প্রেসিডেন্সি আর্মি
প্রেসিডেন্সি আর্মি | |
---|---|
সক্রিয় | ১৭৭৪-১৮৫৮ |
দেশ | ভারত |
আনুগত্য | ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি |
শাখা | সেনাবাহিনী |
হেড কোয়ার্টারস | জি.এইচ.কিউ ইন্ডিয়া |
নীতিবাক্য | Auspicio Regis et Senatus Angliae "ইংল্যান্ডের রাজা ও পার্লামেন্টের আদেশে" |
মাস্কট | |
যুদ্ধসমূহ | পলাশীর যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ কর্নাটিক যুদ্ধ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ভেলোর বিদ্রোহ ইঙ্গ-নেপালি যুদ্ধ ইঙ্গ-বার্মিজ যুদ্ধ প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ ইঙ্গ-পারসিক যুদ্ধ সিপাহি বিদ্রোহ |
কমান্ডার | |
উল্লেখযোগ্য কমান্ডার | আয়ার কুট রবার্ট ক্লাইভ চার্লস নেপিয়ার চার্লস কর্নওয়ালিস আর্থার ওয়েলসলি আরচিবল্ড ক্যাম্পবেল গেরার্ড লেক জেমস আউটরাম হিউ গফ |
প্রেসিডেন্সি আর্মি হল ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন তিনটি প্রেসিডেন্সির নিজস্ব সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে এগুলো ব্রিটিশ রাজের ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশে পরিণত হয়। বাহিনীগুলোকে নিজেদের প্রেসিডেন্সির নামে নামকরণ করা হয়, এগুলো হল, বেঙ্গল আর্মি, মাদ্রাজ আর্মি ও বোম্বে আর্মি। প্রথমদিকে শুধু ইউরোপীয়ানরাই কমিশন্ড ও নন-কমিশন্ড অফিসার হিসেবে এতে কাজ করত। পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী উত্তরে পেশোয়ার, পশ্চিমে সিন্ধু ও পূর্বে রেঙ্গুন পর্যন্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য বাহিনীগুলো বিভিন্ন যুদ্ধে (ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ, ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ও ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ) অংশ নেয়। সেসাথে অন্যান্য স্থানে (ইঙ্গ-বার্মিজ যুদ্ধ, ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ এবং আবিসিনিয়া অভিযান) যুদ্ধ করে।
প্রেসিডেন্সিগুলোর মত প্রেসিডেন্সি আর্মিগুলোও কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হত। সিপাহি বিদ্রোহের আগ পর্যন্ত এ অবস্থা বজায় ছিল। এরপর ব্রিটিশ রাজ কোম্পানির কাছ থেকে ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয় এবং প্রেসিডেন্সিগুলোও ব্রিটিশ সিংহাসনের অধীনে চলে যায়। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনটি বাহিনী মিলে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী গঠিত হয়।
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]প্রেসিডেন্সিগুলোর সেনাবাহিনী ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ও স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনীর পূর্বসূরি। প্রথমদিকে ব্রিটিশ কর্তৃক নিযুক্ত খাটি ভারতীয় সেনারা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রেসিডেন্সিগুলোতে তাদের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত রক্ষী। তাদের সবাইকে ১৭৪৮ এ অভিন্ন কমান্ডার-ইন-চীফ, মেজর-জেনারেল স্ট্রিনজার লরেন্সের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তাকে “ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনক” বলে অভিহিত করা হয়।[১]
অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের তিনটি প্রেসিডেন্সির প্রধান অঞ্চল কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বেতে সেনাবাহিনী রাখতে শুরু করে। বেঙ্গল আর্মি, মাদ্রাজ আর্মি ও বোম্বে আর্মি তাদের নিজস্ব রেজিমেন্ট ও ইউরোপীয়ান অফিসারদের নিয়ে বেশ দূরত্বে অবস্থান করত। তিনটি বাহিনীতে ইউরোপীয়ান রেজিমেন্ট ছিল যাতে অফিসার ও সাধারণ সেনা, সবাই ছিল ইউরোপীয়। সে সাথে বেশ বড় সংখ্যক স্থানীয় রেজিমেন্টও ছিল। এতে অফিসাররা ছিল ইউরোপীয়ান ও অন্যান্য র্যাঙ্কগুলো ছিল ভারতীয়দের। এতে গোলন্দাজ, অশ্বারোহী ও পদাতিক রেজিমেন্ট ছিল। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ভারতের কোম্পানির সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট পাঠাতে থাকে। এই বাহিনীগুলকে প্রায় “রয়েল রেজিমেন্ট” বলা হত।
১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল, মাদ্রাজ ও বোম্বে আর্মিতে সর্বমোট ২,০০,০০০ জন সৈনিক ছিল। এদের মধ্যে রেজিমেন্ট ছিল সিপাহিদের ১৭০টি ও ইউরোপীয়ানদের ১৬টি।[২]
রেজিমেন্টের সংগঠন
[সম্পাদনা]১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির জন্য সিপাহি ব্যাটেলিয়ানের ধারণা প্রবর্তন করেন যাদেরকে ব্রিটিশ অফিসারদের অধীনে রেড কোট হিসেবে অস্ত্র, পোশাক ও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মাদ্রাজ আর্মি ১৭৫৯ এ এবং বোম্বে আর্মি ১৭৬৭ এই প্রথা গ্রহণ করে। সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সম্প্রদায়, গ্রামবাসী ও পরিবারের একক বর্ণ থেকে সেনা সংগ্রহ করা হত।[১] নিয়মিত অশ্বারোহী রেজিমেন্ট ১৭৮৪ এ গঠন করা হয়। এদের মধ্যে সিপাহি বিদ্রোহের সময় মাত্র তিনটি টিকে ছিল। অনিয়মিত অশ্বারোহী বাহিনীগুলো ভারতীয় শাসকদের নিয়মমাফিক “সিলাদার’’ প্রথায় গঠিত হত।[৩] অনিয়মিত অশ্বারোহী রেজিমেন্টগুলোতে খুব স্বল্প সংখ্যক ব্রিটিশ অফিসার থাকত। অধিকন্তু স্থানীয় গোলন্দাজ ও পাইওনিয়ারদের (এদেরকে পরবর্তীতে সেপারস এন্ড মাইনারস নামে ডাকা হত) গড়ে তোলা হয়।[১] ১৭৯৬ থেকে ১৮০৪ এর মধ্যে দুই ব্যাটেলিয়ানের ভিত্তিতে একটি রেজিমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়। ব্যাটেলিয়ানগুলো শুধু খাতাকলমেই পারস্পরিক সংযুক্ত ছিল। ব্রিটিশ অফিসারদের সংখ্যা প্রতি ব্যাটেলিয়ানে ২২ জন পর্যন্ত গিয়ে পৌছে এবং এর ফলে স্থানীয় অফিসারদের গুরুত্ব কমে যায়। রেজিমেন্টগুলোতে কমান্ডারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ছিল খুবই বেশি ফলে ব্যাটেলিয়ানগুলোতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ১৮২৪ এ পদ্ধতিটি সংস্কার করে একক ব্যাটেলিয়ান রেজিমেন্ট হিসেবে গঠিত হয় এবং তাদের গঠনের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সংখ্যায়িত করা হয়।[১]
১৮৫৭ এর পরবর্তী সময়
[সম্পাদনা]সিপাহি বিদ্রোহ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিলুপ্তির পর এর ইউরোপীয়ান রেজিমেন্টগুলো ১৮৬০ তে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু স্থানীয় রেজিমেন্টগুলোকে এর বাইরে রাখা হয়। তিনটি পৃথক প্রেসিডেন্সি আর্মি এর ফলে বজায় থাকে এবং তাদের ইউরোপীয় অফিসাররা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পরিবর্তে নিজ নিজ প্রেসিডেন্সি আর্মিতে তালিকাভুক্ত থাকে। তবে প্রেসিডেন্সি আর্মিগুলো সম্মিলিতভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী হিসেবে অভিহিত হত। বিদ্রোহ পরবর্তী আরেকটি পরিবর্তন হল গোলন্দাজদেরকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে একীভূতকরণ।
১৮৯৫ এ পৃথক প্রেসিডেন্সি আর্মিগুলো বিলুপ্ত করা হয় এবং সম্পূর্ণ একক ভারতীয় সেনাবাহিনী গঠন করা হয়। পূর্বের মতই ব্রিটিশ অফিসাররা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য হয়নি। তবে ভারতীয় সেনা রেজিমেন্টে স্থায়ী কমিশনে যোগ দেয়ার আগে তরুণ নিম্নপদস্থ অফিসারদেরকে ১ বছরের জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য অবস্থান করতে হত।
প্রেসিডেন্সি আর্মির অভিযানের ইতিহাস
[সম্পাদনা]মহীশূর যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৬-১৭৬৯)
- দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৮০-১৭৮৪)
- তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৮৯-১৭৯২)
- চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯৯)
মারাঠা যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৫-১৭৮২)
- দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮০৩-১৮০৫)
- তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮১৭-১৮১৮)
বার্মিজ যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম ইঙ্গ-বার্মিজ যুদ্ধ (১৮২৩-১৮২৬)
- দ্বিতীয় ইঙ্গ-বার্মিজ যুদ্ধ (১৮৫২-১৮৫৩)
- তৃতীয় ইঙ্গ-বার্মিজ যুদ্ধ (১৮৮৫-১৮৮৬)
আফগান যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২)
- দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ (১৮৭৮-১৮৮১)
আরও দেখুন: দ্য গ্রেট গেম ও আফগানিস্তানে ইউরোপীয়ান প্রভাব
আফিম যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম আফিম যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪৩)
- দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ (১৮৫৬-১৮৬০)
শিখ যুদ্ধ
[সম্পাদনা]- প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৫-১৮৪৬)
- দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৮-১৮৪৯)
আবিসিনিয়া
[সম্পাদনা]- আবিসিনিয়া অভিযান (১৮৬৭-১৮৬৮)
প্রেসিডেন্সি ও তার সেনাবাহিনীর তালিকা
[সম্পাদনা]
|
|
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Jackson, Major Donovan (১৯৪০)। India's Army। London: Low, Marston। পৃষ্ঠা 1–8।
- ↑ Wolpert, Stanley (২০০৯)। A New History of India (8th সংস্করণ)। New York, NY: Oxford UP। পৃষ্ঠা 223। আইএসবিএন 978-0-19-533756-3।
- ↑ In the "silladar" system, the soldier provided his own horse, weapons and such military attire as prescribed for which he received in exchange from the state a lump sum grant and maintenance grants from time to time.
পড়তে পারেন
[সম্পাদনা]- Barua, Pradeep. "Military developments in India, 1750-1850," Journal of Military History, (Oct 1994) 58#4 pp 599–616 in JSTOR
- Bryant, G. J. "Asymmetric Warfare: The British Experience in Eighteenth-Century India," Journal of Military History (2004) 68#2 pp. 431–469 in JSTOR
- Gilbert, Arthur N. "Recruitment and Reform in the East India Company Army, 1760-1800," Journal of British Studies (1975) 15#1 pp. 89-111 in JSTOR
- Heathcote, T. A. The Military in British India: The Development of British Land Forces in South Asia, 1600–1947 (Manchester University Press, 1995)
- Lawford, James P. Britain's Army in India: From its Origins to the Conquest of Bengal (London: George Allen & Unwin, 1978)
- Menezes, S. L. Fidelity & Honour: The Indian Army from the Seventeenth to the Twenty-First Century (New Delhi: Viking, 1993)
- Longer, V. Red Coats to Olive Green: A History of the Indian Army, 1600–1947 (Bombay: Allied, 1974)
- Roy, Kaushik. "The hybrid military establishment of the East India Company in South Asia: 1750–1849," Journal of Global History, (July 2011) 6#2 00 195-218
- Roy, Kaushik. "Military Synthesis in South Asia: Armies, Warfare, and Indian Society, c. 1740--1849," Journal of Military History, (2005) 69#3 pp 651-690, online
- Roy, Kaushik. From Hydaspes to Kargil: A History of Warfare in India from 326 BC to AD 1999 (2004)