আলী সরদার জাফরি
আলী সরদার জাফরি | |
---|---|
জন্ম | বলরামপুর, আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত | ২৯ নভেম্বর ১৯১৩
মৃত্যু | ১ আগস্ট ২০০০ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৮৯)
পেশা | লেখক, কবি, সমালোচক, গীতিকার |
ভাষা | উর্দু |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা | জাকির হোসেন দিল্লি কলেজ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | পদ্মশ্রী (১৯৬৭) জওহরলাল নেহরু ফেলোশিপ (১৯৭১) জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৭) |
দাম্পত্যসঙ্গী | সুলতানা |
সন্তান | ২ |
আলী সরদার জাফরি (২৯ নভেম্বর ১৯১৩ - ১ আগস্ট ২০০০[১] ) ছিলেন উর্দু ভাষার একজন ভারতীয় লেখক । তিনি একাধারে কবি, সমালোচক ও চলচ্চিত্র গীতিকারও ছিলেন। উর্দু সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী[২] এবং ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যের সর্বোচ্চ জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন।[৩]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]আলী সরদার জাফরি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ অধুনা উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা জেলার বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] প্রাথমিক বছরগুলি সেখানে কাটানোর পর[৫] তিনি লখনউ-এর ধার্মিক পরিবেশে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু তিনি কমিউনিস্ট মতাদর্শে যুক্ত থাকার কারণে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে রাজনৈতিক কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিতাড়িত হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ জাকির হোসেন কলেজ থেকে স্নাতক হন। এবং পরে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৪] লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধবিরোধী কবিতা লেখার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রসঙ্গত, তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সেক্রেটারি ছিলেন।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]ছোটবেলাতেই আলী সরদার জাফরি মধ্যে দুই উর্দু কবির মীর আনিস এবং জোশ মালিহাবাদীর প্রভাব পড়ে। প্রসঙ্গত, আট বৎসর বয়সেই তিনি মীর আনিস'-এর ১০০০ কবিতা আবৃত্তি করতে পারতেন। তার তিনি তার পনের বৎসর বয়স থেকেই নিজে কবিতা রচনা শুরু করেন। সতের বৎসর বয়সে অবশ্য তিনি ছোটগল্প রচনার মধ্য দিয়ে উর্দু সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন মঞ্জিল।[৪][৬] এবং ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার সংকলন পারভাজ। ইতিমধ্যে তিনি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং তারপর সারাজীবন সমস্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।[৭] ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সাহিত্য পত্রিকা নয়া আদব সহ-সম্পাদক হন। পত্রিকাটি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল[৮]
আলী সরদার জাফরি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন বোম্বে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সতর্কতা সত্ত্বেও, প্রগতিশীল উর্দু লেখক সম্মেলন (নিষিদ্ধ) আয়োজন করায় তাকে ভিওয়ান্ডিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ; তিন মাস পরেও, তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছিল।
গীতিকার হিসাবে আলী সরদার জাফরির উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ধরতি কে লাল এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি পরদেশী ছবিতে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি আটটি কাব্য সংকলন প্রকাশ করেন, যার মধ্যে রয়েছে -
- নয়া দুনিয়া কো সালাম (নতুন বিশ্বকে স্যালুট), (১৯৪৮),
- খুন কি লেকর , আমন কা সিতারা , এশিয়া জাগ উঠা (এশিয়া জাগ্রত) (১৯৫১),
- পাথর কী দিওয়ার (স্টোন ওয়াল) (১৯৫৩),
- এক খোয়াব অউর (আর একটি স্বপ্ন),
- পায়রাহান-ই-শারর (দ্য রোব অফ স্পার্কস) (১৯৬৫) এবং
- লাহু পুকারতা হ্যায় (দ্য ব্লাড কলস) (১৯৬৫)।
- অওধ কী খাক-ই-হাসিন (অওধের সুন্দর ভূমি),
- সুবে ফারদা (কাল সকালে),
- মেরা সফর (আমার যাত্রা)
তাঁর শেষ সংকলন ছিল সারহাদ। এটি অডিও- অ্যালবাম রূপে ভারত-পাকিস্তান সম্প্রীতির জন্য
"বুলবুল-ই-কাশ্মীর" নামে খ্যাতা সীমা অনিল সেহগালের সুরে ও কণ্ঠে গীত ও স্কোয়াড্রন লিডার অনিল সেহগালের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এই সংকলনটি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তার লাহোরের বাসযাত্রায় সঙ্গে নিয়েছিলেন। জাফরিকে সফরসঙ্গী হিসাবে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণে সঙ্গী হতে পারেন নি। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২০-২১ ফেব্রুয়ারি অটল বিহারী বাজপেয়ী ঐতিহাসিক 'লাহোর ঘোষণা' সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে জাতীয় উপহার হিসাবে প্রদান করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। এটি জাফরির জীবনের এক মাইলফলক ছিল।
