বিষয়বস্তুতে চলুন

পালসার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিএসআর বি১৫০৯-৫৮ পালসার

পালসার (ইংরেজি: Pulsar)[] হল একটি অত্যন্ত চৌম্বক আবর্তিত নিউট্রন তারকা, যা একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে উচ্চ তীব্রতার তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ নির্দিষ্ট দিকে বিকিরণ করে থাকে। যেহেতু এই তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ পালস্ হিসাবে লক্ষ করা যায় তাই এদের নাম “পালসার”। এগুলো সেসব তারকা থেকে সৃষ্টি হয় যেগুলির কোর সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরেও বেঁচে থাকে। এরা আকৃতিতে বর্তুলাকার তথা গোলাকার।বর্তমানে পালসার বেশ কিছু গবেষণা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছে।বস্তুর চূড়ান্ত পরিণতি নির্ণয় করতে এ গবেষণা সাহায্য করবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।এছাড়া মহাজাগতিক দূরত্ব নির্ণয়েও সাহায্য করবে পালসার।

আবিষ্কার

[সম্পাদনা]

জোসেলিন বেল বার্নেলঅ্যান্থনি হিউইশ অধীনে ১৯৬৭ সালের ২৮শে নভেম্বর প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন।[][][] তারা আকাশের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে ১.৩৩ সেকেন্ড তফাতে উদ্ভূত পালস লক্ষ করেন। ক্ষুদ্র সময়কালের নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে তারা নক্ষত্র ও মানব দ্বারা উৎপন্ন রেডিও কম্পাঙ্কের তরঙ্গগুলিকে কারণ হিসেবে বাতিল করেন। অন্য একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র একই ফলাফল দেখালে যন্ত্রে ত্রুটিকে তরঙ্গের কারণগুলি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এইসময় তারা এর কারণ হিসেবে পৃথিবী বহির্ভূত অন্য উন্নত সভ্যতার কথাও চিন্তা করেন।[n ১] কিন্তু আকাশেরর অন্য প্রান্তে একটি দ্বিতীয় তরঙ্গের সূত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই তত্ত্ব বাতিল করা হয়।[] তাদের আবিষ্কৃত পালসার পরবর্তীকালে সিপি ১৯১৯ নামে অভিহিত করা হয়, যা বর্তমানে পিএসআর ১৯১৯+২১, পিএসআর বি১৯১৯+২১, পিএসআর জে১৯১৯+২১৫৩ ইত্যাদি নামে পরিচিত। যদিও সিপি ১৯১৯ রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করে থাকে, কিন্তু এমন বেশ কিছু পালসার খুঁজে পাওয়া গেছে, যেগুলি দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ, এক্স-রশ্মি বা গামা রশ্মি বিকরণ করে।[]

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াল্টার বাড এবং ফ্রাঞ্জ জুইকি প্রথম সুপার নোভা থেকে উৎপন্ন প্রধানত নিউট্রন দ্বারা উচ্চঘনত্বের ক্ষুদ্রাকৃতি নিউট্রন তারকার অস্তিত্বের প্রস্তাব দেন।[] ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পালসার আবিষ্কৃত হওয়ার ঠিক আগে ফ্র্যাঙ্কো পাচিনি মতপ্রকাশ করেন যে, একটি চৌম্বক ক্ষেত্রযুক্ত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারকা থেকে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ হতে পারে।[] প্রথম পালসার আবিস্কৃত হওয়ার পরে থমাস গোল্ড পাচিনির মতোই একটি চৌম্বক ক্ষেত্রযুক্ত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারকার কথা বলেন, যা তার মতে জোসেলিন বেল বার্নেলঅ্যান্থনি হিউইশ আবিষ্কৃত তরঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে পারে।[১০] ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্র্যাব পালসার আবিষ্কৃত হওয়ার পর পালসারের এই ব্যাখ্যা নিশ্চিত রূপে প্রমাণিত হয়। এই পালসারের ৩৩ মিলিসেকেন্ডের পর্যায়কাল এই তরঙ্গ বিকিরণের অন্যান্য ব্যাখ্যাগুলিকে বাতিল করে দেয়।[১১]:১-৭

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে পালসার আবিষ্কারের জন্য অ্যান্থনি হিউইশ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১২] হিউশের ছাত্রী জোসেলিন বেল বার্নেল প্রথম পালসার আবিষ্কার করলেও শুধুমাত্র হিউশ এই পুরস্কার লাভ করায় এই সময় প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

পালসারের শ্রেণিবিভাগ

[সম্পাদনা]

১) রোটেশন-পাওয়ার্ড পালসার, যেখানে তারকার আবর্তন শক্তি ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ বিকরন হয় ।

২) এক্রীশন- পাওয়ার্ড পালসার, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে এক্স-রে তৈরি হয় ।

৩) ম্যগ্নেটার্স হল যেখানে উচ্চ বলের চুম্বকিয় ক্ষেত্রের ক্ষয় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি বিকরন হয় ।

পালসারের সৃষ্টি

[সম্পাদনা]

নিউট্রন তারকা অত্যন্ত উচ্চ ঘনত্বের পদার্থ দিয়ে তৈ্রি হয় । এক চামচ নিউট্রন তারকার পদার্থের ভর প্রায় ৬০ কোটি টন । তারকার কো্রে এতই উচ্চ চাপ হয় যে ইলেক্ট্রন, প্রোটন নিজস্ব সত্বা হারিয়ে নিউট্রনের মত আচরণ করে । যেহেতু বেশির ভাগ উজ্ব্ল তারকার কৌণিক ভরবেগ থাকে, সেহেতু সুপারনভা বিস্ফরনের পরে যে পালসার তৈরি হয় তার আবর্তন গতিবেগ খুবিই বেশি হয় ।

পালসার সম্বন্ধিত গবেষণা

[সম্পাদনা]

কিছুদিন আগেই, NASA –এর এক্স-রে বিক্ষণাগার প্রথমবার নিউট্রন তারকার কোরে সুপারফ্লুইডের অস্তিত্ব প্রমাণ পায় । এই খোঁজে্র সাহায্যে condensed matter physics –এর প্রচুর তথ্যের আরও গভীর গবেষণা করা যাচ্ছে । আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে যে এই পালসার বাইনারি System নিরন্তর মধ্যাকর্ষন তরঙ্গ বিকিরণ করে যার ফলে এই বাইনারি System এর আবর্তন কক্ষপথ ক্রমে ছোট হতে থাকবে এবং এটি এখন পালসার সম্বধিত তথ্য দিয়ে প্রমাণিত ।

তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে নিউট্রন তারকার গবেষণা

[সম্পাদনা]

নিউট্রন তারকা বর্তমান জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীদের জন্যে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গবেষণার বিষয় । এই বিষয়ে প্রচুর তাত্ত্বিক পদ্ধতি প্রস্তাবিত করা হয়ছে যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল :-

১) টমাস-ফার্মী মডেল :- ১৯২০ সালে টমাস এবং ফার্মী পরমাণুকে একটি ৬ ডাইমেন্সানের Phase-space –এ নিউক্লিয়াসের চারিদিকে সমানভাবে বণ্টিত ইলেক্ট্রন মেঘ হিসাবে ধরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন । এতে “Many body problem” –এর হিসাব অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল ।

২) স্রডিঞ্জার মডেল (যেমন, ভেরিয়েশনাল পদ্ধতি, মন্টে-কার্লো পদ্ধতি, ব্রুকনার থিওরী, কাপল্ড ক্লাস্টার পদ্ধতি, গ্রীন ফাংশান পদ্ধতি, ইত্যাদি)

৩) পরিপেক্ষিক ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক মডেল যেমন পরিপেক্ষিক গড় ক্ষেত্র, হারট্রী-ফক, ইত্যাদি ।

