কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ | |
---|---|
সভাপতি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স | |
কাজের মেয়াদ ২০১০ – বর্তমান | |
প্রাক্তন সভাপতি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন | |
কাজের মেয়াদ ২০০৯ – ২০২৩ | |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্টি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | সিলেট, আসাম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (বর্তমান বাংলাদেশ) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডঃ জাহেদা আহমদ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স |
জীবিকা | অর্থনীতিবিদ পরিবেশবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
ওয়েবসাইট | অফিসিয়াল ওয়েবসাইট |
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ হলেন একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও পরিবেশকর্মী।[১][২] তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক ইনস্টিটিউট ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স এর সভাপতি এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন (পিকেএসএফ) এর প্রাক্তন সভাপতি (নভেম্বর, ২০০৯ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০২৩)।[৩][৪]বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবা ও জনসেবায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার এবং দারিদ্য বিমোচনে অবদানের জন্য ২০০৯ সালে তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একুশে পদকে ভূষিত করে।[৫]
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]খলীকুজ্জমান ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির আসামের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুমতাজুল মুহাদ্দিসিন মাওলানা মোঃ মুফাজ্জল হুসাইন ভারত বিভাগ পূর্ব সময়ে 1940-এর দশকে আসাম বিধান সভার নির্বাচিত বিধায়ক(এমএলএ)ছিলেন| [৬] পরবর্তীতে রাজনীতি ছেড়ে কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অনেক বছর দায়িত্ব পালন করেন। আহমদ স্কুলে যাওয়ার পূর্বে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত তার পিতার কাছেই পাঠ গ্রহণ করেন এবং 1953 সালে অষ্টম শ্রেণীতে স্কুলে ভর্তি হন। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে ১৯৬১ সালে ব্যাচেলর ডিগ্রি ও ১৯৬২ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি জাতীয় মেধা ফেলোশিপ লাভ করে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও পলিটিক্যাল সাইন্স (এলএসই) -তে পড়তে যান এবং সেখান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
খলীকুজ্জমান ১৯৬০ এর দশকে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেলে কর্মরত ছিলেন।[৭][৮][৯]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]খলীকুজ্জামান ২৩ বছর যাবত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এবং এর পূর্বতন পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট ইকোনোমিক্সে (পিআইডিই) গবেষণা পেশায় এবং কয়েক বছর গবেষণা পরিচালক হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ (বিইউপি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 1980 সালে বিইউপি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি 2009 সালের নভেম্বর মাসে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)এর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।[১০] পর বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ থেকে ইস্তফা নেন। তিনি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা, যা ২০১০ সালের আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের সর্বোচ্চ পরিষদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তণ সংক্রান্ত কনভেনশনের আওতায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দেনদরবারকারী দলের সমন্বয়ক হিসেবে 2009 সাল থেকে 2016 সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন।[১১][১২] তিনি ২০১৫ পূর্ব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জাতিসংঘের ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।[১৩] এছাড়া তিনি কিয়োটো প্রোটোকল-এর এক্সিকিউটিব বোর্ড অফ ক্লিন ডেভলপমেন্টের সদস্য হিসেবে নন-অ্যানেক্স-১ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।।[১৪]
প্রকাশনা
[সম্পাদনা]একক এবং যৌথভাবে তাঁর দেশে-বিদেশে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা 40টি এবং গবেষণা-ভিত্তিক প্রবন্ধ ও রিপোর্টের সংখ্যা দুইশত পঞ্চাশের বেশী।[১৫] নিন্মে কয়কেটি বইয়রে নাম উল্লখে করা হলঃ
- ২০২০: ক্লাইমেট এডাপ্টেশন ফর এ সাসটেইনেবল ইকোনোমি: লেসন্স ফ্রম বাংলাদেশ, এন এমার্জিং টাইগার অফ এশিয়া(সহ সাম্পাদক), নোভা সাইন্স পাব্লিশার , নিউ ইউর্ক, ইউ এস এ. আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৩৬১৬৯২৭০ [১৬]
