বিষয়বস্তুতে চলুন

হান ইউ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হান ইউ
জন্ম৭৬৮
মৃত্যু৮২৪ (৫৫-৫৬ বছর)
পূর্ণ নাম
পারিবারিক নাম: হান 韓
প্রদত্ত নাম: ইউ 愈
আভিজাত্যসূচক নাম: তুইচি 退之
মরণোত্তর নাম
হানের ডিউক ওয়েন 韓文公
হান ইউ
ঐতিহ্যবাহী চীনা 韓愈
সরলীকৃত চীনা 韩愈

হান ইউ (চীনা: 韓愈; ৭৫৮ - ২৫ ডিসেম্বর ৮২৪) ছিলেন একজন চীনা লেখক, কবি ও তাং রাজবংশের সরকারি কর্মকর্তা। তিনি নব্য-কনফুসীয়বাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চীনা সাহিত্য রীতিতে তার প্রভাবের জন্য তিনি দান্তে, শেকসপিয়ার বা গ্যোটের সমকক্ষ হিসেবে বিবেচিত।[] ইউ রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলীতে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন।

তাকে চীনের অন্যতম সুন্দর গদ্য লেখক বলে বিবেচনা করা হয়।[] মিং রাজবংশ সময়কালের পণ্ডিত মাও কুন (茅坤) "তাং ও সং রাজবংশের আট সেরা গদ্য লেখক" তালিকায় তাকে প্রথম স্থান প্রদান করে।[]

জীবনী

[সম্পাদনা]

হান ইউ ৭৬৮ সালে[] হেয়াঙের (বর্তমান মেংচৌ) হেনানে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা নিম্ন শ্রেণীয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। ইউয়ের যখন দুই বছর বয়স তখন তার পিতা মারা যান। তার বড় ভাই হান হুইয়ের তত্ত্বাবধানে তিনি বেড়ে ওঠেন। তিনি দার্শনিক লেখনী ও কনফুসীয় ভাবধারা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ৭৭৪ সালে তার পরিবার চাং'আনে চলে যায়, কিন্তু ৭৭৭ সালে মন্ত্রী ইউয়ান জাইয়ের সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে তাদের দক্ষিণ চীনে নির্বাসিত করা হয়। হান হুই ৭৮১ সালে কুয়াংতুং প্রদেশে দাপ্তরিক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন মারা যান।[] ৭৯২ সালে চার বার প্রচেষ্টার পর ইউ জিনশি পরীক্ষা পাস করেন। রাজধানীতে কোন সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে না পারার ফলে ৭৯৬ সালে তিনি বিয়ানচৌয়ের প্রাদেশিক সামরিক গভর্নরের চাকরিতে যোগ দেন। ৭৯৯ সাল পর্যন্ত সেখানে থাকার পর তিনি চুচৌয়ের সামরিক গভর্নরে যোগ দেন।[] ৮০২ সালে সামরিক গভর্নরের সুপারিশে তিনি প্রথমবারের মত কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেন। উত্তরাধিকারীদের মধ্যে প্রতীয়মান বিরোধের মীমাংসা করতে না পারায় তিনি আবারও নির্বাসিত হন। অন্যান্য কারণসমূহ হল সম্রাটের ভৃত্যদের খারাপ আচরণের সমালোচনা এবং খরা মৌসুমে কর হ্রাস করার অনুরোধ।

হান ইউ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তন্মধ্যে রয়েছে ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর। ৮২৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ৫৬ বছর বয়সে ইউ চাংআনে মৃত্যুবরণ করেন। ৮২৫ সালের ২১শে এপ্রিল তাকে হেয়াঙের একটি সমাধিতে সমাহিত করা হয়।[][]

সাহিত্যকর্ম

[সম্পাদনা]

হান ইউকে তাং রাজবংশ সময়ের অন্যতম সেরা ধ্রুপদী গদ্য রচয়িতা হিসেবে গণ্য করা হয়। মিং রাজবংশ সময়কালের পণ্ডিত মাও কুন (茅坤) "তাং ও সং রাজবংশের আট সেরা গদ্য লেখক" তালিকায় তাকে প্রথম স্থান প্রদান করে। লিউ জংইউয়ানের সাথে যৌথভাবে তিনি হান সাম্রাজ্য সময়কালের অলংকারহীন গদ্যশৈলীর ধ্রুপদী গদ্য আন্দোলনের নেপথ্যে কাজ করেন।[] তিনি মনে করতেন ধ্রুপদী "গদ্যের পুরনো ধরন" বা গুয়েন এমন এক ধরনের লেখনী যা যুক্তি বা ধারণার প্রকাশে বেশি উপযুক্ত।[] হান ইউয়ের গুয়েন প্রাচীন গদ্যশৈলীর অনুলিপি নয়, বরং পরিষ্কারকরণ, সংক্ষিপ্ততা ও উপযোগিতার প্রাচীন ধারণার ভিত্তিতে গঠিত নতুন ধরন।[]

তার সেরা প্রবন্ধগুলোর মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্ম ও দাওবাদের বিপক্ষে তার বিতর্ক এবং কনফুসীয়বাদের পক্ষে তার সমর্থন, যেমন বুদ্ধিজম মেমোরিয়াল অন বোন-রেলিকস অব দ্য বুদ্ধ এবং দ্য অরিজিন অব দাও। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হল চাওচৌ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কুমির সরিয়ে ফেলার প্রসঙ্গে টেক্সট ফর দ্য ক্রকোডাইলস এবং দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে নিজেকে উত্তরণের ব্যর্থ চেষ্টা নিয়ে লিখিত গুডবাই টু পেনুরি[]

হান ইউ পদ্যও রচনা করেছেন, তবে ইউয়ের গদ্যগুলো যেমন প্রশংসিত, তার পদ্যগুলো তেমন সুন্দর বলে গণ্য করা হয় না। হার্বার্ট জাইলসের আ হিস্ট্রি অব চাইনিজ লিটারেচার অনুসারে হান ইউ "বিভিন্ন বিষয়ের উপর অসংখ্য কবিতা লিখেছেন এবং তাঁর বেশিরভাগই বুদ্ধিদীপ্ত ছিল। সব মিলিয়ে তাঁর পদ্যগুলোকে তাঁর গদ্যের মত উচ্চ প্রশংসিত নয়।"[১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. নিয়েনহাউসার ১৯৮৬, পৃ. ৩৯৭।
  2. চাং, চিয়ানলিয়াং; ইয়াং, সিয়েন-ই (১৯৮৪)। 唐宋詩文選 (ইংরেজি ভাষায়)। আলমা ক্লাসিকস। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. লায়েত ১৯৯৪, পৃ. ১০৮৩।
  4. উয়েকি ও অন্যান্য ১৯৯৯, পৃ. ১১৫।
  5. পোলার্ড ২০০০, পৃ. ৩১।
  6. বার্নস্টোন ও পিং ২০১০, পৃ. ১৫৭-১৫৮।
  7. হার্টম্যান, চার্লস (২০১৪)। Han Yu and the T'ang Search for Unity (ইংরেজি ভাষায়)। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ১১১। আইএসবিএন 9781400854288। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৮ 
  8. লায়েত ১৯৯৪, পৃ. ১০৮২।
  9. পোলার্ড ২০০০, পৃ. ৩৫-৩৭।
  10. জাইলস ১৯০১, পৃ. ১৬১-১৬২।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. জাইলস, হার্বার্ট অ্যালেন (১৯০১)। A history of Chinese literature। নিউ ইয়র্ক: ডি. অ্যাপলটন অ্যান্ড কোম্পানি। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৮