বিষয়বস্তুতে চলুন

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডিসকুইজিসনস অ্যারিথমেটিক বইটির প্রথম সংস্করণের শিরোনাম পাতার চিত্র - এ বইটি আধুনিক বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের ব্যুৎপত্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব হলো সংখ্যাতত্ত্বের একটি শাখা, যেখানে পূর্ণ সংখ্যা, মূলদ সংখ্যা এবং এরকম সংখ্যার সাধারণীকরণ বিমূর্ত বীজগণিতের কলাকৌশল ব্যবহারঘ15.6.11

করে অধ্যয়ন করা হয়। এ শাখায় সংখ্যাতত্ত্বের বিভিন্ন প্রশ্নকে(যেমন, বিভিন্ন ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ) এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন সংখ্যাতাত্ত্বিক কোন বস্তু বা প্রক্রিয়া বিভিন্ন বীজগাণিতিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই নতুনভাবে উপস্থাপিত প্রশ্নগুলোকে এবার রিং তত্ত্ব, আইডিয়াল তত্ত্ব, গ্যালোয়া তত্ত্ব ইত্যাদি দিয়ে অধ্যয়ন করা হয়, যেগুলো বিমূর্ত বীজগণিতের উপতত্ত্ব।

যেমন, একটি পূর্ণ সংখ্যাকে দুটি বর্গের যোগফল আকারে লেখা যায় কিনা সে প্রশ্নটিকে আমরা অন্যভাবে বিবেচনা করতে পারিঃ সেই পূর্ণ সংখ্যাটিকে গাউসীয় পূর্ণসংখ্যাগুলোর মধ্যে একের অধিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায় কিনা। এখানে গাউসীয় পূর্ণসংখ্যাগুলো একটি বীজগাণিতিক বস্তু রিং গঠন করে, আর রিং তত্ত্ব দিয়ে এখানে উৎপাদকে বিশ্লেষণ আলোচনা করা যায়।

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের ইতিহাস

[সম্পাদনা]

দাওফান্তাস বা ডায়োফ্যান্টাস

[সম্পাদনা]

বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্বের শুরুটা খুঁজতে গেলে আমরা সর্বপ্রথম ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ খুঁজে পাই। [] ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের নাম দেয়া হয়েছে খ্রিস্টীয় তৃৃতীয় শতকের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের খ্যাতনামা গণিতবিদ দাওফান্তাস নাম অনুসারে। তিনি এই ধরনের সমীকরণগুলি পর্যালোচনা করেন এবং এ ধরনের কিছু সমীকরণের সমাধানের পদ্ধতি বের করেন। একটি ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ হতে পারে এমনঃ আপনাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যা XY বের করতে হবে যাদের যোগফল হলো একটি প্রদত্ত পূর্ণসংখ্যা A এবং যাদের বর্গের যোগফল হচ্ছে অপর একটি প্রদত্ত পূর্ণসংখ্যা B.

ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ হাজার হাজার বছর ধরে অধীত হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সুপরিচিত ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ, যেখানে , , পূর্ণসংখ্যা তিনটি একটি সমকোণী ত্রিভুজ গঠন করে – এ রকম ত্রয়ী -কে সেজন্য পিথাগোরিয়ান ত্রয়ী বলে। ব্যবিলনীয়রা ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ সমীকরণের সব সমাধান কি-করে বের করতে হয় তা নির্ধারণ করে ফেলে৷[] রৈখিক ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ, যেমন -এর সব সমাধান ইউক্লিডীয় এলগরিদম (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের কাছাকাছি যেটি ইউক্লিডের বইতে পাওয়া যায়) ব্যবহার করে পাওয়া যেতে পারে৷[]

দাওফান্তাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হল অ্যারিথমেটিকা

ফের্মা

[সম্পাদনা]

গণিতজ্ঞ পিয়ের দ্য ফের্মা ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফের্মার শেষ উপপাদ্য়টি অনুমান করেন। ফের্মা তার কাছে থাকা অ্যারিথমেটিকা বইয়ের একটি কপির মার্জিনে দাবি করেন যে তার কাছে এই উপপাদ্যের একটি প্রমাণ আছে , কিন্তু প্রমাণটি তিনি সেখানে লিখছেন না কারণ সেটি সেখানে আঁটবে না ৷ ১৯৯৫-এর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫৮ বছর ধরে শতশত গণিতজ্ঞের বহু চেষ্টার পরও এই উপপাদ্যের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি । এই সমস্যাটি সমাধানের প্রচেষ্টায় ঊনবিংশ শতকে বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বকে অনেকদূর জানা গেছে, এবং এ প্রচেষ্টা বিংশ শতকে মডিউলারিটি উপপাদ্যের প্রমাণকেও ত্বরান্বিত করেছে ৷

বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় অন্যতম অবদান রাখে জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউসের লাতিন ভাষায় লেখা বই "ডিসকুইজিশনস অ্যারিথমেটিকা" (শিরোনামটির অনুবাদঃ গাণিতিক অনুসন্ধানসমূহ) ৷[] বইটি তিনি ১৭৯৮ সালে লেখেন যখন তার বয়স ২১, আর ১৮০১ সালে যখন তার বয়স ২৪ তখন বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটিতে গাউস ফের্মা, অয়লার, লাগরাঞ্জ, লজেন্ডার প্রমুখ গণিতবিদের সংখ্যাতত্ত্বীয় কাজ একত্র করেন এবং তার নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজও বইটিতে যোগ করেন। ডিসকুইজিশনস প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত সংখ্যাতত্ত্ব কেবল কিছু বিক্ষিপ্ত উপপাদ্য ও অনুমানের সমষ্টি ছিল; গাউস তার পূর্বসূরীদের কাজ একত্রিত করে ও তার সাথে নিজের কাজ যোগ করে সংখ্যাতত্ত্বকে বেশ একটি গোছালো তত্ত্বের রূপ দেন।

আর্নস্ট কুমের, পিটার গুস্তাভ ল্যাজন ডিরিক্লেরিচার্ড ডেডেকিন্ডসহ অন্যান্য ইউরোপীয় গণিতজ্ঞদের জন্য "ডিসকুইজিশনস" বইটি একটি মাইলফলক ছিল। বইটিতে গাউসের পাদটীকাগুলি থেকে আমরা আভাস পাই এমন সব কাজের যেগুলো গাউস প্রকাশ করেন নিঃ যেমন এই পাদটীকাগুলিতে এল ফাংশনকম্প্লেক্স মাল্টিপ্লিকেশন তত্ত্বের ধারণা নিহিত ছিল।

ডিরিক্লে

[সম্পাদনা]

১৮৩৮ থেকে ১৮৩৯-এর মধ্যে কয়েকটি পেপারে ফ্রান্সের গণিতজ্ঞ পিটার গুস্তাভ ল্যাজন ডিরিক্লে শ্রেণী সংখ্যার প্রথম সূত্রটি প্রমাণ করেন - এ সূত্রটি ছিল দ্বিঘাত ফর্ম এর জন্য। জ্যাকোবি এ সূত্রটিকে সূক্ষ্ম বিচারশক্তির চরম পর্যায় (টাচিং দ্য আটমোস্ট অব হিউম্যান আকিউমেন) বলে উল্লেখ করেন। এরকম সূত্র তারপর আরো সাধারণ নাম্বার ফীল্ডের জন্যও পাওয়া যায়।[] বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের একটি মৌলিক উপপাদ্য হচ্ছে ডিরিক্লের একক উপপাদ্য, যেটি ডিরিক্লে প্রমাণ করেন দ্বিঘাত ফীল্ডের একক গ্রুপের ওপর তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে।[]

তিনি ডায়োফ্যান্টাইন আসন্নায়নের একটি উপপাদ্য প্রমাণ করতে গিয়ে প্রথম পিজিয়নহোল নীতিটি ব্যবহার করেন, যে উপপাদ্যটিকে এখন বলা হয় ডিরিক্লের আসন্নায়নের উপপাদ্য ৷ তিনি ফের্মার শেষ উপপাদ্যের n = ৫ এবং n = ১৪ ক্ষেত্রদুটি প্রমাণ করেন, আর চর্তুর্ঘাতী রেসিপ্রোসিটি নিয়ে কাজ করেন।[] ডিরিক্লের ভাজক সমস্যা এখনো সংখ্যাতত্ত্বের একটি অমীমাংসিত সমস্যা।

ডেডেকিন্ড

[সম্পাদনা]

জার্মান গণিতজ্ঞ রিচার্ড ডেডেকিন্ড ডিরিক্লের কাজ অধ্যয়ন করেন ও পরবর্তীকালে নাম্বার ফীল্ড ও আইডিয়াল এর ওপর কাজ করেন। তিনি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ডিরিক্লের সংখ্যাতত্ত্বের উপর লেকচারগুলো সংকলন করে "ভোর্লেসুঙ্গেন উবার জাহ্লেনথিওরি" (শিরোনামের অনুবাদঃ সংখ্যাতত্ত্বে লেকচারসমূহ) বইটি প্রকাশ করেন। বইটি সম্মন্ধে বলা হয়েছে যেঃ