পাঁচ দশক ব্যাপী তার সাহিত্যিকর্ম জীবনে, জাফরি কবীর, মীর আনিস, গালিব এবং মীরাবাঈ- প্রমুখের সংকলনগুলিও নিজ ভূমিকাসহ সম্পাদনা করেন।তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের জন্য দুটি নাটকও রচনা করেন। কবীর, ইকবাল এবং ফ্রিডম নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়াও দুটি টেলিভিশন সিরিয়াল তৈরি করেছেন। সাহিত্য জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিশ শতকের ছয়জন উর্দু কবি, হযরত মোহানি, জিগার মোরাদাবাদী, জোশ মালিহাবাদী, মাজাজ লখনবী, ফিরাক গোরখপুরী এবং মখদুম মহিউদ্দিন-এর সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। তাদের জীবন ও কাজের উপর ভিত্তি করে আর মানুষের সাক্ষাৎকার সন্নিবেশ করে ১৮-পর্বের টেলিভিশন সিরিয়াল কাহকাশান সহ দুটি সিরিয়াল তৈরি করেন। গণ-আবেদনে অসাধারণ সিরিয়াল দুটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া তিনি তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উর্দু সাহিত্য পত্রিকা গুফতাগু- এর এক সময়ের সম্পাদক ও প্রকাশকও ছিলেন তিনি।
তাঁর রচনা বহু ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[৯]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]- ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে উর্দু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের তৃতীয় উর্দু কবি হিসাবে সাহিত্যের সর্বোচ্চ ৩৩তম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। [৩]
- ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদান করে।[২]
- ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহেরু ফেলোশিপ লাভ করেন।[১০]
- ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ইকবাল স্টাডিজের জন্য পাকিস্তান সরকারের স্বর্ণপদক প্রদান করে।
এছাডাও সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলি হল- কবিতার জন্য একাডেমি পুরস্কার, মখদুম পুরস্কার, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ পুরস্কার, মধ্যপ্রদেশ সরকারের ইকবাল সম্মান পুরস্কার এবং মহারাষ্ট্র সরকারের সান্ত দানেশ্বর পুরস্কার ।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (এএমইউ) তাকে ছাত্রাবস্থায় বহিষ্কৃত করেছিল, কিন্তু বহিষ্কারের পঞ্চাশ বছর পর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে ডক্টরেট ( ডি. লিট ) প্রদান করে।[৮] তিনি ছিলেন চতুর্থ ব্যক্তি হিসাবে এই সম্মান লাভ করেন। তাঁর পূর্বসূরিরা হলেন, ড. আলামা ইকবাল , মিসেস সরোজনী নাইডু এবং হযরত জিগার মোরাদাবাদী।
ব্যক্তিগত জীবন ও জীবনাবসান
[সম্পাদনা]আলি সরদার জাফরী ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সুলতানাকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র সন্তান। তিনি ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট মুম্বাইয়ে প্রয়াত হন।
জাফরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে স্কোয়াড্রন লিডার অনিল সেহগাল দ্বারা সম্পাদিত আলি সরদার জাফরি: দ্য ইয়ুথফুল বোটম্যান অফ জয় শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।[১১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ali Sardar Jafri Memorium. Annual of Urdu Studies. October 2000.
- ↑ ক খ "Padma Awards - Interactive Dashboard"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০৫।
- ↑ ক খ "Jnanpith for Ali Sardar Jafri"। Rediff.com। ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ গ "Ali Sardar Jafri - Profile & Biography"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-৩০।
- ↑ Obituary www.rediff.com, August 2000.
- ↑ "In Memoriam Ali Sardar Jafri" (পিডিএফ)।
- ↑ The Sardar of Urdu literature [অধিগ্রহণকৃত!] Frontline, Volume 17 – Issue 17, 19 August – 1 September 2000.
- ↑ ক খ A progressive poet[অধিগ্রহণকৃত!] Frontline, The Hindu, Vol. 15 :: No. 03 :: 7–20 February 1998.
- ↑ "Ali Sardar Jafri"। ২০ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০০৮।
- ↑ "Official list of Jawaharlal Nehru Fellows (1969-present)"। Jawaharlal Nehru Memorial Fund।
- ↑ "A Tribute page to Ali Sardar Jafri"। Archived from the original on ১০ জানুয়ারি ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-০৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- A collection of verses by Ali Sardar Jafri ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০০৭ তারিখে
ডাঃ কপিল শর্মার "আলি সরদার জাফরি বা হাসিয়াত নাসর-নিগার"
- উত্তরপ্রদেশের কবি
- ভারতীয় পুরুষ কবি
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় মুসলিম
- ভারতীয় গীতিকার
- ভারতীয় সাহিত্য সমালোচক
- ভারতের উর্দু কবি
- লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী
- সাহিত্য ও শিক্ষায় পদ্মশ্রী প্রাপক
- ২০০০-এ মৃত্যু
- ১৯১৩-এ জন্ম