উসমানীয় অন্তবর্তীকাল
উসমানীয় অন্তবর্তীকাল | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মুসা ও সুলাইমানের মুখোমুখি ১৬শ শতকের শেষের দিকের অঙ্কিত চিত্র। | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
মুহাম্মাদের সৈন্যদল সার্বিয়ান ডেসপোটেট | ইসার বাহিনী | সুলাইমানের বাহিনী |
মুসার বাহিনী ওয়ালাচিয়া | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
মুহাম্মদ চেলেবি স্টেফান লাজারেভিক | ইসা চেলেবি |
সুলাইমান চেলেবি † ওরহান চেলেবি[১] |
মুসা চেলেবি ওয়ালাচিয়ার মির্সিয়া প্রথম[২] |
উসমানীয় অন্তবর্তীকাল বা উসমানীয় গৃহযুদ্ধ[৩] বা ফিতরাতে দেভরি (২০ জুলাই ১৪০২-৫ জুলাই ১৪১৩; তুর্কি: Fetret Devri 'অন্তবর্তী সময়কাল') ২০শে জুলাই ১৪০২ খ্রিস্টাব্দে আঙ্কারার যুদ্ধে পিতা সুলতান বায়েজিদ প্রথমের পরাজয়ের পর তার পুত্রদের মধ্যে চলমান একটি গৃহযুদ্ধ ছিল। মুহাম্মাদ প্রথমকে তৈমুর সুলতান হিসেবে নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু তার ভাই ইসা চেলেবি, মুসা চেলেবি, সুলাইমান চেলেবি এবং পরে মুস্তাফা চেলেবি তার কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন, প্রত্যেকেই নিজের জন্য সিংহাসন দাবি করেছিলেন।[৪] আর এই দাবির ফলাফল ছিল গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধটি ১৪১৩ সালের ৫ জুলাইয়ে সংঘটিত চামুরলুর যুদ্ধ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এই যুদ্ধে মুহাম্মাদ প্রথম বা মুহাম্মাদ চেলেবি বিজয়ী হন এবং নিজের ক্ষমতাকে একক ও সুসংহত করেন। অন্তবর্তীকালটি এগারো বছরেরও কম সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
গৃহযুদ্ধ
[সম্পাদনা]ইসা ও মুহাম্মাদ প্রথম
[সম্পাদনা]১৪০৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান বায়েজিদ প্রথমের পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুলাইমান এদারনেকে রাজধানী বানিয়ে সম্প্রতি বিজিত বুলগেরিয়া, পুরো থ্রেস, মেসিডোনিয়া এবং উত্তর গ্রিস শাসন করছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র ইসা চেলেবি বুরসায় নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] আর মুহাম্মাদ আমাসয়ায় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[৬] মুহাম্মাদ এবং ইসার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এবং মার্চ-মে ১৪০৩[৫] খ্রিস্টাব্দর মধ্যে এরমেনি-বেলির যুদ্ধ[৭] ও উলুবাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে পরাচিত হয় ইসা কনোস্টান্টিনোপলে পালিয়ে যায় আর মুহাম্মাদ বুরসা দখল করেন।[৮] মুহাম্মাদ এবং ইসার মধ্যে পরবর্তীতে কারাসিতে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর মুহাম্মাদ যুদ্ধে বিজয়ী হন ও ইসা কারামানে পালিয়ে যান।[৯] পরে মুহাম্মাদের এজেন্টরা ইসাকে গোসল করার সময় হত্যা করে।[১০]
সুলাইমানের গৃহযুদ্ধে প্রবেশ
[সম্পাদনা]এদিকে বায়েজিদের অপর জীবিত পুত্র মুসা চেলেবি; যিনি আঙ্কারার যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন এবং তৈমুর জার্মিয়ানের ইয়াকুবের হেফাজতে ছেড়ে দিয়েছিলেন।[১১] মুহাম্মাদ তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য অনুরোধ করার পর মুসাকে মুক্ত করা হয়। ইসার মৃত্যুর পর, সুলাইমান একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে প্রণালী অতিক্রম করেন। [১২] প্রাথমিকভাবে, সুলাইমান সফল হয়েছিল। তিনি আনাতোলিয়া আক্রমণ করেন, বুরসা (মার্চ ১৪০৪)[১৩] এবং পরের বছর আঙ্কারা দখল করেন।
আনাতোলিয়ায় অচলাবস্থা ১৪০৫-১৪১০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মুহাম্মাদ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে সুলাইমানের অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ করার জন্য একটি ছোট বাহিনী নিয়ে মুসাকে কৃষ্ণ সাগর পার করে থ্রেসে পাঠান। এই কৌশলের ফলে দ্রুত সুলাইমান থ্রেসের কাছে ফিরতে বাধ্য হন। সেখানে তার এবং মুসার মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথমে সুলাইমান সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন- ১৪১০ সালে কোসমিডিয়ন যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু ১৪১১ সালে তার সেনাবাহিনী এদারনে মুসার কাছে চলে যায় এবং মুসার নির্দেশে সুলাইমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[১৪][১৫] মুসা তারপর থ্রেসে উসমানীয় রাজত্বের শাসক ছিলেন।
