজলল করিমকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করতে পারে নি। ছোটবেলাতেই [[হোমিওপ্যাথি|হোমিওপ্যাথিক]] চিকিৎসা আয়ত্ত করেছিলেন যা তিনি কাজে লাগাতেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবায়। তিনি বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। সাহিত্য সৃষ্টি, প্রকাশনা ও সাধনার প্রতি ফজলল করিমের প্রচন্ড ইচ্ছা এবং আগ্রহ থেকে তিনি নিজ বাড়ীতে আর পীরের নামানুসারে''সাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস'' নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। |
||
⚫ | শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। পুঁথি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে। |
||
⚫ | |||
⚫ | শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। [[পুঁথি]] সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে। |
||
ফজলল করিম রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ''তৃষ্ণা'' (১৯০০), ''পরিত্রাণ কাব্য'' (১৯০৪), ''ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র'' (১৯০৪), ''ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি'' (১৯১১) অন্যতম। অন্যান্যের মধ্যে উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম। |
|||
এছাড়া প্রচারক, [[নবনূর]], [[কোহিনূর (পত্রিকা)|কোহিনূর]], বাসনা, [[মিহির ও সুধাকর]], [[ভারতবর্ষ (পত্রিকা)|ভারতবর্ষ]], [[সওগাত]], [[বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা]], আরতি, কম্পতারু শিশু সাথী, [[মোসলেম ভারত]], [[মাসিক মোহাম্মদী]], বসুমতী ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় শেখ ফজললকরিমের অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, অনুবাদ প্রকাশিত হয়। সমকালীন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে। |
|||
⚫ | |||
⚫ | |||
শেখ ফজলল করিম রচিত উল্লেখযোগ্য পদ্য |
শেখ ফজলল করিম রচিত উল্লেখযোগ্য পদ্য |
||
* সরল পদ্য বিকাশ |
* সরল পদ্য বিকাশ |
||
* |
* পরিত্রাণ কাব্য |
||
* চিন্তার চাষ |
* চিন্তার চাষ |
||
* |
* পথ পাথেয় |
||
* গাঁথা |
* গাঁথা |
||
* ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি |
* ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি |
||
[[চিত্র:Sheikh Fazlul Karim( Poet) Grave.jpg|থাম্ব| কবি শেখ ফজলল করিমের কবর]] |
|||
[[File:Sheikh Fazlul Karim(poet) Memorial Library.jpg|thumb|কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার (কবি বাড়ি)]] |
|||
== পুরস্কার == |
|||
জীবনকালেই তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। বাসনা সম্পাদনার সময় রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কিত তার একটি কবিতা পাঠ করে তৎকালীন হিন্দু সাহিত্যিকেরা তাকে ''বাংলার [[শেক্সপিয়ার]]'' আখ্যা দেন। ''পথ ও পাথেয়'' গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা তাকে সাহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। চিন্তার চাষ গ্রন্থের জন্য তিনি নীতিভূষণ, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল তাকে রৌপ্যপদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, ইত্যাদি উপাধিত ও সম্মানে ভূষিত করে। |
|||
== মৃত্যু == |
|||
তার লেখা কবিতার কয়েকটি লাইন, |
|||
১৯৩৬ সালের [[২৮শে সেপ্টেম্বর]] মধ্যরাতে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। |
|||
⚫ | |||
{{অসম্পূর্ণ}} |
|||
== তথ্যসূত্র == |
|||
⚫ | |||
{{সূত্র তালিকা}} |
|||
⚫ | |||
⚫ | |||
== বহিঃসংযোগ == |
|||
* {{বাংলাপিডিয়া|করিম, শেখ ফজলল}} |
|||
⚫ | |||
[[en:Sheikh Fazlul Karim]] |
|||
⚫ | |||
⚫ | |||
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি কবি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাঙালি কবি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর পুরুষ লেখক]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর বাঙালি কবি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:রংপুর জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলা ভাষার কবি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি পুরুষ কবি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:লালমনিরহাট জেলার ব্যক্তি]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি মুসলিম]] |
১৪:৪৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
শেখ ফজলল করিম | |
---|---|
জন্ম | কাকিনা বাজার গ্রাম, লালমনিরহাট, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | ৯ এপ্রিল ১৮৮২
মৃত্যু | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ | (বয়স ৫৪)
সমাধিস্থল | কাকিনা, লালমনিরহাট, বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | পথ ও পাথেয় (১৯১৩) রাজর্ষি এবরাহীম (১৯২৪) |
শেখ ফজলল করিম (৯ এপ্রিল ১৮৮২/বাংলা ৩০শে চৈত্র ১২৮৯ - ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৬) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তাঁর লেখা কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি:
কোথায় স্বর্গ?
কোথায় নরক?