"Although the book is assuredly based on Dirichlet's lectures, and although Dedekind himself referred to the book throughout his life as Dirichlet's, the book itself was entirely written by Dedekind, for the most part after Dirichlet's death." (Edwards 1983)

অনুবাদ- যদিও বইটি ডিরিক্লের লেকচারের ওপর নির্ভর করে লেখা, এবং যদিও ডেডেকিন্ড নিজে সবসময় বইটিকে উল্লেখ করেছেন ডিরিক্লের বই হিসেবে - বইটির পুরোটাই ডেডেকিন্ডের লেখা, এবং এর বেশিরভাগ ডিরিক্লের মৃত্যুর পর লেখা ৷ (এডওয়ার্ডস ১৯৮৩)

ভোর্লেসুঙ্গেন উবার জাহ্লেনথিওরি বইটির ১৮৭৯ এবং ১৮৯৪ সালের সংস্করণে রিং তত্ত্বের মৌলিক ধারণা আইডিয়ালের ধারণা প্রবর্তন করা হয় - "রিং" শব্দটি অবশ্য ডেডেকিন্ড ব্যবহার করেন নি, ডেভিড হিলবার্ট শব্দটি ব্যবহার করেন। ডেডেকিন্ড আইডিয়ালের সংজ্ঞা দেন এভাবেঃ কোন একটি সংখ্যার সেটের জন্য একটি আইডিয়াল হচ্ছে সেই সেটের এমন সব উপাদানের সাবসেট যারা বীজগাণিতিক পূর্ণ সংখ্যা, অর্থাৎ যারা কোন একটি পূর্ণ সংখ্যা সহগ সম্পন্ন বহুপদী সমীকরণের মূল। ডেডেকিন্ডের পর গণিতবিদ হিলবার্ট এবং বিশেষ করে এমি নোয়েদার এই ধারণাটিকে আরো বিকশিত করেন। আর্নস্ট এডওয়ার্ড কুমের ১৮৪৩ সালে ফের্মার শেষ উপপাদ্য প্রমাণের প্রচেষ্টায় আদর্শ সংখ্যার ধারণার প্রবর্তন করেন; আদর্শ সংখ্যার ধারণাটিকে সাধারণীকরণ করে এই আইডিয়াল।

হিলবার্ট

[সম্পাদনা]

ডেভিড হিলবার্ট তার ১৮৯৭ সালের কাজ "জাহ্লবেরিশ" (আক্ষরিক অর্থঃ সংখ্যার প্রতিবেদন)-এ বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের ধারণাগুলোকে একত্র করেন। হিলবার্ট ১৭৭০ সালে উত্থাপন করা একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ সমস্যা - ওয়ারিঙের সমস্যার সমাধান করেন। এখানে তিনি কি করে সমাধানের মান নির্ণয় করতে হয় তা না দেখিয়েও দেখাতে সক্ষম হন যে সমাধানের অস্তিত্ত্ব আছে (যেমনটি তিনি একটি সসীমতার উপপাদ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে করেছিলেন।)[] এরপর তিনি সংখ্যাতত্ত্বে আর তেমন কোন কাজ করেন নি; কিন্তু পরে তার ছাত্রের কাজে থাকা হিলবার্ট মডিউলার ফর্মকে হিলবার্টের নামে নাম দেয়া হয়।

তিনি ক্লাস ফিল্ড তত্ত্বের ওপর বেশ কিছু অনুমান করেন। এই ধারণাগুলো গণিতের জগতে বেশ প্রভাব ফেলে; হিলবার্টের অবদান ও নাম এখন হিলবার্ট ক্লাস ফীল্ডলোকাল ক্লাস তত্ত্বের হিলবার্ট চিহ্নে জড়িয়ে আছে। গণিতজ্ঞ তেইজি তাকাগির কাজের পর এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফলাফল ১৯৩০ সাল নাগাদ প্রমাণ করা হয়ে যায়।[]

আর্টিন

[সম্পাদনা]

এমিল আর্টিন ১৯২৪, ১৯২৭ এবং ১৯৩০-এর কিছু পেপারে তার রেসিপ্রোসিটি সূত্রটি প্রমাণ করেন। এটি গ্লোবাল ক্লাস ফীল্ড তত্ত্বের একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ।[] এটিকে "রেসিপ্রোসিটি সূত্র" বলা হয় কারণ এটি দ্বিঘাতী রেসিপ্রোসিটি, আইজেনস্টাইন রেসিপ্রোসিটি, কুমের রেসিপ্রোসিটি, হিলবার্ট নর্ম চিহ্নের গুণের সূত্র ইত্যাদির সাধারণীকরণ করে। আর্টিনের এই উপপাদ্যটি হিলবার্টের নবম সমস্যার আংশিক সমাধান দেয়।