মুহাম্মাদ ও মুসা
[সম্পাদনা]বাইজেন্টাইন সম্রাট ম্যানুয়েল দ্বিতীয় প্যালাওলোগোস সুলাইমানের মিত্র ছিলেন; তাই মুসা কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন।[১৬] ম্যানুয়েল তাকে রক্ষা করার জন্য মুহাম্মাদের সাহায্য কামনা করেন। মুহাম্মাদ মুসাকে কনস্টান্টিনোপল থেকে সরে যেতে বললে মুসা অস্বীকৃতি জানান। পরে মুহাম্মাদের উসমানীয়রা থ্রেসের মুসার উসমানীয়দের বিরুদ্ধে কনস্টান্টিনোপলে ঘেরাও করেন। মুহাম্মাদ তার ভাইয়ের সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ আক্রমণ করেছিলেন। এদিকে তার নিজের অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করতে বসফরাসকে পুনরায় অতিক্রম করতে বাধ্য হন। মুসা তখন কনস্টান্টিনোপলের অবরোধ শক্ত করেন। মুহাম্মাদ থ্রেসে ফিরে আসেন এবং সার্বীয় সেনাপতি স্টেফান লাজারেভিককে সহায়ক হিসেবে নিশ্চিত করেন।
পরেরবার প্রতিদ্বন্দ্বী উসমানীয় ভাইদের সেনাবাহিনী চামুরলির সমভূমিতে (বর্তমানে সামোকভ, বুলগেরিয়া) মিলিত হয়েছিল। মুহাম্মাদের জেনিসারির আগা হাসান র্যাঙ্কের আগে বেরিয়ে এসে সৈন্যদের পক্ষ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। মুসা হাসানের দিকে ছুটে আসেন এবং তাকে হত্যা করেন। কিন্তু হাসানের সাথে থাকা একজন অফিসারের দ্বারা তিনি নিজেই আহত হন। মুসার উসমানীয়রা ভালো যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল মুহাম্মাদ এবং তার সহযোগীরা।[১৭] মুসা পালিয়ে যান, পরে ধরা পড়লে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।[১৮] মুসার মৃত্যুর পর মুহাম্মাদ ছিলেন প্রয়াত সুলতান বায়েজিদ প্রথমের একমাত্র জীবিত পুত্র। এই আন্তবর্তীকালীন ঘটনা ছিল ভ্রাতৃহত্যার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ; যা উসমানীয় উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সাধারণ হয়ে উঠে।
রাজনৈতিক উপাধি
[সম্পাদনা]অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে শুধুমাত্র মুহাম্মাদ নিজেকে সুলতান উপাধি দিয়ে মুদ্রা তৈরি করেছিলেন। তার ভাই সুলেমানের মুদ্রা নিজেকে আমির হিসেবে- আমির সুলেমান বি. বায়েজিদ অংকিত ছিল। আর মুসার মুদ্রায় অংকিত হয়েছিল, মুসা বি. বায়েজিদ । ইসার কোন মুদ্রা পাওয়া যায়নি।[১৯]
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Marios Philippides (২০০৭)। Mehmed II the Conqueror and the Fall of the Franco-Byzantine Levant to the Ottoman Turks: Some Western Views and Testimonies। ACMRS/Arizona Center for Medieval and Renaissance Studies। পৃষ্ঠা 73।
After the death of Suleyman Çelebi, Orhan, his very young son attempted to take over the kingdom with the help of certain lords, but his paternal uncle Musa attacked him and, ...
- ↑ Kastritsis 2007, পৃ. 140।
- ↑ Kastritsis 2007।
- ↑ Fine 1994।
- ↑ ক খ Dimitris J. Kastritsis, 79.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 73.
- ↑ Donald Edgar Pitcher, An Historical Geography of the Ottoman Empire, (E.J.Brill, 1968), 59.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 90-91.
- ↑ Donald Edgar Pitcher, 59.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 109-110.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 85.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 110.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 112.
- ↑ Finkel, Caroline, Osman's Dream, (Basic Books, 2004), 32.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 155-156.
- ↑ George Ostrogorsky, History of the Byzantine State, (Rutgers University Press, 1969), 557.
- ↑ Bertold Spuler, Frank Ronald Charles Bagley, Hans Joachim Kissling, The Last Great Muslim Empires: History of the Muslim World, (Markus Weiner Publishers, 1996), 14.
- ↑ Nicol, Donald MacGillivray, The last centuries of Byzantium, 1261–1453, (Cambridge University Press, 1972), 327.
- ↑ Dimitris J. Kastritsis, 198