বিজেন্দর সিং
বিজেন্দর সিং | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ভারত |
নাগরিকত্ব | ভারত |
পেশা | বক্সার মিডলওয়েট |
উচ্চতা | ১৮২ সেমি (৬ ফু ০ ইঞ্চি) |
দাম্পত্য সঙ্গী | অর্চনা সিং |
বিজেন্দর সিং বেনিওয়াল (হিন্দি: विजेन्द्र सिंह बेनीवाल) (জন্ম ২৯ অক্টোবর, ১৯৮৫) (বিজেন্দর সিং বা বিজেন্দর বেনিওয়াল নামেও পরিচিত) অলিম্পিক পদকজয়ী ভারতীয় বক্সার। হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার কালওয়াসের অধিবাসী। জাট পরিবারের সন্তান। ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে। সেখানেই স্কুলশিক্ষা। তারপর ভিওয়ানির স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে বক্সিং অনুশীলন করতেন। সেখানে কোচ জগদীশ সিং তার প্রতিভা আবিষ্কার করেন ও তাকে পেশাদার বক্সিং জগতে আসতে অনুপ্রাণিত করেন।
বিজেন্দর সাব-জুনিয়র ন্যাশনাল প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নিয়ে পরপর দুই বছর রৌপ্য পদক পান। জাতীয় স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদক জয়ের সুবাদে কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতার জন্যও বিজেন্দরকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০০৪ এথেন্স সামার অলিম্পিকস ও ২০০৬ কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন। দোহায় আয়োজিত ২০০৬ এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে কাজাকস্থানের বাখতিয়ার আর্তায়েভের কাছে পরাজিত হয় ব্রোঞ্জ পদক পান। ২০০৮ বেজিং সামার অলিম্পিকসের কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়াডোরের কার্লোস গনগোরাকে ৯-৪ ব্যবধানে পরাস্ত করে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। তিনিই প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ী ভারতীয় বক্সার।
এই ঐতিহাসিক জয়ের পর বিজেন্দর অনেকগুলি পুরস্কার পান। পান ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কারও। ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে তিনি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। একই বছরে ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) বার্ষিক মিডলওয়েট ক্যাটাগরিতে ২৮০০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন বিজেন্দর। ভারতে বক্সিংকে পাদপ্রদীপের আলোয় ফিরিয়ে আনার মূল কাণ্ডারী মনে করা হয় তাকেই।
জীবনী
[সম্পাদনা]১৯৮৫–২০০৩: প্রথম জীবন ও বক্সিং জগতে আগমন
[সম্পাদনা]পদক রেকর্ড | ||
---|---|---|
ভারত-এর প্রতিনিধিত্বকারী | ||
পুরুষদের বক্সিং | ||
অলিম্পিক গেমস | ||
২০০৮ বেজিং | মিডলওয়েট | |
ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ | ||
২০০৯ মিলান | মিডলওয়েট | |
কমনওয়েলথ গেমস | ||
২০০৬ মেলবোর্ন | ওয়েল্টারওয়েট | |
২০১০ দিল্লি | মিডলওয়েট | |
এশিয়ান গেমস | ||
২০০৬ দোহা | মিডলওয়েট | |
কুয়াংচৌ | মিডলওয়েট |
১৯৮৫ সালের ২৯ অক্টোবর হরিয়ানার ভিওয়ানি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কালওয়াস গ্রামে বিজেন্দর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মহীপাল সিং বেনিওয়াল হরিয়ানা রোডওয়েজের বাস ড্রাইভার। মা গৃহবধূ। বিজেন্দর ও তার দাদা মনোজের পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য তাদের বাবাকে ওভারটাইমে বাস চালাতে হত।[১][২] বিজেন্দরের প্রাথমিক শিক্ষা কালওয়াসের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ভিওয়ানির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ভাইশ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[৩] ১৯৯০ সালে বক্সার রাজকুমার সাঙ্গোয়ান অর্জুন পুরস্কার লাভ করেন। এরপর ভারতে বক্সিং শেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। খেলাধুলা ভারতের একটি চাকুরিক্ষেত্রও হয়ে ওঠে।[৪] তাদের গরিব পরিবারের একটু স্বচ্ছলতা আনার জন্য বিজেন্দর ও তার দাদা মনোজ বক্সিং শেখার সিদ্ধান্ত নেন। আসলে প্রাক্তন বক্সার মনোজকে দেখে বিজেন্দরের মনে বক্সিং শেখার ইচ্ছে জেগেছিল।[৫] ১৯৯৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বক্সারদের কোটায় মনোজ চাকরি পান। তারপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিজেন্দরের বক্সিং শেখার খরচ জোগাবেন, যাতে তিনি বক্সিং চালিয়ে যেতে পারেন।[৪] বক্সিং-এ বিজেন্দরের প্রতিভা ও ইচ্ছে দুইই আছে দেখে তার বাবা-মাও তাকে লেখাপড়া নিয়ে বেশি চাপ দেননি। ধীরে ধীরে বক্সিং বিজেন্দরের আগ্রহের বিষয় থেকে পেশা হয়ে দাঁড়ায়।[৬]
বিজেন্দর ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে অনুশীলন করতেন। সেখানে প্রাক্তন জাতীয়-স্তরের বক্সার ও কোচ জগদীশ সিং তার প্রতিভা আবিষ্কার করেন। কোচের ফি মেটানোর জন্য বিজেন্দরকে পার্ট-টাইম মডেলিং-ও করতে হত।[৩] বিজেন্দর প্রথম উল্লেখযোগ্য জয়টি এসেছিল রাজ্যস্তরে। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম সাব-জুনিয়র ন্যাশনালে রৌপ্য পদক জেতেন। এরপর ২০০০ সালের ন্যাশনালে প্রথম স্বর্ণপদক জয় করেন।[৪] ২০০৩ সালে তিনি সারা ভারত যুব বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হন। সেই সময় এক বিখ্যাত বক্সারকে হারিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বক্সার হিসেবে এবার তার আত্মবিশ্বাস এসে গিয়েছে। তবে বক্সিং-এ তার টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২০০৩ অ্যাফ্রো-এশিয়ান গেমস। জুনিয়র বক্সার হওয়া সত্ত্বেও, বিজেন্দর সিলেকশন ট্রায়ালে অংশ নেন এবং তাকে বেছেও নেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক জেতার জন্য তিনি জোরদার লড়াই করেছিলেন।[৪]
তার বক্সিং স্টাইল হল হুক ও আপারকাট। মিডিয়ার মতে, এই স্টাইল রকি চলচ্চিত্র সিরিজের সিলভেস্টার স্ট্যালোন অভিনীত রকি বালবোয়ার স্টাইলের অনুরূপ। বিজেন্দর মাইক টাইসন ও মুহাম্মদ আলি ও বক্সিং প্রোমোটার ডন কিং-এর পাশাপাশি তাকেও নিজের অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন।[৬]
২০০৪–০৭: এথেন্স অলিম্পিক ও কমওয়েলথ গেমস
[সম্পাদনা]বিজেন্দর ২০০৪ এথেন্স গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ওয়েল্টারওয়েট বক্সিং বিভাগে অংশ নেন। কিন্তু ২০-২৫ ব্যবধানে তুরস্কের মুস্তাফা কারাগোল্লুর কাছে হেরে যান।[৩] ২০০৬ কমনওয়েলথ গেমসে তিনি ইংল্যান্ডের নেইল পারকিনসকে সেমিফাইনালে পরাজিত করেন। কিন্তু ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বোনগানি মেলাসের কাছে হেরে যান।[৭] এরপর বিজেন্দর দোহায় আয়োজিত ২০০৬ এশিয়ান গেমসের মিডলওয়েট (৭৫ কিগ্রা) বিভাগে অংশ নেন। সেখানকার সেমিফাইনালে তিনি কাজাকস্থানের বাখতিয়ার আর্তায়েভের কাছে ২৪-২৯ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। এরপর তিনি ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে যোগ দেন। প্রথম দিকে পিঠের চোটের জন্য এই প্রতিযোগিতায় বিজেন্দরের যোগ দেওয়া নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু দ্রুত আরোগ্য লাভ করে তিনি প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হন।[৮]
