উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল
রাজ্য | আসাম, নাগাল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, সিকিম, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, বিহার |
---|---|
কার্যকাল | ১৫ জানুয়ারি, ১৯৫৮–বর্তমান |
পূর্বসূরি | উত্তর-পূর্ব রেল |
প্রধান কার্যালয় | কামাখ্যা, মালিগাঁও, গুয়াহাটি |
ওয়েবসাইট | উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল |
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল ভারতের ১৮টি ভারতীয় রেলের অঞ্চল ও বিভাগ এর অন্যতম ও বৃহত্তম বিভাগ; এর সদরদপ্তর আসাম রাজ্যের মালিগাঁও, গুয়াহাটিতে অবস্থিত।উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মানচিত্রে থাকা রাজ্যগুলি হ'ল- আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও মণিপুর। এই জোনটি উত্তর পূর্বাঞ্চলের আটটি (সিকিমকে ধরে) রাজ্য তথা উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব বিহারেও পরিষেবা প্রদান করে আসছে ।
অঞ্চল বিভাগ
[সম্পাদনা]উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কে পাঁচটি অঞ্চলিক বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথাঃ-
- আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে বিভাগ
- কটিহার রেলওয়ে বিভাগ
- লামডিং রেলওয়ে বিভাগ
- রঙ্গিয়া রেলওয়ে বিভাগ
- তিনসুকিয়া রেলওয়ে বিভাগ
- শিলচর রেলওয়ে বিভাগ{প্রস্তাবিত}
নিচে বিভাগসমূহ ও এর অধীনস্থ রেলপথসমূহের বিবরণ দেওয়া হ'ল :
- কাটিহার বিভাগ:মালদা টাউন- শিলিগুড়ি জং- রাণীনগর জলপাইগুড়ি/ কুমেদপুর জং- কাটিহার জং/ সিংহাবাদ- ওল্ড মালদহ/ নিউ জলপাইগুড়ি জং- হলদিবাড়ি/ একলাখী- বালুরঘাট/ বারসোই জং- রাধিকাপুর/ কাটিহার জং- শিলিগুড়ি জং/ কাটিহার জং- তেজনারায়ণপুর/ কাটিহার জং- যোগবানী/ নিউ জলপাইগুড়ি- দার্জিলিং।
- আলিপুরদুয়ার বিভাগ: রাণীনগর জলপাইগুড়ি (বহির্ভূত)- নিউ বঙাইগাঁও (বহির্ভূত)/ শিলিগুড়ি জং (বহির্ভূত)- আলিপুরদুয়ার জং- শামুকতলা রোড/ নিউ মাল জং- চ্যাংড়াবান্ধা/ আলিপুরদুয়ার-বামনহাট/ ফকিরাগ্রাম জংশন-ধুবরী।
- রঙ্গিয়া বিভাগ: নিউ বঙাইগাঁও- আজ্ঞাঠুরী (বহির্ভূত)/ রঙ্গিয়া- রাঙাপাড়া নর্থ- তেজপুর/ রাঙাপরা উত্তর- মুর্কংচেলেক/ বালিপাড়া- ভালুকপুং/ কামাখ্যা (বহির্ভূত)- গোয়ালপাড়া টাউন- নিউ বঙাইগাঁও জং।
- লামডিং বিভাগ: আজ্ঞাঠুরী- ফারকাটিং (বহির্ভূত)/ চাপরমুখ- শেনসোয়া জংশন- শিলঘাট/ শেনসোয়া জংশন- হয়বরগাঁও- মৈরাবারী/ লিম্বিং- বদরপুর- আগরতলা/ বদরপুর জংশন- শিলচর/ করিমগঞ্জ- মহিষাসন/ শিলচর- জিরিবাম/ কাটাখাল জংশন-ভৈরবী/ করিমগঞ্জ জংশন- দুল্লভছড়া।
- তিনসুকিয়া বিভাগ: ফারকাটিং জংশন- ডিব্রুগড় টাউন/ নিউ তিনসুকিয়া জং-তিনসুকিয়া জংশন- মাকুম জং-লিডু/ মাকুম জংশন- ডাঙরি/ আমগুড়ি- তুলি/ ফাররকাটিং-গোলাঘাট-বরুয়া বামুনগাঁও- যোরহাট- মরিয়নি/ শিমলুগুড়ি জংশন-শিবসাগর টাউন-মরাণহাট- ডিব্রুগড়।
প্রত্যেক বিভাগে একজন করে বিভাগীয় প্রবন্ধক/ব্যবস্থাপক ও একজন উচ্চ প্রবন্ধক/মহাব্যবস্থাপক থাকেন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৮৮২ সালে অসম রেলওয়ে অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানী প্রথম অসমে রেলপথ স্থাপন করেছিল। ডিব্রুগড়-এর আমোলাপট্টির থেকে দিনজান পর্যন্ত নির্মাণ করা ১৫ কিঃ মিঃ দীর্ঘ রেলপথটি মূলতঃ চা পাতা ও কয়লা আহরণ করতে ১৯৮৪ সালে মার্ঘেরিটা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এই কোম্পানি ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে় নামে