টোকারীয় ভাষাসমূহ
এই নিবন্ধটি আরও সহজগম্য করতে, বিষয় অনুসারে অনুচ্ছেদে ভাগ করা উচিত। |
টোকারীয় | |
---|---|
দেশোদ্ভব | আগ্নি, কুছা, তুরফান ও ক্রোরেন |
অঞ্চল | তারিম অববাহিকা |
জাতি | টোকারীয় জাতি |
বিলুপ্ত | ৯ম শতাব্দী
|
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
পূর্বসূরী | |
উপভাষা |
|
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | দুইয়ের মধ্যে এক:xto – টোকারীয় Atxb – টোকারীয় B |
ভাষাবিদ তালিকা | xto টোকারীয় A |
txb টোকারীয় B | |
গ্লোটোলগ | tokh1241 [১] |
টোকারীয় বা উচ্চারণভেদে তোখারীয়, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের একটি বিলুপ্ত শাখা। এই ভাষার নিদর্শনস্বরূপ খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী সময়কালের কিছু পুঁথি পাওয়া গিয়েছে উত্তর-পশ্চিম চীনের তারিম নদী অববাহিকা ও শিঞ্চিয়াং-এর উত্তরতটরেখা-সংলগ্ন মরূদ্যানসমূহ থেকে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে টোকারীয় ভাষাসমূহ আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী-সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।বহুকালব্যাপী পোষিত প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিভেদের ধারণার পরিবর্তে কেন্টুম-সতেম সমবাকের ধারণার ভিত্তিতে ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা নবদিশা লাভ করেছে। পূর্বে মনে করা হত যে এটি প্রাচীন ব্যাক্ট্রিয়ার (তোখারিস্তান) টোকারীয় জাতির ভাষা ছিল এবং সেই কারণেই ভাষাগুলির "টোকারীয়" নামাকরণ করা হয়েছে। যদিও ইদানীং অনেকে ভাষাটির এই পরিচয় বিভ্রান্তিকর বলে মনে করেন। তবে নামটি সার্বজনীন হয়ে উঠেছে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে টোকারীয় ভাষাসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা যায় - টোকারীয়-A (পূর্বী টোকারীয়; আগ্নীয় বা তুরফানীয়) এবং টোকারীয়-B (পশ্চিমা টোকারীয়; কুচীয়)। প্রাপ্ত নিদর্শন অনুসারে মনে করা হয় যে টোকারীয়-A প্রাচীনতর এবং এটি বৌদ্ধ সাধনা-সাহিত্য লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হতো। টোকারীয়-B তুলনামূলকভাবে পরবর্তীকালের এবং তুরফান ও তুমশক অঞ্চলে কথ্য ভাষা হিসেবে বহুল-প্রচলিত ছিল। টোকারীয় প্রাকৃত ভাষায় প্রাপ্ত বেশ কিছু আগন্তুক শব্দ ও নামবাচক শব্দকে একসাথে টোকারীয়-C (ক্রোরেনীয়) নামকরণ করা হয়েছে।
টোকারীয় ভাষা ও লিপি অতলান্ত বিস্মৃতির কবল থেকে মুক্তি পায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অরেল স্টেইনের (Aurel Stein) হাত ধরে। তিনি চীনের তারিম নদী অববাহিকা অঞ্চলে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালানোর সময় প্রথম অজানা কোনো ভাষায় লিখিত কতকগুলি পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন। শীঘ্রই বোঝা যায় যে নবলব্ধ নিদর্শনগুলি কোনো অজানা ভাষার দুইটি স্বতন্ত্র উপভাষিক নিদর্শন এবং সম্ভবত মূল ভাষাটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার একটি শাখা। টোকারীয় ভাষা আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা-ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মনে করা হত যে কেন্টুম-সতেম বিভাজন সম্পূর্ণভাবেই একটি ভৌগোলিক বিভাজন, অর্থাৎ কেন্টুম ভাষাগুলি পাশ্চাত্য ও সতেম ভাষাগুলি প্রাচ্য-দেশীয়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে পরপর হিট্টীয় এবং টোকারীয় ভাষা আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে সমবাকের ধারণা জন্মলাভ করে। কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হিট্টীয় এবং টোকারীয় উভয়ই কেন্টুম গোষ্ঠী-ভুক্ত অথচ প্রাচ্যদেশীয়। ইয়োহানেস শ্মিড (Johannes Schmidt) 'তরঙ্গ' (Wave) নামক একটি প্রকল্প মডেলের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। ভাল্টের ব্রুনো হেনিং (Walter Bruno Henning) আবার দ্বাবিংশ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইরানীয় মালভূমি অঞ্চলে ব্যবহৃত গুটীয়, বা নামান্তরে কুটীয় ভাষা ও টোকারীয় ভাষার যোগসূত্রের কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ পণ্ডিতই হেনিং-এর মতামত খারিজ করে দিয়েছেন।
টোকারীয় লিপির বিষয়ে কিছু আলোচনা অবশ্যই করা প্রয়োজন। যে সমস্ত পাণ্ডুলিপি তারিম উপত্যকা অঞ্চল থেকে পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রধানত খণ্ডিতাবস্থায় পাওয়া গেছে।পুঁথিগুলি লেখা হয়েছিল ভূর্জপত্র,তালপত্র,কাঠ বা চৈনিক কাগজের উপর। অত্যন্ত শুষ্ক জলবায়ু এই পুঁথিগুলি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।প্রাপ্ত নিদর্শনের অধিকাংশই ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা। তবে কিছুকিছু নিদর্শনের লিপি মানিকায়ী। সেসব নিদর্শনগুলি মূলত প্রাচীন ইরানের সন্ত মানি কর্তৃক প্রচারিত মানি ধর্মের গ্রন্থাবশেষ।প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের সিংহভাগ পরিচিত বৌদ্ধ গ্রন্থাবলির অনুবাদ। বৌদ্ধ ও মানিকায়ী গ্রন্থ ছাড়াও মঠের কার্যবিবরণী এবং হিসাবনিকাশ, কারবারি নথিপত্র, শোভাযাত্রার অনুমতিপত্র, চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র, যাদুবিদ্যার পুঁথি এবং কেবল একটি প্রেমের কবিতা নিদর্শন হিসাবে পাওয়া গেছে।
১৯৯৮ সালে চৈনিক ভাষাবিদ শি চিয়ানলিন ১৯৭৪ সালে ইয়ংচি থেকে প্রাপ্ত মৈত্রেয়সমিতি-নাটক-এর অনুবাদ প্রকাশ করেন। নাটকটি পূর্বী টোকারীয়তে রচিত।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "টোকারীয়"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।