বিষয়বস্তুতে চলুন

আইনি সহায়তা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আইনি সহায়তা হলো যেসকল মানুষ আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা বা আইনি প্রতিনিধিকে নেয়ার সামর্থ্য নেই তাদেরকে আইনি সহায়তা দেয়ার একটি নিয়ম। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আইনি সহায়তাকে কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আইনে সকলের সমান অধিকারকে নিশ্চিত করে। আইনি সহায়তা কীভাবে গঠিত হয় এবং এটির নিয়মগুলো কি তা এই নিবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংখ্যক আইনি সহায়তা রয়েছে যেমন; সাম্প্রদায়িক আইনি চিকিৎসালয়, আইনজীবী, এবং যাদেরকে আইনি সহায়তা দেয়া হয় তাদের আইনজীবীদের অর্থ প্রদান করা।

ইউরোপীয় মানবাধিকারের ৬.৩ নম্বর নিবন্ধ অনুসারে সকলের ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইনি সহায়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এমন নাগরিকদের জন্য যাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নেই।[]

আইনি সহায়তা আন্দোলন

[সম্পাদনা]

ইতিহাস থেকে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের মূল পাওয়া যায় ১৯শতকের ইউরোপীয় দেশগুলোর আন্দোলন থেকে, "রাইট টু কাউন্সেল" এবং "রাইট টু এ ফেয়ার ট্রায়াল"। "গরীবের আইন" দরীদ্র লোকদের জন্য আদালতের ফিশকে মওকুফ করা হতো এবং একজন আইনজীবীর বন্দোবস্ত করা হতো যারা আইনজীবীর অর্থ দিতে অপারগ ছিল। ২০শতকের শুরুতে, বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের কোন প্রাতিষ্ঠানিক আইনি সহায়তা ছিলনা, আর গরীবরা আইনজীবীদের দানের উপর নির্ভর করত।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

কল্যান রাষ্ট্রের সাথে আইনি সহায়তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ কোন রাজ্যের আইনি সহায়তা নিয়ম কল্যাণের ধারণা থেকেই প্রভাবিত। আইনি সহায়তা হলো রাষ্ট্রের জন্য লোকদের প্রতি একটি কল্যাণকর ধারণা যারা অন্যথায় আইনি ব্যবস্থায় আইনজীবী নিতে পারতোনা।

ঐতিহাসিকভাবে, আইনি সহায়তা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আইনজ্ঞ যেমন মোরা ক্যাপেলেট্টি বিতর্ক করেন যে আইনি সহায়তা কোন ব্যক্তির ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। তার এই ধারণা ২০শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধেকে উত্থাপিত হয়।[]

১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে, কল্যাণ রাষ্ট্রের ভূমিকা পরিবর্তিত হয় এবং সামাজিক লক্ষ্যগুলোকে আর সাধারণ লক্ষ্য বিবেচনা করা হতো না। ব্যক্তিরা নিজস্ব লক্ষ্য ধারণা করার জন্য স্বাধীন ছিল। এই সময়ে কল্যাণ রাষ্ট্র এবং আইনি সহায়তা বিস্তৃত হয়, কিন্তু কল্যাণ প্রদানকারী ও পেশাদারদের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।[]

১৯৮০এর দশকে, কল্যাণ রাষ্ট্রের ভূমিকাকে ইতিবাচক বিবেচনা করা হয়না, এবং কল্যাণ ব্যক্তিগত সত্ত্বা দ্বারা অধিক বেশি প্রদান করা হতে থাকে।[]

দেশ অনুযায়ী

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ সংবিধান ১৯৭২ এর ২৭নম্বর নিবন্ধে বলা হয়েছে আইনের সামনে সকল নাগরিকই সমান এবং তাদের সকলের আইনের প্রতি সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই দরিদ্র, অশিক্ষিত থাকার কারণে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্যই বাংলাদেশ সরকার আইনি সহায়তা প্রদান করে।

আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাতীয় আইনি সহায়তা বোর্ড বা জেলা আইনি সহায়তা কমিটির কাছে জমা দিতে হয়। যদি জেলা কমিটি কোন ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেয় এবং সে ব্যক্তি এটিকে অযৌক্তিক বলে মনে করে তবে সে ৬০দিনের মাঝে জাতীয় আইনি সহায়তা বোর্ডের কাছে পুনরায় আবেদন করতে পারবে। আবেদনকারীকে একটি সাদা কাগজে তার পুরো নাম, ঠিকানা ও কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। যদি উচ্চ আদালতে আইনি সহায়তার আবেদন করা হয় তাহলে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।

