রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী লক্ষ্মণ

ভারতীয় শিল্পী

রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী লক্ষ্মণ[] (কন্নড়: ರಾಶಿಪುರಂ ಕೃಷ್ಣಸ್ವಾಮಿ ಲಕ್ಷ್ಮಣ್ ಅಯ್ಯರ್) (২৪শে অক্টোবর, ১৯২১ – ২৬শে জানুয়ারি, ২০১৫) একজন ভারতীয় ব্যঙ্গশিল্পী ও কার্টুনশিল্পী ছিলেন।[] তিনি দ্য কমন ম্যান নামক তার বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে এবং দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া সংবাদপত্রের ইয়ু সেইড ইট নামক দৈনিক কার্টুন প্রচ্ছদটির জন্য বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ছিলেন।[]

রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী লক্ষ্মণ
জন্ম
ರಾಶಿಪುರಂ ಕೃಷ್ಣಸ್ವಾಮಿ ಲಕ್ಷ್ಮಣ್ ಅಯ್ಯರ್

(১৯২১-১০-২৪)২৪ অক্টোবর ১৯২১
মৃত্যু২৬ জানুয়ারি ২০১৫(2015-01-26) (বয়স ৯৩)
জাতীয়তা(১৯২১-১৯৪৭) ব্রিটিশ ভারতীয়
(১৯৪৭-২০১৫) ভারতীয়
পেশাকার্টুনিস্ট
পরিচিতির কারণদ্য কমন ম্যান কার্টুন চরিত্র
দাম্পত্য সঙ্গীকুমারী কমলা
কমলা লক্ষ্মণ
পরিবাররাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী নারায়ণস্বামী (ভ্রাতা)
পুরস্কারপদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার
স্বাক্ষর

প্রথম জীবন

সম্পাদনা

রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী লক্ষ্মণ ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যে এক তামিল আইয়ার ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পিতার ছয় পুত্রের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন।[][]: তার ভ্রাতা রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী নারায়ণস্বামী একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। লক্ষ্মণের শৈশবেই তার পিতার মস্তিষ্কে আকস্মিক রক্তক্ষরণের ফলে পঙ্গুত্ব ও এক বছর পরে মৃত্যু ঘটে।

শৈশব থেকে লক্ষ্মণ দ্য স্ট্র্যান্ড, পাঞ্চ, বাইস্ট্যান্ডার, ওয়াইড ওয়ার্ল্ড, টিট-বিটস প্রভৃতি পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত চিত্রগুলি দ্বারা মুগ্ধ হতেন।[]: শীঘ্রই তিনি বাড়ির সর্বত্র ও বিদ্যালয়ে তার শিক্ষক ও অন্যান্যদের নিয়ে ক্যারিকাঁচার আঁকা শুরু করেন। দ্য হিন্দু পত্রিকায় মাঝে মধ্যে প্রকাশিত ডেভিড লোর কার্টুন চিত্রগুলি দ্বারা তিনি এই সময় বহুলাংশে প্রভাবিত হন।[]:২৫

বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ শেষ করে তিনি চিত্রশিল্প শিক্ষার উদ্দেশ্যে বম্বে শহরে অবস্থিত স্যার জে. জে. ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড আর্ট নামক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার চিত্রের মধ্যে কোন প্রতিভার সন্ধান না পেয়ে তাকে ভর্তি করতে অস্বীকার করেন।[]:৫৭-৬০ এরপর তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. পাশ করেন।

পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

লক্ষ্মণ ভারতনাট্যম শিল্পী তথা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কুমারী কমলাকে বিবাহ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হলে তিনি কমলা লক্ষ্মণ নামক একজন শিশু সাহিত্য লেখিকাকে বিবাহ করেন। ফিল্মফেয়ার পত্রিকায় লক্ষ্মণের আঁকা দ্য স্টার আই নেভার মেট নামক কার্টুন সিরিজে তিনি কমলা লক্ষ্মণকে উদ্দেশ্য করে একটি কার্টুন আঁকেন, যার শিরোনাম দেন দ্য স্টার আই ওনলি মেট। এই দম্পতির কোন সন্তান ছিল না।

কর্মজীবন

সম্পাদনা
 
সিম্বায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত দ্য কমন ম্যানের মূর্তি

মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি স্বরাজ্য নামক একটি পত্রিকায় কার্টুনিস্ট হিসেবে এবং এছাড়া পৌরাণিক চরিত্র নারদের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রে কাজ করেন।[]:৬৬-৭২ এছাড়া এই সময় তিনি ব্লিৎজ, দ্য হিন্দু, স্বতন্ত্র প্রভৃতি সংবাদপত্রে কার্টুন চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এছাড়া তিনি কোরভঞ্জি নামক কন্নড় ভাষার একটি ব্যঙ্গ পত্রিকাতেও কার্টুন চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। তার জীবনের প্রথম কোন পত্রিকার সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে তিনি বম্বে শহরে দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল পত্রিকার জন্য রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট পদে যোগ দেন। এই সময় বাল ঠাকরে তার কার্টুনিস্ট সহকর্মী ছিলেন। লক্ষ্মণ পরবর্তীকালে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার বম্বে অফিসে যোগদান করেন ও জীবনের পরবর্তী পঞ্চাশ বছর এই সংবাদপত্রের কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এই সময় তিনি তার দ্য কমন ম্যান কার্টুন চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। একজন সাধারণ ভারতীয়ের চোখ দিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের গড়ে ওঠার কাহিনী তিনি এই চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যঙ্গচিত্রের মধ্যে দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্য কমন ম্যান চরিত্রটি একটি দুর্নীতি বিরোধী প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়।[]