২০০৮ বেজিং অলিম্পিকের প্রস্তুতি হিসেবে বিজেন্দর জার্মান বক্সারদের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে দেশে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় ইউরোপের প্রথম সারির বক্সাররা অংশ নিয়েছিলেন। বিজেন্দর এর একটি ইভেন্টে এক জার্মান বক্সারকে হারিয়ে সোনা জেতেন।[৮] অলিম্পিকের ড্রেস রিহার্সাল প্রেসিডেন্ট'স কাপ বক্সিং টুর্নামেন্টে বিজেন্দর আর্তায়েভকে কোয়ার্টারফাইনালে পরাজিত করেন।[৯] বেজিং অলিম্পিকে যোগদানের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন:
"আগের বার ভাল ফল করতে পারিনি কারণ আমার বয়স কম ছিল আর অভিজ্ঞতাও বেশি ছিল না। এবার আমি সিনিয়ার লেভেলে উঠেছি আর অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। এখন অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসের মতো প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছি। সম্প্রতি [এআইবিএ প্রেসিডেন্ট'স কাপে] ২০০৪ অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী [বাখতিয়ার] আর্তায়েভকে হারিয়েছি। তাই আন্তর্জাতিক স্তরেও আমি ভাল ফল করেছি। তাই অবশ্যই বেজিং-এ সকলে আমার থেকে ভাল ফল আশা করতে পারেন।"[৮]
"নিয়মিত আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এখন আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন আমি এই কথাই বলতে চাই যে, ভারতীয় বক্সাররা আর দুর্বল নয়। সবাই আন্তর্জাতিক স্তরে ভাল খেলছে। আমাদের বক্সিং গ্রাফ উপরের দিকে উঠছে। অবশিষ্ট বিশ্বের বক্সাররা এখন ভারতীয় বক্সারদের সম্মুখীন হতে ভয় পান।"[৮]
২০০৮–০৯: বেজিং অলিম্পিক ও এআইবিএ শীর্ষস্থান
[সম্পাদনা]জার্মানিতে জয়লাভের পর, পাতিয়ালায় বিজেন্দরের অলিম্পিক প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। এখানে অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় বক্সারদের প্রশিক্ষণের একটি ক্যাম্প খোলা হয়েছিল।[৮] বিজেন্দরের সঙ্গে ছিলেন দীনেশ কুমার, অখিল কুমার, জিতেন্দর কুমার ও অন্তরীশ লাকরা। ইন্ডিয়ান অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন (আইএবিএফ) একজন ভিডিওগ্রাফার পাঠান পাঁচ ভারতীয় বক্সারদে সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের বক্সিং-এর অনুপুঙ্খ ভিডিও তুলে আনার জন্য। পাতিয়ালার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টসের ভিডিওগ্রাফার শম্ভুর তোলা এই ভিডিও ফুটেজগুলি দেখেন কোচেদের একটি দল। তারা বিভিন্ন দেশের বক্সারদের বক্সিং কৌশলটি বুঝে নেন, যাতে সেই মতো বিজেন্দর ও অন্যান্যদের তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষিত করে তোলা যায়।[১০]
২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ৩২ রাউন্ডে বিজেন্দর গাম্বিয়ার ব্যাডৌ জ্যাককে ১৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৬ রাউন্ডে থাইল্যান্ডের আংখান চোম্ফুফুয়াংকে ১৩-৩ ব্যবধানে পরাজিত করে মিডলওয়েট বক্সিং কোয়ার্টারফাইনালে পৌঁছে যান।[১১] ২০০৮ সালের ২০ অগস্ট কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়াডোরের সাউথপ বক্সার কার্লোস গনগোরাকে ৯-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে একটি পদক জেতেন। এটিই অলিম্পিক বক্সিং-এ ভারতের প্রথম পদক। এরপর ২২ অগস্ট সেমিফাইনালে কিউবার এমিলিও কোরিয়ার কাছে ৫-৮ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে ব্রোঞ্জ পদক পান বিজেন্দর।[১২] বিজেন্দর এবং পুরুষদের কুস্তি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী ভারতীয় কুস্তিগির সুশীল কুমার জয়ের পর দেশে ফিরে বিপুল সংবর্ধনা পান।[১৩]
