টুর হেয়ার্ডাল (Thor Heyerdahl, আই.পি.এ-[tuːr hæiːərdɑːl]) অক্টোবর ৬, ১৯১৪ – এপ্রিল ১৮, ২০০২) হলেন বিশ্ববিখ্যাত ভ্রমণকারী, ফটোগ্রাফার ও পুরাতত্ত্ববিদ। তিনি 'কন্-টিকি'তে যাত্রা করার জন্য পরিচিত।

টুর হেয়ার্ডাল
জন্ম(১৯১৪-১০-০৬)৬ অক্টোবর ১৯১৪
লার্ভিক(Larvik), নরওয়ে
মৃত্যু১৮ এপ্রিল ২০০২(2002-04-18) (বয়স ৮৭)
Colla Micheri, ইটালি
জাতীয়তানর্রেয়ান
মাতৃশিক্ষায়তনUniversity of Oslo[]
পরিচিতির কারণকন্-টিকি যাত্রা
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রEthnography
Adventure
ডক্টরাল উপদেষ্টাKristine Bonnevie
Hjalmar Broch

জীবন ও শিক্ষা

সম্পাদনা

টুর হেয়ার্ডালের জন্ম ১৯১৪ সালে নরওয়ের লার্ভিকে হয়েছিল। তিনি ছোটবেলা থেকে প্রকৃতি-প্রেমী ছিলেন। তিনি নিজের মায়ের দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনির মা ছিলেন স্থানীয় মিউজিয়ামের প্রধান ও তিনি টুরকে প্রাণিবিজ্ঞানএর দিকে আকর্ষিত করেছিলেন। তিনি অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিজ্ঞান ও ভূগোল পড়েন।[]

প্রথম অন্বেষণ

সম্পাদনা

টুরের প্রথম অন্বেষণ ছিল পলিনেশিয়া (১৯৩৭-৩৮) ও উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা(১৯৪০-৪১)।[] পলিনেশিয়াতে টুর ও টুরর পত্নী লিভক পলিনেশিয়ার এক প্রধান টেরিয়েরূ(Teriieroo)এ যান৷[] পলিনেশিয়ার জীবনশৈলী আয়ত্ত করার পর টুর যান ফাতুহিভা (Fatuhiva) দ্বীপে থাকার জন্য, যাতে তিনি পলিনেশিয়াতে আসা জীর-জন্তুসমূহের মূল বিচার করে অন্বেষণ চালান। তিনি বিশ্বাস করে নেন যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাবী করা পলিনেশীয়দের মূল দক্ষিণ-পূব এশিয়া নয়। তিনি পলিনেশিয়াতে পাওয়া প্রাণীদের অন্বেষণ করে পলিনেশিয়ার মানুষের মূল বিচার করতে শুরু করেন; তার মতে, পলিনেশিয়ার মানুষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থেকে নয়, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও পেরুর থেকে আসা । তিনি নিজের গবেষণা 'আমেরিকান ইন্ডিয়ান্স ইন্ দা পেসিফিক'(American Indians in the Pacific) নামক গ্রন্থে ছাপেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর জন্য তাকে নরওয়ে ঘুরে যেতে হয়।[]

কন্-টিকি অন্বেষণ

সম্পাদনা

টুরের অন্বেষণের বিশ্বাসযোগ্যতাকে অনেকে প্রত্যাহ্বান জানায়। তাই টুর থলুরা বাল্চা নৌকা তৈরী করেন, যার নাম দেন কন্-টিকি(Kon-Tiki)। ১৯৪৭ সালে তিনি পেরু থেকে যাত্রা আরম্ভ করেন সেই নরওয়ের উদ্দেশ্যে ।[] প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার ১০১ দিনে পার করে তিনি কন্-টিকি নিয়ে যান পলিনেশিয়া ও প্রমাণ করে দেখান যে, ঠিক সেইভাবেই পলিনেশিয়ার মানুষ পেরু থেকে গিয়ে পলিনেশিয়া পৌঁছেছিলো।[]

