জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্স
জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্স (ইংরেজি: Gentlemen v Players) শতাধিক বছর ধরে বার্ষিকাকারে এক বা দুইবার ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা ছিল। শৌখিন মর্যাদাসম্পন্ন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারদের নিয়ে জেন্টলম্যান দল ও পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে প্লেয়ার্স দল গঠন করা হতো। দল দুইটি ঐ সময়ের সামাজিক শ্রেণীর অবকাঠামোয় সঙ্গায়িত হতো। প্লেয়ার্সের খেলোয়াড়েরা মূলতঃ কর্মজীবী এবং জেন্টলম্যানের সদস্যরা সরকারী বিদ্যালয় থেকে আগত মাঝারী ও উচ্চশ্রেণীভূক্ত ছিলেন। প্লেয়ার্সের খেলোয়াড়দেরকে কাউন্টি ক্লাব কিংবা খেলা আয়োজনকারীর কাছ থেকে বেতন পেতেন। অন্যদিকে জেন্টলম্যানের সদস্যরা নামেমাত্র ব্যয়বাবদ খরচ দাবী করতেন। তবে পুরো বিষয়টি বেশ বিতর্কিত ছিল। কিছু শীর্ষস্থানীয় শৌখিন খেলোয়াড় অনেক পেশাদার খেলোয়াড়ের চেয়েও অধিক বেতন পেতেন বলে জানা যায়।
১৮০৬ সালে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একই বছরে ফিরতি খেলা হয়। তবে, ১৮০৭ সালে খেলার আয়োজন করা হয়নি। নেপলীয় যুদ্ধের কারণে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা স্থগিত থাকে। এরপর থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বার্ষিকাকারে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। সচরাচর প্রত্যেক মৌসুমেই দুই বা ততোধিকবার খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হতো। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জেন্টলম্যান দলের নাজুক অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তবে, ডব্লিউ. জি. গ্রেসের বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের কল্যাণে জেন্টলম্যান দল প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রচলন শুরু হবার পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাবে এর উপযোগিতা ও গুরুত্ব হারাতে থাকে।
৩১ জানুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি ) কর্তৃপক্ষ দ্বিধাহীন ও আনুষ্ঠানিকভাবে শৌখিনতত্ত্ব ধারনার বিলোপন ঘটায় এবং সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারকে পেশাদারী পর্যায়ে নিয়ে আসে। তখন থেকে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলাকে কালবৈষম্যরূপে চিত্রিত করা হয় ও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এর বিকল্প খেলার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চললেও ১৯৬৩ সালে সীমিত ওভারের জিলেট কাপ প্রতিযোগিতা শুরু হলে তা আর হয়ে উঠেনি। ১৮০৬ সাল থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে সর্বমোট ২৭৪টি খেলা আয়োজিত হয়। তন্মধ্যে, প্লেয়ার্স ১২৫টি ও জেন্টলম্যান ৬৮টি খেলায় বিজয়ী হয়। এছাড়া, ৮০টি খেলা ড্র ও একটি খেলা টাইয়ে পরিণত হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৮৬০-এর দশক থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলাটি স্বর্ণালী শিখরে আরোহণ করে। তবে, টেস্ট খেলার তুলনায় এর নিম্নমান ও প্রতিদ্বন্দ্বী নর্থ ভার্সাস সাউথের খেলাও এতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ১৮৬০-এর দশক পর্যন্ত জেন্টলম্যান দল পেশাদারদের সাথে তুলনান্তে অত্যন্ত দূর্বল দল হিসেবে পরিচিতি পায়। এক পর্যায়ে প্লেয়ার্সের একাদশের বিপরীতে অধিকসংখ্যক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভূক্তি ঘটায় তারা। ডব্লিউ. জি. গ্রেসের খেলোয়াড়ী জীবন চলাকালে জেন্টলম্যান দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসে। তাঁর খেলা অসাধারণ ছিল ও বেশ কিছুকাল পর জেন্টলম্যান দল সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে। প্রায়শঃই তারা ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বাগ্রে ব্যাটিংয়ে যেতো। তবে দলে কিছু ভালোমানের শৌখিন বোলারও ছিল। প্লেয়ার্স দলে শক্ত বোলারসমৃদ্ধ দল ছিল ও সর্বদাই তারা ফিল্ডিংয়ে নামতো।