আধুনিক তত্ত্ব

[সম্পাদনা]

জাপানী গণিতজ্ঞ গোরো শিমুরাইয়ুতাকা তানিয়ামা ১৯৫৫ নাগাদ গণিতের দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শাখা, ইলিপ্টিক কার্ভমডিউলার ফর্মের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সংযোগ লক্ষ্য করেন। এখান থেকে অনুমান করা হল যে প্রতিটি ইলিপ্টিক কার্ভই মডিউলার, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট মডিউলার ফর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটি "তানিয়ামা-শিমুরার অনুমান" নামে পরিচিতি পায় (অনুমানটি পুরো প্রমাণিত হয়ে গেছে বলে এখন একে মডিউলারিটি উপপাদ্য বলে)৷

প্রথমে মনে করা হয়েছিল এমন একটি অনুমান সঠিক হতে পারে না, কিন্তু সংখ্যাতত্ত্ববিদ আন্দ্রে ওয়েইল এটি যে সঠিক হতে পারে সেটা সমর্থনকারী যুক্তি দিতে সক্ষম হলে অনুমানটি আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে আসে - তখন থেকে "তানিয়ামা-শিমুরা-ওয়েইল অনুমান" নামে এটি পরিচিতি পায়।[১০] এটিকে ল্যাংল্যান্ডস প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেটা হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্ব ও জ্যামিতির মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু গাণিতিক অনুমানের একটি তালিকা।

অ্যান্ড্রু ওয়াইলস ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪-এর মধ্যে সেমিস্টেবল ইলিপ্টিক কার্ভের জন্য মডিউলারিটি উপপাদ্যের একটি প্রমাণ প্রদান করেন। এর সাথে রিবেটের উপপাদ্য ব্যবহার করে তখন ফের্মার শেষ উপপাদ্যের একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। সে সময়ের প্রায় সব গণিতবিদই তখন মডিউলারিটি উপপাদ্য এবং ফের্মার শেষ উপপাদ্যকে প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব বলেই ধারণা করেছিলেন। ওয়াইলস ১৯৯৩ সালের জুনে তার প্রমাণ ঘোষণা করেন, যেটাতে আসলে বেশ বড় একটি ত্রুটি ছিলো৷[১১] ওয়াইলস পরে রিচার্ড টেইলরের সহযোগীতায় ভুলটি সংশোধন করেন - প্রমাণটির শেষ সংস্করণ ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। প্রমাণটি আধুনিক বীজগাণিতিক জ্যামিতির নানা নির্মাণ - যেমন স্কিমদের ক্যাটাগরিইওয়াসাওয়া তত্ত্ব, এবং অন্যান্য বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত কৌশল ব্যবহার করে যা ফের্মার সময়ে জানা ছিল না।

মৌলিক ধারণাসমূহ

[সম্পাদনা]

ব্যর্থতা এবং অনন্য গুণকনির্ণয়

[সম্পাদনা]

পূর্ণ সংখ্যার বলয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হলো, এটি পাটীগণিতে মৌলিক উপপাদ্যকে সমর্থন করে, যা বলে যে, প্রতিটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যারই এক বা একাধিক মৌলিক সংখ্যার গুণিতক রয়েছে এবং এই গুণিতকগুলির ক্রম ঐ আলাদা আলাদা পূর্ণ সংখ্যার ক্ষেত্রে অনন্য হয়৷ এই বিবৃতি O পূর্ণ সংখ্যার বলয় ক্রমের K বীজগাণিতিক ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হয় না৷

O ক্রমের একটি মৌলিক উপাদান p হলো এমন একটি সংখ্যা, যদি pকে দিয়ে একটি সংখ্যা abকে ভাগ করা হয় তবে ঐ ভাগের ভাগফল হিসাবে a অথবা b অথবা যেকোনো একটির সাধারণ গুণনীয়ক পাওয়া যাবে৷ এই ধর্মটি পূর্ণ সংখ্যার আদ্যত্ব ধর্মের সাথে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত কারণ যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যার গুণনীয়ক হিসাবে যদি বা ঐজাতীয় কোনো মৌলিক সংখ্যাকে ধরলে তবে যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে এই নিয়মটি প্রযোজ্য হবে৷ যদিও এটি অন্যান্য মৌলিক সংখ্যার ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী নয়৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ঋণাত্মক সংখ্যা হওয়ার কারণে −২ কখনোই মৌলিক সংখ্যা নয়, কিন্তু অবশ্যই এটি একটি মৌলিক উপাদান৷ যদি মৌলিক সংখ্যাগুলির ভগ্নাংশকরণ বা একাধিক গুণফলে ভাগ করাকে মান্যতা দেওয়া হয় তবে, পূর্ণ সংখ্যাগুলির ক্ষেত্রেও একাধিক ভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যাবে, যেমন

সাধারণভাবে বলা যায়, যদি uকে একটি একক রাশি হিসাবে ধরা হয় বা Oর একটি গুণক অন্যোন্যক হিসাবে প্রকাশ হয় এবং p যদি মৌলিক সংখ্যার সেট হয় তবে up গুণফলটিও অবশ্যই একটি মৌলিক সংখ্যা হিসাবে গণ্য হবে৷ এক্ষেত্রে p এবং up এর অঙ্কসংখ্যাগুলিকে পরষ্পরের সহযোগী সেট বলে ধরা হবে৷ পূর্ণ সংখ্যাগুলির মধ্যে p এবং p ও সহযোগী সেট কিন্তু শর্তানুসারে সেটগুলির মধ্যে যে কোনো একটি সেটকে পুরোপুরি ধনাত্মক হতে হবে৷ পূর্ণ সংখ্যাগুলির ধনাত্মক হওয়ার সাথে সাথে সহযোগী সেটগুলির মধ্যে থাকা সহযোগী সংখ্যাগুলি একটি অনন্য উপাদান তৈরী করে৷ যখন K সেটটি মূলদ সংখ্যাকে নির্দেশ করে না করলে সেটে ধনাত্মকতার কোনো প্রশ্নই তৈরী হয় না৷ উদাহরণস্বরূপ গাউসীয় পূর্ণ সংখ্যা Z[i]-তে ১ + ২i এবং −২ + i অঙ্কসমষ্টি পরষ্পরের সহযোগী কারণ পূর্ববর্তী অঙ্কসংখ্যার সাথে i এর গুণফলের ফলস্বরূপ দ্বিতীয় সংখ্যাটি পাওয়া যায় কিন্তু দুটির মধ্যে উভয়ই শর্তসম্মত হওয়ার কারণে কোনটি কার সহযোগী অঙ্ক তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়৷ সমীকরণের দ্বারা প্রকাশ করে পাওয়া যায়

এই সমীকরণসূত্রটি প্রমাণ করে যে, Z[i]-এর গুণকগুলি ফ্যাক্টরের ঘাত নির্ভর এবং এর ওপর ভিত্তি করেই অনন্য৷ একারণেই অনন্য গুণকের শর্তক্ষেত্রই একমাত্র অনন্য গুণক নির্দেশ করে, অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি সবসময় মেলে না৷ অনন্য গুণকের সেটে গুণকসমন্বিত মৌলিক সংখ্যাগুলি কেবলমাত্র তাদের মান ও ঘাতের ওপর ভিত্তি করে অনন্য হয়৷

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Stark, pp. 145–146.
  2. Aczel, পৃঃ ১৪–১৫।
  3. Stark, pp. 44–47.
  4. Disquisitiones Arithmeticae at Yalepress.yale.edu
  5. Elstrodt, Jürgen (২০০৭)। "The Life and Work of Gustav Lejeune Dirichlet (1805–1859)" (পিডিএফ)Clay Mathematics Proceedings। ২০২১-০৫-২২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-২৫ 
  6. Kanemitsu, Shigeru; Chaohua Jia (২০০২)। Number theoretic methods: future trends। Springer। পৃষ্ঠা 271–274। আইএসবিএন 978-1-4020-1080-4 
  7. Reid, Constance, 1996. Hilbert, Springer, আইএসবিএন ০-৩৮৭-৯৪৬৭৪-৮.
  8. This work established Takagi as Japan's first mathematician of international stature.
  9. Helmut Hasse, History of Class Field Theory, in Algebraic Number Theory, edited by Cassels and Frölich, Academic Press, 1967, pp. 266–279
  10. Fermat's Last Theorem, Simon Singh, 1997, আইএসবিএন ১-৮৫৭০২-৫২১-০>
  11. Kolata, Gina (২৪ জুন ১৯৯৩)। "At Last, Shout of 'Eureka!' In Age-Old Math Mystery"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