২০০৯ সালের জুলাই মাসে বিজেন্দর, সুশীল ও বক্সার মেরি কমের নাম ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেলরত্নের জন্য মনোনীত হয়। এই প্রথম একসঙ্গে তিন জন খেলোয়াড়ের নাম এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। পুরস্কার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ তিনজনের ২০০৮-০৯ সালের পারফরম্যান্স দেখে তিন জনকেই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কম ও বিজেন্দর প্রথম বক্সার হিসেবে এই পুরস্কার পান। পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ৭.৫ লক্ষ টাকা ও একটি মানপত্র।[১৪] ক্রীড়া ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সুশীল ও বিজেন্দরের নাম পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য বিবেচিত হয়। তবে ২০০৯ সালের পদ্ম সম্মান কমিটি তাদের এই সম্মান দিতে অস্বীকার করে। এর ফলে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমন অভিযোগও করা হয় যে, কমিটি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি খেলাকে সমর্থন জোগাচ্ছে।[১৫] বিজেন্দর পরে হরিয়ানা পুলিশ বিভাগে ১৪,০০০ টাকা বেতনের একটি চাকরি নেন।[১৬]
বিজেন্দর ২০০৯ ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন। মিডলওয়েট বিভাগের সেমিফাইনালে উজবেকিস্তানের আব্বোস আতোয়েভের কাছে ৭-৩ ব্যবধানে হেরে ব্রোঞ্জ পদক পান।[১৭]
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিএ) বিজেন্দরকে বার্ষিক মিডলওয়েট (৭৫ কিগ্রা) বিভাগীয় তালিকার শীর্ষ-স্থানাধিকারী বক্সার ঘোষণা করেন। তিনি ২৮০০ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার শীর্ষে ছিলেন।[১৮][১৯]
২০১০–বর্তমান: পদ্মশ্রী ও কমনওয়েলথ গেমস
[সম্পাদনা]২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে, বিজেন্দর ভারতীয় ক্রীড়ায় অসামান্য অবদানের জন্য পদ্মশ্রী সম্মান পান।[২০] পরে তিনি চীনে আমন্ত্রণমূলক চ্যাম্পিয়নস অফ চ্যাম্পিয়নস প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতার ৭৫ কিগ্রা মিডলওয়েট ফাইনালে জ্যাং জিন টিং-এর কাছে ০-৬ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে রৌপ্যপদক জেতেন।[২১] ২০১০ সালের ১৮ মার্চ নতুন দিল্লির কমনওয়েলথ বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে আরও পাঁচজন ভারতীয় বক্সারের সঙ্গে তিনিও সোনা জেতেন। বিজেন্দর ইংল্যান্ডের ফ্র্যাঙ্ক বুগলিওনিকে ১৩-৩ ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন।[২২]
২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের সেমিফাইনালে তিনি ইংল্যান্ডের অ্যান্টনি ওগোগোর নিকট পরাজিত হয়ে রৌপ্যপদক জেতেন।[২৩]
২০১১ সালের ১৭ মে বিজেন্দর দিল্লির এমবিএ ডিগ্রিধারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অর্চনা সিংকে বিবাহ করেন। বিবাহ অনুষ্ঠান দিল্লিতে সাধারণভাবে আয়োজিত হয় এবং রিশেপশন আয়োজিত হয় বিজেন্দরের ভিওয়ানির বাড়িতে।[২৪]
মিডিয়ায়
[সম্পাদনা]অলিম্পিকে জয়লাভের পর ভারতের মূলধারার মিডিয়ায় বিজেন্দরের উত্থান ঘটে। তিনি ভারতের সাম্প্রতিকতম পিন-আপ বয়ে পরিণত হন।[৩] বক্সিং ছাড়া বিজেন্দর র্যাম্প শো-তেও অংশ নিতে থাকেন। যদিও তিনি বলেছেন, মডেলিং-এর মাধ্যমে তিনি "খেলাকেই [বক্সিং] পাদপ্রদীপের আলোয় আনতে এবং এটাকে যতটা সম্ভব জনপ্রিয় করে একটা উঁচু স্থানে তুলে দিতে চাইছেন।"[২৫] তিনি নিয়মিত অভিযোগ করে থাকেন, ভারতীয় মিডিয়া ক্রিকেটকেই দেশের একমাত্র খেলা হিসেবে দেখাতে চায়। দ্য টেলিগ্রাফ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন:
গত দু-বছরে যে লোকে বক্সিং সম্পর্কে সিরিয়াস আলোচনা শুরু করেছে, তার জন্য মিডিয়াকে ধন্যবাদ। আজ সকলে আমার নাম জানে, তার কারণ আমার কাজগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। লেকিন বক্সিং কা তো কুছ প্রোমোশন হি নেহি হোতা ইন্ডিয়া মে। (কিন্তু ভারতে এখনো বক্সিং-এর উন্নতিকল্পে কিছু করা হয় না!) আমাদের এখানে বক্সিং অ্যাকাডেমি নেই। এমনকি ঠিকঠাক বক্সিং রিংও নেই। কতবার যে সরকার আর ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কিছুই হয়নি। [...] এদেশে সবাই ক্রিকেটের পিছনে ছোটে। বক্সিং ছেড়ে দিন। ভারত অন্যান্য খেলাতেও ভাল ফল করছে। সাইনা নেহাওয়াল দারুণ ব্যাডমিন্টন খেলেন। ভারতীয় টেনিস দলও কিছুদিন আগে একটা ডেভিস কাপ টাই জিতেছে, লেকিং হমারে লিয়ে সাপোর্ট কাহাঁ হ্যায়? (কিন্তু আমাদের কে সমর্থন করে?)[৬]
পারসেপ্ট পিকচার কোম্পানি বক্সিং আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান দ্য কন্টেন্ডার-এর ভারতীয় সংস্করণে অংশগ্রহণকারীদের গাইড ও কাউন্সিলর হওয়ার জন্য বিজেন্দরকে অনুরোধ জানায়। দ্য কন্টেন্ডার এমন এক আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সিঙ্গল এলিমিনেশন-ধাঁচের এক প্রতিযোগিতায় পরস্পরের মুখোমুখি হয়। আন্তর্জাতিক প্রযোজক সংস্থা বুলডগ মিডিয়া অ্যান্ড এনটারটেইনমেন্ট ও বহুজাতিক মিডিয়া সহায়ক সংস্থা পারসেপ্ট পিকচার কোম্পানি এই শো-টিকে ভারতীয় ধাঁচে করতে চাইছিল।[২৬] বিজেন্দর পারসেপ্টের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করেন। কিন্তু তখনও তিনি ইনফিনিটি অপটিক্যাল সলিউশনের (আইওএস) পুরুষ মডেল হিসেবে র্যাম্প ওয়াকের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। আইওএস-এর একটি আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লি হাইকোর্ট বিজেন্দরকে পারসেপ্টের সঙ্গে চুক্তি করতে নিষেধ করে।[২৭]
বিজেন্দর বলিউড অভিনেতা সলমন খানের গেম শো দশ কা দম-এ অংশ নেন। সেখানে বলিউড অভিনেত্রী মল্লিকা শেরাওয়াত তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। বিপাশা বসুর সঙ্গে ভারতীয় ড্যান্স আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান নাচ বালিয়ে-র চতুর্থ মরসুমেও তাকে দেখা গিয়েছিল।[২৮] হিন্দুস্তান টাইমস-এর খবর থেকে জানা যায়, তিনি দক্ষিণ ভারতীয় পরিচালক আনন্দ পরিচালিত ওয়ান নামের একটি অর্ধ-সত্য অর্ধ-কাল্পনিক বলিউড থ্রিলারে অভিনয় করছেন। প্রথম দিকে এই খবর বিজেন্দর অস্বীকার করেন।[২৯] পারসেপ্ট লিমিটেড প্রযোজিত এই ছবির নাম পালটে পরে রাখা হয় পাতিয়ালা এক্সপ্রেস। ২০১১ সালের প্রথম দিকে ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা।[৩০]
ভারতে বক্সিংকে পাদপ্রদীপের আলোয় ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব মিডিয়া ও সমালোচকেরা দেন বিজেন্দরকে। বিশ্ব বক্সিং-এ তার শীর্ষ স্থানে উত্থান পরবর্তী প্রজন্মকে বক্সিং-এ আগ্রহী করে তুলেছে। অনেকে বক্সিং শিখতেও শুরু করেছেন তার অনুপ্রেরণায়।[৩১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Press, Associated Foreign (২০০৮-০৮-২০)। "Indian boxer Vijender mobbed after historic medal"। Agence France-Presse। Google News। ২০০৯-০৯-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Jayaram, Rahul (২০০৮-০৮-৩১)। "'If I fight again I'll beat him for sure...I won't make the same mistakes again'"। The Telegraph (Kolkata)। ২০০৮-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ Bakshi, Akshuna (২০০৯-০২-১৪)। "Vijender Singh: From Bhiwani to Beijing"। View Magazine। Dynasty Communication। ২০১০-০২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ ক খ গ ঘ Sarangi, Y.B. (২০০৮-০৮-৩০)। "'Vijender is a winner'"। The Hindu। The Hindu Group। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Marar, Nandakumar (২০০৮-০৭-২৫)। "Vijender may spring a surprise"। The Hindu। The Hindu Group। ২০০৯-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ ক খ গ Roy, Priyanka (২০০৯-১০-০৭)। "Cricket Mein Bahut Paisa Hain, But Boxing Is A Man's Game"। The Telegraph। Ananda Publishers। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৯।
- ↑ Reporter, MSN (২০০৯-০৯-৩০)। "Vijender Singh: India's very own Gladiator"। MSN। ২০১১-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Kotian, Harish (২০০৮-০৭-২৩)। "'The world is now scared to face Indian boxers'"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Khadilkar, Dhananjay (২০০৮-০৫-২৯)। "Power punch"। Daily News & Analysis। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০৮।
- ↑ Reporter, TI (২০০৮-০৫-১৫)। "Indian boxers to study videos of Olympic rivals"। Thaindian News। ২০১২-১০-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Rperter, Zee (১৯৮৫–২০০৮)। "Vijender Singh: Profile"। Zee News। Zee Entertainment Enterprises। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Reporter, BBC (২০০৮-০৮-২২)। "India's Kumar wins boxing bronze"। BBC। BBC Online। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Reporter, Zee (২০০৮-০৮-২৬)। "Grand welcome for Sushil Kumar and Vijender Singh"। Zee News। Zee Entertainment Enterprises। ২০০৯-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Sarangi, Y.B. (২০০৯-০৯-২৬)। "Mary Kom, Vijender and Sushil get Khel Ratna"। The Hindu। The Hindu Group। ২০১২-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Chandra, Subhash (২০০৯-০৩-২৪)। "RTI reveals Sushil, Vijender recommended for Padma Awards"। CNN-IBN। Turner Broadcasting System। ২০১২-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Biswas, Soutik (২০০৮-০৭-২১)। "Against the Odds: Vijender Kumar"। BBC। BBC Online। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Correspondent, Special (২০০৯-০৯-১৩)। "Vijender settles for bronze"। The Kolkata Telegraph। Ananda Publishers। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ "World Top Wrestlers" (পিডিএফ)। International Boxing Association (AIBA)। ২০০৯-০৯-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ India, Press Trust (২০০৯-০৯-২৯)। "Vijender becomes world number one"। The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ Corresspondent, Special (২০১০-০১-২৬)। "Sehwag, Saina among Padma Shri awardees"। The Telegraph। Ananda Publishers। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০২-০৩।
- ↑ "Vijender bags silver in Champions of Champions"। IBN Live। ২০১০-০২-০৩। ২০১২-১০-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০২-০৩।
