বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়
বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় (ইংরেজি: Vivekananda Mukhopadhyay)(৩ জুলাই, ১৯০৪ ― ২০ মার্চ, ১৯৯৩) একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। সাংবাদিক হিসেবে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।
বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ৩ জুলাই ১৯০৪ মাদারীপুর, ফরিদপুর জেলা (বর্তমানে বাংলাদেশ ), বৃটিশ ভারত |
মৃত্যু | ২০ মার্চ ১৯৯৩ |
সমাধি | কলকাতা |
পেশা | লেখক ও সাংবাদিক |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিকতা,বাংলা সাহিত্য রচয়িতা |
পুরস্কার |
|
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাঅবিভক্ত বাংলার বর্তমানেরবাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুরের ছওগাঁও-এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কুলদানন্দ মুখোপাধ্যায়, মাতা মনোমোহন দেবী। ১৯২৩ সালে বাংলা ও সংস্কৃতে লেটার নম্বর সহ ম্যাট্রিক পাশ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতায় ভর্তি হন, অর্থাভাবে পড়া ছাড়তে হয় তাকে। আনন্দবাজার পত্রিকায় তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯২৫ সালে। তার আগে উদ্বোধন পত্রিকায় কবিতা লিখেছেন। ওই সময় কবিতা লেখার সূত্রে তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৩৭ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।[২] অর্থসঙ্কটে ভুগতে থাকা ঐতিহ্যবাহী এই পত্রিকাকে পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। দৈনিক বসুমতী, সত্যযুগ, ভারতকথা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। একইভাবে অর্থাভাবে ক্লিষ্ট বসুমতীর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করে পত্রিকাটিকে সচল করেন। তার কৃতিত্বে ক্রমে অসাধারণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই পত্রিকা।[৩] সাংবাদিকতা ছাড়া যুদ্ধ সংক্রান্ত লেখালিখিতে খ্যাতিলাভ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার নানা লেখা প্রকাশিত হয় যেখানে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া ও সামরিক সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। যুগান্তরসহ বিভিন্ন কাগজে মুক্তিযুদ্ধের বিবরন লিখেছিলেন যা তখন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে সেখানে যান বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়।[৪] তিনি ভারত-সোভিয়েত সুহৃদ সংঘের সভাপতি ছিলেন। বিশ্ব শান্তি সংসদের সাথে যুক্ত ছিলেন যুদ্ধবিরোধী সাংবাদিক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। পারমাণবিক পরীক্ষার বিরোধীতায় তিনি সম্পাদকীয় লেখেন তেজস্ক্রিয় পুঁইশাক। বিশ্ব পরিস্থিতির প্রামাণ্য বিশ্লেষণ থেকে স্বদেশ ও জাতির জীবনে সর্ববিধ সংকটে তার নির্ভীক সুচিন্তিত আবেগময় আলোচনা ও তীক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি পাঠক সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। অন্তিম পর্যায়ে তিনি 'দৈনিক সত্যযুগ' ও 'ভারতকথা' নামে দুটি নবীন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তার বাগ্মিতা ছিল লেখনীর মতোই প্রসিদ্ধ ও জনচিত্তজয়ী।
সম্মাননা
সম্পাদনাবিভিন্ন সময় তিনি নানা দেশ বিদেশের পুরস্কার পান। ভারত সরকার তাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'পদ্মভূষণে' সম্মানিত করেন ১৯৭০ সালে।[১] ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পান সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার।
রচনা
সম্পাদনাবিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় সমরভাষ্য ও রাষ্ট্রীয় আলোচনার সূত্রপাত করেন। চারটি গবেষণাশ্রিত গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলি হল -
- 'রুশ জার্মান সংগ্রাম'
- 'জাপানি যুদ্ধের ডায়রী'
- 'পশ্চিম এশিয়ার বন্ধন মুক্তি'
- 'রুশ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি'
কয়েক দশক ধরে তার একাগ্র সাধনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার আন্তর্জাতিক ফলাফল যার পরিণতি মহাগ্রন্থ "দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস" (দুটি খণ্ডে প্রকাশিত) ভারতীয় ভাষায় অনন্য কীর্তি । তার নিজের ভাষায় -''আমার সাংবাদিক ও সম্পাদকীয় জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে যুদ্ধবিগ্রহ এবং আম্তর্জাতিক জগতের ঘাত প্রতিঘাত নিয়ে৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এবং তার পরবর্তীকালে দৈনিক ‘যুগাম্তর’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যুদ্ধ ও আম্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমার অজস্র লেখা বেরিয়েছিল৷ ‘জাপানী যুদ্ধের ডায়েরি’ এবং ‘রুশ-জার্মান সংগ্রাম’ সেই দূরবর্তী কালেরই রচনা৷ সেই বই দুটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত হওয়ার পর আমি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের একটি সামগ্রিক ইতিহাস রচনার সঙ্কল্প করেছিলাম''৷ তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে সম্পাদকের দপ্তর থেকে ইত্যাদি। তার লেখা কবিতার বই শতাব্দীর সঙ্গীত।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, দ্বিতীয় খন্ড (২০১৯)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ২৫৯।
- ↑ "যুগান্তর যুগ যুগ জিও"। যুগান্তর। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ "উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়"। মানবকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ এষা দে (১৯ ডিসেম্বর ২০১২)। "বিবেকের তাড়নায় বাবা বাংলাদেশের পক্ষে কলম ধরেছিলেন"। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]