তুলা

গসিপিয়াম গণের উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত উদ্ভিদ তন্তু

তুলা আঁশজাতীয় নরম পদার্থবিশেষ যা সংশ্লিষ্ট তুলা গাছের বীজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তুলা দেখতে সাদা, লম্বা, পাতলা ও চুলের ন্যায় মিহি। তুলা গাছ থেকে সংগ্রহ করে সুতা, বালিশ, চিকিৎসা কর্মে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা হয়। তৈরীকৃত সুতা দিয়ে কাপড় প্রস্তুত করে মানুষের পোষাকসহ অনেক ধরনের জিনিসপত্রে ব্যবহার করা হয়। প্রচণ্ড গরমে সুতি কাপড় পরিধানে বেশ আরাম অনুভূত হয়। খুবই হাল্কা বিধায় খুব সহজেই তুলা অনেক দূরে বাতাসের সাহায্যে স্বাধীনভাবে উড়ে যায়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবেই নিজের বংশবিস্তারে সক্ষমতা রয়েছে এটির। অনেক পূর্বেই মানুষ তুলার নরম, তুলতুলে অবস্থার সাথে পরিচিত হয়েছে এবং বস্ত্রখাতে একে সম্পৃক্ত করেছে। খুব দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হিসেবে তুলা গাছের সুনাম রয়েছে।

চাষাবাদকৃত তুলা

চাষাবাদকৃত তুলাগাছ থেকে পেকে যাবার পূর্বেই বীজ সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত তুলার সাহায্যে সুতা প্রস্তুত করলেও তা তেমন টেকসই নয়; কিন্তু কয়েকটি সুতা একত্রিত করলে তা খুবই শক্ত ও মজবুত আকৃতি ধারণ করে। বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়োজনে ঐ সুতায় বিভিন্ন ধরনের রঙ দেয়া হয়।

তুলার নানা জাতের গাছ রয়েছে। যথা: শিমুল গাছ, কারপাস গাছ, ফুটি কারপাস।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
আবাদকৃত তুলা গাছ

তুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ কটন যা আরবি (আল) কুতন্‌ থেকে উদ্ভূত। আনুমানিক ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে এ শব্দের প্রচলন ঘটে।[] অনেক অনেক বছর পূর্বে তুলার আবিষ্কার হয়েছে। তুলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনতম ফসলরূপে পরিগণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে তুলার ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে এর ব্যবহার অব্যাহত আছে। পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরী কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।

 
বিশ্বব্যাপী তুলা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা

তুলা প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে তুলা গাছ থেকে পাওয়া যায়। কয়েক ধরনের তুলা গাছ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গুল্মজাতীয় কিছু তুলা গাছ বুনো পরিবেশে বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয়উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকাসমূহে জন্মায়। বুনো প্রজাতির বেশীরভাগ তুলা গাছই অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের পর মেক্সিকোতে উৎপন্ন হয়।[] অধিকাংশ তুলাই অর্থকরী ফসলরূপে জমিতে উৎপাদন করা হয় যা পরবর্তীতে কাপড় তৈরীর উদ্দেশ্যে জমায়েত করা হয়। তুলার খামারগুলো আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ আমেরিকায় দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার একর জমি তুলা চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাচীন ইতিহাসের ক্ষণস্থায়ী, মোটা কাপড়ের তুলনায় নিত্য-নতুন প্রজাতির তুলা গাছের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী দীর্ঘস্থায়িত্ব, মসৃণ কাপড় তৈরী হচ্ছে। তুলার নিজস্ব ওজন নিয়ে ২৪ থেকে ২৭ গুণ পানি ধারণ করতে পারে। তুলা গাছের সকল অংশই কোন না কোন কাজে লাগে।

 
শিমুল তুলা

তুলার প্রয়োজনীয়তা

সম্পাদনা

তুলা তন্তু-উৎপাদনকারী উদ্ভিদের মধ্যে বিশেষ মূল্যবান। তুলার সাহায্যে সুতা প্রস্তুত করা হয়। ঐ সুতায় বস্ত্র, দড়ি প্রভৃতি তৈরি হয়। তুলা দ্বারা বালিশ, গদি, ত্রিপল, কার্পেট, রবার টায়ার প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়। তুলার বীজ থেকে একপ্রকার তেল প্রস্তুত হয়। ঐ তেল রান্না ও সাবান তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।তুলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বিশেষ পণ্য দ্রব্য। তুলা উৎপাদনে ভারতের স্থান চতুর্থ। তুলা থেকে মূল্যবান মারসেরাইজড কাপড় তৈরি হয়, তুলার আঁশে কষ্টিক সোডা প্রয়োগ করে টেরিলিন ও নাইলনের সঙ্গে তুলা মিশিয়ে টেরিকটন বস্ত্র তৈরি হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে শোষক তুলার ব্যাপক ব্যবহার হয়।[]

বৈশ্বিক উৎপাদন

সম্পাদনা
শীর্ষ-১০ তুলা উৎপাদনকারী দেশ, ২০১৯
(১০০০ মেট্রিক টন)
  ভারত ৫,৭৭০
  যুক্তরাষ্ট্র ৩,৯৯৯
  গণচীন ৩,৫০০
  ব্রাজিল ২,৭৮৭
  পাকিস্তান ১,৬৫৫
  তুরস্ক ৮০৬
  উজবেকিস্তান ৭১৩
  অস্ট্রেলিয়া ৪৭৯
  তুর্কমেনিস্তান ১৯৮
  বুর্কিনা ফাসো ১৮৫
Source:[]

বর্তমানে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন টন যা বিশ্বের তুলা আবাদের উপযোগী ভূমির মাত্র আড়াই শতাংশ ব্যবহারে উৎপাদিত। ২০০৯ সালের তথ্য মোতাবেক, চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ তুলা উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এরপরই রয়েছে ভারত। দেশ দু'টি যথাক্রমে ৩৪ মিলিয়ন বেল ও ২৪ মিলিয়ন বেল তুলা উৎপাদন করেছে। কিন্তু উৎপাদিত তুলার অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর যাবৎ সর্ববৃহৎ রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে পরিগণিত।[] দেশটি ৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছিল। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলা রপ্তানী করে। ১৯৮০ সাল থেকে আফ্রিকা তুলা বাণিজ্যে দ্বিগুণ অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৫টি তুলা রপ্তানীকারক দেশগুলো হচ্ছে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং উজবেকিস্তান। তুলা উৎপাদনবিহীন আমদানকারীকারক দেশগুলো হচ্ছে - কোরিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, হংকং এবং জাপান[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Metcalf, Allan A. (1999). The World in So Many Words. Houghton Mifflin. p. 123. আইএসবিএন ০-৩৯৫-৯৫৯২০-৯.
  2. "The Biology of Gossypium hirsutum L. and Gossypium barbadense L. (cotton). ogtr.gov.au" (পিডিএফ)। ২৫ জুন ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  3. বই: জীবন বিজ্ঞান (সপ্তম),লেখক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, প্রকাশক : সর্বভারতীয় শিক্ষক - শিক্ষাকর্মী কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গ শাখা, বছর: ১৯৮৩, পৃঃ ৬০,৬১
  4. "World cotton production by country 2019"Statista (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৪ 
  5. ""Natural fibres: Cotton", International Year of Natural Fibres"। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা