জারণ
জারণ হলো এক প্রকারের বিক্রিয়া যাতে কোনো রাসায়নিক সত্তা (অণু, পরমাণু, যৌগমূলক বা আয়ন) ইলেকট্রন প্রদান করে। জারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে যে সত্তা তাকে বিজারক ও যার দ্বারা জারণ সংঘটিত হয় তাকে জারক বলে। যে পদার্থটির জারণ ঘটে, তা জারিত হয়েছে বলা হয়। জারণ হলো হাইড্রোজেন এর অপসারণ।
পুরাতন সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]যে বিক্রিয়ায় কোনো মৌল বা যৌগে কোনো তড়িৎ ঋণাত্বক পরমাণু বা মূলক সংযুক্ত হয় বা তাদের অনুপাত বৃদ্ধি পায় অথবা কোনো তড়িৎ ধনাত্বক পরমাণু বা মূলকের অপসারণ ঘটে বা তাদের অনুপাত হ্রাস পায়, সেই বিক্রিয়াকে জারণ বলা হয়। আবার অন্য ভাবে জারণ বিজারণ ;বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে
জারণ :
১. e- এর অপসারণ
২. ধনাত্মক চার্জ ↑
৩. ঋণাত্মক চার্জ ↓
৪. যোজ্যতা বৃদ্ধি ↑
বিজারণ :
১. e- এর সংযোজন
২. ধনাত্মক চার্জ ↓
৩. ঋণাত্মক চার্জ ↑
৪. যোজ্যতা হ্রাস ↓
জারণ = ইলেক্ট্রন ত্যাগ জারক = ইলেক্ট্রন গ্রহণ বিজারণ = ইলেক্ট্রন ত্যাগ
জারণে ঘটে :
১. O2 সংযোজন : 2SO2+O2 = SO2
২. তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের সংযোজন : 2Fe+3Cl2 = 2FeCl3
৩. H2 অপসারণ : H2S+Cl2 = S+2HCl
৪. ধনাত্মক মৌলের অপসারণ : 2Cu2O+O2 = 4CuO
৫. যোজ্যতা বৃদ্ধি : 2FeCl2+Cl2 = 2FeCl3 (Fe এর যোজনী 2 থেকে 3 হয়)
৬. ইলেক্ট্রন দান : Fe2+-e- → Fe3+
বিজারণে ঘটে :
১. O2 অপসারণ : CuO+H2O = Cu+H2O
২. তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল/মূলক অপসারণ : 2FeCl3+H2 = 2FeCl2+2HCl
৩. ঋণাত্মক মূলক সংযোজন : HgCl2+Hg = Hg2Cl2
৪. যোজ্যতা হ্রাস : 2FeCl3+H2 = 2FeCl2+2HCl (Fe এর যোজনী 3 থেকে 2 হয়)
৫. ইলেক্ট্রন দান : Cl2+2e- → 2Cl-
জারক অন্যকে জারিত করে এবং নিজে বিজারিত হয় বিজারক অন্যকে বিজারিত করে এবং নিজে জারিত হয় জারক পদার্থে সর্বদা অক্সিজেন থাকা আবশ্যক নয়
জারক হিসেবে হ্যালোজেনসমূহকে নিম্নরূপে সাজানো যায়-F2>Cl2>Br2>I2
বিজারক হিসেবে হ্যালোজেনসমূহকে নিম্নরূপে সাজনো যায়-I->Br->Cl->F-
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড (k3[Fe(CN)6 একটি জারক পদার্থ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) একটি শক্তিশালী জারক পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্বারা টাইট্রেশনে কোন নির্দেশক প্রয়োজন হয় না ক্লোরিনের জারণ সংখ্যা সব সময় -1 হয় মুক্ত অবস্থায় মৌলের যোজনী শূণ্য
জারণ সংখ্যা নির্ণয়ের নিয়মাবলী :
যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
বিবরণ
১
মৌল