অসমে প্রথম যাত্রীবাহী রেলের প্রচলন করেছিল। অন্যদিকে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে হলদিবাড়ি-শিলিগুড়ি, বারসোই-কিসানগঞ্জ, মণিহারি-কাটিহার-কাসবা রেলপথগুলি ১৯০০ সালে আগেই নির্মাণ করে ফেলেছিল। ১৯০০- ১৯১১ সালের ভিতর হাচিমারা-আলিপুরদুয়ার, গীতালদহ- বামনহাট, গোলোকগঞ্জ-ধুবরী-আমিনগাঁও, রঙিয়া-রঙাপারা রেলপথগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। অসমের বরাক উপত্যকার রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে উল্লিখিত তিনটি কোম্পানী একজোট হয়ে বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়াও অসম ও বাংলায় অন্যান্য কোম্পানিগুলি রেলসেবা প্রদান করত। এগুলি হ'ল : বেঙ্গল-দুয়ার রেলওয়ে, যোরহাট প্রভিন্সিয়াল রেলওয়ে, চাপরমুখ-শিলঘাট রেলওয়ে, কাটাখাল-লালাবাজার রেলওয়ে ইত্যাদি। এই কোম্পানিগুলি পর্যায়ক্রমে বেঙ্গল আসাম রেলওয়েতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে ।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন-এর সাথে-সাথে বেঙ্গল আসাম রেলওয়েরও বিভাজন ঘটে। এই রেলওয়ের একটি বৃহত্তর অংশ যায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, (বর্তমানের বাংলাদেশ-এ)। আরেকটি অংশ সংযুক্ত করা হয় পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে। বাকী অংশটির আসাম রেলওয়ে নামকরণ করে পাণ্ডুতে মুখ্য কার্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৪৮ সালে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে এবং আসাম রেলওয়েতে সামিল করে। ভারত বিভাজনের আগে পর্যন্ত অসমের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে রেল সংযোগ ছিল। বিভাজনের ফলে ভারতের মুখ্যভূমির সঙ্গে অসমের রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ, ভারত সরকার অসম রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে বিহারের কিষাণগঞ্জ ও অসমের ফকিরাগ্রাম সংযোগী রেলপথ নির্মাণের কাজ আরম্ভ করে । ১৪২ মাইল দীর্ঘ এই পথটির নির্মাণ কাজ ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি আরম্ভ করে যুদ্ধকালীন ক্ষিপ্রতায় ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। এই নবনির্মিত পথটিতে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির দিন প্রথম যাত্রীবাহী রেল চলে। ১৯৫৩ সালে পরিচালনার সুবিধার্থে ভারতীয় রেলকে কয়েকটি জোনে বিভক্ত করা হয়। অসম রেলওয়েকে উত্তর পূর্ব রেলওয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উত্তর পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য কার্যালয় স্থাপন করা হয় উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে। পুনরায় উত্তর পূর্ব রেলওয়ের বিভাজন ঘটিয়ে ১৯৫৮ সালের ১৫ জানুয়ারিতে গঠন করা হয় উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা শরাইঘাট সেতু ১৯৬২ সালে মুক্ত করা হয়। এর সাথে সাথে অসমের পথ ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়। শরাইঘাট সেতু নির্মাণের পর গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় ইত্যাদি স্থান থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন রেল-সংযোগ সম্ভব হয় এবং এসময় থেকে আমিনগাঁও ও পাণ্ডু রেল স্টেশন সংযুক্ত হয়। [১][২]
উল্লেখ্য পরিষেবা
[সম্পাদনা]উত্তর-পূর্ব রেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের তালিকা নিচে দেয়া হলঃ
- পূর্বোত্তর সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস;
