মাইক্রোপ্রসেসর
মাইক্রোপ্রসেসর বা অনুসংসাধক বলতে এক শ্রেণীর অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় যন্ত্র বা যন্ত্রাংশকে বোঝায়, যেটি ডিজিটাল কম্পিউটার তথা ইলেকট্রনীয় পরিগণকযন্ত্রের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশের কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক, যুক্তিভিত্তিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ইলেকট্রনীয় বর্তনী ধারণ করে রাখে। এটি এক ধরনের সমন্বিত বর্তনী যা উচ্চতর ভাষাতে লিখিত প্রোগ্রাম তথা নির্দেশনাক্রম যান্ত্রিক ভাষায় অনুবাদ করে নিতে পারে, সেই নির্দেশনাগুলি নির্বাহ করতে পারে এবং একই সাথে গাণিতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও সম্পাদন করতে পারে। তথ্য-উপাত্ত প্রবিষ্টকারী যন্ত্রাংশের (ইনপুট) মাধ্যমে স্থায়ী বা অস্থায়ী স্মৃতিতে (মেমোরি) স্থাপিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও নির্দেশনাক্রম (প্রোগ্রাম) মাইক্রোপ্রসেসরে প্রবেশ করে, এবং মাইক্রোপ্রসেসরটি তথ্য-উপাত্তগুলিকে প্রদত্ত নির্দেশনাক্রম অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত করে ফলাফলগুলিকে তথ্য-উপাত্ত নির্গতকারী যন্ত্রাংশে (আউটপুট) প্রেরণ করে, যাতে সেগুলিকে মানুষের জন্য বোধগম্য রূপে প্রদর্শন (ডিসপ্লে) করা হয় বা মুদ্রণ (প্রিন্ট) করা হয়।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে বৃহৎ-মাপের সমন্বয়করণ (large-scale integration, LSI) প্রযুক্তির প্রচলন হয়, যার ফলে একটি অতিক্ষুদ্র (৫ বর্গমিলিমিটার ক্ষেত্রফলের চেয়েও ছোট) সিলিকনের চিলতের উপরে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর, ডায়োড ও রোধক জাতীয় ইলেকট্রনীয় বর্তনী ও যন্ত্রাংশ স্থাপন করা সম্ভব হয়। ১৯৭১ সালে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর বা অণুপ্রক্রিয়াজাতকারকটি বাজারে আসে, যার নাম ছিল ইন্টেল ৪০০৪। ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে অতিবৃহৎ-মাপের সমন্বয়করণ (very large-scale integration, VLSI) প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে, যার সুবাদে মাইক্রোপ্রসেসর চিলতেগুলির ভেতরে বর্তনীর ঘনত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ২০১০ সালে এসে আগের আকারের চিলতেতেই একটিমাত্র অতিবৃহৎ-মাপের সমন্বিত বর্তনীতে কয়েক শত কোটি ইলেকট্রনীয় উপাদান ধারণ করা সম্ভব হয়।
স্বল্পমূল্যের মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে কম্পিউটার প্রকৌশলীরা "মাইক্রোকম্পিউটার" অর্থাৎ অণু-পরিগণকযন্ত্র (অতিক্ষুদ্র পরিগণকযন্ত্র) নির্মাণে সফল হন। এই কম্পিউটার ব্যবস্থাগুলি আকারে ছোট হলেও বিভিন্ন ব্যবসা, শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা ও বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় গণন ক্ষমতার অধিকারী। বর্তমানে আধুনিক সমাজের বহুক্ষেত্রে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হচ্ছে। গৃহস্থালি ও দৈনন্দিন বিভিন্ন ইলেকট্রনীয় যন্ত্রপাতি যেমন কাপড় ধোবার যন্ত্র, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন (মুঠোফোন), অণুতরঙ্গ চুল্লী (মাইক্রোওয়েভ ওভেন), ইত্যাদিতে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়। আধুনিক মোটরযানে মাইক্রোপ্রসেসর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রজ্বলন ব্যবস্থা, জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা এমনকি বর্জ্য গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, যাতে গাড়ির কর্মদক্ষতা বাড়ে, জ্বালানির সাশ্রয় হয় এবং দূষণ কম হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]শুরুর দিকের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]১৯৬০এর দশকের শেষে ও ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকের ৩টি প্রকল্প হতে মাইক্রোপ্রসেসরের সূচনা হয়। এগুলি হলো, ইন্টেলের ৪০০৪, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টসের টিএমএসে ১০০০ এবং গ্যারেট এআইরিসার্চ এর সেন্ট্রাল এয়ার ডাটা কম্পিউটার।
১৯৬৮ সালে গ্যারেটকে মার্কিন নৌবাহিনীর নতুন যুদ্ধ বিমান এফ-১৪ টমক্যাট এর জন্য উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রক কম্পিউটার তৈরির কাজ দেয়া হয়। এর নকশা শেষ হয় ১৯৭০ সালে, মসফেট-ভিত্তিক চিপ ব্যবহার করে। এই নকশাটি শুরুর দিকের সব টমক্যাট বিমানে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নৌবাহিনীড় গোপনীয়তা রক্ষার্থে ১৯৯৭ সালের আগে পর্যন্ত এর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে দেয়া হয় নাই। এজন্য এই এমপি৯৪৪ চিপসেটের কথা অনেকটা অপরিচিত রয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টস ৪-বিটের টিএমএস ১০০০ তৈরি করে, এবং শুরুতে এটি ব্যবহার করে একচিপের একটি ক্যালকুলেটর তৈরি করে। ইন্টেলের ৪০০৪ চিপটি ১৯৭১ সালের ১৫ই নভেম্বর ফেডেরিকো ফ্যাগিনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়।
৮-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে ইন্টেল দ্বারা নির্মিত ৪-বিটের মাইক্রোপ্রসেসরগুলোকে ১ম প্রজন্মের মাইক্রোপ্রসেসর বলা হতো, যেগুলোর অস্তিত্ব ছিলো ১৯৭১-৭২ পর্যন্ত। এই মাইক্রোপ্রসেসরকে বিদায় জানাতে ইন্টেল ১৯৭২ সালে নিয়ে আসে ৮-বিটের এক উন্নত ও শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর যার নাম ছিলো ইন্টেল-৮০০৮, একে পরে পুনর্গঠন করে রুপ দেওয়া হয় ৮০৮৮ নামে। এগুলো ৮-বিটের ডাটা নিয়ে কাজ করতে পারে। ৮০০৮এর কিছু সমস্যাকে সমাধান করে ১৯৭৪ সালে ইন্টেল পরিচয় করায় ৮০৮০কে। কিন্তু এতেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিলো, যেমন- এই মাইক্রোপ্রসেসরে দুটি পাওয়ার সাপ্লাই দরকার হতো। এইসব সমস্যার সমাধান নিয়ে এরপর পরই মটোরোলা এমসি-৬৮০০ নামে একটি ৮-বিটের প্রসেসর বাজারজাত করে। ইন্টেলও বসে না থেকে ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে আরো একটি মাইক্রোপ্রসেসর তারা নিয়ে আসে, এর নাম ছিলো ইন্টেল-৮০৮৫। এই মাইক্রোপ্রসেসরটির সুবিধা ছিলো এটি ৮-বিটের হওয়ার পরও এতে ১৬-বিটের অ্যাড্রেস বাস ছিলো, যার মাধ্যমে ১৬-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিরও বার্তা দিচ্ছিলো ইন্টেল। তাছাড়া এর স্পিডও ছিল ৩মেগাহার্জ, এই স্পিড অন্য যে কোনো ৮-বিটের প্রসেসর থেকে বেশি ছিলো।
এই মাইক্রোপ্রসেসরগুলোকে পরিচয় করানো হয় ২য় প্রজন্মের মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে। ১৯৭৩-১৯৭৮ পর্যন্ত অনেক কোম্পানিই এই জাতীয় মাইক্রোপ্রসেসরগুলো তৈরি করে ছিলো।
১৬-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]৩২-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]৬৪-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]একাধিক-কেন্দ্রিক মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]রিস্ক নকশার মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]বিশেষ উদ্দেশ্যের মাইক্রোপ্রসেসর
[সম্পাদনা]ব্যবসায়িক উপাত্ত
[সম্পাদনা]মাইক্রোপ্রসেসর তালিকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]সাধারণ
[সম্পাদনা]- [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Great Microprocessors of the Past and Present[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] – By John Bayko
- Microprocessor history ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০০৫ তারিখে – Hosted by IBM
- Microprocessor instruction set cards – By Jonathan Bowen
- CPU-Collection
- CPU-World – Extensive CPU/MCU/FPU data
- HowStuffWorks "How Microprocessors Work"
উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক দলিল
[সম্পাদনা]- TMS1802NC calculator chip press release – Texas Instruments, 17 September 1971
- 1973: TI Receives first patent on Single-Chip Microprocessor
- TI Awarded Basic Microcomputer Patent – TI, 17 February 1978 ("microcomputer" to be understood as a single-chip computer; a simple µC)
- Important discoveries in microprocessors during 2004 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে – Hosted by IBM
- Pico and General Instrument's Single Chip Calculator processor Possibly pre-dating Intel and TI.