পার্থ প্রতিম মজুমদার
পার্থ প্রতিম মজুমদার | |
---|---|
জন্ম | প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস ১৮ জানুয়ারি, ১৯৫৪ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | মূকাভিনয় শিল্পী |
আত্মীয় |
|
পুরস্কার | একুশে পদক |
পার্থ প্রতিম মজুমদার (জন্ম: ১৮ জানুয়ারি,১৯৫৪) বাংলাদেশের মূকাভিনয় শিল্পের পথিকৃৎ। ৩৭ বছরের ফ্রান্স প্রবাসী এই মূকাভিনয় শিল্পী মূকাভিনয়ের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয়৷ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র উপাধি পান তিনি। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এ পদক পান।[১][২] তিনি মঞ্চের পাশাপাশি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তার অভিনীত একটি ফরাসি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, নিউ ইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার মূকাভিনয়ের প্রদর্শনী হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, নাইকি, আইবিএম ও ম্যাকডোনাল্ডের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানির পণ্যের প্রচারে মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে মূকাভিনয় পরিচিতি লাভ করে।[৩]
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
পার্থ প্রতিম মজুমদারের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৮ জানুয়ারি পাবনা জেলার কালাচাঁদপাড়ায়। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান৷ তাঁর বাবার নাম হিমাংশু কুমার বিশ্বাস এবং মায়ের নাম সুশ্রিকা বিশ্বাস৷ ছোট বেলায় তাঁর নাম ছিলো প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস । ডাক নাম ভীম। কন্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের বাবা পাবনার জমিদার এবং প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ বারী ণ মজুমদার ছিলেন তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারীণ মজুমদারের মেয়েটি হারিয়ে যায়। তখন মেয়ে-হারানো বারীণ মজুমদারের অনুরোধে তিনি চলে যান ঢাকার ২৮ নম্বর সেগুনবাগিচার বাসায়। তখন থেকেই তিনি পার্থ প্রতিম মজুমদার নামে পরিচিত। [৪] ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেগুনবাগিচায় ছিলেন।
শিক্ষাজীবন
প্রথম পড়াশোনা শুরু বাড়ী থেকে খানিক দুরে জুবিলী স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষের পর বড় ভাইয়েরা তাকে কাকা সুধাংশু কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে কলকাতা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চন্দননগরে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ড. শীতল প্রসাদ ঘোষ আদর্শ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিচয় হয় মূকাভিনয় বা মাইমের আর্টিস্ট যোগেশ দত্তের সাথে।[৫] তার কাছে মাইম শেখা শুরু। পার্থ প্রতিম মজুমদার ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমীতে মাইমের উপর শিক্ষাগ্রহণ করেন৷ ১৯৭২ সালে ভারতের চন্দননগর থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন৷ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা মিউজিক কলেজ থেকে স্নাতক হন৷ ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে মডার্ণ কর্পোরাল মাইমের উপর "ইকোল দ্য মাইম" নামে এতিয়েন দু্য ক্রু'র কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন৷ এরপর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মারসেল মার্সোর কাছে "ইকোল ইন্টারন্যাশনালি দ্য মাইমোড্রামা দ্য প্যারিস" এ মাইমের উপর উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন৷
কর্মজীবন
পার্থ প্রতিম মজুমদার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে মূকাভিনয় নিয়ে গৌরবমণ্ডিত করেছেন বাংলাদেশের পতাকাকে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) দুটি অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন তিনি৷ পরবর্তীকালে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪৮ বার মাইম প্রদর্শন করেন৷ এছাড়া ঢাকার ড্রামাটিক আর্টস স্কুলে মাইমের শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপের ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাইমের উপর কর্মশালা পরিচালনা করেন৷ ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালগুলোতে তিনি প্যারিসের বিভিন্ন থিয়েটারে মোট ২৬টি শো করেন। এছাড়া লন্ডনে ২টি, গ্রীসে ২টি এবং স্পেনে মাইমের ২টি শো করেন। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে মারসেল মার্সোর সাথে আমেরিকা যান এবং সেখানে মার্সোর নির্দেশনায় "ইকোল ইন্টারন্যাশনাল ডি মাইমোড্রামা ডি প্যারিস-মারসেল মার্সো" নামে একটি শো করেন৷ ১৯৮৫ সালের জুলাই মাসে পার্থ প্রতিম মজুমদার মারসেল মার্সোর কোম্পানি এবং "থিয়েটার দ্য লা স্পেহয়ার" এর সাথে যৌথ উদ্যোগে সারা ইতালিতে মাসব্যাপী "লে কারগো দ্য ক্রেপুসকুল" এবং "আবিম" নামে দুটি মাইমোড্রামা প্রদর্শন করেন৷ এবছরগুলোতেই প্যারিসে দুটি ছোট বিষয়কে নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাজির হন৷ এবং প্যরিসেই তার কাজের উপর একটি বড় ভিডিও ধারণ করা হয়৷ এসময় ফ্রান্সের টেলিভিশনে তার একটি কাজ প্রদর্শন করা হয়৷ এছাড়া লন্ডনে একটি ছোট ভিডিও ধারণসহ 'বিবিসিতে' তার একটি কাজ প্রদর্শন করা হয়। ১৯৮৬ সালে মারসেল মার্সোর তত্ত্বাবধানে পার্থপ্রতিম মজুমদার মাইমের তত্ত্ব্ব বিষয়ক গবেষণা কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন৷ এছাড়া তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইম প্রদর্শন করেন। তিনি ‘নিঃশব্দ কবিতার কবি’ বলেও পরিচিত।[৬] বাংলাদেশে এইডসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সচেতনতামূলক আয়োজেনও অংশ নিয়েছেন তিনি।[৭]
ব্যক্তিগত জীবন
তার স্ত্রী শ্রীমতী জয়শ্রী মজুমদার৷ পুত্র নিকোলা সুপ্রতিম মজুমদার ও কন্যা মারি দোয়েল মজুমদার ৷
পুরস্কার ও সম্মাননা
- কলকাতা যোগেশ মাইম একাডেমী থেকে "মাস্টার অব মাইম" উপাধি (১৯৮৭)
- একক মূকাভিনেতা হিসেবে এথেন্স, নিউইয়র্ক, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি লাভ (১৯৮৮)
- মালয়েশিয়ার সাংবাদিকদের কাছ থেকে "মাস্টার অব ওয়ার্ল্ড" সম্মাননা
- লন্ডনে অনুষ্ঠিত বেঙ্গলি লিটারেচার ফেস্টিভালে একমাত্র বাঙালী অতিথি শিল্পী হওয়ার বিরল সৌভাগ্য (১৯৮৯)
- 'বার্দোতে' ও 'ননত্' শহরের মেয়র কর্তৃক মেডেল প্রাপ্তি (১৯৯১)
- নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলন ২০০০ বিশেষ সম্মাননা (২০০০)
- বাংলা সাপ্তাহিক "পত্রিকা" থেকে 'ইউকে মিলেনিয়াম এ্যওয়ার্ড ২০০০'
- ফ্রান্সের জাতীয় থিয়েটারের মোলিয়ার অ্যাওয়ার্ড (২০০৯)
- একুশে পদক (২০১০)
- ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র (নাইট) উপাধি (২০১১)
তথ্যসূত্র
- ↑ "ফ্রান্সের শেভালিয়র উপাধি পেলেন পার্থ প্রতীম মজুমদার"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৫-০১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ "মূল পাতা"। ভয়েস অব আমেরিকা। ২ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "কালের কণ্ঠ"। কালের কণ্ঠ।
- ↑ "নীরবতার শিল্পীর সঙ্গে কিছুক্ষণপার্থ প্রতীম মজুমদার-এর সাক্ষাৎকার"। বিডিনিউজ ২৪ ডট কম। ১ মার্চ ২০০৮। ৫ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "দৈনিক ইত্তেফাক"।
- ↑ রেডটাইমসবিডি ডট কম[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Generating awareness on AIDS"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০ জানুয়ারি ২০১২।