- ডিব্রুগড় টাউন-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস - প্রাত্যহিক;
- কর্মভূমি এক্সপ্রেস (লোকমান্য তিলক টার্মিনাল, মুম্বাই - কামাক্ষ্যা
);
- অম্রপালি এক্সপ্রেস (কাটিহার - অমৃতসর) - প্রাত্যহিক;
- উত্তর-পূর্ব এক্সপ্রেস;
- কাজিরাঙা এক্সপ্রেস;
- অবধ অসম এক্সপ্রেস (নতুন তিনসুকিয়া - লালগড়);
- দ্বারকা এক্সপ্রেস (গুয়াহাটি - ওখা);
- লোহিত এক্সপ্রেস (গুয়াহাটি-জম্মু তাওই);
- অমরনাথ এক্সপ্রেস (গুয়াহাটি-জম্মু তাওই);
- কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (গুয়াহাটি-শিয়ালদহ);
- ব্রহ্মপুত্র মেইল (ডিব্রুগড় - দিল্লি);
- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (দার্জিলিং-ঘুম);
- দার্জিলিং মেইল (নিউ জলপাইগুড়ি-শিয়ালদহ);
- উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস (নতুন কুচবিহার-শিয়ালদহ);
- কাঞ্চন কন্যা এক্সপ্রেস (আলিপুরদুয়ার-শিয়ালদহ);
- মহানন্দা এক্সপ্রেস (আলিপুরদুয়ার - দিল্লি);
- নতুন তিনসুকিয়া-রাজেন্দ্রনগর পাটনা এক্সপ্রেস;
- ডিব্রুগড় টাউন-নয়াদিল্লি রাজধানি এক্সপ্রেস - (সমবার ও শুক্রবার)[সাপ্তাহিক];
- ডিব্রুগড়-নয়াদিল্লি রাজধানি এক্সপ্রেস - (বৃহস্পতিবার)-[সাপ্তাহিক];
- শিলচর-গুয়াহাটি বিজি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার (শিলচর - গুয়াহাটি)
- চম্পারন হামসফর এক্সপ্রেস (কাটিহার - দিল্লী)
- সরাইঘাট এক্সপ্রেস (গুয়াহাটি - হাওড়া)
- শতাব্দী এক্সপ্রেস (নিউ জলপাইগুড়ি - হাওড়া)
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে
[সম্পাদনা]দার্জিলিং স্টিম ট্রামওয়ে কোম্পানি হিলকার্ট পথের উপর দিয়ে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের নির্মাণ-কার্য আরম্ভ করে ১৮৭৯ সালে। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও মূলতঃ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আদান-প্রদান করতে এবং দার্জিলিঙের চা শিল্পের প্রতি দৃষ্টি রেখে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ন্যারো-গেজের এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে রেলপথ নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কিনে নেয় এবং আসাম রেলের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৫৩ সালে সমগ্র ভারতীয় রেল পরিবহন ব্যবস্থাকে কয়েকটি মণ্ডলে বিভক্ত করায় একে প্রথমে উত্তর পূর্ব রেল এবং ১৯৫৮ সালে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল গঠন হাওয়ায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে আনা হয়। উন্নততর মোটর পরিবহন ব্যবস্থার জন্য দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে লোকসানের সন্মুখীন হাওয়ায় ১৯৯৩ সালে সামগ্রী পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য রূপে স্বীকৃতি দেয়। "টয় ট্রেন" বা "খেলনা গাড়ি" নামে পরিচিত এই রেলওয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র।[৩][৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "History of NF Railway"। ২ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১২।
- ↑ "HISTORY OF NFR"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১২।
- ↑ "Himalayan Railway"। Himalayan Railway Society। ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১২।
- ↑ "Official Website of DHR"। জানুয়ারি ২১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১২।