ইতিহাস
ইতিহাস |
---|
অতীতকে যারা মনে রাখতে পারে না তারা এর পুনরাবৃত্তি করার দোষে দুষ্ট।[১]
—জর্জ সান্তায়ানা
ইতিহাস[ক] হলো, অতীত বৃত্তান্ত বা কালানুক্রমিক অতীত কাহিনি ও কার্যাবলির লিখন, বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন।[২][৩][৪][৫] তবে কোনো কোনো দার্শনিক (যেমন- বেনেদেত্তো ক্রোচে) মনে করেন যে, ইতিহাস হলো বর্তমান। কারণ অতীত ঘটনাগুলোই বর্তমানে "ইতিহাস" হিসাবে অধ্যয়ন করা হয়।[৬] বৃহৎ একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এটি কখনো মানবিক বিজ্ঞান এবং কখনো বা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই ইতিহাসকে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। কারণ ইতিহাসে এই উভয়বিধ শাস্ত্র থেকেই পদ্ধতিগত সাহায্য ও বিভিন্ন উপাদান নেওয়া হয়। ইতিহাসের উদ্দেশ্য হলো, বর্তমানের সাথে অতীতকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা।[৬]
একটি শাস্ত্র হিসেবে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো উপবিভাগের নাম চলে আসে। তার মধ্যে রয়েছে, দিনপঞ্জি, ইতিহাস লিখন (হিস্ট্রিওগ্রাফি), কুলজি শাস্ত্র, প্যালিওগ্রাফি, ক্লায়োমেট্রিক্স ইত্যাদি। স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে, ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, যদিও কেবল লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসে সকল তত্ত্ব উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যে উৎসগুলো বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়– লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক বা প্রত্যক্ষকরণ। ইতিহাসবেত্তারা সাধারণত তিনটি উৎসই বিশ্লেষণ করে দেখেন। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে লিখিত উপাদান সর্বজনস্বীকৃত। এই উৎসটির সাথে লিখন পদ্ধতির ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
শব্দের উৎপত্তি
[সম্পাদনা]ইংরেজি "হিস্ট্রি" শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে "ইতিহাস" শব্দটি এসেছে। ইংরেজি History শব্দটি এসেছে গ্রিক ও লাতিন শব্দ ἱστορία - Historia থেকে, যার অর্থ সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত গ্রিসের হেরোডোটাস তাঁর গ্রিক ও পারসিকদের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনাসম্বলিত গ্রন্থের নামকরণ করেন Historia (যার ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে "Histories")। মূলত ঘটনার অনুসন্ধান অর্থে হেরোডোটাস Historia শব্দটি ব্যবহার করেন।
বাংলা ভাষায় "ইতিহাস" শব্দটি এসেছে ‘ইতিহ’ শব্দমূল থেকে, যার অর্থ ঐতিহ্য। এটি হলো একটি তৎসম শব্দ, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। ইতিহাস শব্দটির রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়- ইতহ + √অস্ + অ – যার অর্থ হলো "এমনটিই ছিল বা এমনটিই ঘটেছিল।"
লিখনধারা
[সম্পাদনা]ইতিহাস লিখনধারার সম্পর্কিত বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। প্রথমত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- পদ্ধতি ও অনুশীলনের বিকাশের গল্প। দ্বিতীয়ত, এটি বুঝায় কী সৃষ্টি করেছে, যেমন- ইতিহাস লিখনরীতির নির্দিষ্ট বিষয়। তৃতীয়ত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- ইতিহাসের দর্শন। অতীতের বর্ণনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃতীয় ধারণাটি প্রথম দুটি ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়, যা মূলত বর্ণনা, ব্যাখ্যা, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ, সাক্ষ্য বা প্রমাণের ব্যবহার, বা অন্যান্য ইতিহাসবেত্তাদের উপস্থাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাস কি একক বর্ণনা নাকি ধারাবাহিক বর্ণনা হিসেবে শিখানো হবে তা নিয়ে পেশাদারী ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।[৭][৮]
দর্শন
[সম্পাদনা]ইতিহাসের দর্শন হলো দর্শনের একটি শাখা যেখানে ঘটনাবলির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশেষ করে মানবীয় ইতিহাস।[৯] এছাড়া এই শাখায় এর বিকাশের সম্ভাব্য পরমকারণমূলক সমাপ্তির কথা বিবেচনা করা হয়, যেমন- মানবীয় ইতিহাসের পদ্ধতিতে কোনো নকশা, কারণ, নীতি, বা সমাপ্তি রয়েছে কিনা। ইতিহাসের দর্শনকে ইতিহাস লিখনধারার সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। ইতিহাস লিখনধারায় ইতিহাসের পদ্ধতি ও অনুশীলন এবং ইতিহাসকে একটি নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে এর বিকাশের উপর জোড় দেওয়া হয়।[১০] আবার ইতিহাসের দর্শনকে দর্শনের ইতিহাসের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না, কারণ দর্শনের ইতিহাস হলো একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দর্শনের ধারণাসমূহের বিকাশ নিয়ে অধ্যয়ন।
অধ্যয়নের ক্ষেত্র
[সম্পাদনা]যুগ নির্ধারণ
[সম্পাদনা]ইতিহাস এক নির্দিষ্ট সময়ে ঘটা ঘটনাবলি ও উন্নয়নকে কেন্দ্র করে লিখিত হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ সেই সময় বা যুগকে একটি নির্দিষ্ট নাম দিয়ে চিহ্নিত করেন।[১১] ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই নামসমূহ ভিন্ন হতে পারে, যেমন- সেই যুগের শুরুর সময় ও সমাপ্তির সময়। শতাব্দী ও দশক হলো বহুল ব্যবহৃত যুগ নির্দেশক এবং কালপঞ্জি অনুসারে এই যুগ নির্ধারিত হয়। বেশিরভাগ যুগ পূর্ববর্তী ঘটনার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় এবং এর ফলে এতে পূর্ববর্তী সময়ে ব্যবহৃত মৌলিক ধারণা ও বিচারবুদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। যে পদ্ধতিতে যুগসমূহের নাম দেওয়া হয় তা এই যুগসমূহকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে এবং কীভাবে অধ্যয়ন করা হচ্ছে তাকে প্রভাবিত করে।[১২]
সময়কালভিত্তিক
[সম্পাদনা]- প্রাক-ইতিহাস
- প্রাচীন ইতিহাস
- মধ্যযুগ
- আধুনিক বিশ্ব
- সমসাময়িক
ভৌগোলিক অবস্থান
[সম্পাদনা]নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, যেমন- মহাদেশ, দেশ ও শহরও ইতিহাস অধ্যয়নের ক্ষেত্র। ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কেন ঘটেছিল তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণ জানার জন্য ইতিহাসবেত্তাগণ ভূগোল অধ্যয়ন করে থাকেন।
অঞ্চলভিত্তিক
[সম্পাদনা]- অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস রচনা শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলে স্থানীয় অস্ট্রেলীয়দের সাথে মাকাসারের বাণিজ্যের নথি থেকে।
- আফ্রিকার ইতিহাস শুরু হয় এই মহাদেশে আধুনিক মানব সভ্যতার প্রথম বিকাশের মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে আধুনিক বর্তমান কাল পর্যন্ত চলতে থাকে।
- আমেরিকার ইতিহাস হলো উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার একত্রিত ইতিহাস তথা সমগ্র আমেরিকা অঞ্চলের ইতিহাস, এছাড়া এতে মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় ইতিহাসও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- উত্তর আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর উত্তর ও পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস।
- দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর দক্ষিণ ও পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস।
- মধ্য আমেরিকার ইতিহাস হলো পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাস।
- ক্যারিবীয় ইতিহাস শুরু হয় ৭,০০০ বছরের পূর্বে।
- ইউরেশিয়ার ইতিহাস হলো মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের ইতিহাস।
- ইউরোপের ইতিহাস ইউরোপ মহাদেশে মানব সভ্যতার বসবাসের শুরুর সময় থেকে বর্তমান সময়।
- এশিয়ার ইতিহাস হলো কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল, যথা- পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যের সম্মিলিত ইতিহাস।
- পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস হলো পূর্ব এশিয়ার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ইতিহাস।
- দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস হলো দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক ও বৈদেশিক ক্ষমতার ইতিহাস।
- মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস হলো খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে বিকাশ লাভ করা সর্বপ্রাচীন সভ্যতার মেসোপটেমিয়া (ইরাক) থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান মধ্য প্রাচ্যের ইতিহাস।
- ভারতের ইতিহাস উপ-হিমালয় অঞ্চলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ইতিহাস।
- অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাস ধারণার বিকাশ ঘটে প্রারম্ভিক পশ্চিমা তত্ত্ব তেরা আউস্ত্রালিস নামক বৃহৎ মহাদেশের ধারণা থেকে, এবং ধারণা করা হতো তা পৃথিবীর দক্ষিণে অবস্থিত।
- নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস শুরু হয় যখন ৭০০ বছর পূর্বে পলিনেশীয় কর্তৃক আবিষ্কৃত এবং তাঁরা সেখানে বসতি স্থাপন করে।
- প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহের ইতিহাস হলো প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপসমূহের ইতিহাস।
অর্থনৈতিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]যদিও অর্থনৈতিক ইতিহাস উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বর্তমান সময়ে অর্থনীতি বিভাগে এই বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং তা প্রথাগত ইতিহাস বিভাগ থেকে ভিন্ন।[১৩] ব্যবসায় তত্ত্বে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক কৌশল, সরকারি নিয়মকানুন, শ্রম বিভাগের সম্পর্কের ইতিহাস ও সমাজে এর প্রভাব বর্ণিত হয়। এছাড়া এতে নির্দিষ্ট কোম্পানি, নির্বাহী, ও উদ্যোক্তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়। ব্যবসায় তত্ত্ব অর্থনৈতিক ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এবং তা ব্যবসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান করা হয়।[১৪]
ধর্মের ইতিহাস
[সম্পাদনা]ধর্মের ইতিহাস শতাব্দীকাল ধরে ধর্মবহির্ভূত ও ধার্মিক দুই শ্রেণির ইতিহাসবেত্তাদের কাছে প্রধান বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এবং ধর্মীয় শিক্ষালয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তা শিখানো হচ্ছে। এই ধরনের ইতিহাস বিষয়ক প্রধান সাময়িকীসমূহ হলো চার্চ হিস্টরি, দ্য ক্যাথলিক হিস্টরিক্যাল রিভিউ, এবং হিস্টরি অফ রিলিজিয়ন্স।[১৫] সাধারণত এর বিষয়বস্তু হয়ে থাকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক দিক, এমনকি ধর্মতত্ত্ব ও প্রার্থনার বিধিও। এই বিষয়ের অধীনে পৃথিবীর যে সকল অঞ্চল ও এলাকায় মানুষ বসবাস করেছে, সে সকল অঞ্চল ও এলাকার ধর্ম নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।[১৬]
পরিবেশগত ইতিহাস
[সম্পাদনা]পরিবেশগত ইতিহাস হলো ইতিহাসের একটি নবীন ক্ষেত্র, যা ১৯৮০-এর দশকে বিকাশ লাভ করে। এতে পরিবেশের ইতিহাস এবং পরিবেশের উপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়।[১৭]
বিশ্বের ইতিহাস
[সম্পাদনা]বিশ্বের ইতিহাস হলো গত ৩০০০ বছর ধরে প্রধান প্রধান সভ্যতার বিকাশের অধ্যয়ন। বিশ্বের ইতিহাস মূলত শিক্ষার একটি ক্ষেত্র। বিষয়টি ১৯৮০-এর দশকের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,[১৮] জাপান[১৯] ও অন্যান্য দেশে বিশ্বায়নের ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সংস্কৃতির ইতিহাস
[সম্পাদনা]সংস্কৃতির ইতিহাস হলো সমাজে শিল্পকলা ও মানুষের চিত্র ও দৃশ্য ধারণার অধ্যয়ন। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এটি সামাজিক ইতিহাসের স্থলাভিষিক্ত হয়। এটি মূলত নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সমন্বিত রূপ যেখানে ভাষা, জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। এতে অতীতে মানুষের জ্ঞানচর্চা, প্রথা ও শিল্পের নথি ও বর্ণনা পরীক্ষা করা হয়। অতীতে মানুষ কীভাবে তাদের স্মৃতি ধরে রেখেছিল তা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আলোচনার প্রধান বিষয়।[২০]
সেনাবাহিনীর ইতিহাস
[সম্পাদনা]সেনাবাহিনীর ইতিহাস হলো যুদ্ধবিগ্রহ, যুদ্ধ কৌশল, যুদ্ধ, অস্ত্র ও যুদ্ধের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ধারণা। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে আবির্ভূত হওয়া নব্য সেনাবাহিনীর ইতিহাস সেনাপ্রধানদের চেয়ে সৈন্যদের প্রতি বেশি আলোকপাত করে, বিশেষ করে রণকৌশলের চেয়ে তাঁদের মনস্তত্ত্ব এবং সমাজ ও সংস্কৃতিতে যুদ্ধ বিগ্রহের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।[২১]
ইতিহাসবেত্তা
[সম্পাদনা]পেশাদার ও অপেশাদার ইতিহাসবেত্তগণ পূর্ববর্তী ঘটনাবলি আবিষ্কার, সংগ্রহ, সংগঠিত ও উপস্থাপন করেন। তাঁরা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, পূর্বের লিখিত মৌলিক উৎস ও অন্যান্য উপায়ে, যেমন- স্থানের নামের তথ্য আবিষ্কার করেন। ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় ঐতিহাসিক যুগের কালক্রম অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, বিশেষ করে তাদের ইতিহাস লেখার সময় অনুসারে কারণ তিনি যে সময়ে বর্তমান ছিলেন সেই সময়ের ইতিহাস না লিখে অন্য কোনো সময়ের ইতিহাস রচনায় বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। কালনিরূপক ও আখ্যানকারগণ যদিও ইতিহাসবেত্তা নন, তবে কিছু ক্ষেত্রে তাঁদেরকেও ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ছদ্মইতিহাস
[সম্পাদনা]ছদ্মইতিহাস হলো এমন লিখিত রূপ যার সারমর্ম ঐতিহাসিক প্রকৃতির, কিন্তু ইতিহাস লিখনধারার চিরাচরিত রূপ থেকে ভিন্ন এবং এতে পরিণতি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি ঐতিহাসিক নেতিবাচকতার সাথে সম্পৃক্ত এবং জাতীয়, রাজনৈতিক, সেনাবাহিনী ও ধর্ম বিষয়ে নতুন, কল্পনাপ্রসূত ও বিরোধপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রমাণের মাধ্যমে উপসংহার টেনে থাকে।[২২]
প্রাগৈতিহাস
[সম্পাদনা]মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিকাশের ইতিহাস, কিন্তু প্রশ্নটি সবসময় বিতর্কিত ছিল যে আদিমানুষ ও তাঁদের সভ্যতা কখন ও কোথায় বিকশিত হয়েছিল। ইতিহাসের এই অধ্যয়নকে বলা হয় প্রাগৈতিহাস। অর্থাৎ ইতিহাসের আগের ইতিহাস। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানবসভ্যতা চারটি ভাগে বিভক্ত-[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- আদিপ্রস্তর যুগ
- প্রাথমিক প্রস্তর যুগ
- প্রয়াত প্যালিওলিথিক যুগ
- ধাতু সময়কাল
প্রাচীনতম মানবসভ্যতা বিষয়ক অধ্যয়ন
[সম্পাদনা]হাজার বছর বর্বরতা থেকে অর্ধসভ্যতা এবং অর্ধসভ্যতা থেকে সভ্যতার প্রথম স্তর পর্যন্ত আবৃত থাকে। কিন্তু পৃথিবীর কোন সময়ে, কীভাবে এই সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে আজও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে এটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, প্রাচীন বিশ্বের সকল সভ্যতা নদীর উপত্যকায় উদ্ভূত এবং সমৃদ্ধ হয়েছিল। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ও অ্যাসিরীয় সভ্যতা দজলা-ফুরাত নদী উপত্যকায়, নীলনদ উপত্যকায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা এবং সিন্ধু নদী উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]উদ্ধৃতি
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ উচ্চারণ: ইতিহাশ [ɪt̪ɪˌɦaʃ]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ জর্জ সান্তায়ানা, "দ্য লাইফ অফ রিজন" (ইংরেজি ভাষায়), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮২, বিব্লিওলাইফ, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫৫৯-৪৭৮০৬-২
- ↑ "ইতিহাস শব্দের অর্থ | ইতিহাস সমার্থক শব্দ"। English-bangla.com।
- ↑ জোসেফ, ব্রায়েন (এড.); জান্ডা, রিচার্ড (এড.) (২০০৮)। The Handbook of Historical Linguistics (ইংরেজি ভাষায়)। ব্ল্যাকওয়েল পাবলিশিং (প্রকাশিত হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০০৪)। পৃষ্ঠা ১৬৩। আইএসবিএন 978-1-4051-2747-9।
- ↑ "What Is History? A Collection of Definitions" [ইতিহাস কি? সংজ্ঞার একটি সংগ্রহ] (ইংরেজি ভাষায়)। থটকো। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "What is History & Why Study It?" [ইতিহাস কি এবং কেন অধ্যয়ন করা হয়?] (ইংরেজি ভাষায়)। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ ক খ আরিফ, মেহেদী। "ইতিহাস অর্থ অতীত নহে"। মতামত। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ আর্নস্ট ব্রেইসাখ, হিস্টোরিওগ্রাফি: এনশ্যেন্ট, মিডিভ্যাল, অ্যান্ড মডার্ন (ইংরেজি ভাষায়), শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ২০০৭।
- ↑ গেওর্গ জি. ইগার্স, হিস্টোরিওগ্রাফজ ইন দ্য টুয়েন্টিয়েন্থ সেঞ্চুরি: ফ্রম সাইন্টিফিক অবজেক্টিভিটি টু দ্য পোস্টমডার্ন চ্যালেঞ্জ (ইংরেজি ভাষায়), ২০০৫।
- ↑ ডব্লিউ. এইচ. ওয়াল্শ, ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য ফিলোসফি অফ হিস্টোরি (১৯৫১) ১ম অধ্যায়, ২য় অংশ (ইংরেজি ভাষায়)
- ↑ কলিনি, স্টেফান (অক্টোবর ১৯৮৫)। "What is Intellectual History?" [বুদ্ধিজীবী ইতিহাস কি?]। হিস্টরি টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ৩৫ (১০)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ মারউইক, আর্থার ল (১৯৭০)। The Nature of History [ইতিহাসের প্রকৃতি] (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ম্যাকমিলান প্রেস লিমিটেড। পৃষ্ঠা 169।
- ↑ টশ, জন (২০০৬)। The Pursuit of History [ইতিহাসের সাধনা] (ইংরেজি ভাষায়)। পিয়ারসন এডুকেশন লিমিটেড। পৃষ্ঠা 168–169।
- ↑ রবার্ট ওয়াপেল্স, "ইজ ইকোনমিক হিস্টরি এ নেগলেটেড ফিল্ড অফ স্টাডি?," হিস্টোরিক্যালি স্পিকিং (এপ্রিল ২০১০), খণ্ড ১১#২, পৃষ্ঠা ১৭-২০, তথ্যসূত্র হিসাবে পৃষ্ঠা ২০-২৭ (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ফ্রাঞ্চো আমাতোরি, এবং জিওফ্রে জোন্স, বিজনেস হিস্টরি অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৩) online edition ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জুন ২০০৯ তারিখে
- ↑ কোচরেইন, এরিক (১৯৭৫)। "What Is Catholic Historiography?" [ধর্মমতাবলম্বী ইতিহাস কি?]। ক্যাথলিক হিস্টরিক্যাল রিভিউ (ইংরেজি ভাষায়)। ৬১ (২): ১৬৯–১৯০। জেস্টোর 25019673।
- ↑ গায়ানো, সোফিয়া বোয়েশ; কালিও, তোমাসো (১৯৯৮)। "Italian Religious Historiography in the 1990s" [১৯৯০-এর দশকে ইতালীয় ধার্মিক ইতিহাস লিখন]। জার্নাল অফ মডার্ণ ইতালিয়ান স্টাডিজ (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ (৩): ২৯৩–৩০৬।
- ↑ হিউগ্স, জে. ডি. (২০০৬)। ওয়াট ইজ এনভায়রন্মেন্টাল হিস্টরি।
- ↑ আইন্সলি এম্ব্রে এবং ক্যারোল গ্লাক, এশিয়া ইন ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড হিস্টরি: এ গাইড ফর টিচিং, এম.ই. শার্প, ১৯৯৭ (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ আকিতা, শিগেরু (২০১০-এর বসন্ত মৌসুম)। "World History and the Emergence of Global History in Japan" [বিশ্ব ইতিহাস ও জাপানে বৈশ্বিক ইতিহাসের উত্থান]। চাইনিজ স্টাডিজ ইন হিস্টরি (ইংরেজি ভাষায়)। ৪৩#৩: ৮৪–৯৬। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ দ্য ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ডিকশনারি অফ ইমেইজেস: লরা গের্ভেরো, "Dictionnaire mondial des images", প্যারিস, নভ্যো মঁদ, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১১২০, আইএসবিএন ৯৭৮-২-৮৪৭৩৬-১৮৫-৮। (with 275 specialists from all continents, all specialities, all periods from Prehistory to nowadays) ; Laurent Gervereau, "Images, une histoire mondiale", Paris, Nouveau monde, 2008, 272p., আইএসবিএন ৯৭৮-২-৮৪৭৩৬-৩৬২-৩
- ↑ পাভকোভিচ, মাইকেল; মরিলো, স্টেফেন (২০০৬)। ওয়াট ইজ মিলিটারি হিস্টরি? (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড: পলিটি প্রেস (প্রকাশিত হয় ৩১ জুলাই ২০০৬)। পৃষ্ঠা ৩–৪। আইএসবিএন 978-0-7456-3390-9।
- ↑ নোভিকভ, এস. পি. (২০০০)। "Pseudohistory and pseudomathematics: fantasy in our life" [ছদ্মইতিহাস ও ছদ্মগণিত: আমাদের জীবনের কল্পনা]। রাশিয়ান ম্যাথম্যাটিকাল সার্ভেস (ইংরেজি ভাষায়)। ৫৫।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "ইতিহাস" - বাংলাপিডিয়া
- Best history sites .net ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ মার্চ ২০২১ তারিখে
- BBC History Site
- Internet History Sourcebooks Project See also Internet History Sourcebooks Project. Collections of public domain and copy-permitted historical texts for educational use
- The History Channel Online
- History Channel UK