শুঁটকি মাছ
সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে তাজা মাছ সহজেই পচে যায়। খাদ্য সংরক্ষণের এক প্রাচীন পদ্ধতি হল খাদ্য শুকানো। শুঁটকি বা মাছকে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ তেমনই একটি পদ্ধতি যাতে মাছকে রোদে রাখা হয় পানি অপসারণের জন্য। কারণ পানির কারণেই বিভিন্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব বেঁচে থাকে এবং মাছকে পঁচতে সহায়তা করে। খোলা জায়গায় বাতাস এবং রোদ ব্যবহার করে মাছকে শুকানোর প্রথা অনেক প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।[১] সাধারণত পানিকে বাতাস, রোদ, ধোঁয়া ইত্যাদির সাহায্যে শুকানো হয় কিন্তু বরফ দ্বারা শুকানো পদ্ধতিতে খাদ্যকে প্রথমে বরফ করা হয় তারপর জল বের করা হয়। ব্যাকটেরিয়া, ইষ্ট এবং মোল্ড বেড়ে উঠার জন্য পানি প্রয়োজন এবং জলকে পরিপূর্ণ রূপে শুকানো হলে খাদ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।
মাছকে এভাবে সংরক্ষণ করার জন্য শুকানো, ধোঁয়ার ব্যবহার এবং লবণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।[২] সবচেয়ে পুরনো এবং সহজ পদ্ধতি হল মাছকে বাতাস ও রোদে শুকানো। শুকনো মাছের আয়ুষ্কাল কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ, কমদামি এবং কার্যকর হয় অনুকূল আবহাওয়াতে। জেলে বা তার পরিবারের সদস্যরা এই কাজ সাধারণত করে থাকে এবং তা সহজেই বাজারজাত করতে পারা যায়।
বাংলাদেশে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের পটভূমি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৭.৩ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত প্রাণীজ আমিষের প্রায় ৬০% আসে মৎস্য ও মৎস্যজাত খাদ্য থেকে। দেশের মানুষের বার্ষিক জনপ্রতি মাছের চাহিদা ২০.৪৪ কেজি। চাহিদার বিপরীতে বার্ষিক জনপ্রতি খাদ্য হিসাবে মাছ গ্রহণ ১৮.৯৪ কেজি অর্থাৎ ১.৫০ কেজি ঘাটতি থাকে। এই গ্রহণকৃত মাছের প্রায় ৫% আসে শুটকি থেকে। বছরে প্রায় ৫.৪৬ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য আহরিত হয় সমুদ্র থেকে যার ২০% শুটকি হিসাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। বাংলাদেশ থেকে (২০১১-১২) অর্থ বছরে প্রায় ৬২৩ মেট্রিক টন শুটকি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশে (৮-১০) প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুটকি তৈরি হয়। ১ কেজি শুটকি মাছ তৈরিতে প্রজাতিভেদে প্রায় (৩-৫) কেজি কাঁচা মাছ প্রয়োজন। উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন সমুদ্র থেকে মাছ সংগ্রহ করে। বাংলাদেশে মূলত শীতকালে শুটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। সাধরনত অক্টোরব থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে শুটকি শুকানো হয়। উৎপাদিত শুটকি ১৫টি বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে মূ্ল্য সংযোজিত হয়ে (৩-৬) ধাপ অতিক্রম করে ভোক্তার কাছে পৌঁছে ।বাংলাদেশের উৎপাদিত সামুদ্রিক শুটকির সবচেয়ে বড় অংশই তৈরী হয় কক্সবাজারে।
উৎপাদিত শুটকির প্রায় ৮০% তৈরী হয় সদর উপজেলার কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার নাজিরারটেকে। নাজিরারটেকের শুটকি উৎপাদনকারী উদ্যোক্ত, শ্রমিক ও বিপণন কাজে জড়িত লোকের সংখ্যা প্রায় (৮,৫০০-৯,০০০) জন। প্রচলিত নিয়মে সুর্যালোক ব্যবহার করে শুটকি শুকানো হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য শুটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ কালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা কীটনাশক ব্যবহার করে। আর জেনে বা না জেনে এই শুটকি খাদ্য ̈হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে খুবই ক্ষতিকর রোগের সৃষ্টি করে।
চিত্র
[সম্পাদনা]-
শুঁটকি মাছ দিয়ে তৈরী শুঁটকি ভর্তা
-
মহিলারা মাছ শুকাচ্ছেন, ১৯৭১
-
মোহনগঞ্জ বাজারে শুঁটকি
-
আইসল্যান্ডে শুঁটকি
-
কড মাছকে রোদে শুকিয়ে লবন দিয়ে মোড়কিকরন করার পূর্বে
-
মালপ হারবারে লবন মিশ্রিত মাছ
-
এলগনকুই জাতির লোকেদের মাছ সংরক্ষনে ব্যবহৃত পদ্ধতি
-
কলকাতায় শুঁটকি বিক্রি
-
কক্সবাজারে শুঁটকি মাছের দোকান
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Historical Origins of Food Preservation." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ অক্টোবর ২০১১ তারিখে. Accessed June 2011.
- ↑ Grandidier (1899), p. 521
পাদ টিকা
[সম্পাদনা]- Grandidier, A. (১৮৯৯)। Guide de l’immigrant à Madagascar (ফরাসি ভাষায়)। Paris: A Colin et cie।
- Kurlansky, Mark (1997). Cod: A Biography of the Fish That Changed the World. New York: Walker. আইএসবিএন ০-৮০২৭-১৩২৬-২.