৪) নাম্বু-জোনা-লাসিনিও মডেল :- এই কোয়ার্ক মডেলে একটি বিশেষ ল্যাগরাঞ্জিয়ান (N খানা ফ্লেবারের কোয়ার্ক সমূহের জন্যে)ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষিক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে ।

৫) Chiral SU(3) কোয়ার্ক গড় ক্ষেত্র মডেল ।

কিছু বিশেষ পালসার

[সম্পাদনা]

১) প্রথম রেডিয় পালসার “CP 1919” ( বর্তমানে “PSR B1919+21”) -এর পাল্স পর্যায়কাল ১.১৩৩৭ সেকেন্ড এবং পাল্স প্রস্থ ০.০৪ সেকেন্ড ছিল ।

২) বাইনারি পালসার, “PSR B1913+16” প্রথম তারকা ছিল যার কক্ষপথ ক্ষয় আইনস্টাইনের Theory of General Relativity দিয়ে যথাযথ ভাবে বোঝাা গিয়েছিল ।

৩) প্রথম মিলিসেকেন্ড পালসার, PSR B1937+21

৪) উজ্জ্বলতম মিলিসেকেন্ড পালসার , PSR J0437-4715

৫) প্রথম এক্স-রে পালসার Cen X-3

৬) প্রথম এক্রীশন মিলিসেকেন্ড এক্স-রে পালসার SAX J1808.4-3658

৭) প্রথম গ্রহসহ পালসার, PSR B1257+12

৮) গ্রহাণু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম পালসার, PSR J0738-4042

৯) প্রথম যুবল পালসার, PSR J0737−3039

১০) দীর্ঘত্ম পর্যায়কাল যুক্ত পালসার, PSR J2144-3933

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. we did not really believe that we had picked up signals from another civilization, but obviously the idea had crossed our minds and we had no proof that it was an entirely natural radio emission. It is an interesting problem—if one thinks one may have detected life elsewhere in the universe, how does one announce the results responsibly?"[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Definition of PULSAR"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৬ 
  2. Pranab Ghosh, Rotation and accretion powered pulsars. World Scientific, 2007, p.2.
  3. M. S. Longair, Our evolving universe. CUP Archive, 1996, p.72.
  4. M. S. Longair, High energy astrophysics, Volume 2. Cambridge University Press, 1994, p.99.
  5. S. Jocelyn Bell Burnell (১৯৭৭)। "Little Green Men, White Dwarfs or Pulsars?"। Cosmic Search Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-৩০ 
  6. Burnell, S. Jocelyn Bell (২৩ এপ্রিল ২০০৪)। "So Few Pulsars, So Few Females"Science304 (5670): 489। ডিওআই:10.1126/science.304.5670.489পিএমআইডি 15105461 
  7. Courtland, Rachel. "Pulsar Detected by Gamma Waves Only ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে." New Scientist, 17 October 2008.
  8. Baade, W.; Zwicky, F. (১৯৩৪-০৭-০১)। "Remarks on Super-Novae and Cosmic Rays"Physical Review (ইংরেজি ভাষায়)। 46 (1): 76–77। আইএসএসএন 0031-899Xডিওআই:10.1103/PhysRev.46.76.2 
  9. Pacini, F. (১৯৬৭)। "Energy Emission from a Neutron Star"Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 216 (5115): 567–568। আইএসএসএন 0028-0836ডিওআই:10.1038/216567a0 
  10. Gold, T. (১৯৬৮)। "Rotating Neutron Stars as the Origin of the Pulsating Radio Sources"Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 218 (5143): 731–732। আইএসএসএন 0028-0836ডিওআই:10.1038/218731a0 
  11. Lyne, Andrew G.; Graham-Smith, Francis (১৯৯৮)। Pulsar Astronomy। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-59413-8 
  12. "Press Release: The Nobel Prize in Physics 1974"। ১৫ অক্টোবর ১৯৭৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১৯ 

আরো পড়ুন

[সম্পাদনা]

Lorimer, Duncan R.; Kramer, Michael (২০০৪)। Handbook of Pulsar Astronomy। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-82823-6 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]