- ↑ "India claim overall title in Commonwealth Boxing Championship"। The Times of India। ২০১০-০৩-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-১৭।
- ↑ Scaggs, Tony (২০১০-১০-১১)। "Anthony Ogogo Defeats India's Answer To David Beckham"। The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-১০।
- ↑ Chaturvedi, Vinita (২০১১-০৫-১৭)। "Honeymoon will have to wait: Vijender"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-১৭।
- ↑ India, Press Trust (২০০৮-০৯-২৬)। "I want to use modelling to catapult boxing: Vijender"। The Indian Express। Indian Express Group। ২০০৮-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ India, Associated Press (২০০৯-০৯-১৮)। "Reality bug bites boxer Vijender Singh"। Deccan Herald। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ India, Press Trust (২০০৯-০৯-২৩)। "Delhi HC stays Vijender Singh's deal with Percept"। NDTV। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০।
- ↑ India, Press Trust (২০০৯-০৯-১৯)। "Vijender Singh to host sport reality TV show The Contender"। Oneindia.in। Greynium Information Technologies Pvt. Ltd.। ২০১২-০৭-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১।
- ↑ India, Associated Press (২০০৯-০৯-৩০)। "Boxer Vijender ventures into Bollywood"। Hindustan Times। HT Media Ltd। ২০০৯-১০-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১।
- ↑ Sood, Aman (২০১০-০৫-২৯)। "Vijender to wear greasepaint for desi Rocky"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-০৭।
- ↑ India, Press Trust (২০০৯-১০-০১)। "Blow by blow"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- 2008 Beijing Summer Olympics ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ এপ্রিল ২০০১ তারিখে
- Boxing star Vijender Singh NDTV
- ১৯৮৫-এ জন্ম
- ২০০৬ কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণকারী বক্সার
- ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী বক্সার
- ভারতীয় কমনওয়েলথ গেমস ব্রোঞ্জপদক জয়ী
- ভারতীয় কমনওয়েলথ গেমস রৌপ্যপদক জয়ী
- ভারতীয় বক্সার
- ভারতীয় হিন্দু
- জাট জাতি
- জীবিত ব্যক্তি
- মিডলওয়েটস
- ভারতীয় অলিম্পিক বক্সার
- ভারতীয় অলিম্পিক রৌপ্যপদক জয়ী
- ভিওয়ানির ব্যক্তিত্ব
- হরিয়ানার ব্যক্তিত্ব
- অর্জুন পুরস্কারের প্রাপক
- পদ্মশ্রী প্রাপক
- হরিয়ানার ক্রীড়াব্যক্তিত্ব
- ওয়াল্টারওয়েটস
- এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক বিজয়ী ভারতীয়
- ২০০৬ এশিয়ান গেমসের পদক বিজয়ী
- কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী ভারতীয়
- কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদক বিজয়ী ভারতীয়
- ভারতীয় পুরুষ মুষ্টিযোদ্ধা
- মিডলওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা
- অলিম্পিক ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী ভারতীয়
- অর্জুন পুরস্কার প্রাপক
- ক্রীড়ায় পদ্মশ্রী প্রাপক
- ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পদক বিজয়ী
- রাজীব গান্ধী খেলরত্ন প্রাপক
- এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী ভারতীয়
- ২০১০ এশিয়ান গেমসের পদক বিজয়ী
- ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মুষ্টিযোদ্ধা
- ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মুষ্টিযোদ্ধা