কুটি মনসুর
কুটি মনসুর | |
---|---|
জন্ম | ২৮ ডিসেম্বর ১৯২৬ |
মৃত্যু | ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ঢাকা মেডিকাল কলেজ | (বয়স ৯০–৯১)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। |
কুটি মনসুর (২৮ ডিসেম্বর ১৯২৬ - ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭) একজন বাংলাদেশী গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী তার কথায় ও সুরে গান করেছেন।[১]
জন্ম
[সম্পাদনা]বাংলা লোকজ গানের স্বনামধন্য অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি কুটি মনসুর ২৮ ডিসেম্বর ১৯২৬ সালে ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে চরভদ্রাসন থানার লোহারটেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী আবেদ আলী খান এবং মাতর নাম আবেদুননেছা মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন।তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ আদরের পুত্র সন্তান। তার পিতা আকিকা দিয়ে নাম রেখেছিলেন মোঃ মনসুর আলী খান। সন্তানদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ হওয়ার ফলে মা আদর করে কুটি বলে ডাকতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় বেতারে কন্ঠ শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময়।তাই মায়ের ডাকাটাই নামের আগে সংযোযন করে হয়ে উঠলেন কুটি মনসুর।[২] পরিবার নিয়ে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ই ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
সঙ্গীত জীবন
[সম্পাদনা]কুটি মনসুর বাংলাদেশের সঙ্গীত পিপাসু মানুষের ঘরে ঘরে সুপরিচিত একটি নাম। সত্তর ও আশির দশকে লংপ্লে ডিক্স রেকর্ডে কে বলে মানুষ মরে আমি বুঝলামনা ব্যাপার মানুষ মরিলে তবে বিচার হবে কার, আইলাম আর গেলাম পাইলাম আর খাইলাম দেখলাম শুনলাম কিছুই বুঝলাম না, আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা,যৌবন জোয়ার একবার আসেরে বন্ধু চলে গেলে আর আসেনা, প্রভিতি গান এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে বিয়েবাড়ী সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব গানের ডিক্স রেকর্ড না থাকলে মাইক ভাড়া নিতো না। বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিদের কাছে এমনই শুনাযায়। বাংলাদেশের হাঁটে মাঠে ঘাটে সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষ গলা ছেড়ে যেমন জসিম উদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীমের গান গেয়ে ওঠে তেমনি করে গেয়ে ওঠে কুটি মনসুরের গান। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে কুটি মনসুরের গান গুলো বিশেষ একটি অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কুটি মনসুর বাংলাদেশে বেতার এবং টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে ৬০ দশক ধরে গীতিকার সুরকার সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশের অসংখ্য কন্ঠ শিল্পী গীতিকার সুরকার হয়ে জনপ্রিয়তার স্বর্নশিখরে পৌছাড় গৌরব অর্জন করেছেন তিনি প্রায় ৫০ টি বিষয়ের উপরে গান লিখেছেন। বাংলাদেশের আধুনিক বাংলা গান ও লোকজগানের পরিচিত একটি নাম। তিনি দীর্ঘ ৬০ বছরের সঙ্গীতজীবনে পল্লিগীতি, আধুনিক, জারি-সারি, পালাগান, পুঁথিপাঠ, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, মারফতি, আধ্যাত্মিক, দেহতত্ত্ব, হামদ-নাত, ইসলামি প্রভৃতি বিষয়ের উপরে গান লিখেছেন । তার রচিত অনেক গান আজও বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এর মধ্যে কয়েকটি গান হলো:—
- ‘আইলাম আর গেলাম পাইলাম আর খাইলাম’;
- ‘কে বলে মানুষ মরে আমি বুঝলামনা ব্যাপার’;
- ‘যৌবন জোয়ার একবার আসে রে বন্ধু’;
- ‘জরিনা সুন্দরী’
- ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা’;
- ‘হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো মনটা কর পরিস্কার’;
- ‘সাদা কাপড় পরলে কিন্তু মনটা সাদা হয় না’।
- মুজিব মরে নাই শোন বাংগালী বোন ভাই মুজিব মরে নাই।
- যদি এমন একটি খবর পেতাম,লাল দিঘির পাড়ে চট্টগ্রাম, বঙ্গবন্ধু করছেন সভা ছুটে যেতাম।
- ওদের দয়া মায়া ছিলনা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে দিলনা।
- দরদীনি মা জননী কান্দিওনা আর ৭ কোটি বাঙালি সন্তান রয়েছে তোমার।
- শিয়াল কয় খাটাশ ভাইরে উপায় নাইরে,, জীবন বাচাই কেমন করে।
কুটি মনসুরের কথা ও সুরে গান গেয়েছেন বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা শিল্পী। তাদের মধ্যে রয়েছেন:—
- সৈয়দ আব্দুল হাদী;
- এন্ড্রু কিশোর;
- রুনা লায়লা;
- সাবিনা ইয়াসমিন;
- নীনা হামিদ;
- রথীন্দ্রনাথ রায়;
- ফকির আলমগীর;
- ইন্দ্রমোহন রাজবংশী;
- ফিরোজ সাঁই;
- মুজিব পরদেশী
- আব্দুর রউফ,
- আনজুমান আরা বেগম,
- মোস্তফা জামান আব্বাসি ,
- খুরশীদ আলম,
- মমতাজ,
- আকরামুল ইসলাম,
- শাম্মী আক্তার,
- মুজিব পরদেশী,
- জানে আলম,
- আবু বকর সিদ্দিক,
- জহির আলীম,
- আজগর আলীম,
- জহুরা আলীম,
- নুরুন্নাহার আউয়াল,
- তপন চৌধুরী,
- শুভ্র দেব,
- এম এ মতিন,
- সাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলন,
- নাদিরা বেগম,
- ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।
আরও অনেকে।
সাহিত্যচর্চা
[সম্পাদনা]কুটি মনসুর অল্পবিস্তর সাহিত্যচর্চাও করেছেন। তার লেখা ‘আমার বঙ্গবন্ধু, আমার একাত্তর’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল অসুস্থ হওয়ার মাস দুয়েক আগে।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২০১৫ একবার অসুস্থ হলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। তখন তার জেষ্ঠ পুত্র কে এম মজনু হাসপাতালে দীর্ঘদিন অর্থাৎ এক মাসের অধিক সময় চিকিৎসা সেবা করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো ছিলেন।২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার বনশ্রীর ভাড়া বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুটি মনসুর। এবার ও জেষ্ঠ পুত্র কে এম মজনু কুটি মনসুর কে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। চিকিৎসারত অবস্থায় এই হাসপাতালেই মাগরিবের আজানের ধ্বনি যখন ভেসে আসছিল ঐ মুহুর্তে না ফেরার দেশে চলে গেলেন লোকজ সংস্কৃতির ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কুটি মনসুর।
ধ মাটি মানুষের সুপরিচিত একটি নাম কুটি মনসুর। কে বলে মানুষ মরে আমি বুঝলামনা ব্যাপার েেেেে
বহিঃস্থ সংযোগ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "কুটি মনসুর আর নেই"। প্রথম আলো। ২৪ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ "কুটি মনসুর আর নেই"। এনটিভি অনলাইন।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সঙ্গীতজ্ঞ কুটি মনসুর আর নেই"। সমকাল। ২৪ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]