মৌলের পরমাণুর জারণ সংখ্যা শূণ্য। যেমন, ধাতু, H2, Cl2, Fe, Cu ইত্যাদি
২
এক পারমাণবিক আয়ন
জারণ সংখ্যা আয়নের আধানের সমান। Fe3+, Fe2+, Cl-, O2- আয়নের জারণ সংখ্যা যথাক্রমে +2, +3, -1, -2 । IA এবং IIA এবং IIIA গ্রুপসমূহের ধাতুর যৌগে ধাতুর পরমাণুর জারণ সংখ্যা এই ধাতুর গ্রুপ নম্বর।
৩
হ্যালোজেন
ক) সকল যৌগে F এর জারণ সংখ্যা -1
খ) হ্যালোজেন এবং O ব্যতীত অন্য যে কোন মৌলের পরমাণুর সাথে গঠিত দ্বিপারমাণবিক যৌগে হ্যালোজেন পরমাণুর জারণ সংখ্যা -1
গ) কোন হ্যালোজেন পরমাণুর সাথে উপরের পর্যায়ের হ্যালোজেন পরমাণুর জারণ সংখ্যা হবে +1
যেমন, ICl-এ I এর জারণ সংখ্যা +1 এবং Cl এর জারণ সংখ্যা -1
৪
অক্সিজেন
বেশির ভাগ যৌগে অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা -2, তবে পারঅক্সাইডে (যেমন H2O2) -O-O- বন্ধন থাকার ফলে O পরমাণুর জারণ সংখ্যা -1। এছাড়া F এর সাথে গঠিত যৌগে O এর জারণ সংখ্যা ধনাত্মক।
৫
হাইড্রোজেন
বেশির ভাগ যৌগে হাইড্রোজেনের জারণ সংখ্যা +1। তবে ধাতুর সাথে হাইড্রাইড গঠিত হলে (যেমন NaH) এর জারণ সংখ্যা হবে -1
৬
যৌগ ও যৌগমূলক
যৌগের কোন অণুতে বা সংকেত এককে সকল পরমাণুর জারণ সংখ্যার যোগফল শূণ্য হবে। তাই যৌগমূলকের ক্ষেত্রে এই যোগফল যৌগমূলকের আধানের সমান হবে। যৌগ মূলকের আধানকে তার জারণ সংখ্যা ধরা হয়।
কিছু মৌলের বিক্রিয়ার পূর্বে ও পরে জারণ সংখ্যা :
মৌল
জারণ সংখ্যা
বিক্রিয়ার পূর্বে
বিক্রিয়ার পরে
Cr
+6
-3
Fe
+2
-3
Fe
+3
-2
Mn
+7
-2
Cu
+2
0
আয়োডিমিতি : প্রমাণ আয়োডিন দ্রবণের সাহায্যে ট্রাইট্রেশন করার পদ্ধতি। আয়োডিমিতি প্রক্রিয়ায় বিজারক পদার্থ যেমন- সালফেট, থায়োসালফেট, সালফাইট, আয়োডিন ইত্যাদির পরিমাণ নির্ধারণ করে
আয়োডোমিতি : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন মুক্ত আয়োডিনের সাহায্যে ট্রাইটেশনের মাধ্যমে নির্ণয় পদ্ধতি। আয়োডোমিতি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট জারক যেমন- CuSO4, ডাইক্রোমেট, পারম্যাঙ্গানেট ইত্যাদির পরিমাণ নির্ধারণ করে
ট্রাইটেশনে আয়োডিন ব্যবহারের অসুবিধা :
১. আয়োডিন উচ্চ বায়ুচাপের কারণে কিছু বাষ্পীভূত হয়ে যায়
২. অতিরিক্ত কিছু মুক্ত আয়োডিন সৃষ্টি
নির্দেশক : দুর্বল জৈব এসিড বা ক্ষার যারা বর্ণ পরিবর্তন দ্বারা অম্লীয় বা ক্ষারীয় দ্রবণকে নির্দেশ করে। ব্যবহার-
১. অম্লীয় বা ক্ষারীয় দ্রবণ নির্দেশ করে
২. অম্ল ক্ষার বিক্রিয়ায় শেষ বিন্দু নির্দেশ করে
৩. PH অম্লীয় না ক্ষারীয় তা নির্দেশ করে
বৈশিষ্ট্য-
১. দ্রবণে বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন বর্ণের আয়ন দেয়
২. যত বেশি শক্তিশালী এসিড হবে, তত কম PH-এ বিযোজিত হবে