- ২০১৯: পার্সপেক্টিভ অন পিপল সেন্টারেড ডেভেলপমেন্ট উইথ পার্টিকুলার রেফারেন্স অফ বাংলাদেশ, আলোঘর প্রকাশনা, ঢাকা।
- ২০১৮: সোসিও-ইকোনোমিকস অফ বাংলাদেশ থ্রু টি ডিকেডস, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা।
- ২০১৭: এনভায়রনমেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ ও ওয়াটার রিসোর্সেস, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪৯২৩৪০২৯
- ২০১৬: সাস্টেইনাবলে ডেভেলপমেন্ট এন্ড অল দেট , পাঠক সমাবেশ, ঢাকা।
- ২০০৯: ট্যাকলিং সোশ্যাল এক্সক্লুশন: সাউথ এশিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিটিউট।
- ২০০৮: ইন্টারলিংকিং অফ রিভারস ইন ইন্ডিয়া: ইস্যুজ অ্যান্ড কনসার্ন্স, সিআরসি প্রেস, ২৮ জুলাই ২০০৮।
- ২০০৭: সোশিও-ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডেটনেস-রিলেটেড ইমপ্যাক্ট অফ মাইক্রো-ক্রেডিট ইন বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, আইএসবিএন ৯৮৪-০৫১৭-৭৮-৩।
- ২০০৫: ইমার্জিং ইকোনমিক অর্ডার অ্যান্ড দ্য ডেভলপিং কান্ট্রিজ, (সম্পাদক), ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), আইএসবিএন ৯৮৪-০৫১৭-৫৭-০।
- ২০০৫: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ওয়াটার রিসোর্সেস ইন সাউথ এশিয়া, (সহ-সম্পাদক), ফ্রান্সিস অ্যান্ড টেইলর, আইএসবিএন ০-৪১৫-৩৬৪৪২-৬।
- ২০০১: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা রিজিয়ন: অ্যা ফ্রেমওয়ার্ক ফর সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট, (সহ-সম্পাদক), ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), আইএসবিএন ৯৮৪০৫১৬০৮৬।
- ১৯৯৬: দ্য ইমপ্লিকেশন্স অফ ক্লাইমেট অ্যান্ড সী-লেভেল চেঞ্জ ফর বাংলাদেশ, (সহ-সম্পাদক), ক্লুওয়ার অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্স, আইএসবিএন ০৭৯২৩৪০০১৯।
- ১৯৮৪: রুরাল পোভার্টি অ্যালিভেশন ইন বাংলাদেশ এক্সপেরিয়েন্সেস অ্যান্ড পলিসিস, (সহ-সম্পাদক)।
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেঃ
- বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার 2019
- বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় পরিবেশ পদক 2019
- বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘স্বর্ণ পদক’ 2012
- বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দারিদ্র্যদূরীকরনে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক 2009
- 2007 সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের সদস্য
- ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’ 2017, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, চ্যানেল আই
- গবেষণায় ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার’ 2005
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Socio-economic progress and shaping the future, article by QK Ahmad"। দ্য ডেইলি স্টার। ৪ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।
- ↑ "Call for low to ensure food, discussion led by QK Ahmad"। দ্য ডেইলি স্টার। ৪ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।
- ↑ "Archived copy"। ৫ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।, Chairman of PKSF
- ↑ "Microcredit 'death trap' for Bangladesh's poor, Precipitated by Chairman of PKSF"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।
- ↑ "কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।
- ↑ [১], Member (MLA) of the Assam Legislative Assembly from 1946–52
- ↑ Ashfaque Hossain, History of Liberation War of Moulvibazar District, published by Syed Mofassir Ali, Moulvibazar, Bangladesh, 1997. (Liberation War 1971)
- ↑ Planning Cell of Bangladesh Government-in-Exile during Bangladesh liberation war in 1971
- ↑ মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী গেজেট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। প্রকাশ কালঃ শনিবার, জানুয়ারি ১১, ২০২০]
- ↑ "পিকেএসএফের নতুন সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ"। দৈনিক প্রথম আলো। ৪ ডিসেম্বর ২০০৯। ২০২০-০৭-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৭।
- ↑ UNFCCC: Coordinator of Bangladesh, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
- ↑ UNFCCC: Climate change coordinator of Bangladesh, ইউএনএফসিসিসি।
- ↑ Represents Bangladesh in the UN Open Working Group (OWG) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, আইআইএসডি।
- ↑ Executive Board member of Clean Development Mechanism (CDM), ইউএনএফসিসিসি।
- ↑ [২] " Publications of Dr. Ahmad", www.qkahmad.info. Access: 16 May, 2020
- ↑ [৩] "Climate Adaptation for a Sustainable Economy" book in Amazon