যেসকল ব্যক্তি আইনি সহায়তার আবেদন করতে পারবে: অর্থ উপার্জনে অক্ষম, কোন চাকরি নেই বা মাসিক আয় ছয় হাজারের কম এমন মুক্তিযোদ্ধা, দরিদ্র মহিলা যাদের কাছে ভিজিএফ কার্ড রয়েছে, মানব পাচারের শিকার এমন মহিলা বা শিশু, এসিডে পুড়া নারী, বিধবা নারী যার স্বামী চলে গিয়েছে, শারীরিক বা মানসিক অক্ষম ব্যক্তি, টাকার প্রয়োজনে আইনি লড়াই করতে পারবে না এমন ব্যক্তি। এই নিয়মে দরিদ্র তাদেরকে বলা হবে যাদের বার্ষিক আয় তিন হাজার টাকার উপরে নয়।

অস্ট্রেলিয়া

[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি প্রাদেশিক ব্যবস্থা রয়েছে যা প্রাদেশিক, রাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক বিচার ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। অস্ট্রেলিয়ান (কমনওয়েলথ), রাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক সরকার প্রত্যেকটিই আইনি সহায়তা নীতির জন্য দায়ী। তাছাড়া, দেশটিতে প্রায় ২০০টি স্বাধীন, অলাভজনক সাম্প্রদায়িক আইন কেন্দ্র রয়েছে।

কমনওয়েলথ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্য আইনি সহায়তা প্রদান করে আইনি সহায়তা কমিশন, যেগুলো স্বাধীন। অস্ট্রেলিয়ার সরকার কমনওয়েলথ পরিবারের জন্য আইনি সহায়তা নীতির খরচ প্রদান করে। বেশিরভাগ কমনওয়েলথ বিষয় পারিবারিক আইন ব্যবস্থার মাঝে পড়ে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকার এবং আঞ্চলিক সরকার সাম্প্রদায়িক আইন কেন্দ্রগুলোতে অর্থ দেয় যেগুলো স্বাধীন, আর অলাভজনক সংস্থাগুলো আইনি সমস্যায় মানুষকে পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে থাকে।

ইতিহাস অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার সরকার জাতীয় ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ১৯৪২ সালে আইনি সেবা দপ্তর গঠন করে। ১৯৭৩ সালে হুইটলাম ল্যাবর সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল লিয়োনেল মার্ফি অস্ট্রেলিয়ান আইনি সহায়তা অফিস গঠন করে। মার্ফি বুঝতে পারে যে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আইনি সহায়তা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। এই অফিসগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে থাকে যাদের এটি প্রয়োজন হয় তাদেরকে। []

ভারতের সংবিধানের ৩৯এ নিবন্ধে ন্যায়বিচারের সমতা এবং বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান নিয়ে বলে:

রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পাওয়ার আইন ব্যবস্থাকে নিরাপদ করবে, সমান সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে, এবং ব্যক্তি বিশেষে, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করবে, যাতে অর্থনৈতিক বা অন্য অক্ষমতার কারণে কোন নাগরিক ন্যায়বিচার থেকে ব্যহত না হয় তা নিশ্চিত করা যায়।[]

এই নিবন্ধ ধারণা দেয় যে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান না করলে যেসকল মানুষ আর্থিক সমস্যা বা অন্য কোন অক্ষমতায় রয়েছে তারা ন্যয়বিচার নাও পেতে পারে।[]

নিউজিল্যান্ড

[সম্পাদনা]

নিউজিল্যান্ডের আইনি সহায়তা ব্যবস্থা সরকারি অর্থায়নে সাহায্য দিয়ে থাকে তাদেরকে যাদের আইনজীবী নেয়ার সামর্থ্য নেই। সকল ধরনের আদালতের ব্যবস্থায় আইনি সহায়তা রয়েছে।[]

কানাডা

[সম্পাদনা]

কানাডায়, ১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে প্রাদেশিক সরকার কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মাঝে খরচ-ভাগাভাগি করার একটি পদ্ধতি গঠন করে, যেটির পরে আধুনিক আইন সহায়তা পদ্ধতি তৈরি করা হয়। প্রাদেশিক সরকার আইনি সহায়তা পদ্ধতিতে ৫০% অর্থ সহায়তা প্রদান করত, কিন্তু এই পরিমাণ বছরে বছরে উঠা-নামা করে।[]

ডেনমার্ক

[সম্পাদনা]

ডেনমার্কে, বেসামরিক মোকদ্দমার জন্য আবেদনকারীদের আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য এসকল শর্ত মানতে হয়: আবেদনকারীর বার্ষিক আয় কেআর. ২৮৯,০০০ ($৫০,০০০) এর বেশি হতে পারবেনা। অপরাধমূলক মোকদ্দমার জন্য, অপরাধীকে তার আয় অনুসারে শুধুমাত্র খরচটা দিতে হবে - এমন করা হয় অপরাধ ঠেকাতে।[১০]

ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস

[সম্পাদনা]

আইনি সহায়তা প্রকৃতভাবে "লিগ্যাল এইড এন্ড এডভাইস এক্ট ১৯৪৯ কর্তৃক গঠিত হয়।[১১] ২০০৯ সালে, আইনি সহায়তার জন্য এক বছরে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে কর প্রদানকারীদের খরচ হয় £২বিলিয়ন – যা পৃথিবীর অন্যান্য স্থান থেকে বেশি – এবং এটি ২৯% প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে লভ্য ছিল।[১১]

দক্ষিণ আফ্রিকা

[সম্পাদনা]

পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশের অনুকরণে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের আইনি ব্যবস্থাকে পুনরায় গঠন করেছে, আর অধিক ন্যায়সম্মত আইন ব্যবস্থা গঠন করেছে।[১২][১৩]

ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থার ন্যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী রয়েছে, যারা উচ্চ আদালতে কাজ করে, আদালতের বাইরে পরামর্শ দেয় এবং নিম্ন আদালতে কাজ করে।[১৩]

১৯৬৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা আইনি সহায়তার গুরুত্ব বুঝতে পেরে দক্ষিণ আফ্রিকা আইনি সহায়তা বোর্ড গঠন করে, যেটি ১৯৭১ সালে কাজ শুরু করে এবং বর্তমানে পুরো দেশে এটি আইনি সহায়তা প্রদান করে থাকে।[১৪] আইনি সহায়তার সিদ্ধান্ত নির্বাচনে এটি সরকার থেকে স্বাধীন। যাদের আয় R৬০০.০০ বা তার কম, এই বোর্ড তাদের সকলকে আইনি সহায়তা প্রদান করে। যদি কোন ব্যক্তির এই যোগ্যতা না থাকে তাজলে তাকে আইনজীবী নেয়ার অন্যান্য পথ দেয়া হয়।[১৩][১৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Abel, Richard L. (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫)। "Law without Politics: Legal Aid under Advanced Capitalism"UCLA Law Review32 (3): 474–642 – HeinOnline-এর মাধ্যমে। 
  2. Regan, Francis (১৯৯৯)। The Transformation of Legal Aid: Comparative and Historical Studies। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 89–90। আইএসবিএন 978-0-19-826589-4 
  3. Regan (1999), The Transformation of Legal Aid, pp. 90–91
  4. Regan (1999), The Transformation of Legal Aid, p. 91
  5. "The Facts - Access to Justice"www.legalaidmatters.org.au। ২০১৯-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০১ 
  6. "Archived copy"। ২০০৩-০৯-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-০৯ 
  7. "Hussainara Khatoon & Ors vs Home Secretary, State of Bihar (1979 AIR 1369, 1979 SCR (3) 532)"Indiankanoon.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-১৭ 
  8. "Archived copy"। ২০১২-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-০৬ 
  9. "Archived copy"। ২০১৫-০৬-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৭ 
  10. "domstol.dk – Sagsomkostninger"Domstol.dk। ১৯ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৬ 
  11. "Legal aid in 21st-century Britain", The Guardian, 12 March 2009
  12. Carothers, Thomas (মার্চ–এপ্রিল ১৯৯৮)। "The rule of law revival"Foreign Affairs77 (2): 95–106। জেস্টোর 20048791ডিওআই:10.2307/20048791 – Heinonline.org-এর মাধ্যমে। 
  13. McQuoid-Mason, David J. (২০০০)। "The Delivery of Civil Legal Aid Services in South Africa"Fordham International Law Journal24 (Symposium Issue): S111–S142 – Heinonline.org-এর মাধ্যমে। 
  14. As, Hennie van (এপ্রিল ২০০৫)। "Legal aid in South Africa: making justice reality"। Journal of African Law (ইংরেজি ভাষায়)। 49 (1): 54–72। আইএসএসএন 1464-3731ডিওআই:10.1017/S0021855305000057