K2Cr2O7 দ্বারা ট্রাইটেশন : ব্যবহারের সুবিধা-
১. বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় এবং গলনাংক পর্যন্ত স্থির থাকে
২. K2Cr2O7-এর ঘনমাত্রা বহুদিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে
৩. আলোক বা সাধারণ জৈব যৌগ দ্বারা ডাইক্রোমেট দ্রবণ সমূহ সহজে বিজারিত হয় না
৪. কক্ষ তাপমাত্রায় দ্বারা HCl বিজারিত হয় না
৫. KMnO4 স্বনির্দেশক হলেও K2Cr2O7 তা করে না
স্টার্চ ব্যবহারের অসুবিধা :
১. স্টার্চ ঠাণ্ডা সানপেনসন অদ্রবণীয়
২. আয়োডিনের সাথে যে জটিল ধরনের যৌগ উৎপন্ন করে তা কতক্ষণ রেখে দিলে পানিতে অদ্রবণীয় হয়ে যায়
৩. অতিরিক্ত দ্রবণে লঘু স্টার্চ ব্যবহারে সমাপ্তি বিন্দু তত্ত্বীয় সমাপ্তি বিন্দু থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়
জারক পদার্থ সমূহ : F2, O2, MnO2, PbO2, HNO3, CuSO4, KClO3, গাঢ় H2SO4, Cl2, Br2, I2, ইক যৌগসমূহ (FeCl3, SnCl4), (KMnO4+KOH) ও (K2Cr2O7+H2SO4)- এদের মিশ্রণ, পার অক্সাইড, পার অক্সি এসিড ও তাদের লবণ।
বিজারক পদার্থ সমূহ : Na2C2O4, Na2S2O3, H2, C, CO, H2S, HI, HBr, আস যৌগসমূহ (FeO, FeCl2, SnCl2), (Zn+H2SO4) মিশ্রণ, নিম্নতর অক্সি এসিড ও তাদের লবণ।
জারক ও বিজারক পদার্থ সমূহ : SO2, H2O2, O3
Note :এই অধ্যায় থেকে জারণ,বিজারণ, জারক ও বিজারক কি তা ভালো ভাবে বুঝে নিতে হবে এবং কোন বিক্রিয়ায় কোনটা জারক অথবা কোনটা বিজারক, বিক্রিয়ার পূর্বে ও পরে জারণ সংখ্যার মানের পরিবর্তন এবং জারক ও বিজারকের উদাহরণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।[১]
উদাহরণ
[সম্পাদনা]সোডিয়াম ও ক্লোরিন বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ক্লোরাইড তৈরি হওয়া (2Na+Cl2=2NaCl) এধরনের জারণ প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ। এ বিক্রিয়ায় সোডিয়াম পরমাণুর সাথে তড়িৎ ঋণাত্বক ক্লোরিন সংযুক্ত হয়েছে। সুতরাং সোডিয়ামের জারণ ঘটেছে।এক্ষেত্রে সোডিয়াম বিজারক পদার্থ এবং ক্লোরিন জারক পদার্থ
শর্ত
[সম্পাদনা]জারণ বিক্রিয়া একটি যুগপৎ বিক্রিয়া। এটি বিজারণ বিক্রিয়ার সাথে একইসাথে সংঘটিত হয়। যেমন উপরের উদাহরণে একইসাথে ক্লোরিনের বিজারণ ঘটেছে। উক্ত বিক্রিয়ায় সোডিয়াম একটি ইলেকট্রন দান করে এবং যুগপৎভাবে ক্লোরিন সেটি গ্রহণ করে। ফলে বিক্রিয়ায় সোডিয়াম বিজারক ও ক্লোরিন জারক।
Na -e-→Na+ (ইলেকট্রন দান বা জারণ)
Cl+e-→Cl- (ইলেকট্রন গ্রহণ বা বিজারণ)
জৈব রসায়ন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ মাধ্যমিক রসায়ন; পৃষ্ঠা -৭৯। জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২।