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এশিয়ান পেন্টস কোম্পানির জন্য তিনি গাট্টু নামক একটি জনপ্রিয় ম্যাসকট সৃষ্টি করেন।[][] এছাড়া তিনি দ্য হোটেল রিভিয়েরা সহ বেশ কিছু উপন্যাসও রচনা করেন।[১০] তার কার্টুন চরিত্রগুলি মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ৫৫ সহ বেশ কিছু হিন্দি এবং কামরাজ নামক তেলুগু চলচ্চিত্রে দৃশ্যায়িত করা হয়। তার সৃষ্ট কার্টুন চরিত্রগুলি মালগুড়ি ডেজ নামক বিখ্যাত টেলিভিশন ধারাবাহিকেও দেখানো হয়।[১১]

শেষ জীবন

সম্পাদনা
 
লক্ষ্মণের মৃত্যুতে কার্টুনিস্ট শেখর গুরেরার শ্রদ্ধার্ঘ্য

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার শরীরের বাম দিক পঙ্গু হয়ে যায়। এই অবস্থা থেকে সামান্য সুস্থতা লাভ করলেও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে জুন তাকে মুম্বই শহরের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।[১২] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বেশ কয়েকবার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।[১৩]

মৃত্যু

সম্পাদনা

মূত্রনালীতে সংক্রমণ থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বৈকল্যের কারণে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি তাকে পুণের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।[১৪] ২৬শে জানুয়ারি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তার মৃত্যু ঘটে । [১০][১৫] মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস লক্ষ্মণের রাষ্ট্রীয় সৎকারের কথা ঘোষণা করেন। লক্ষ্মণের মরদেহ সিম্বায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত দ্য কমন ম্যানের মূর্তির নিকটে রাখা হয় এবং পরে বৈকুন্ঠ শ্মশানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৎকার করা হয়।[১৬]

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

ভারত সরকার লক্ষ্মণকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ[১০] ও ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে।[১৭] ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং যোগাযোগে উদ্ভাবনী কলা বিভাগে তাকে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[১০] ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সিএনএন আইবিএন টিভি১৮ এর তরফ থেকে তাকে সাংবাদিকতায় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১৮] ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে আর্ট অ্যান্ড মিউজিক ফাইন্ডেশনের তরফ থেকে তাকে পুণে পণ্ডিত পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১৮] ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে।[১৯] পুনের সিম্বায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তার নামাঙ্কিত একটি চেয়ারের সৃষ্টি করা হয়েছে।[২০]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ranga Rao (১ জানুয়ারি ২০০৬)। R.K. Narayan। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 11। আইএসবিএন 978-81-260-1971-7। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১২ 
  2. Laxman's-eye view ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে Frontline Magazine – 18–31 July 1998
  3. "Times of India cartoonist RK Laxman dies after illness"BBC। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  4. "The Common Man is still at work"The Hindu 
  5. "RIP RK Laxman: Common Man just lost its first citizen"Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ 
  6. Laxman, R. K. (১৯৯৮)। The tunnel of time। India: Penguin Books 
  7. Ritu Gairola Khanduri. 2012. "Picturing India: Nation, Development and the Common Man." Visual Anthropology 25(4): 303-323.
  8. "Colour the world"Business Line। ১৩ এপ্রিল ২০০০। ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  9. "Who is the creator of 'Gattu'?"Rediff.com। ১১ জুলাই ২০০৮। 
  10. Menon, Meena (২৬ জানুয়ারি ২০১৫)। "The uncommon man: R.K. Laxman (1921-2015)"The HinduThe Hindu Group। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  11. "Celebs mourn cartoonist RK Laxman"The Times of IndiaThe Times Group। ২৭ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  12. "R K Laxman hospitalized after 3 strokes, stable"। Times of India। ২১ জুন ২০১০। ১১ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১০ 
  13. "Iconic cartoonist R K Laxman passes away in Pune after a prolonged illness at the age of 94"India Today। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ 
  14. "R K Laxman regains partial consciousness"The Times of India। ২৩ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  15. "Eminent cartoonist RK Laxman dies at 94"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ 
  16. Banerjee, Shoumojit (২৭ জানুয়ারি ২০১৫)। "Fadnavis announces memorial for R.K. Laxman"The Hindu। Pune: The Hindu Group। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  17. "'Common Man' cartoonist RK Laxman dead at 93"Reuters। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫। ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  18. Zunke, Pratiksha (৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Renowned cartoonist RK Laxman to be awarded Bharat Bhushan"Daily News and Analysis। Pune: Diligent Media Corporation। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  19. Vakil, Dina (২৭ জানুয়ারি ২০১৫)। "RK Laxman, who immortalised the common man, was devoted to excellence"The Economic TimesThe Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  20. Times News Network (১৯ জুন ২০১১)। "RK Laxman Chair started at Symbiosis University"The Times of India। ৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা