সুলতানা কামাল খুকী
ব্যক্তিগত তথ্য | |
---|---|
জন্ম নাম | সুলতানা আহমেদ |
ডাকনাম | খুকি |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
জন্ম | বকশীবাজারে, ঢাকা, পূর্ব পাকিস্থান (বর্তমান বাংলাদেশ) | ১০ ডিসেম্বর ১৯৫২
মৃত্যু | ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ২২)
মাতৃ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | মুসলিম গার্লস স্কুল গভ: ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | শেখ কামাল |
ক্রীড়া | |
দেশ | বাংলাদেশ |
ক্রীড়া | হার্ডলস, হাইজাম্প, ব্রডজাম্প |
দল | বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
সুলতানা কামাল (প্রকৃত নাম সুলতানা আহমেদ খুকি, জন্মঃ ডিসেম্বর ১০ ১৯৫২; মৃত্যুঃ আগস্ট ১৫, ১৯৭৫) বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। হার্ডলস, উচ্চলাফ এবং বিস্তৃত লাফ এই তিন ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার আগে এবং পরে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তাকেও ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষা
সুলতানা কামালের জন্ম জন্ম ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বকশীবাজারে। তার বাবা দবিরউদ্দিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়র। ১৯৬৭ সালে তিনি মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৎকালীন গভ: ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা) ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এরপর অনার্স পাশ করে ভর্তি হন এম এ ক্লাসে। এমএতে লিখিত পরীক্ষা দেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঘাতকদের বুলেটে তিনি নিহত হন।[২]
ক্রীড়াবিদ জীবন
স্কুল ও কলেজ পর্যায় বিভিন্ন আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রতিযোগিতায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজার মুসলিম গার্লস স্কুলে শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময় ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তবিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা দিয়ে তার পুরষ্কারপ্রাপ্তি শুরু।[৩] স্কুল অ্যাথলেটিকসে সবার দৃষ্টি কেড়ে পরে জাতীয় পর্যায়ে ডাক পান। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তৎকালীন পাকিস্তান অলিম্পিকে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে স্বর্ণপদক জয়লাভ করেছিলেন।[২][৪] পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।[২]
স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৭৩ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার প্রথম আসর বসে। এই আসরে মেয়েদের বিভাগে মোট নয়টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো এককভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ১০০ মিটার হার্ডলস, হাই জাম্প এবং ব্রড জাম্পে তিনি প্রথম হন। এ ছাড়া ১০০ মিটার স্প্রিন্টারে অংশ নিয়ে তিনি দ্বিতীয় হন।
১০০ মিটার হার্ডলস প্রতিযোগিতায় সুলতানা আহমেদ খুকী আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের কাজী লুৎফুন্নেসা এবং দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আরা মিমুকে (বর্তমানে শামীমা সাত্তার) পেছনে ফেলে প্রথম হন। হাইজাম্পে দিনাজপুর জেলা একাদশের ফরিদা বেগম লিলি এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সুমিত্রা রায়কে পেছনে ফেলে প্রথম হন। লংজাম্পেও সুলতানা আহমেদ প্রথম হন। তার পেছনে থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আক্তার মিমু এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের মিস হামিদা। ১০০ মিটার স্প্রিন্টারে তিনি দ্বিতীয় হন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের শামীম আরা টলির পেছনে থেকে।
৭৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাতে ব্রড জাম্পে দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আরা মিমু এবং সুফিয়াকে পেছনে ফেলে প্রথম হন সুলতানা আহমেদ। হাইজাম্পে খুলনা জেলা একাদশের মেরিনা খানমের কাছে হেরে গিয়ে দ্বিতীয় হন। এই ইভেন্টে তৃতীয় হন সিলেট জেলা একাদশের আবেদা চৌধুরী। এ বছর ১০০ মিটার হার্ডলসে অপ্রত্যাশিতভাবে শ্রেষ্ঠত্ব হারান সুলতানা কামাল। কুমিল্লা জেলা একাদশের রোকেয়া বেগমের কাছে পরাজিত হন। এই ইভেন্টে তৃতীয় হন বিটিএমসির শামীম আরা টলি।[২] ধারনা করা হয় সে সময় স্নাতক পরীক্ষা ছিল বলে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেননি।[৩]
৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। ১০০ মিটার হার্ডলসে ১৭.০৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড গড়ে প্রথম হন। তার পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন কুমিলা জেলা একাদশের রোকেয়া বেগম খুকী এবং চট্টগ্রাম জেলা একাদশের রওশন আরা রেশমি। ব্রডজাম্পে বিটিএমসির শামীম আরা মিমু এবং কুমিলা জেলা একাদশের আনারকলিকে পেছনে ফেলে প্রথম হন।[২]
বিয়ে
৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ফরিদপুরের কোনো এক পার্লামেন্ট সদস্যকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান সুলতানার বাবা দবিরউদ্দিনের কাছে। তারপর দু পরিবারের সম্মতিতে কামাল ও সুলতানার বিয়ে সম্পন্ন হয়। সুলতানা আহমেদ, ১৯৭৫ এর ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বড় ছেলে শেখ কামালের বউ হয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। এরপর থেকেই তিনি সুলতানা কামাল নামে পরিচিত।
মৃত্যু
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে স্বামী শেখ কামালসহ পরিবারের অন্যান্য ১৭ সদস্যদের সাথে খুন হন।