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক
মানুষেতে সুরাসুর
শৈশব
[সম্পাদনা]শেখ ফজলল করিম ১২৮৯ বঙ্গাব্দের (১৮৮২ সাল) ৩০ই চৈত্র বর্তমান লালমনিরহাট জেলার[১] কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাকিনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাম আমিরউল্লাহ সরদার এবং মাতার নাম কোকিলা বিবি। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলল করিম ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল মোনা।[১]
ছোটবেলা থেকেই কবির লেখা-পড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল, এমনি কি তার যখন তিন-চার বছর তখন তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কাকিনা স্কুলে ভর্তি হন। প্রায় প্রতি বছরেই বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই সরল পদ্য বিকাশ হাতে লিখে প্রকাশ করেন।[১] ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি করা হলে তিনি তা ছেড়ে কাকিনা স্কুলে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই ১৮৯৯ সালে মাইনর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর তাকে আবারও রংপুর জেলা স্কুলে দেওয়া হলে স্কুলের বাধাধরা পড়াশোনায় মন বসাতে না পেরে তিনি সেখান থেকে আবারও ফিরে আসেন এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহী হয়ে প্রচুর বই পড়তে থাকেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বসিরন নেসা খাতুনের সাথে ফজলল করিমের বিয়ে হয়।[১] এরপর অনেক কারণে তার স্কুল জীবনের ইতি ঘটে।
সাহিত্য চর্চা
[সম্পাদনা]কবির প্রথম বই সরল পদ্য বিকাশ তার ১২ বছর বয়সেই হাতে লিখে প্রকাশিত হয়েছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখায় মন বসাতে না পেরে তখন তিনি প্রচুর এবং বিভিন্ন রকমের বই পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনা ছাড়ার পর পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা, সংবাদপত্র পাঠে তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। এ সময় আধ্যাতিক ও সাহিত্যচিন্তা তাকে গভীরভাবে দোলা দিতে থাকে। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে তিনি নানা পত্রপত্রিকা, পুস্তক সংগ্রহ করতেন। সে সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে তিন ১৮৯৬ সালে নিজ বাড়িতেই করিম আহামদিয়া লাইব্রেরী নামে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি করেন। এভাবে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে তিনি অনেক ঠাট্টা উপহাসের শিকার হন কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির কারণে দূর্বার গতিতে চলতে থাকে তার সাহিত্য চর্চা।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]সাহিত্যের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহের কারণে কর্মজীবন ফজলল করিমকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করতে পারে নি। ছোটবেলাতেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আয়ত্ত করেছিলেন যা তিনি কাজে লাগাতেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবায়। তিনি বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। সাহিত্য সৃষ্টি, প্রকাশনা ও সাধনার প্রতি ফজলল করিমের প্রচন্ড ইচ্ছা এবং আগ্রহ থেকে তিনি নিজ বাড়ীতে আর পীরের নামানুসারেসাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। পুঁথি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে।
ফজলল করিম রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে তৃষ্ণা (১৯০০), পরিত্রাণ কাব্য (১৯০৪), ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র (১৯০৪), ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১) অন্যতম। অন্যান্যের মধ্যে উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম।
এছাড়া প্রচারক, নবনূর, কোহিনূর, বাসনা, মিহির ও সুধাকর, ভারতবর্ষ, সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, আরতি, কম্পতারু শিশু সাথী, মোসলেম ভারত, মাসিক মোহাম্মদী, বসুমতী ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় শেখ ফজললকরিমের অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, অনুবাদ প্রকাশিত হয়। সমকালীন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে।
গদ্য ও পদ্য উভয় শাখায় তার সমুজ্জল উপস্থিতি। ভাবের গভীরতাকে সরলভাবে উপস্থাপন করা ফযলল করিমের লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে কাজ করে গেছেন।
শেখ ফজলল করিম রচিত উল্লেখযোগ্য পদ্য
- সরল পদ্য বিকাশ
- পরিত্রাণ কাব্য
- চিন্তার চাষ
- পথ পাথেয়
- গাঁথা
- ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি
পুরস্কার
[সম্পাদনা]জীবনকালেই তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। বাসনা সম্পাদনার সময় রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কিত তার একটি কবিতা পাঠ করে তৎকালীন হিন্দু সাহিত্যিকেরা তাকে বাংলার শেক্সপিয়ার আখ্যা দেন। পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা তাকে সাহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। চিন্তার চাষ গ্রন্থের জন্য তিনি নীতিভূষণ, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল তাকে রৌপ্যপদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, ইত্যাদি উপাধিত ও সম্মানে ভূষিত করে।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯৩৬ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ দৈনিক প্রথম আলো, ১১তম পাতা, "খোলা পাতা", জন্মদিন, রোববার, ১৩ই এপ্রিল, ২০০৮।