বিষয়বস্তুতে চলুন

উইলহেম কাউয়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উইলহেম কাউয়ার
জন্ম২৪ই জুন, ১৯০০
মৃত্যু২২ই এপ্রিল, ১৯৪৫ (৪৪ বছর)
বার্লিন-মেরিয়েনফেল্ড জার্মানি
জাতীয়তাজার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন
দাম্পত্য সঙ্গীক্যারোলিন কাউয়ার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রগণিত
ডক্টরাল উপদেষ্টাজর্জ হামেল
ডক্টরেট শিক্ষার্থীভিটোল্ড বেলেভিচ

উইলহেম কাউয়ার (২৪ জুন, ১৯০০ - ২২ এপ্রিল, ১৯৪৫[]) একজন জার্মান গণিতবিদবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বৈদ্যুতিক ফিল্টার বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন এবং তার অবদানকে নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণ ক্ষেত্রের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার কাজের পূর্বে বৈদ্যুতিক ফিল্টার নকশায় ব্যবহুত কৌশলগুলো এমন ছিল যা কেবল অবাস্তব কন্ডিশনে ফিল্টার আচরণের সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেয়। নকশা সংযুক্ত করার জন্য উপযুক্ত সেকশন নির্বাচন করতে ডিজাইনারের বিশেষ কিছু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। কাউয়ার একটি গাণিতিক ফর্ম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে একটি ক্ষেত্র স্থাপন করেন, যেটি একটি বৈদ্যুতিক ফিল্টারের নকশার জন্য সবিস্তার বিবরণী দিতে সঠিক সমাধান বের করতে পারে।

শুরুতে কাউয়ার জেনারেল রিলেটিভিটিতে বিশেষজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু পরে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল এ রুপান্তরিত হন। জার্মান সহায়ক সংস্থা বেল টেলিফোন কোম্পানিতে নিয়োগের পর তার কর্ম তাকে ফিল্টার ক্ষেত্রে আমেরিকান শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। ১৯২০ এর দশকের জার্মান অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় যখন কাউয়ার তার বাচ্চাদের ভরণ-পোষণের ভার বহনে অক্ষম ছিলেন, তখন তিনি অর্থ সঙ্কটে আমেরিকায় পাড়ি দেন। তিনি জার্মানিতে ফিরে আসার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। কাউয়ারের পুত্র এমিল এর মতে জার্মানিতে নাজিবাদের উত্থান কাউয়ারের কর্মজীবনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল, কারণ তার পূর্ব পুরুষ ছিল প্রত্যন্ত ইহুদী[]। বার্লিনের পতনের সময় সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা কাউয়ারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাউয়ারের অপ্রকাশিত কাজের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পাণ্ডুলিপি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তারপরও কাউয়ারের মৃত্যুর পর তার পরিবার তার পান্ডুলিপির অনেকাংশ ও Theorie der linearen Wechselstromschaltungen এর ভলিয়ম-২ পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিল, যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণসহ নেটওয়ার্ক নকশার পছন্দ পদ্ধতির জন্য কাউয়ারের ধারা এখনও অব্যাহত আছে।

জীবন এবং কর্ম

[সম্পাদনা]

প্রথম জীবন এবং পরিবার

[সম্পাদনা]

উইলহেম এডলফ ইডুয়ার্ড কাউয়ার ২৪ই জুন, ১৯০০ সালে জার্মানির বার্লিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাকে একাডেমির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তার পূর্বের গ্রামার স্কুল (জিমনেসিয়াম) ছিল কাইসেরিন আগাস্টা জিমনেসিয়াম, যেটি তার দাদা লুডভিগ কাউয়ার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। স্কুলটি বার্লিনের চার্লটেনবার্গ জেলার কাউস্ট্রেসেস নামক জায়গায় অবস্থিত (জায়গাটি পরে তার দাদার নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে)[]। স্কুলের বিল্ডিংটি এখনও বর্তমান, তবে এটি এখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়; যার নাম লুডভিগ কাউয়ার গ্রান্ডসুল []। পরে তিনি বার্লিনের মমসেন জিমনেসিয়াম এ ভর্তি হন। তার বাবা ছিলেন প্রাইভি কাউন্সিলর এবং টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন এ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসর ছিলেন। কাউয়ার ১৩ বছর বয়স থেকেই গণিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে একাডেমির প্রতি তার বিশেষ ঝোক প্রদর্শনে অক্ষুণ্ণ রাখেন[]

সংক্ষেপে, কাউয়ার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে জার্মানির সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। সে ১৯২৫ সালে ক্যারোলিন কাউয়ারকে বিয়ে করেন[] এবং শেষ পর্যন্ত ৬ সন্তানের জনক হয়েছিলেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

কাউয়ার এমন ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেছিল যেটি ফিল্টারের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত ছিলনা। তিনি ১৯২২ সাল থেকে ম্যাক্স ভন লেউ এর সাথে জেনারেল রিলেটিভিটির উপর কাজ করা শুরু করেন এবং সেই ক্ষেত্রে উপর তার প্রথম প্রকাশনা ছিল ১৯২৩ সালে। কিন্তু এর পরে তিনি ঠিক কোন কারণে জেনারেল রিলেটিভিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে চলে আসেন তা পরিষ্কার নয়। তিনি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন থেকে ১৯২৪ সালে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গ্রাজুয়েট করেন[]

এরপরে তিনি কিছু সময় টেলিফোন সুইচের প্রোবেবিলিটি থিউরি প্রয়োগ করতে বেল টেলিফোন কোম্পানিতে মিক্স এন্ড জেনেস্ট এর জন্য কাজ করেছেন। তিনি টাইমার রিলেতেও কাজ করেছেন। সে সময় তার টেলিকমিউনিকেশন সম্পর্কিত “টেলিফোন সুইচিং সিস্টেম” ও “লসেস অব রিয়েল ইন্ডাক্টরস” নামে দুইটি প্রকাশনা ছিল[]

বেল এর মিক্স এন্ড জেনেস্ট এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাউয়ারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবে এটিএন্ডটি এর প্রকৌশলীদের সহযোগীতা করার জন্য একটি সহজ পথ করে দিয়েছিল, যখন কাউয়ার ফিল্টার ডিজাইনের একটি গবেষণা শুরু করলেন সেই মুহুর্তে এটি বড় ধরনের সহায়তা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের জর্জ ক্যাম্পবেল ও নিউ ইয়র্কের অটো জোবেল প্রকৌশলীদ্বয়ের বিশেষ অবদানে বেল এই সময়ে ফিল্টার ডিজাইন করার ক্ষেত্রে শীর্ষে[]। যাইহোক,এটি আর.এম ফস্টারের সাথে ছিল যে কাওয়ারের খুব প্রতিবেদন ছিল এবং এটি তার কাজ যা কাউয়ার এতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার জন্য স্বীকৃত। তার “A reactance theorem” গবেষণাপত্রটি ফিল্টার তত্ত্বের একটি মাইলফলক[] এবং এটি কাউয়ারকে এই পদ্ধতির সাধারণীকরণের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল, যা এখন নেটওয়ার্ক সংশ্লেষের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে[]

১৯২৬ সালের জুনে কাউয়ার তার The realisation of impedances of specified frequency dependence গবেষণাপত্রটি বার্লিনের ইনস্টিটিউট অব এপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স এন্ড মেকানিক্স অব দ্যা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে উপস্থাপন করেন[]। এই গবেষণাপত্রটিই আধুনিক নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণের সূচনা[]

১৯২৭ সালে কাউয়ার গ্যাটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড কুরান্ট এর ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্স এ গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করতে যান[]

১৯২৮ সালে তিনি তার হ্যাবিলিটেশন অর্জন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বহিরাগত প্রভাষক হন।

কাউয়ার দেখেন যে ১৯২০ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময় তিনি তার পরিবারকে সাহায্য করতে পারতেছেন না। তাই তিনি পরিবারসহ আমেরিকাতে পাড়ি জমান এবং সেখানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য শিক্ষাবৃত্তি (রকফেলার ফেলোশিপ) অর্জন করেন। তিনি ভেনেভার বুশ এর সাথে কাজ করেছিলেন যিনি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য মেশিন তৈরি করেছিলেন। মূলতঃ ঐ মেশিনগুলোকে আমরা এনালগ কম্পিউটার বলবো। কাউয়ার ফিল্টার ডিজাইনে সহায়তার জন্য লিনিয়ার সিস্টেমগুলি সমাধান করতে সেগুলোকে ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। ১৯৩১ সালে “ফিল্টার সার্কিট” এর উপর তার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়, যা এখনও আমেরিকাতে বিদ্যমান আছে[]

বেল ল্যাবে ফিল্টার ডিজাইনের ক্ষেত্রে মূল গবেষকদের অনেকের সাথে কাউয়ারের পরিচয় হয়েছিল এবং তিনি তাদের সাথে অনেক ভালো যোগাযোগ রেখেছিলেন। এর মধ্যে হেনড্রিক বোড, জর্জ ক্যাম্পবেল, সিডনি ডার্লিংটন, ফস্টার এবং অটো জোবেল অন্যতম[১০]

কাউয়ার খুব অল্প সময়ের জন্য নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির ওয়্যার্ড রেডিও কোম্পানিতে কাজ করেন। কিন্তু তারপরে তিনি ফাস্ট অ্যানালগ কম্পিউটার তৈরির অভিপ্রায় নিয়ে জার্মানির গ্যাটিনজেনে ফিরে আসেন। তবে তিনি হতাশার কারণে কাজের জন্য তহবিল গঠন করতে ব্যর্থ হন।

কাউয়ার মনে হয় তার জার্মান সহকর্মীদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছেন। রাইনার পাওলির মতে, তাদের সাথে তার যোগাযোগ সাধারণত সংক্ষিপ্ত এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল, যেটা খুব কমই হত, যদি কখনও হত, তবে গভীরতার সাথে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতেন। বিপরীতদিকে, তার আমেরিকান এবং ইউরোপীয় পরিচিতদের সাথে তার চিঠিপত্র উষ্ণ ও প্রযুক্তিগতভাবে গভীর ছিল এবং প্রায়শই ব্যক্তিগত ও পরিবারের সংবাদ এবং শুভেচ্ছা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই চিঠিপত্রটি তার আমেরিকান যোগাযোগের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং ওয়েম্বলিতে জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির এ.সি. বার্টলেট, প্যারিসের লিগনেস তেলাগ্রাফিক্স এট ট্যালাফোনিক্স এর রজার জুলিয়া, গণিতবিদ গুস্তাভ হারগ্লাটজ, জর্গ পিক এবং হাঙ্গেরিয়ান গ্রাফের তাত্ত্বিক ডনেস কনিগ এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

মিক্স এন্ড জেনেষ্ট এর জন্য টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ছেড়ে যাওয়ার পরে, কাউয়ার ভেরব্যান্ড ডিউচার এলেক্রোট্রোটেকাইকার (ভিডিই, জার্মান ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স সোসাইটি) তে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক এবং সহযোগী ওয়াগনার মারাত্মকভাবে পড়ে যাওয়ার পরে তিনি ১৯৪২ সালে ভিডিই ছেড়ে দেন।

সমাজতন্ত্রের যুগ

[সম্পাদনা]

নভেম্বর 1933 সালে কাউয়ার Loyalty Oath of German Professors to Adolf Hitler and the National Socialist State স্বাক্ষর করেন।

১৯৩৩ সাল থেকে সমাজতন্ত্র বাদীদের ক্রমবর্ধমান শক্তি কাউয়ারের কাজের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তৎকালীন ইহুদী বিদ্বেষী আন্দোলন ম্যাথমেটিক্স ইনস্টিটিউট এর পরিচালক, রিচার্ড কুরান্টসহ অনেক শিক্ষাবিদকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। যদিও কাউয়ার ইহুদি ছিল না; তবে জানা যায় যে ড্যানিয়েল ইটজিগ নামে তার একজন ইহুদি পূর্বপুরুষ ছিলেন, যিনি প্রুশিয়ার দ্বিতীয় ফ্রেডারিক (Frederick II) এর ব্যাংকার ছিলেন। যদিও এই উত্থানের সময় জাতিবিশেষ আইন (রেস ল) অনুসারে কাউয়ারকে সরানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না, তদুপরি এর ফলে তার ভবিষ্যত কর্মজীবন স্তিমিত যায়। এভাবে একজন অধ্যাপক হিসেবে চিহ্নিত হলেও তিনি কখনোই নির্দিষ্ট চেয়ারে বসতে পারেন নি।

১৯৩৫ সালের মধ্যে তার ৩টি সন্তান হয়, যাদের ভরণ-পোষণ বহন করা কাউয়ারের পক্ষে আস্তে আস্তে কঠিন হয়ে পড়ে; যা তাকে শিল্পে ফিরে আসতে প্ররোচিত করেছিল। তিনি ১৯৩৬ সালে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিজিলার এ অস্থায়ীভাবে তাদের ফাই-১৫৬ স্টর্চ ক্যাসেল-এ কাজ করেন এবং তারপরে বার্লিনের মিক্স এন্ড জেনস্টের পরীক্ষাগারের পরিচালক হন। তবুও, ১৯৩৯ সাল থেকে তিনি বার্লিনের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকেন।

১৯৪১ সালে, তার মূল কাজের প্রথম খণ্ড Theory of Linear AC Circuits প্রকাশিত হয়। এর দ্বিতীয় খণ্ডের মূল পাণ্ডুলিপি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যদিও কাউয়ার এই খন্ডটি পুনরুৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এটি প্রকাশ করতে পারেননি এবং এটিও যুদ্ধের সময় হারিয়ে যায়। তার মৃত্যুর কিছু সময় পরে, তার পরিবার দ্বিতীয় খণ্ডের উদ্দিষ্ট বিষয়বস্তুতে থাকা বিবরণের উপর ভিত্তি করে তার কিছু কাগজপত্র প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাশিয়ানদের প্রত্যাশিত বার্লিনের পতন থেকে তার সন্তানদের রক্ষা করতে তাদের উইটজেনহাউসেন (হেসে) শহরে আত্মীয়দের কাছে রেখে কাউয়ার বার্লিনে ফিরে আসেন। যুদ্ধ শেষে তার মরদেহটি রাশিয়ানদের মৃত্যুদণ্ডের শিকার মানুষের গণকবরে পাওয়া যায়। সোভিয়েত সৈন্যরা বার্লিন-মেরিনফেল্ড এ কাউয়ারকে জিম্মি হিসেবে[] গুলি করে হত্যা করেছিলেন[১১]। যুদ্ধের সময় সোভিয়েত গোয়েন্দারা সক্রিয়ভাবে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান করতেছিল যেন তারা তাদের নিজস্ব গবেষণায় ব্যবহার করতে পারে এবং কাউয়ার তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এটি মনে হয় যে কাউয়ার তার হত্যাকারীর কাছে অজানা ছিল।

নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণ

[সম্পাদনা]

কাউয়ারের প্রধান অবদান প্যাসিভ নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণ। প্রকৃতপক্ষে, তাকে এই ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং ইংরেজিতে তার মূল গবেষণাপত্র প্রকাশনা উৎসাহের সাথে স্বাগত জানানো হয়েছিল, যদিও সতেরো বছর পরেও (1958 সালে) এটি ঘটেনি[১২]। নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণের আগে, নেটওয়ার্কগুলি, বিশেষত ফিল্টারগুলি ইমাজ ইমপেডেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করে নকশা করা হয়েছিল। এই জাতীয় নকশা থেকে প্রতিক্রিয়া পূর্বাভাসের নির্ভুলতা এর সেকসনগুলোর মধ্যে সঠিক প্রতিবন্ধকতার মিলের উপর নির্ভর করে। ফিল্টারটির সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ অংশগুলি দিয়ে এটি অর্জন করা যেতে পারে, তবে শেষ টার্মিনেশনের সাথে পুরোপুরি মিলানো সম্ভব ছিল না। এই কারণে ইমেজ ফিল্টার ডিজাইনার ফিল্টারিং প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে অধিকতর মিলের জন্য অনুকূলিত করে তাদের আলাদা ফর্মের নকশায় শেষ বিভাগগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। এই ধরনের সেকশনগুলির ফর্ম পছন্দ নকশা হিসাবের চেয়ে ডিজাইনারের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব ছিল বেশি। নেটওয়ার্ক সংশ্লেষ সম্পূর্ণরূপে এর প্রয়োজনটি সরিয়ে ফেলে। এটি সরাসরি ফিল্টারটির প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাস দেয় এবং সংশ্লেষণে এই পদক্ষেপগুলি সংযুক্ত করে।

কাউয়ার নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণকে নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের বিপরীত সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করেন। নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে কোনও প্রদত্ত নেটওয়ার্কের প্রতিক্রিয়া কী তা জানতে চাওয়া হয়। অন্যদিকে নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণ এমন কোন নেটওয়ার্কগুলি যা প্রদত্ত কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা জানতে চায়। কাউয়ার বৈদ্যুতিক পরিমাণ এবং ফাংশনকে তাদের যান্ত্রিক সমতুল্যের সাথে তুলনা করে এই সমস্যার সমাধান করেন।

কাউয়ারের মতে, তিনটি বড় কাজ রয়েছে যা নেটওয়ার্ক সংশ্লেষণ হিসেবে ধরতে হবে। প্রথমটি কোনও প্রদত্ত স্থানান্তর ফাংশন প্রতিবন্ধকতা নেটওয়ার্ক হিসাবে উপলব্ধিযোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা। দ্বিতীয়টি হ'ল এই ফাংশনগুলির ক্যানোনিকাল (ন্যূনতম) ফর্মগুলি এবং একই ট্রান্সফার ফাংশনকে উপস্থাপনকারী বিভিন্ন ফর্মের মধ্যে সম্পর্ক (রূপান্তর) খুজে বের করা।পরিশেষে, সাধারণভাবে, কোনও আদর্শ স্থানান্তর ফাংশনের সঠিক সীমাবদ্ধ সমাধানের সন্ধান করা সম্ভব নয় - যেমন প্রদত্ত কাটঅফ ফ্রিকোয়েন্সি নিচে সমস্ত ফ্রিকোয়েন্সিতে শূন্য নমনীয়তা এবং উপরের অসীম তাত্পর্য। তৃতীয় কাজটি হ'ল কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া অর্জনের জন্য আনুমানিক কৌশলগুলি অনুসন্ধান করা।

প্রথমদিকে, কাজটি একটি পোর্ট ইমপেডেন্স এর চারপাশে ঘোরে। প্রতিবন্ধকতার জন্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি ভোল্টেজ এবং একটি বর্তমান পরিমাণের মধ্যে স্থানান্তর ফাংশন। নেটওয়ার্কের একটি শাখা ভেঙে একটি দরকারি নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেতে পারে এবং এটাতে আউটপুট হিসেবে ধরা হয়।

রিয়েলাইজেবিলিটি

[সম্পাদনা]
  • ফস্টার থেকে অনুসরণ করে কাওয়ার একটি ওয়ান-পোর্ট নেটওয়ার্কের প্রতিবন্ধকতা এবং এর স্থানান্তর ফাংশনের জন্য প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ককে সাধারণীকরণ করেছিলেন।
  • তিনি ওয়ান -পোর্ট প্রতিবন্ধকতার বাস্তবতার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তটি আবিষ্কার করেছিলেন। এটি হ'ল সেই প্রতিবন্ধী অভিব্যক্তি যা প্রকৃতপক্ষে সত্যিকারের সার্কিট হিসাবে নির্মিত হতে পারে। পরবর্তী কাগজপত্রগুলিতে তিনি মাল্টিপোর্টপোর্ট নেটওয়ার্কগুলিকে সাধারণীকরণ করেন[১৩]

ট্রান্সফরমেশন

[সম্পাদনা]
  • কাউয়ার আবিষ্কার করেছিলেন যে প্রদত্ত প্রতিবন্ধী অভিব্যক্তিটি উপলব্ধির জন্য সমস্ত সমাধানগুলি এফাইন ট্রান্সফর্মেশনস এর একটি গ্রুপের দ্বারা প্রদত্ত সমাধান থেকে পাওয়া যেতে পারে।
  • তিনি ফস্টার এর লেডার রিয়েলাইজেশন ফিল্টারগুলিতে সাধারণীকরণ করেছিলেন যার মধ্যে প্রতিরোধক অন্তর্ভুক্ত ছিল (ফস্টার কেবলমাত্র প্রতিক্রিয়া ছিল) এবং সমস্ত দ্বি-উপাদান জাতীয় নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি আইসোমরফিজম আবিষ্কার করেছিলেন।
  • তিনি ফিল্টার উপলব্ধির ক্যানোনিকাল রূপগুলি চিহ্নিত করেছিলেন। এটি হ'ল, সর্বনিম্ন ফর্মগুলির মধ্যে স্টিলিটজেসের অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশ সম্প্রসারণ দ্বারা প্রাপ্ত লেডার নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত।

এপ্রোক্সিমেশন

[সম্পাদনা]
  • ফিল্টার ডিজাইনের জন্য তিনি চেবিশেভ এপ্রোক্সিমেশন ব্যবহার করেছিলেন। টেবিস্কেফ পলিনমিয়েলস্ এর ক্ষেত্রে কাউয়ারের প্রয়োগের ফলে ফিল্টারগুলি বর্তমানে উপবৃত্তীয় ফিল্টার বা কখনও কখনও কাউয়ার ফিল্টার হিসাবে পরিচিত হয়, যা প্রদত্ত সর্বাধিক ক্ষয়িষ্ণু প্রকরণের জন্য স্টপব্যান্ড ট্রানজিশনের পক্ষে সর্বোত্তমতম পাসব্যান্ড রয়েছে। সুপরিচিত চেবিশেভ ফিল্টারগুলি উপবৃত্তীয় ফিল্টারগুলির একটি বিশেষ কেস হিসাবে দেখা যেতে পারে এবং একই অনুমানের কৌশলগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কাওয়ারের কাজটি প্রথমে উপেক্ষা করা হয়েছিল কারণ তার ক্যানোনিকাল ফর্মগুলি আদর্শ ট্রান্সফর্মার ব্যবহুত ছিল।

আরও কাজ

[সম্পাদনা]

উপরের কাজগুলির বেশিরভাগটি কাওয়ারের প্রথম এবং দ্বিতীয় মনোগ্রাফগুলিতে রয়েছে এবং এটি মূলত ওয়ান-পোর্ট ব্যবস্থা। কাউয়ার তার আবাসিক থিসিস এ এই কাজটি সম্প্রসারণ করে দেখিয়েছেন যে ত্রি-উপাদান জাতীয় মাল্টিপোর্টের জন্য সাধারণ ক্ষেত্রে গ্লোবাল ক্যানোনিকাল ফর্মটি পাওয়া যায় না (এটি, তিনটি আর, এল এবং সি উপাদান সমন্বিত নেটওয়ার্ক) উপলব্ধি সমাধানের উৎপাদন, কারণ এটি দ্বি-উপাদান ধরনের ক্ষেত্রে হতে পারে।

কাউয়ার জ্যামিতিকভাবে প্রতিসম ২-পোর্টগুলিতে বারলেট এবং ব্রুনের কাজ সব প্রতিসাম্য 2-পোর্টগুলিতে প্রসারিত করেছিলেন, এটি ২-পোর্ট যা বৈদ্যুতিকভাবে প্রতিসম হয় তবে টোপোলজিকভাবে প্রতিসম নয়, যা অনেকগুলি ক্যানোনিকাল সার্কিট খুঁজে বের করে। তিনি অ্যান্টিমেট্রিক ২-পোর্টও অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি ফস্টারের উপপাদ্যকে 2-এলিমেন্ট এলসি এন-পোর্টগুলিতেও সম্প্রসারিত করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে সমস্ত সমতুল্য এলসি নেটওয়ার্কগুলি রৈখিক রূপান্তর দ্বারা একে অপরের কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে ।

প্রকাশনা

[সম্পাদনা]
  • Cauer, W, "Die Verwirklichung der Wechselstromwiderstände vorgeschriebener Frequenzabhängigkeit", Archiv für Elektrotechnik, vol 17, pp355–388, 1926.The realisation of impedances of prescribed frequency dependence (in German)
  • Cauer, W, "Über die Variablen eines passiven Vierpols", Sitzungsberichte d. Preuß. Akademie d.Wissenschaften, phys-math Klasse, pp268–274, 1927. On the variables of some passive quadripoles (in German)
  • Cauer, W, "Über eine Klasse von Funktionen, die die Stieljesschen Kettenbrüche als Sonderfall enthält", Jahresberichte der Dt. Mathematikervereinigung (DMV), vol 38, pp63–72, 1929. On a class of functions represented by truncated Stieltjes continued fractions (in German)
  • Cauer, W, "Vierpole", Elektrische Nachrichtentechnik (ENT), vol 6, pp272–282, 1929. Quadripoles (in German)
  • Cauer, W, "Die Siebschaltungen der Fernmeldetechnik", Journal of Applied Mathematics and Mechanics, vol 10, pp425–433, 1930. Telephony filter circuits (in German)
  • Cauer, W, "Ein Reaktanztheorem", Sitzungsberichte d. Preuß. Akademie d. Wissenschaften, phys-math. Klasse, pp673–681, 1931. A reactance theorem (in German)
  • *Cauer, W, Siebschaltungen, VDI-Verlag, Berlin, 1931. Filter circuits (in German)
  • *Cauer, W, "Untersuchungen über ein Problem, das drei positiv definite quadratische Formen mit Streckenkomplexen in Beziehung setzt", Mathematische Annalen, vol 105, pp86–132, 1931. On a problem where three positive definite quadratic forms are related to one-dimensional complexes (in German)
  • Cauer, W, "Ideale und lineare Transformationen", Elektrische Nachrichtentechnik (ENT), vol 9, pp157–174, 1932. Ideal transformers and linear transformations (in German)
  • Cauer, W, "The Poisson integral for functions with positive real part", Bull. Amer. Math. Soc., vol 38, pp713–717, 1932. Cauer, W, "Über Funktionen mit positivem Realteil", Mathematische Annalen, vol 106, pp369–394, 1932. On positive-real functions (in German)
  • Cauer, W, "Ein Interpolationsproblem mit Funktionen mit positivem Realteil", Mathematische Zeitschrift, vol 38, pp1–44, 1933. An interpolation problem of positive-real functions (in German)
  • Cauer, W, "Äquivalenz von 2n-Polen ohne Ohmsche Widerstände", Nachrichten d. Gesellschaft d. Wissenschaften Göttingen, math-phys. Kl., vol 1, N.F., pp1–33, 1934. Equivalence of 2-poles without resistors (in German)
  • Cauer, W, "Vierpole mit vorgeschriebenem Dämpfungsverhalten", Telegraphen-, Fernsprech-, Funk- und Fernsehtechnik, vol 29, pp185–192, 228–235, 1940. Quadripoles with prescribed insertion loss (in German)
  • Cauer, W, Theorie der linearen Wechselstromschaltungen, Vol.I, Akad. Verlags-Gesellschaft Becker und Erler, Leipzig, 1941. Theory of Linear AC Circuits, Vol I (in German)
  • Cauer, W, Synthesis of Linear Communication Networks, McGraw-Hill, New York, 1958. (published posthumously)
  • Cauer, W, Theorie der linearen Wechselstromschaltungen, Vol. II, Akademie-Verlag, Berlin, 1960. Theory of Linear AC Circuits, Vol II (published posthumously in German)
  • Brune, O, "Synthesis of a finite two-terminal network whose driving-point impedance is a prescribed function of frequency", J. Math. and Phys., vol 10, pp191–236, 1931.

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Piloty, Hans (১৯৫৭) (জার্মানে)। "Cauer, Wilhelm"।নতুন জার্মান জীবনী (এনডিবি)। 3। বার্লিন: ডাঙ্কার ও হামব্লোট। pp. 179 et seq.. (সম্পূর্ণ অনলাইন পাঠ্য)
  2. Emil Cauer: Wilhelm Cauer: His Life and the Reception of his Work
  3. "Die Geschichte unserer Schule", Ludwig Cauer Grundschule official site (in German), accessed and 29 July 2012.
  4. "Ludwig-Cauer-Grundschule Berlin" আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে, Architektur Bild Archiv (in German), accessed and 29 July 2012. Categories
  5. E. Cauer et al., p2
  6. ও'কনর, জন জে.; রবার্টসন, এডমুন্ড এফ., "উইলহেম কাউয়ার", ম্যাকটিউটর গণিতের ইতিহাস আর্কাইভ, সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় । Accessed and archived 29 July 2012.
  7. Bray, p62
  8. Foster, R M, "A reactance theorem", Bell System Technical Journal, Vol. 3, pp259–267, 1924.
  9. Belevitch, p850
  10. E. Cauer et al., p8
  11. Kemp, Dr. Peter Heinrich (2000). Meisenheimer Jugend (in German). p. 78. ISBN 978-3-89811-587-2
  12. Sooyoung Chang, Academic Genealogy of Mathematicians, page 60, World Scientific, 2010 ISBN 9814282294
  13. Cauer himself only proved necessity for this condition. Later, at MIT, Cauer supervised the doctoral thesis of O. Brune (1931)[g] which proved sufficiency of the condition now called positive-real or PR.

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

রেফারেন্সড কাজগুলি

[সম্পাদনা]
  • E. Cauer, W. Mathis, and R. Pauli, "Life and Work of Wilhelm Cauer (1900 – 1945)", Proceedings of the Fourteenth International Symposium of Mathematical Theory of Networks and Systems (MTNS2000), Perpignan, June, 2000. Retrieved online 19 September 2008.
  • Belevitch, V, "Summary of the History of Circuit Theory", Proceedings of the IRE, vol 50, pp848–855, May, 1962.
  • Bray, J, Innovation and the Communications Revolution, Institute of Electrical Engineers, 2002 ISBN 0852962185.
  • Matthaei, Young, Jones Microwave Filters, Impedance-Matching Networks, and Coupling Structures McGraw-Hill 1964.

অন্যান্য

[সম্পাদনা]
  • Guillemin, E A, "A recent contribution to the design of electrical filter networks". Journ. Math. Phys., vol 11, pp150–211, 1931-32.

A comparison of the methods of Cauer and Zobel

  • Julia, R, "Sur la Theorie des Filtres de W. Cauer", Bull. Soc. Franc. Electr., Oct, 1935.

Recommended by R. Pauli as the most profound treatise on Cauer's theory (in French).