বিষয়বস্তুতে চলুন

চিজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি থালায় বিভিন্ন ধরনের চিজ।
বাজারে গৌদা চিজের গোল্ডেন হুইল

চিজ এক ধরনের খাবার যাতে রয়েছে প্রোটিন এবং দুধের চর্বি, সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগলভেড়ার দুধ থেকে এটি তৈরি করা হয়। এটি দুধের প্রধান প্রোটিন কেসিন থেকে তঞ্চন বা জমাট বাঁধার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। দুধে এনজাইম (রেনেট) যোগ করার ফলে দুধে জটবন্ধন হয়ে ছানায় পরিণত হয়। ছানাগুলোকে আলাদা করে ছেঁকে নিয়ে একত্রে করে চূড়ান্ত চিজের রূপ দেওয়া হয়। যদিও অনেক চিজের ভিতরে অথবা পুরো চিজেই মণ্ড (নরম) থাকে। বিভিন্ন ধরনের চিজ দেখা যায় এবং তা শতাধিক প্রকারের হতে পারে। এদের বিভিন্ন রকমের নকশা, রঙ, স্বাদ, গন্ধ রয়েছে যা নির্ভর করে দুধের উৎস অর্থাৎ যে প্রাণীর দুধ তার খাদ্যাভাসের উপরেও নির্ভর করে। অনেক সময় অপাস্তুরিত বা পাস্তুরিত করা, চর্বির পরিমাণ, নির্দিষ্ট কোন ব্যাক্টেরিয়া, কতক্ষণ যাবৎ তা প্রক্রিয়া করা হয়েছে এগুলোর উপরও চিজের ধরন নির্ভর করে। অনেকে ঘ্রাণের জন্য এতে পুদিনা পাতা বা অন্যান্য পাতা, মসলা এবং কাঠের ধোঁয়া দিয়ে থাকে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

চিজ এর ইতিহাস হাজার হাজার বছর আগের এবং এর উৎস বিশ্বের বিভিন্ন অংশে খুঁজে পাওয়া যায়। চিজ এর সঠিক উৎপত্তি এখনো জানা সম্ভব হয়নি, তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে এটি দুর্ঘটনাক্রমে আদি মানুষের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। আদি মানুষেরা পশুদের পাকস্থলী থেকে তৈরি করা একধরনের পাত্রে দুধ সংরক্ষণ করত। পশুদের পাকস্থলীতে উপস্থিত প্রাকৃতিক রেনেট দুধ জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, ফলে দই এবং ঘোল তৈরি হয়। তারপর দইগুলিকে ঘোল থেকে আলাদা করে চিজ তৈরি করা হয়।

চিজ তৈরির প্রাচীনতম প্রমাণ ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে একটি আবিষ্কার করা হয় যা এখন আধুনিক তুরস্ক। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই সময়কালের মৃৎপাত্রের টুকরোগুলিতে চিজ তৈরির সরঞ্জাম এবং চিজের অবশিষ্টাংশের প্রমাণ পেয়েছেন।

ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষ চিজ তৈরির কৌশল আয়ত্তে আনতে পেরেছিল। প্রাচীন মিশরে, ভেড়া ও ছাগলের দুধ থেকে চিজ তৈরি করা হতো, যা পিরামিড নির্মাণের শ্রমিকদের জন্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরাও চিজ তৈরির দক্ষতার জন্যও সুখ্যাত ছিল। তারা গরু, ভেড়া এবং ছাগল থেকে দুধ সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের চিজ তৈরি করত।

মধ্যযুগে, চিজ তৈরি ইউরোপে একটি জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল যা সেখানকার মঠগুলির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মঠের সন্ন্যাসীরা পনির তৈরির নতুন কৌশল তৈরি করেছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের পনির নিয়ে পরীক্ষা করতেন। পরে তারা স্থানীয় লোকেদের সাথে তাদের দুধ চিজ তৈরির জ্ঞান ভাগ করে নেয় এবং এভাবে চিজ তৈরি করা পুরো ইউরোপ জুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে পরিণত হয়।

সময়ের সাথে সাথে, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের চিজ তৈরি করা হয়েছিল, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বাদ, বর্ণ, গঠন এবং সুগন্ধ ছিল। কিছু বিখ্যাত চিজের মধ্যে রয়েছে চেডার, মোজারেলা, ব্রি এবং ব্লু চিজ।

আজ, সারা বিশ্বের লোকেরা স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে পিৎজা পর্যন্ত বিভিন্ন খাবারে যোগ করে চিজের স্বাদ উপভোগ করে। ধীরে ধীরে চিজ তৈরি করাও অনেক লোকের কাছে একটি জনপ্রিয় শখ হয়ে উঠেছে।

টীকা এবং তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
টীকা
তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]