ভগৎ সিং
ভগৎ সিংহ ਭਗਤ ਸਿੰਘ بھگت سنگھ | |
---|---|
১৯০৭-১৯৩১ | |
২১ বছর বয়সী ভগৎ সিংহ | |
জন্ম তারিখ | ২৮সেপ্টেম্বর, ১৯০৭ |
জন্মস্থান | লায়ালপুর, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু তারিখ | ২৩ মার্চ, ১৯৩১ (২৩ বছর) |
মৃত্যুস্থান | লাহোর, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত |
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
প্রধান সংগঠন | নওজওয়ান ভারত সভা, কীর্তি কিসান পার্টি ও হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন |
ধর্ম | শিখধর্ম (প্রথম জীবন), নাস্তিকতা[১] (পরবর্তী জীবন) |
ভগৎ সিংহ (পাঞ্জাবি: ਭਗਤ ਸਿੰਘ بھگت سنگھ, আ-ধ্ব-ব: [pə̀ɡət̪ sɪ́ŋɡ]) (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭[২] – ২৩ মার্চ ১৯৩১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন পুরোধা পুরুষ ও অগ্নিযুগের শহিদ। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী বিপ্লবী। তিনি ছিলেন এক জাতীয়তাবাদী। ভারতের জাতীয়তাবাদীরা তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে শ্রদ্ধা করে।
ভগৎ সিংহের জন্ম একটি জাট শিখ পরিবারে। তার পরিবার আগে থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। কৈশোরেই ভগৎ ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করেন এবং নৈরাজ্যবাদ ও কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন।[৩] এরপর তিনি একাধিক বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের (এইচআরএ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে মেধা, জ্ঞান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতায় তিনি অচিরেই এই সংগঠনের নেতায় পরিণত হন এবং সংগঠনটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এটিকে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে (এইচএসআরএ) রূপান্তরিত করেন। তাকে এবং তার সংগঠনকে নৈরাজ্যবাদী আখ্যা দেওয়া হলে তিনি ক্ষুরধার যুক্তিতে তা খণ্ডন করেন। জেলে ভারতীয় ও ব্রিটিশ বন্দীদের সমানাধিকারের দাবিতে ৬৪ দিন টানা অনশন চালিয়ে তিনি সমর্থন আদায় করেন। এটিই ছিল দীর্ঘতম অনশন। প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিশোধে এক ব্রিটিশ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন ভগৎ। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। তার দৃষ্টান্ত শুধুমাত্র ভারতীয় যুবসমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধই করেনি, ভারতে সমাজতন্ত্রের উত্থানেও প্রভূত সহায়তা করেছিল।[৪]
প্রথম জীবন
[সম্পাদনা]ভগৎ সিংহের জন্ম পাঞ্জাবের লায়ালপুর জেলার বাঙ্গার নিকটস্থ খাতকর কালান গ্রামের এক সান্ধু জাট পরিবারে।[৩] তার পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও মায়ের নাম বিদ্যাবতী।[৫] ভগতের নামের অর্থ "ভক্ত"। তিনি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেটি ছিল এক দেশপ্রেমিক শিখ পরিবার। এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য ভারতের বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতীতে এই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য আবার মহারাজা রঞ্জিত সিংহের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন।[৬] ভগতের ঠাকুরদাদা অর্জুন সিংহ ছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[৭] ভগতের উপরেও এই সংগঠনের গভীর প্রভাব লক্ষিত হত। ভগতের বাবা ও দুই কাকা অজিত সিংহ ও স্বরণ সিংহ কর্তার সিং সরভ গ্রেওয়াল ও হরদয়াল নেতৃত্বাধীন গদর পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অজিত সিংহের নামে একটি মামলা দায়ের করা হলে তিনি পারস্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অন্যদিকে ১৯২৫ সালের কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর স্বরণ সিংহের ফাঁসি হয়।[৮]
ভগতের বয়সী ছেলেরা সাধারণত লাহোরের খালসা হাইস্কুলে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি এই স্কুলের আনুগত্যের কারণে তার ঠাকুরদাদা তাকে এখানে পাঠাননি।[৯] পরিবর্তে ভগতের বাবা তাকে আর্যসমাজি বিদ্যালয় দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক স্কুলে ভর্তি করেন।[১০] মাত্র তেরো বছর বয়সে ভগৎ মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করেন এবং তার সরকারি স্কুলবই ও বিলিতি স্কুল ইউনিফর্ম পুড়িয়ে ফেলেন। চৌরিচৌরার গণ-হিংসার ঘটনায় কয়েকজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হলে গান্ধীজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এতে হতাশ হয়ে ভগৎ যুব বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের পন্থায় ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার কথা প্রচার করতে থাকেন।[১১]
১৯২৩ সালে ভগৎ সিং পাঞ্জাব হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছিলেন।এটি পাঞ্জাব হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি পাঞ্জাব লেখক দ্বারা রচিত অনেক কবিতা এবং সাহিত্য পাঠ করেন এবং তার পছন্দের কবি ছিলেন আল্লামা ইকবাল। ভগত সিং মার্ক্সবাদী সাহিত্য, টলস্টয়, বাকুনিন, আপটম সিনক্লেয়ার ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ নজরুল গভীর মনযোগের সাথে পাঠ করেছিলেন।
ভগৎ সিং কিশোর বয়সে লাহোরের ন্যাশনাল কলেজে পড়াশুনা আরম্ভ করেন কিন্তু বাল্য বিবাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং 'নওজাওয়ান ভারত সভা' (ভারত যুব সভা) এর সদস্য হন।এই সংস্থায় ভগৎ সিং এবং তার আর বিপ্লবী সহকর্মীরা যুবকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ইতিহাস শিক্ষক, প্রফেসর বিদ্যালংকরের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে ভগৎ হিন্দুস্তান রিপাবলিক এসোশিয়েসন এর সাথে যুক্ত হন যেখানে রামপ্রসাদ বিসমিল, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আসফাক উল্লা খানের মত বিশিষ্ট নেতারা ছিলেন। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, তিনি কানপুর থেকে কাকরি গিয়েছিলেন 'কাকরি ট্রেন লুট' করার জন্য কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি লাহোর ফিরে আসেন। ১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসের নবরাত্রিতে লাহোরে বোমা বিস্ফোরিত এবং ভগৎ সিং এই বোমা বিস্ফোরণে জড়িতদের দায়ে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পাঁচ সপ্তাহ পর তাকে ৬০০০০ টাকা জামিন নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি অমৃতসর থেকে উর্দু ও পাঞ্জাব পত্রিকায় লিখেন এবং সম্পাদনা করেন। ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে 'কৃতি কিষান পার্টি' একই পতাকাতলে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন বিপ্লবী নেতারা একটি সভায় মিলিত হয়েছিল। ভগৎ সিং ওই সভার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তার বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডদের জন্য তাকে সমিতির নেতা বানানো হয়।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]ভগৎ সিংকে নিয়ে ২০০২ সালে নির্মিত হয়েছে অজয় দেবগন অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্র দ্য লিজেন্ড অব ভগৎ সিং।[১২]
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Why I am an Atheist (Esay) - Bhagat Singh, October 5–6, 1930
- ↑ "He left a rich legacy for the youth"। The Tribune। ১৯ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০০৮।
- ↑ ক খ Rao, Niraja (১৯৯৭)। "Bhagat Singh and the Revolutionary Movement"। Revolutionary Democracy। 3 (1)।
- ↑ Reeta Sharma (২১ মার্চ ২০০১)। "What if Bhagat Singh had lived"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০০৮।
- ↑ Nijjar, Bakhshish Singh (১৯৭৪)। Panjab Under the British Rule, 1849-1947। K. B. Publications। পৃষ্ঠা 172।
- ↑ O. P. Ralhan, সম্পাদক (২০০২)। Encyclopaedia of Political Parties। New Delhi, India: Anmol Publications। Vol. 26, p349। আইএসবিএন 81-7488-313-4।
- ↑ Sanyal, Jitendra N. (২০০৬)। Bhagat Singh: Making of a Revolutionary: Contemporaries' Portrayals। Gurgaon, Haryana, India: Hope India Publications। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 81-7871-059-5।
- ↑ Sanyal (2006), p30.
- ↑ Sanyal (2006), p20.
- ↑ Hoiberg, Dale H. (২০০০)। Students' Britannica India। New Delhi, India: Encyclopædia Britannica, Inc. (India)। vol. 1, p188। আইএসবিএন 0-85229-760-2।
- ↑ Nayar, Kuldip (২০০৬)। The Martyr: Bhagat Singh Experiments in Revolution। New Delhi, India: Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 20–21। আইএসবিএন 8124107009।
- ↑ ইতিহাস নির্ভর বলিউডের জনপ্রিয় পাঁচ ছবি, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ২৭ নভেম্বর ২০১৭
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Shaheed Bhagat Singh in Jail - A different perspective.
- Bhagat Singh - comic
- Freedom fighter Bhagat Singh
- Bhagat Singh at freeindia.org
- Bhagat Singh Biography and Contains letters written by Bhagat Singh
- Why I Am An Atheist, an essay by Bhagat Singh
- Martyrdom of Sardar Bhagat Singh by Jyotsna Kamat
- Biography
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
- ১৯০৭-এ জন্ম
- ১৯৩১-এ মৃত্যু
- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
- ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন
- বিপ্লবী
- ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ
- ব্রিটিশ ভারত দ্বারা ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
- ভারতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলন
- ভারতীয় বিপ্লবী
- ভারতীয় ব্যক্তি যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে
- প্রাক্তন শিখ
- ভারতীয় সাম্যবাদী
- মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিপ্লবী
- পাঞ্জাবি ব্যক্তি
- ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন কর্মী
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদী
- ভারতীয় নৈরাজ্যবাদী