ভগ্নমনস্কতা
ভগ্নমনস্কতা | |
---|---|
একজন ব্যাক্তির অলঙ্কৃত করা কাপড় দেখিয়া ভগ্নমনস্কতায় আক্রান্তের লক্ষণ নির্ণয় | |
উচ্চারণ |
|
বিশেষত্ব | মনোরোগ বিজ্ঞান |
লক্ষণ | হ্যালোসিনেশন (সাধারণত কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া), প্রতারণা, বিভ্রান্ত চিন্তা[২] |
জটিলতা | আত্মহত্যা, হৃদরোগ, জীবনধারার রোগ[৩] |
রোগের সূত্রপাত | ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে[২] |
স্থিতিকাল | দীর্ঘকালস্থায়ী[২] |
কারণ | পরিবেশগত এবং জেনেটিক কারণ |
ঝুঁকির কারণ | পারিবারিক ইতিহাস, কিশোর বয়সে গাঁজার ব্যবহার, গর্ভাবস্থায় সমস্যা, শীতের পরে বা প্রারম্ভিক বসন্তে জন্ম, বৃদ্ধ পিতা, জন্ম হওয়া বা শহরে বেড়ে ওঠা[৪] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | পর্যবেক্ষিত আচরণ উপর ভিত্তি করে, এবং ব্যক্তির সাথে পরিচিত অন্যদের প্রতিবেদন |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | মাদকের অপব্যবহার, হান্টিংটনস ডিজিজ, মেজাজ ব্যাধি (বাইপোলার ব্যাধি), আত্মসংবৃতি,[৫] বোর্ডারলিনে পার্সোনালিটি ডিসর্ডার |
পরিচালনা | পরামর্শ, চাকরির প্রশিক্ষণ |
ঔষধ | এন্টিসাইকোটিক |
আরোগ্যসম্ভাবনা | ২০ বছর সংক্ষিপ্ত আয়ু[৩] |
সংঘটনের হার | ~০.৫% |
মৃতের সংখ্যা | ~১৭,০০০ (২০১৫) |
ভগ্নমনস্কতা একটি মানসিক রোগ। এই রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না৷[৬] এর লক্ষণগুলো হলো উদ্ভট চিন্তা, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখা, অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা এবং অন্যরা যা শুনতে পায় না এমন কিছু শোনা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে সচারচর অক্ষমতাজনিত অসুবিধার সম্মুখীন হন৷[২][৬] ভগ্নমনস্কতার লক্ষণগুলি সাধারণত বয়ঃপ্রাপ্তির সময় দেখা দেয় এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়৷[২] ইংরেজিতে রোগটিকে "স্কিটসোফ্রিনিয়া" (Schizophrenia) নামে ডাকা হয়।
বংশগতি, শৈশবের পরিবেশ, স্নায়ুজীববিজ্ঞান এবং মানসিক ও সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহ এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে প্রতিভাত হয়৷ কিছু উত্তেজক মাদক এবং ওষুধ এ রোগের উপসর্গগুলোর আবির্ভাব বা এদের আরও গভীর করে বলে প্রতিয়মান হয়৷ বর্তমানে এ রোগের গবেষণায় স্নায়ুজীববিজ্ঞানের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত এ রোগের কোনো একক জৈব কারণ শনাক্ত করা যায়নি৷ এই রোগের সম্ভাব্য বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সমষ্টি এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে যে, আদৌ এটি একটি একক ব্যাধি না একাধিক পৃথক উপসর্গের সহাবস্থান৷
ইংরেজি "স্কিটসোফ্রিনিয়া" শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দমূল skhizein (σχίζειν, "to split" বা “দুভাগ করা”) এবং phrēn, phren- (φρήν, φρεν-; "mind" বা “মন”) থেকে৷ এমন নামকরণ সত্ত্বেও স্কিটসোফ্রিনিয়া বলতে আদপে “দ্বিখন্ডিত মন” বুঝায় না; যদিও অনেক সময় সাধারণ মানুষ এটিকে ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিজর্ডার (যা মাল্টি পারসনালিটি ডিজর্ডার বা স্প্লিট পারসোনালিটি নামেও পরিচিত) এর সাথে গুলিয়ে ফেলে; প্রকৃতপক্ষে এ দুটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাধি৷
সারাবিশ্বের ০.৩–০.৭% মানুষ এ রোগে আক্রান্ত৷[৭] ২০১৩ সালে আনুমানিক ২৩.৬ মিলিয়ন চিকিৎসাপ্রার্থী ছিল।[৮] আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও অতীত কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন - দীর্ঘ সময় ধরে বেকারত্ব, দারিদ্র, আবাসনহীনতাকে প্রধান কারণ বলে গণ্য করা হয়।[৯]
লক্ষণ
[সম্পাদনা]ভগ্নমনস্কতার রোগীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা প্যারানয়েড ভগ্নমনস্কতা, ক্যাটাটনিক ভগ্নমনস্কতা, সিম্পল ভগ্নমনস্কতা, ইত্যাদি। এই রোগীরা সকলেই প্রায় বাস্তববিমুখ অথবা বাস্তবজগত থেকে বিচ্ছিন্ন। কারও কারও কথাবার্তায় প্রথম থেকেই স্বাভাবিকতা ও বাস্তববিমুখীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশান যাদের থাকে তাদের সাধারণ মানুষই অস্বাভাবিক এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্মাদ বলে বুঝতে পারে। আবার এখানে নিজ নিজ বুদ্ধি, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা বিশেষ করে বাড়ির লোকেরা, এই অস্বাভাবিকতাকে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য বলে ভাবতে পারেন। আমাকে রোগী যদি বলে ‘আমাকে আমার বন্ধু, এক গুনিনের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেই গুনিন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে কী যেন বলল! তার পর থেকে তার কণ্ঠস্বর আমি সব সময় শুনতে পাচ্ছি’, এই রকম অস্বাভাবিক কথাবার্তাও রোগীর আত্মীয়-স্বজন কোনও কোনও সময় স্বাভাবিক বলে মনে করেন। কারণ তারা তুকতাক, মারণ উচাটন বশীকরণ ইত্যাদির ক্রিয়াকলাপে বিশ্বাসী। আবার দু-এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও এক দিকে রোগীর অসাধারণ বুৎপত্তি অথবা জ্ঞান বাড়ির লোকেদের বিস্মিত করে; তারা রোগীকে জিনিয়াস মনে করে গর্বিত রোধ করেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা জিনিয়াস (genius) এবং উন্মত্ততার মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক আছে। তবে ভগ্নমনস্ক রোগীদের মধ্যে বুদ্ধিমান এবং অতি সংবেদনশীলদের সংখ্যা বেশি।
লক্ষণ-সমূহ
[সম্পাদনা]- লক্ষণ-সমূহ এপিসোডিক বা হঠাৎ ঘটে থাকতে পারে।
- অসংলগ্ন আচরণ।
- এলোমেলো এবং সংযোগবিহীন চিন্তা ও তার বহিঃপ্রকাশ।
- জীবন এবং তার সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলা।
- অডিটরি হ্যালুসিনেশন দেখা।
ধরন
[সম্পাদনা]মার্কিন মনোচিকিৎসা সংঘ ভগ্নমনস্কতাকে নয়টি ভাগে বিভক্ত করেছে। এগুলো হল: ১. সরল টাইপ ২. হেবিফ্রেনিক টাইপ ৩. ক্যাটাটনিক টাইপ ৪. প্যারানয়েড টাইপ ৫. আনডিফারেনসিয়েটেড টাইপ ৬. শৈশব টাইপ ৭.সিজো-অ্যাফেকটিভ টাইপ ৮.তীব্র-মিশ্র টাইপ ৯.দীর্ঘস্থায়ী মিশ্র টাইপ
নিরাময়
[সম্পাদনা]চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম হল এন্টিসাইকোটিক ওষুধ, যা মূলত ডোপামিন (এবং কখনও কখনও স্টেরোটোনিন) গ্রহণ কার্যক্রমকে অবদমিত করে। সেই সাথে মনোচিকিৎসা এবং বৃত্তিমূলক ও সামাজিক পুনর্বাসনও চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেশি গুরুতর ক্ষেত্রে, যেখানে নিজের এবং অন্যদের প্রতি ক্ষতির ঝুঁকি থাকে - সেখানে রোগীর অনিচ্ছা থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে, যদিও হাসপাতালে থাকার মেয়াদ এখন আগের থেকে কম হয় এবং হাসপাতালে যেতেও হয় আগের থেকে অনেক কম।তবুও রোগীর বিপজ্জনক কিছু করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
এই ব্যাধি মূলত চেতনাকে আক্রান্ত করে বলে ধারণা করা হয়, কিন্তু এটা একই সাথে প্রায়শই আচরণ এবং আবেগ গত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বৃদ্ধি করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Jones D (২০০৩) [1917]। Roach P, Hartmann J, Setter J, সম্পাদকগণ। English Pronouncing Dictionary। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-3-12-539683-8।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Schizophrenia"। National Institute of Mental Health (ইংরেজি ভাষায়)। জানুয়ারি ২০১৬। ২৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮।
- ↑ ক খ "Medicinal treatment of psychosis/schizophrenia"। www.sbu.se। Swedish Agency for Health Technology Assessment and Assessment of Social Services (SBU)। ২১ নভেম্বর ২০১২। ২৯ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৭।
- ↑ Gruebner O, Rapp MA, Adli M, ও অন্যান্য (ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "Cities and mental health"। Deutsches Arzteblatt International। 114 (8): 121–127। ডিওআই:10.3238/arztebl.2017.0121। পিএমআইডি 28302261। পিএমসি 5374256 ।
- ↑ Ferri FF (২০১০)। Ferri's differential diagnosis : a practical guide to the differential diagnosis of symptoms, signs, and clinical disorders (2nd সংস্করণ)। Philadelphia, PA: Elsevier/Mosby। পৃষ্ঠা Chapter S। আইএসবিএন 978-0-323-07699-9।
- ↑ ক খ "Schizophrenia Fact sheet N°397"। WHO (ইংরেজি ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮।
- ↑ van Os J, Kapur S (আগস্ট ২০০৯)। "Schizophrenia" (পিডিএফ)। Lancet। 374 (9690): 635–45। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(09)60995-8। পিএমআইডি 19700006। ২৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Global Burden of Disease Study 2013 Collaborators; Barber, Ryan M; Bell, Brad; Bertozzi-Villa, Amelia; Biryukov, Stan; Bolliger, Ian; Charlson, Fiona; Davis, Adrian; Degenhardt, Louisa; Dicker, Daniel; Duan, Leilei; Erskine, Holly; Feigin, Valery L; Ferrari, Alize J; Fitzmaurice, Christina; Fleming, Thomas; Graetz, Nicholas; Guinovart, Caterina; Haagsma, Juanita; Hansen, Gillian M; Hanson, Sarah Wulf; Heuton, Kyle R; Higashi, Hideki; Kassebaum, Nicholas; Kyu, Hmwe; Laurie, Evan; Liang, Xiofeng; Lofgren, Katherine; Lozano, Rafael; ও অন্যান্য (আগস্ট ২০১৫)। "Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 301 acute and chronic diseases and injuries in 188 countries, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013"। Lancet (ইংরেজি ভাষায়)। 386 (9995): 743–800। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(15)60692-4। পিএমআইডি 26063472। পিএমসি 4561509 ।
- ↑ Foster A, Gable J, Buckley J (সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Homelessness in schizophrenia"। The Psychiatric Clinics of North America (ইংরেজি ভাষায়)। 35 (3): 717–34। ডিওআই:10.1016/j.psc.2012.06.010। পিএমআইডি 22929875।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |