বিষয়বস্তুতে চলুন

আল রশিদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আল রশিদ
রাষ্ট্র জাবাল শামার আমিরাত
মূল বংশশামার
উপাধিজাবাল শামারের আমির
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৩৬
প্রতিষ্ঠাতাপ্রথম আবদুল্লাহ বিন রশিদ
শেষ শাসকমুহাম্মদ বিন তালাল
বিলুপ্তি১৯২১ (হাইল বিজয়)
হাইল আমিরাতের পতাকা, ১৮৩৫ থেকে ১৯২০
হাইল আমিরাতের পতাকা, ১৯২০ থেকে ১৯২১

আল রশিদ বা রশিদ পরিবার (আরবি: آل رشيد Āl Rashīd; উচ্চারণ [æːl ræˈʃiːd]) ছিল আরব উপদ্বীপের জাবাল শামার আমিরাত নামক রাষ্ট্রের শাসনকারী রাজবংশ। নজদের আল সৌদ পরিবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল। নজদের উত্তরের হাইল শহর ছিল আল রশিদের কেন্দ্র। হজ্জযাত্রীদের যাতায়াত রুট ও বাণিজ্যের মাধ্যমে তারা সম্পদ অর্জন করে। এই শহরের শাসকরা ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে রশিদের সন্তান।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

আল রশিদ নামটি বংশের প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে রশিদের নাম থেকে উৎপত্তি হয়। প্রথম আমির আবদুল্লাহ ইবনে রশিদ হাইল আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। রশিদি আমিররা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা স্থাপন করে। উসমানীয়রা দুর্বল হয়ে পড়ার পর মিত্রতা শিথিল হয়ে পড়ে।

১৮৯০ সালে রশিদিরা রিয়াদ দখল করে নেয় এবং আল সৌদের সদস্যদের পরাজিত করে। তারা প্রথমে বাহরাইন, পরে কাতার ও সবশেষে কুয়েতে নির্বাসিত হয়।[]

অন্যান্য আরব রাজবংশের মত রশিদিদের ক্ষেত্রেও শাসনের সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ বিবাদের বিষয় ছিল মূলত আমিরের উত্তরাধিকার কি তার ভাইদের মাধ্যমে নাকি পুত্রদের মাধ্যমে হাতবদল হবে। এসকল অভ্যন্তরীণ বিভক্তির ফলে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। উনিশ শতকের শেষ বছরগুলোতে ছয়জন রশিদি নেতা সহিংসভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তবে রশিদি পরিবার শাসনকার্য চালিয়ে যায় এবং সৌদি-রশিদি যুদ্ধে একসাথে অংশ নেয়।

বিশ শতকের প্রথম বিশ বছর আরব উপদ্বীপে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলে। এসময় সৌদি ও তাদের মিত্ররা আরব উপদ্বীপকে তাদের নিজেদের শাসনের অধীনে একত্রীকরণ করতে থাকে। আল রশিদ অন্যান্য গোত্রগুলোকে তাদের পক্ষে আনতে গেলে তা ব্যর্থ হয়। ১৯২১ সাল নাগাদ হাইল ইবনে সৌদের হাতে চলে আসে। ইবনে সৌদের পক্ষে মধ্য আরবের বেশিরভাগ গোত্রের সমর্থন ছিল।

আল রশিদের আমিরগণ

[সম্পাদনা]
রশিদি শাসনের সর্বো‌চ্চ সীমা
  1. প্রথম আবদুল্লাহ বিন রশিদ (আরবি: عبدالله بن رشيد), (১৮৩৬–৪৮): তার ভাই উবাইদ আল রশিদের সাথে হাইলের শাসক মুহাম্মদ বিন আলির বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার পর আবদুল্লাহ ক্ষমতায় আসেন। মুহাম্মদ বিন আলি ছিলেন জাফর আল শামারির সাথে সম্পর্কিত। হাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য নেতা হিসেবে আবদুল্লাহর সুনাম ছিল। আবদুল্লাহ তার ভাই উবাইদের কাছে একটি চুক্তি দাবি করেন যার মাধ্যমে তার উত্তরাধিকার তার বংশধরদের মধ্যে থাকবে।
  2. তালাল বিন আবদুল্লাহ (আরবি: طلال بن عبدالله), (১৮৪৮–৬৮): তালাল ছিলেন আবদুল্লাহর পুত্র। উদারনৈতিকতা ও নির্মাণ কার্যে আগ্রহের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। তার শাসনামলে হাইলের বারজান প্রাসাদ নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ইরাকের সাথে তিনি নিয়মিত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং রশিদিদের প্রভাব বৃদ্ধি করেন:

    "The inhabitants of Kaseem, weary of Wahhabee tyranny, turned their eyes towards Telal, who had already given a generous and inviolable asylum to the numerous political exiles of that district. Secret negotiations took place, and at a favourable moment the entire uplands of that province—after a fashion not indeed peculiar to Arabia—annexed themselves to the kingdom of Shommer by universal and unanimous suffrage." (William Gifford Palgrave, 1865: 129.)

    তালালকে বিদেশীদের প্রতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল হিসেবে গণ্য করা হয়:

    "Many of these traders belonged to the Shia sect, hated by some Sunni, doubly hated by the Wahabees. But Telal [sic] affected not to perceive their religious discrepansies, and silenced all murmurs by marks of special favour towards these very dissenters, and also by the advantages which their presence was not long in procuring for the town". (William Gifford Palgrave 1865: 130.)

    ১৮৬০ সালে সৌদ পরিবারে একটি অভ্যন্তরীণ বিবাদ রশিদ-উসমানীয় মিত্রতার মাধ্যমে তাদের প্রতিহত করতে সুযোগ করে দেয়। রশিদিরা ১৮৬৫ সালে সৌদিদের রাজধানী রিয়াদ দখল করে নেয় এবং সৌদি প্রধানদের নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে। তালাল পরবর্তীকালে রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। চার্লস ডটি তার লেখা ট্রাভেলস ইন আরাবিয়া ডেজার্টা বইয়ে লিখেছেন যে তালাল আত্মহত্যা করেছেন। তালালের সাত পুত্র ছিল। তবে তার জ্যেষ্ট বন্দর এসময় মাত্র ১৮ বা ২০ বছরের ছিলেন।
  3. প্রথম মুতিব বিন আবদুল্লাহ (আরবি: متعب بن عبدالله), (১৮৬৮–৬৯): তিনি তালালের ছোট ভাই ছিলেন। রশিদ পরিবারের শীর্ষ সদস্য ও শামার শেখরা তাকে সমর্থন দেন। এক বছর পর বারজান প্রাসাদে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার ভাইপো বন্দর তাকে গুলি করেছিলেন।
    দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন মুতিবের প্রথম দিককার একটি ছবি।
  4. বন্দর বিন তালাল (আরবি: بندر بن طلال), (১৮৬৯): বন্দর খুব অল্পকাল শাসন করেন। তার চাচা মুহাম্মদ তাকে হত্যা করেছিলেন। বলা হয় যে বন্দর তার চাচার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের এক পুত্র ছিল।
  5. প্রথম মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ (আরবি: محمد بن عبدالله), (১৮৬৯–৯৭): হাইলের বাইরে বন্দরকে হত্যার মাধ্যমে তার সাথে তার চাচা মুহাম্মদের বিরোধিতা সমাপ্ত হয়। মুহাম্মদ এরপর হাইলে গমন করেন ও নিজেকে নতুন আমির ঘোষণা করেন। প্রতিশোধের সম্ভাবনা বেশি থাকায় বন্দরের সকল ভাইকে (তালালের পুত্র) মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। বন্দরের ফুফাতো বোনের সন্তান, তাদের দাস ও অধীনস্তদেরও হত্যা করা হয়। তালালের এক পুত্র নাইফ বেঁচে যান। সূচনা রক্তাপাতের মাধ্যমে হলেও তার শাসন রশিদ বংশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ছিল। তার শাসনকে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য হিসেবে ধরা হয়। তার শাসনের সীমা উত্তরে আল জাউফপালমিরা এবং পশ্চিমা খায়বার পর্যন্ত পৌছায়। ১৮৯১ সালে একটি বিদ্রোহের পর আবদুর রহমান বিন ফয়সাল বিন তুরকি আল সৌদ রিয়াদ ত্যাগ করেন। দশ বছরের আবদুল আজিজ ইবনে সৌদসহ সৌদি পরিবার কুয়েতে নির্বাসিত হয়।
  6. আবদুল আজিজ বিন মুতিব (আরবি: عبدالعزيز بن متعب), (১৮৯৭–১৯০৬): তিনি ছিলেন মুতিবের পুত্র। মুহাম্মদ তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাকে মুহাম্মদের উত্তরসুরি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। মুহাম্মদ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল আজিজ এরপর কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই তার উত্তরসুরি হন। এসময় উসমানীয়রা দুর্বল হয়ে পড়ায় রশিদিদের শাসন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। আবদুল আজিজ বিন মুতিব ১৯০৬ সালে ইবনে সৌদের সাথে রাউদাদ মুহান্নার যুদ্ধে নিহত হন।
  7. দ্বিতীয় মুতিব বিন আবদুল আজিজ (আরবি: متعب بن عبدالعزيز), (১৯০৬–০৭): মুতিব তার পিতা আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। তবে তিনি তার পুরো পরিবার থেকে সমর্থন পাননি। এক বছর পর সুলতান বিন হামুদের হাতে তিনি নিহত হন।
  8. সুলতান বিন হামুদ (আরবি: سلطان بن حمود), (১৯০৭–০৮): তিনি প্রথম আমিরের ভাই উবাইদের নাতি ছিলেন। তার দাদার সাথে দাদার ভাইয়ের চুক্তির বরখেলাপ করায় তাকে সমালোচনায় পড়তে হয়। ইবনে সৌদের সাথে লড়াইয়ে তিনি ব্যর্থ হন এবং তার ভাইদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হন।
    জাবাল শামার আমিরাতের নবম আমির সৌদ বিন হামুদ
  9. প্রথম সৌদ বিন হামুদ আল রশিদ (আরবি: سعود بن حمود), (১৯০৮–১০): উবাইদের আরেক নাতি সৌদ দশম আমির সৌদ বিন আবদুল আজিজের মায়ের দিক থেকে আত্মীয়দের হাতে নিহত হন।
  10. প্রথম সৌদ বিন আবদুল আজিজ (আরবি: سعود بن عبدالعزيز), (১৯১০–২০): তাকে আমির নিযুক্ত করার সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। তার মায়ের দিকের আত্মীয় আল শাবান পরিবার তার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৯২০ সালে ১২তম আমিরের ভাই আবদুল্লাহ বিন তালাল তাকে হত্যা করেন। তার দুজন বিধবা স্ত্রী পুনরায় করেন। নুরাহ বিনতে হামুদ আল শাবান ও ফাহদা বিনতে আসি আল শুরাইম যথাক্রমে ইবনে সৌদের অষ্টম ও নবম স্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় জনের সন্তান আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ পরে সৌদি আরবের বাদশাহ হয়েছিলেন।
  11. দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন মুতিব (আরবি: عبدالله بن متعب), (১৯২০–২১; মৃত্যু ১৯৪৭): তিনি সপ্তম আমিরের সন্তান ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি ইবনে সৌদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর এক বছর পূর্বে তিনি ক্ষমতায় আসেন।
  12. দ্বিতীয় মুহাম্মদ বিন তালাল (আরবি: محمد بن طلال), (১৯২১; মৃত্যু ১৯৫৪): তিনি ছিলেন দ্বিতীয় আমির তালালের বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুত্র নাইফের নাতি। ইবনে সৌদ কর্তৃক মুহাম্মদ বিন তালাল বন্দী হওয়ার পর তার স্ত্রী নুরা বিনতা সিবান ইবনে সৌদকে বিয়ে করেন। মুহাম্মদ বিন তালালের এক কন্যা ওয়াতফা ইবনে সৌদের পনেরতম সন্তান মুসাইদ বিন আবদুল আজিজকে বিয়ে করেন। মুসাইদ ও ওয়াতফার সন্তান ফয়সাল বিন মুসাইদ বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজের হত্যাকারী ছিলেন।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. McHale, T. R. (Autumn ১৯৮০)। "A Prospect of Saudi Arabia"International Affairs (Royal Institute of International Affairs 1944-)56 (4): 622–647। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২ 
  2. Al Rasheed, Madawi (১৯৯১)। Politics in an Arabian Oasis. The Rashidis of Saudi Arabia। New York: I. B. Tauirs & Co. Ltd.। 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

Many foreign travellers visited the Rashidi amirs at Ha'il and described their impressions in journals and books, including:

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  • Al Rasheed on hukam.net, with pictures and flags. (আরবি)