খেঁকশিয়াল
খেঁকশিয়াল | |
---|---|
লাল শিয়াল (Vulpes vulpes) | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
বর্গ: | শ্বাপদ |
পরিবার: | ক্যানিডি |
উপপরিবার: | ভুলপিনি |
Genera | |
খেঁকশিয়াল (ইংরেজি: Fox) একজাতীয় ছোট্ট শিয়ালজাতীয় শ্বাপদভূক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। শ্বাপদ প্রাণী হওয়ায় তারা অন্যান্য ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে জীবনধারন করে। ইঁদুর, ঘাসফড়িং, পাখি ও এর ডিম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এমনকি এরা বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে থাকে। কখনোবা এরা গলিত পঁচা মাংসও খায়।[১]
ক্যানিডে পরিবারভূক্ত প্রাণীদের মধ্যে খেঁকশিয়ালই সবচেয়ে ছোট সদস্য। এ স্তন্যপায়ী প্রাণীটি কুকুর প্রজাতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা খুব ধূর্ত, চঞ্চল ও দ্রুতবেগে দৌঁড়াতে সক্ষম। দলবদ্ধ হয়ে শিকারে বের হয় ও একত্রে থাকতে পছন্দ করে। তাদের ঘন, বিস্তৃত লেজ সহজেই দৃশ্যমান ও এর সাহায্যেই শনাক্ত করা সম্ভবপর। লেজের সাহায্যে সতর্ক সঙ্কেত প্রেরণ করে অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। লেজে চর্বি সঞ্চিত থাকে।
নাম
[সম্পাদনা]বাংলায় খেঁকশিয়ালকে (ইংরেজি: Fox) সাধারণত "শিয়াল" ডাকা হয়, যদিও দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
বৈশিষ্ট্যাবলী
[সম্পাদনা]ক্যানিডে পরিবারভূক্ত প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে খেঁকশিয়াল ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। এ পরিবারের অন্যান্য সদস্য গৃহপালিত মাঝারি আকৃতির কুকুরের চেয়ে এটি কিঞ্চিৎ ছোট। প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে এর লম্বাটে মুখমণ্ডল এবং ঘন, ছড়ানো বিস্তৃত লেজ। লেজের শেষ প্রান্তে ধবল কেশ দেখা যায়। বন্য পরিবেশে খেঁকশিয়াল ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু শিকারে পরিণত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গড়পড়তা ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত বাঁচে। শিকারী, সড়ক দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়াই এর প্রধান কারণ।
পুরুষ খেঁকশিয়াল গড়পড়তা ৫.৯ কিলোগ্রাম বা ১৩ পাউন্ডের হয়। স্ত্রীজাতীয় খেঁকশিয়াল তুলনামূলকভাবে ওজনে কম হয় যা প্রায় ৫.২ কিলোগ্রাম বা ১১.৫ পাউন্ড হয়ে থাকে।[২] বাসস্থানের উপর নির্ভর করে এদের শারীরিক গড়ন।
পৃথিবীতে বহু প্রজাতির খেঁকশিয়াল দেখা যায়: লাল শিয়াল, কাঁকড়াভূক খেঁকশিয়াল, বাংলা খেঁকশিয়াল, ধূসর খেঁকশিয়াল, ডারউইনের খেঁকশিয়াল ইত্যাদি। ফেনেক ও কিট ফক্সের বড় চোখ ও স্বল্প লোম থাকে। অন্যদিকে আর্কটিক খেঁকশিয়ালের ক্ষুদ্র চোখ এবং ঘন লোমে আবৃত থাকে। এদের প্রজাতি ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে শাবক প্রসব করে। আর্কটিক খেঁকশিয়াল গড়ে ৪ থেকে ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১১টি শাবক প্রসব করে থাকে।[৩]
বাসস্থান
[সম্পাদনা]মোট ৩৭টি প্রজাতির খেঁকশিয়াল পৃথিবীতে দেখা যায়। তন্মধ্যে মাত্র ১২ প্রজাতিই 'প্রকৃত খেঁকশিয়াল' ("ভুলপিস" (Vulpes) গণের সদস্য) হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। বৈশ্বিক পর্যায়ে অতি সাধারণ খেঁকশিয়াল হিসেবে রয়েছে লাল শিয়াল (রেড ফক্স)। এরা খুবই ধূর্ত প্রকৃতির যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই উপকথায় বর্ণিত রয়েছে।
নিশাচর প্রাণী হিসেবে এরা দিনের বেলা ঘন ঝোঁপ-ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ও ঘুমায় কিংবা বিশ্রাম নেয়। কিন্তু গোধূলীলগ্নে এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শিকারের সন্ধানে বের হয়। খেঁকশিয়াল পৃথিবীর সকল মহাদেশেই পাওয়া যায়। ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে এন্টার্কটিকা মহাদেশ। অধিকাংশ প্রজাতিই বন-জঙ্গল, ঝোঁপ-ঝাড়, মরুভূমি এলাকায় এদের আবাসস্থল। অস্ট্রেলিয়ায় এদের আদি আবাসস্থল নয়; কিন্তু কোন না কোনভাবে এ মহাদেশে আবাস গেড়েছে। যুক্তরাজ্যে একসময় খুবই জনপ্রিয় ও সাধারণ খেলা হিসেবে খেঁকশিয়াল শিকার প্রচলিত ছিল। ঘোড়া ও কুকুর সহযোগে এ শিকার ক্রীড়াটি বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য
[সম্পাদনা]খেঁকশিয়াল সর্বভূক প্রাণী হিসেবে পরিচিত।[৪][৫] অন্যান্য ছোটোখাটো প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ হিসেবে সাপ, কাঁকড়া, ঘাস, ফল, মাছ, পাখি, ডিম, পোকামাকড়সহ বহুবিধ প্রাণী এদের প্রধান খাবার। অনেক প্রজাতিই খাদক হিসেবে পরিচিত কিন্তু কিছু প্রজাতি বিশেষ খাবারে আসক্ত। অধিকাংশ প্রজাতিই সাধারণতঃ দৈনিক ১ কিলোগ্রাম খাবার গ্রহণ করে। অতিরিক্ত খাবার গাছের পাতা, বরফ কিংবা বালুর নিচে সঞ্চিত রাখে।
অধিকাংশ কৃষিজাত পণ্যই শশকজাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। নিম্নভূমিতে এ সকল শশকের ৪৫ থেকে ৭০ শতাংশই খেঁকশিয়ালের খাদ্যে পরিণত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি খেঁকশিয়াল তার স্বাভাবিক জীবনকালে শশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী হত্যা করে £১৫০ থেকে £৯০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ ফসল রক্ষা করে থাকে। এরফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে যা খেঁকশিয়াল হত্যা করা থেকে প্রত্যেকেরই বিরত থাকা উচিত।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ These exceptions do not really make foxes omnivores, better to say they are not entirely carnivores.
- ↑ "Walker, Matt; Davies, Ella (7 March 2012). "Are red foxes getting bigger?" BBC News Online. Retrieved 2012-03-07"। ২০১২-০৫-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-২৯।
- ↑ Hildebrand, Milton (1952). "The Integument in Canidae". Journal of Mammalogy 33 (4): 419–428. doi:10.2307/1376014. JSTOR 1376014
- ↑ "Fedriani, J.M.; T. K. Fuller, R. M. Sauvajot, E. C. York (2000-07-05). "Competition and intraguild predation among three sympatric carnivores". Oecologia 125 (2): 258–270. doi:10.1007/s004420000448" (পিডিএফ)। ২০১১-১০-০৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-২৯।
- ↑ Fox, David L. (2007). "Vulpes vulpes (red fox)". Animal Diversity Web. University of Michigan Museum of Zoology
- ↑ BBC Wildlife