বিষয়বস্তুতে চলুন

উৎসেচক অনুঘটন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা হাম্মাদ (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৪:৪০, ২১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

উৎসেচক ব্যবহার করে কোনো বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বলা হয় উৎসেচক অনুঘটন। অধিকাংশ উৎসেচকই প্রোটিন, আর উৎসেচকের উপস্থিতিতে সংঘটিত অধিকাংশ বিক্রিয়াই রাসায়নিক বিক্রিয়া। উৎসেচকের যে স্থান অনুঘটন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়, তাকে সক্রিয় এলাকা বা অ্যাকটিভ সাইট বলে।

অধিকাংশ উৎসেচকে এক বা একাধিক প্রোটিন শৃঙ্খল থাকে। এগুলোর মধ্যে অনেক সময় অ-প্রোটিন অংশ; যেমন- ধাতব আয়ন বা অন্যান্য জৈব অণু (উদাহরণস্বরূপ-অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট) , যেগুলো কোফ্যাক্টর নামে পরিচিত। ভিটামিনও অনেক ক্ষেত্রে কোফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে এবং দেহের বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রক্রিয়ার অনুঘটনবিহীন গতি ধীর হওয়ায় গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুঘটন প্রক্রিয়া সম্পাদন অপরিহার্য। এরকম অনুঘটন প্রক্রিয়ার সর্বোত্তম দশায় অনেক সময় প্রোটিনের রূপ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। তবে সব উৎসেচক অনুঘটন প্রক্রিয়ার সর্বোত্তম দশায় পৌঁছতে পারে না। তবে সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতার কাছাকাছি নৈপুণ্যে উৎসেচকসমূহ ক্রিয়া করলেও তারা সর্বোত্তম দশায় পৌঁছতে পারে না। উৎসেচক অনুঘটন প্রক্রিয়ায় যেসব উপাদান বা ঘটনা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে, সেগুলো হলো- অম্ল ও ক্ষার অনুঘটন, "তালা-চাবি" নীতি ও বিশৃঙ্খলা মাত্রার উপর নিয়ন্ত্রণ। প্রোটিনের গতি সম্পর্কিত নীতিও এতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। []

উৎসেচক অনুঘটনের কর্মপদ্ধতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। অন্যান্য রাসায়নিক অনুঘটন প্রক্রিয়ার মতো এক্ষেত্রেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, সেটি হলো- বিক্রিয়ক ও উৎপাদকে আলাদা করে রাখা শক্তি প্রতিবন্ধক অপসারণ করা। এখন যেহেতু উৎসেচকসমূহ বিক্রিয়ক ও উৎপাদ উভয়ের মধ্যেই শক্তি প্রতিবন্ধক নির্মূল করে, তাই এরা বিক্রিয়ার বাম ও ডান (বিক্রিয়ক ও উৎপাদের দিক) উভয় দিকেই ক্রিয়া করে। এগুলো বিক্রিয়াকে সম্মুখ বা পশ্চাৎমুখী করে না, অর্থাৎ বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা অপরিবর্তিত রাখে। অনুরূপভাবে উৎসেচকের নিজের রাসায়নিক অবস্থারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় না।

আরোপিত উপযুক্ততা

এনজাইম-সাবস্ট্রেট আন্তঃক্রিয়া সঠিকভাবে অনুধাবনের জন্য আদর্শ মডেল হলো "আরোপিত উপযুক্ততা" বা ইনডিউসড ফিট। [] উক্ত মডেল অনুসারে, উৎসেচক ও বিক্রিয়কের আন্তঃক্রিয়া শুরুতে তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকে। কিন্তু এই দুর্বল আন্তঃক্রিয়ার প্রভাবে উৎসেচকের আকৃতিতে পরিবর্তন সাধিত হয়। অর্থাৎ সাবস্ট্রেটে সংযুক্ত হওয়ার জন্য উৎসেচক নিজের আকৃতি প্রয়োজনমত পাল্টে নেয়। এটাই হলো "আরোপিত উপযুক্ততা" বা ইনডিউসড ফিট।

ইনডিউসড ফিট উৎসেচক অনুঘটক


এরূপে উৎসেচক ও সাবস্ট্রেটের মধ্যে এক প্রকার সংযুক্তি গঠিত হয়। লক্ষণীয় যে, এই সংযুক্তি অনেকটাই স্থিতিশীল। একে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগটি হলো এককরূপে সংযুক্তি (Uniform binding) এবং দ্বিতীয় ভাগটি হলো ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংযুক্তি (Differential binding)। বিক্রিয়ায় সক্রিয়তা শক্তির মান হ্রাসে উৎসেচকসমূহ উভয় প্রক্রিয়াই ব্যবহার করে থাকে। তবে স্যাচুরেটেড উৎসেচকগুলোর অনুঘটন সম্পন্ন করতে শক্তির মান হ্রাসে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংযুক্তি প্রক্রিয়াই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা, সাবস্ট্রেটের সঙ্গে এ ধরনের উৎসেচক অধিক দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে।[]

উৎসেচক অনুঘটন প্রক্রিয়ার উদাহরণ

উৎসেচক অনুঘটন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উদাহরণ বিদ্যমান। নিচে এগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো-

ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ

ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ, ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমার বা ট্রায়োজ ফসফেট সমাণু ডাইহাইড্রক্সিঅ্যাসিটোন ফসফেট এবং ডি-গ্লাইসারঅ্যালডিহাইড ৩-ফসফেটের পারস্পরিক রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম।

অ্যালডোলেজ

অ্যালডোলেজ ফ্রুক্টোজ ১,৬ বাইফসফেট ভেঙে গ্লাইসারঅ্যালডিহাইড-৩ ফসফেট এবং ডাইহাইড্রক্সিঅ্যাসিটোনে বিশ্লিষ্ট হওয়ার অনুঘটন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

তথ্যসূত্র