গালাপাগোস অন্বেষণ

সম্পাদনা

কন-টিকি যাত্রার সাফল্যের পর টুর ওলাল গালাপাগোস দ্বীপে যান (ইকুয়েডর থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে), গালাপাগোস যান নরওয়ের পুরাতত্ববিদ দলের নেতারূপে। সেখানে তিনি কলোম্বিয়া-পূর্ব বাসস্থলসমূহ অধ্যয়ন করেন ও ইনকা বইসমূহ অনুসন্ধান করেন। তিনি প্রায় ১৩০ ডোখর মৃৎশিল্পও আবিষ্কার করেন যা পরে ইনকা থেকেও পুরনো বলে প্রমাণিত হয়। টুর এই অভিযানের সাথে বিশেষজ্ঞদের সাথে মিলে হেরুয়া 'গুয়ারা' (guara) শিল্প পুনরাবিস্কার করার দিকে কাজ করেন। গুয়ারাই পেরু ও ইকুয়েডরের লোককে দূরে ভ্রমণ করতে ও দিক নির্ণয় করতে সহায়তা করেছিল।[][]

ইস্টার দ্বীপ অন্বেষণ

সম্পাদনা

১৯৫৫-৫৬তে টুর পেসিফিকের অত্যন্ত কাছে থাকা- 'ইস্টার দ্বীপ'(Easter Island) যাত্রা করেন, ২৩ জনের একটি দলের সাথে। তারা আবিষ্কার করেন যে, থলুরা লোকেরা কেটে ফেলবার আগে, ইস্টার দ্বীপ ছিল গাছে ভরা। কার্বন ডেটিং থেকে প্রমাণিত হ'ল যে, সেখানে প্রথম মানুষ ৩৮০সালে গেছিলো(সেখানকার বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন প্রায় ১০০০ বছর আগে)। তার অন্বেষণই ১০ম পেসিফিক বিজ্ঞান কংগ্রেস ওয়ে চর্চা লাভ করে।[]

রা অন্বেষণ

সম্পাদনা

টুর প্রাচীন নেভিগেশন যন্ত্রসমূহের ওপরে অধ্যয়ন চালিয়ে যান৷ পেপাইরাস নির্মিত রীড-নৌকা তার দৃষ্টি-আকর্ষণ লাভ করে। তখনকার বিশেষজ্ঞদের অনুসারে, রীড নৌকা বেশি সময় চালানো সম্ভব নয়(খুব বেশি ২সপ্তাহ)। টুর কথাটি মানতে পারেন নি। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, প্রাচীন যন্ত্রটির ক্ষমতা এর থেকেও অধিক। তখন তিনি সেরকম একটি নৌকা পেপাইরাসে নির্মাণ করলেন, যার নাম দিলে রা। রাষ্ট্র সংঘের পতাকার তলায় ৭টি দেশের ৭জন মানুষ নিয়ে তিনি সেই নৌকায় মরক্কোর সাফির থেকে যাত্রা আরম্ভ করলেন। তারা ৫৬দিনে ৫০০০ কিলোমিটার পার করলেন, কিন্তু ধুমুহা ও নির্মাণের কিছু ত্রুটির জন্য তারা যাত্রা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না। ১০মাস পর তিনি পুনরায় বেরোলেন সেই একই যাত্রায়, নৌকাটিকে কিছুটা ছোট করে নিয়ে, যার নাম দেয়া হ'ল রা-২। এইবার তিনি সফল হন, আটলাণ্টিকের আশপাশের বহু অংশ (৬১০০ কিলোমিটার) ৫৭ দিনে পার করে।[]

অন্য অন্বেষণ ও মৃত্যু

সম্পাদনা

তিনি এরপরে টিকিউম্ পিরামিড, তেনেরাইফ্ আইলেণ্ড, ইত্যাদিতে মনোযোগ দেন। ৮৭ বছর বয়সে, ২০০২ সালের ২ এপ্রিলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে টুর হেয়ার্ডালের মৃত্যু হয়।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "THOR HEYERDAHL EXPEDITIONS and ARCHAEOLOGY OF THE PACIFIC PEOPLES"। greatdreams.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৪ 
  2. http://www.nytimes.com/learning/general/onthisday/big/0428.html
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  4. "Thor Heyerdahl Biography"। biography.com। ১৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৪ 
  5. "Thor Heyerdahl dies at 87"। theguardian.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা