জুরাসিক
জুরাসিক যুগ ২০.১৩–১৪.৫ কোটি বছর পূর্বে | |
গড় বায়ুমন্ডলীয় O ২ পরিমাণ |
প্রায় ২৬ আয়তন %[১] (বর্তমান মাত্রার ১৩০ %) |
গড় বায়ুমন্ডলীয় CO ২ |
প্রায় ১৯৫০ পিপিএম[২] (প্রাক শিল্প স্তরের ৭ গুণ) |
ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা | প্রায় ১৬.৫ °সে[৩] (বর্তমান তাপমাত্রার ৩ °সে উপরে)
|
Jurassic | |
---|---|
২০১.৩ ± ০.২ – ~১৪৫.০ Ma | |
Chronology | |
Etymology | |
Name formality | Formal |
Usage information | |
Celestial body | Earth |
Regional usage | Global (ICS) |
Time scale(s) used | ICS Time Scale |
Definition | |
Chronological unit | Period |
Stratigraphic unit | System |
Time span formality | Formal |
Lower boundary definition | First appearance of the Ammonite Psiloceras spelae tirolicum. |
Lower boundary GSSP | Kuhjoch section, Karwendel mountains, Northern Calcareous Alps, Austria ৪৭°২৯′০২″ উত্তর ১১°৩১′৫০″ পূর্ব / ৪৭.৪৮৩৯° উত্তর ১১.৫৩০৬° পূর্ব |
GSSP ratified | 2010 |
Upper boundary definition | Not formally defined |
Upper boundary definition candidates |
|
Upper boundary GSSP candidate section(s) | None |
Atmospheric and climatic data | |
Mean atmospheric O 2 content | c. 26 vol % (130 % of modern) |
Mean atmospheric CO 2 content | c. 1950 ppm (7 times pre-industrial) |
Mean surface temperature | c. 16.5 °C (3 °C above modern) |
জুরাসিক যুগ (রোমান লিপি - Jurassic; উচ্চারণ - /dʒuːræsɪk/) হল একটি ভূতাত্ত্বিক যুগ। এর ব্যাপ্তি ধরা হয় আজ থেকে ২০ কোটি ১৩ লক্ষ বছর আগে থেকে ১৪ কোটি ৫৫ লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত সময়সীমা। অর্থাৎ, ট্রায়াসিক যুগের শেষ থেকে ক্রিটেশিয়াস যুগের মধ্যবর্তী সময়সীমাকেই জুরাসিক যুগ বলে অভিহিত করা হয়। সেই হিসেবে এই যুগ মেসোজোয়িক মহাযুগের মধ্যপর্ব। এই যুগ পৃথিবীতে ডাইনোসর তথা প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপদের একাধিপত্যের যুগ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এই যুগের সূচনা পৃথিবীর জীবজগতে একটি বড় ধরনের বিলুপ্তির ঘটনা দ্বারা সূচিত হয়ে থাকে, যার পোশাকি নাম ট্রায়াসিক-জুরাসিক বিলুপ্তি। এর ফলে পৃথিবীর তৎপূর্ব জীবজগতে এক বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এছাড়াও এই যুগ জীবজগতের আরও দু'টি বৃহৎ বিলুপ্তির ঘটনার সাক্ষী। তার মধ্যে প্রথমটি ঘটে আদিম জুরাসিক উপযুগেই। এর নাম প্লিয়েনসবাখিয়ান-তোয়ার্কিয়ান ঘটনা; অন্যটি ঘটে টিথোনিয়ান অধোযুগে, অর্থাৎ জুরাসিক যুগের একেবারে শেষে।
ইউরোপের আল্পস পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত ফ্রান্স ও সুইৎজারলান্ডের মধ্যবর্তী জুরা পর্বতের নাম থেকেই এই ভূতাত্ত্বিক যুগের নাম রাখা হয় জুরাসিক যুগ। এই পর্বতের চুনাপাথরের স্তর এই যুগের বলে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল।[৪]
জুরাসিক যুগের শুরুতে প্রাচীন এককমহাদেশ প্যানজিয়ার ভাঙন শুরু হয় ও এর উত্তর অংশ লরেশিয়া ক্রমশ আরও উত্তরের দিকে সরতে শুরু করে এবং দক্ষিণ অংশ গন্ডোয়ানা এগোতে শুরু করে দক্ষিণ দিকে। এর ফলে সমুদ্রতীরের দৈর্ঘ্য লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী যেসব অঞ্চলে এতদিন আবহাওয়া ছিল মহাদেশীয় ও শুষ্ক, সমুদ্র সেখানে কাছে এসে পড়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী ট্রায়াসিক যুগে যেসব অঞ্চল ছিল নিছক উষর মরুভূমি মাত্র, এর ফলে এই যুগে সেরকম অনেক জায়গাতেই রীতিমতো অতিবৃষ্টি অরণ্য (Rainforest) সৃষ্টি হয়।[৫] প্রাণীজগতেও এই সময়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ট্রায়াসিক যুগে পৃথিবীতে ডাইনোসর ও ক্রোকোডাইলোমর্ফ - দুই ধরনের আর্কোসরদেরই আধিপত্য ছিল। জুরাসিক যুগে পৌঁছে তা ডাইনোসরদের প্রায় একাধিপত্যে পর্যবাসিত হয়। এছাড়া এই যুগেই প্রথম পাখির দেখা মেলে। থেরোপড ডাইনোসরদের একটি শাখা থেকেই বিবর্তনের পথ বেয়ে তাদের উদ্ভব। আদিমতম টিকটিকি জাতীয় প্রাণী ও থেরীয় স্তন্যপায়ীদের উদ্ভবও এই যুগেই। এই থেরীয় স্তন্যপায়ীদের অন্যতম হিসেবে আদিম প্ল্যাসেন্টালদেরও আমরা এই যুগে দেখা পাই। অন্যদিকে ক্রোকোডিলিয়ানরা এইসময় ডাঙা ছেড়ে মূলত জলে নেমে আসে। ইকথিওসরাস, প্লেসিওসরাস, প্রভৃতি বৃহদাকৃতির সামুদ্রিক সরীসৃপ ও টেরোসরাস প্রভৃতি উড্ডয়নক্ষম মেরুদণ্ডী প্রাণীরাও এই যুগের অন্যতম বাসিন্দা।
'জুরাসিক' নামের উৎপত্তি
[সম্পাদনা]ভূতাত্ত্বিক যুগ হিসেবে জুরাসিক নামের উৎপত্তির সাথে মধ্য ইউরোপের জুরা পর্বতের নাম সরাসরি জড়িত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জার্মান ভৌগোলিক ও বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফন হুমবোলট জুরা পর্বতের মূলত চুনাপাথরের স্তরকে পরীক্ষা করে একটি অন্যধরনের স্তর হিসেবে শণাক্ত করেন, যা ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক আব্রাহাম গটলিব ভের্নার বর্ণিত ভূতাত্ত্বিক সিস্টেম বা তন্ত্রের সাথে খাপ খায় না। ১৭৯৫ সালে হুমবোলট এর নাম দেন জুরাকাল্ক (জার্মান - Jurakalk)।[৪] জুরা শব্দটির উৎপত্তি আবার কেলটিক শব্দ জর (Jor) থেকে, যার মানে অরণ্য। অর্থাৎ, জুরা পর্বত কথাটির আদি অর্থ অরণ্যাবৃত পর্বত। এই জর শব্দেরই লাতিনীকৃত রূপ হল "জুরা"।
কালপঞ্জী
[সম্পাদনা]সিস্টেম/ যুগ |
সিরিজ/ উপযুগ |
স্টেজ/ অধোযুগ |
বয়স (কোটি বছর আগে) | |
---|---|---|---|---|
ক্রিটেশিয়াস | নিম্ন/ আদিম |
বেরিয়াসিয়ান | নবীনতর | |
জুরাসিক | উচ্চ/ অন্ত্য |
টিথোনিয়ান | ১৪.৫০–১৫.২১ | |
কিমেরিজিয়ান | ১৫.২১–১৫.৭৩ | |||
অক্সফোর্ডিয়ান | ১৫.৭৩–১৬.৩৫ | |||
মধ্য/ মধ্য |
ক্যালোভিয়ান | ১৬.৩৫–১৬.৬১ | ||
ব্যাথোনিয়ান | ১৬.৬১–১৬.৮৩ | |||
বায়োকিয়ান | ১৬.৮৩–১৭.০৩ | |||
আলেনিয়ান | ১৭.০৩–১৭.৪১ | |||
নিম্ন/ আদিম |
তোয়ার্কিয়ান | ১৭.৪১–১৮.২৭ | ||
প্লায়েন্সবাকিয়ান | ১৮.২৭–১৯.০৮ | |||
সিনেমুরিয়ান | ১৯.০৮–১৯.৯৩ | |||
হেটাঞ্জিয়ান | ১৯.৯৩–২০.১৩ | |||
ট্রায়াসিক | উচ্চ/ অন্ত্য |
রায়েশিয়ান | প্রাচীনতর | |
জুলাই ২০১২ তে আইইউজিএস কর্তৃক নির্ধারিত জুরাসিকের উপবিভাগসমূহ অনুযায়ী। |
জুরাসিক যুগের সমগ্র কালপর্বকে আমরা তিনটি উপযুগে ভাগ করে থাকি - আদি, মধ্য ও অন্ত্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মান ভূতত্ত্ববিদ লেওপোল্ড ফন বুখের সময় থেকেই জুরাসিক যুগকে এইভাবে তিনটি উপযুগে ভাগ করার ঐতিহ্য চালু রয়েছে।[৬] ভূস্তরগতভাবেও (ভূত্বকের যে যে স্তরে এই যুগের নানারূপ উপাদান ও নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়) এই যুগকে তিনটি স্তরের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে - নিম্ন জুরাসিক, মধ্য জুরাসিক ও ঊর্ধ্ব জুরাসিক স্তর। জুরাসিক যুগের উপযুগগুলিকে আবার সাধারণভাবে মোট ১১টি অধোযুগে ভাগ করা হয়ে থাকে। আদি জুরাসিক বা আদিম জুরাসিক উপযুগকে (নিম্ন জুরাসিক স্তরে যার উপাদান ও নিদর্শন মেলে) সাধারণভাবে চারটি অধোযুগে ভাগ করা হয়ে থাকে - হেটাঞ্জিয়ান, সিনেমুরিয়ান, প্লিয়েনসবাখিয়ান ও তোয়ার্কিয়ান (প্রাচীন থেকে ক্রমআধুনিক ক্রম অনুসারে); একই ক্রম অনুসারে মধ্য জুরাসিক উপযুগকে যে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে তা হল - আলেনিয়ান, বায়োকিয়ান, ব্যাথোনিয়ান ও ক্যালোভিয়ান; অন্ত্য জুরাসিক উপযুগকে ভাঙা হয় তিনটি অধোযুগে - অক্সফোর্ডিয়ান, কিমেরিজিয়ান ও টিথোনিয়ান। পাশের ছকে এদের নাম ও কালসীমার উল্লেখ করা হল।
জুরাসিক পৃথিবীর ভূগোল
[সম্পাদনা]জুরাসিক যুগের শুরুর দিকেই এককমহাদেশ প্যানজিয়ার ভাঙন শুরু হয়। এর উত্তরের অংশ ক্রমশ উত্তরের দিকে সরে গিয়ে লরেশিয়া নামক অতিমহাদেশ ও দক্ষিণের অংশ ক্রমশ দক্ষিণে সরে গিয়ে গন্ডোয়ানা অতিমহাদেশ গঠন করে। এই সময়েই বর্তমান মূল উত্তর আমেরিকা মহাদেশ ও মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপের মধ্যে ফাটল দেখা দেয় ও মেক্সিকো উপসাগরের সৃষ্টি হয়। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এই যুগে ছিল আজকের তুলনায় অনেকটাই সঙ্কীর্ণ। অন্যদিকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের তখনও পর্যন্ত সৃষ্টিই হয়নি। পরবর্তী ক্রিটেশিয়াস যুগে গন্ডোয়ানা অতিমহাদেশ টেকটনিক পাতের চলনের ফলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ভেঙে গেল দক্ষিণ আটলান্টিকের সৃষ্টি হয়। লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানা - এই দুই অতিমহাদেশের মধ্যে জুরাসিক যুগে আরও একটি মহাসাগর অবস্থান করত, যা টেথিস নামে পরিচিত। জুরাসিক যুগের একেবারে শেষের দিকে (আজ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে) কিমেরিয়া (মোটামুটি আজকের তুরস্ক, ইরাক ও তিব্বত) দক্ষিণ থেকে অগ্রসর হয়ে লরেশিয়ার সাথে মিশে গেলে এই টেথিস মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত সঙ্কীর্ণ পশ্চিম অংশ (আজকের ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণসাগর, ক্যাস্পিয়ান সাগর ও আরল সাগর যার কিছু বিচ্ছিন্ন অবশেষ মাত্র[৭][৮]) তার অপেক্ষাকৃত প্রসারিত পূর্ব অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় পড়ে ও আজকের মধ্যপ্রাচ্য গঠিত হয়। এই যুগে আজকের পূর্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের এক বিস্তীর্ণ অংশই এক অগভীর সমুদ্রের অংশ ছিল।
নিদর্শন
[সম্পাদনা]বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে জুরাসিক যুগের ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন যথেষ্ট সুলভ। এখানে বিভিন্ন অঞ্চলে যে সমস্ত জলজ উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে, তা থেকে সহজেই বোঝা সম্ভব - এই বর্তমান মহাদেশের এক সুবিস্তীর্ণ অঞ্চল সে'সময়ে এক অগভীর ঊষ্ণ ক্রান্তীয় সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করত। এই সব উপাদানে সমৃদ্ধ একাধিক অঞ্চল এই মহাদেশে দেখতে পাওয়া যায় - যেমন, দক্ষিণ ইংলন্ডের বিখ্যাত জুরাসিক কোস্ট, যা বর্তমানে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত, বা দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমবের্ক রাজ্যের হোলৎস্মাডেন শহরের নিকটবর্তী বিখ্যাত লাগেরস্টেটা, যেখানে ১৮ কোটি বছরের পুরনো (অন্ত্য জুরাসিক উপযুগ) বহু জীবাশ্ম উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে[৯]। কিন্তু অপরদিকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে জুরাসিক যুগের উপাদান ও নিদর্শন, সমগ্র মেসোজোয়িক মহাযুগের যেসব উপাদান ও নিদর্শন সেখানে খুঁজে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে বিরলতম।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Image:Sauerstoffgehalt-1000mj.svg
- ↑ Image:Phanerozoic Carbon Dioxide.png
- ↑ Image:All palaeotemps.png
- ↑ ক খ Hölder, H. 1964. Jura — Handbuch der stratigraphischen Geologie, IV. Enke-Verlag, 603 pp., 158 figs, 43 tabs; Stuttgart
- ↑ Suess, E. (1901). Das Antlitz der Erde. (জার্মান) সংগৃহীত ৯ আগস্ট, ২০১৬।
- ↑ Pieńkowski, G.; Schudack, M.E.; Bosák, P.; Enay, R.; Feldman-Olszewska, A.; Golonka, J.; Gutowski, J.; Herngreen, G.F.W.; Jordan, P.; Krobicki, M.; Lathuiliere, B.; Leinfelder, R.R.; Michalík, J.; Mönnig, E.; Noe-Nygaard, N.; Pálfy, J.; Pint, A.; Rasser, M.W.; Reisdorf, A.G.; Schmid, D.U.; Schweigert, G.; Surlyk, F.; Wetzel, A. & Theo E. Wong, T.E. 2008. Jurassic. In: McCann, T. (ed.): The Geology of Central Europe. Volume 2: Mesozoic and Cenozoic, Geological Society, pp.: 823-922; London.
- ↑ Suess, E. (1893). "Are ocean depths permanent?" Natural science : a monthly review of scientific progress. Vol. 2. London. pp. 180– 187. সংগৃহীত ৯ আগস্ট, ২০১৬।
- ↑ Suess, E. (1901). Das Antlitz der Erde. পৃঃ - ২৫। (জার্মান) সংগৃহীত ৯ আগস্ট, ২০১৬।
- ↑ "FOSSILIEN SAMMELN" Urweltmuseum. (জার্মান) সংগৃহীত ১০ আগস্ট, ২০১০।