জরুরি অবস্থা (আইন)
জরুরী অবস্থা হল এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে একটি সরকারকে তার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য এমন নীতিগুলি প্রয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া হয় যা সাধারণ সময়ে করার অনুমতি থাকে না। একটি সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নাগরিক অস্থিরতা, সশস্ত্র সংঘাত, বৈশ্বিক মহামারী, স্থানীয় মহামারী বা অন্যান্য জৈব নিরাপত্তা ঝুঁকির সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে। জরুরি অবস্থার তীব্রতা এবং সরকারের নীতির উপর নির্ভর করে জরুরি অবস্থা চলাকালীন নাগরিকদের সাধারণ অধিকার ও চলাচলের স্বাধীনতা শিথিল করা যেতে পারে।
ব্যবহার এবং দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]একটি জরুরি অবস্থা মাঝে মাঝে অনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে শাসনব্যবস্থা একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারে। জরুরি অবস্থার কারণে নাগরিকদের মানবাধিকার হরণ করার ঘটনাও ঘটতে পারে, যা মূলত আইএসপিআর দ্বারা সংরক্ষিত হয়। [১] জরুরি অবস্থার কিছু পরিস্থিতিতে, সামরিক আইনও ঘোষণা করা হয়, যেখানে সাধারণত রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে সামরিক বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা অসীন থাকেন। জরুরি অবস্থা ছাড়াও, বিভিন্ন সরকারি আইন জারি করার মাধ্যমে এসব ঘটতে পারে।
আইসিসিপিআর-এর অনুচ্ছেদ ৪-এ, রাষ্ট্রগুলোকে "জরুরি অবস্থার সময়ে" আইসিসিপিআর দ্বারা নির্ধারিত কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অনুমতি দেওয়া হয়। যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তির বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হবে। তবে, পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু ব্যবস্থা ভিন্ন হতে পারবে এবং এ ব্যপারে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে অভিহিত করতে হবে।
রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং নাৎসি পার্টির সাবেক সদস্য কার্ল স্মিট, যুক্তি দিয়েছেন যে জরুরী অবস্থার সূচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের একাই নেওয়া উচিত। স্টেট অফ এক্সেপশন (২০০৫) তে, জর্জিও আগামবেন এই ধারণার সমালোচনা করেন। তিনি যুক্তি দেন যে জরুরী অবস্থার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কিছু লোককে তাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। [২]
তীব্রতা
[সম্পাদনা]অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জরুরী অবস্থার নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য কিছু আইনি সংজ্ঞা রয়েছে। [৩] বেশিরভাগ আইনেই রাষ্ট্রের সংবিধান আংশিকভাবে স্থগিত থাকে সাধারণ জনগণের ওপর হুমকি আসে, তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুমতি দেওয়া হয়। জরুরি অবস্থার ধরন ও তীব্রতা নিম্নের মতো হতে পারে:
- সামরিক আইন: একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক শক্তি আরোপ করার মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করা, উদাহরণস্বরূপ বিদেশী বাহিনীর দ্বারা আক্রমণ বা যুদ্ধ পরিস্থিতির সময়
- অবরোধ: যখন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে গোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, উদাহরণস্বরূপ সন্দেহভাজন এজেন্টদের উস্কানিদাতাদের দ্বারা বিদ্রোহ বা সংগঠিত রাষ্ট্রদ্রোহিতা কাজ প্রতিরোধ করা
- নাগরিক জরুরি অবস্থা: দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ব্যাপকভাবে সম্পত্তির ক্ষতি, দাঙ্গা বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কার সময়। নিয়মিত জরুরী পরিষেবার পাশাপাশি, কখনও কখনও সামরিক বাহিনীকে বিশেষ করে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদানের জন্য বা হুমকি প্রতিরোধ করার জন্য নিয়োগ করা হতে পারে
অপব্যবহার
[সম্পাদনা]জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে অনেক সময় এর অপব্যবহার করা হতে পারে। যেমন: মানবাধিকার হরণ করে রাষ্ট্রের বিরোধী মত জোরপূর্বক দমন করা। উদাহরণস্বরূপ আগস্ট ১৯৯১-এ সোভিয়েত ইউনিয়নে অভ্যুত্থানের চেষ্টা যেখানে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীরা জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। তবে এ অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়, ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটে।
আইসিসিপিআর, মানবাধিকার সংক্রান্ত আমেরিকান এবং ইউরোপীয় কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশনের মতো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলি স্বাক্ষরকৃত রাষ্ট্রগুলির দ্বারা জরুরি অবস্থার অপব্যবহার স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি, আঞ্চলিক আদালত এবং অন্যান্য সংস্থা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। [৪]
দেশ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা
[সম্পাদনা]ভারত
[সম্পাদনা]ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারতের ভয়ানক বিপর্যয় উপলব্ধি করলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। ভারতের সংবিধানের ভাগ ১৮ রাষ্ট্রপতিকে বহু বিধান নাকচ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের মৌলিক অধিকারও অন্তর্গত।
ভারতে জরুরি অবস্থা দুইবার জারি হয়েছে:
- চীন-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন ২৬ অক্টোবর ১৯৬২ থেকে ১০ অক্টোবর ১৯৬৮ পর্যন্ত। তখন ভারতের নিরাপত্তাকে বাহ্যিক আগ্রাসনের দ্বারা বিপর্যস্ত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।[৫]
- ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ২১ মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত। এটি আসলে ১৯৭১-এর ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল, এবং ২৫ জুন ১৯৭৫-এর তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তখন ভারতের নিরাপত্তাকে বাহ্যিক আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার জন্য বিপর্যস্ত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত জরুরি অবস্থা ভারতের প্রথম অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ See Judson, 2012, "Where is R2P grounded in international law ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে".
- ↑ Agamben 2005
- ↑ "Emergency Declarations and Authorities Fact Sheet | State Public Health | ASTHO"। www.astho.org।
- ↑ "Algeria's state of emergency to be lifted 'imminently'"। BBC News। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১১।
- ↑ Austin, Granville (১৯৯৯)। Working a Democratic Constitution: The Indian Experience (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 63–66। আইএসবিএন 0-19-564888-9।