তিনদিনেরও অধিক সময় দিনব্যাপী খেলাটি অনুষ্ঠিত হতো। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতয়ও ঘটতো। লর্ডসে নিয়মিতভাবে খেলাটি হতো। এছাড়াও অনেকগুলো মাঠ খেলা আয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছে। তন্মধ্যে, ওভাল ও স্কারবোরা অন্যতম। সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ সালে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যেকার সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
একই ধাঁচের শৌখিন খেলোয়াড়েরা পেশাদার খেলোয়াড়দের সাথে অন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এগুলোর কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মর্যাদা পায়। তন্মধ্যে, নটিংহ্যামশায়ার জেন্টলম্যান বনাম নটিংহ্যামশায়ার প্লেয়ার্সের খেলা অন্যতম। তবে এ খেলাগুলো ২০শ শতাব্দীর সূচনাকালে এসে গুরুত্ব হারায়। ১৯২০ সালে সাউথ জেন্টলম্যান বনাম সাউথ প্লেয়ার্সের মধ্যকার এ ধরনের খেলা সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলা শুধুমাত্র উপর্যুক্ত নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
১৯৬২ মৌসুমের পর শৌখিন ও পেশাদার খেলোয়াড়দের প্রভেদ দূরীভূত হলে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলা আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। চার্লস উইলিয়ামস বেশ কয়েকবার এ খেলার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন। পরে এগুলো শৌখিন মর্যাদা স্থায়ী কমিটি থেকে এমসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে এমসিসি কর্তৃপক্ষ দ্ব্যর্থহীনভাবে শৌখিনতত্ত্বের বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। উইলিয়ামস বলেছিলেন যে, বিকল্প প্রতিযোগিতার বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। তবে, নবপ্রবর্তিত সীমিত ওভারে প্রতিযোগিতা হিসেবে জিলেট কাপ ১৯৬৩ সালের শুরুতে আয়োজন করা হলে আর তা হয়ে উঠেনি।
শৌখিনতত্ত্ব ও জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলার বিলোপন ঘটলে বিপরীতমূখী দৃষ্টিভঙ্গী লক্ষ্য করা যায়। ই. ডব্লিউ. সোয়ানটন ও উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক সম্পাদকের ন্যায় কিছু প্রাচীনপন্থী একটি যুগের অতিক্রমণে আবরণ দেয়া হিসেবে এ বিলোপনকে তুলে ধরেন। তবে, সামাজিক পরিবর্তন এ ধারণাকে ‘কালবৈষম্যরূপে’ চিহ্নিত করেছে। অনেকের মতো ফ্রেড ট্রুম্যান বলেছেন যে, শৌখিনতত্ত্ব একধরনের হাস্যকর ও ‘উদ্ভট ব্যবসা’ হওয়ায় ১৯৬২ সালে ‘ধন্যবাদের সাথে বিলুপ্ত’ করা হয়েছে।[১]
প্রথম খেলা
[সম্পাদনা]৭ থেকে ৯ জুলাই, ১৮০৬ তারিখে মূল লর্ডস মাঠে প্রথমবারের মতো তিনদিনের খেলাটি আয়োজন করা হয়েছিল। এর অল্পকিছুদিন পরই দ্বিতীয় খেলাটি ২১ থেকে ২৫ জুলাই একই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম খেলায় জেন্টলম্যান দল তৎকালীন দুই অসাধারণ পেশাদার ক্রিকেটার - বিলি বেল্ডহাম ও উইলিয়াম ল্যাম্বার্টকে ‘দানকৃত ব্যক্তি’ হিসেবে দলে নেয়। ল্যাম্বার্ট ব্যাট হাতে দূর্দান্ত ভূমিকা পালন করেন ও জেন্টলম্যান দল ইনিংস ও ১৪ রানে বিজয়ী হয়। এর পরের খেলায় জেন্টলম্যান দল ল্যাম্বার্টকে দলে রেখে দেয় ও বেল্ডহাম প্লেয়ার্সের পক্ষে খেলেন। নিম্নমূখী রানের খেলায় জেন্টলম্যান দল ৮২ রানে জয় পায়। এবারও ল্যাম্বার্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে, শীর্ষস্থানীয় শৌখিন খেলোয়াড় লর্ড ফ্রেডরিক বিউক্লার্ক দুইবার ভালোমানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। খেলার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্রথিতযশা পেশাদার ক্রিকেটারl টম ওয়াকার ও সদ্য দলে যোগ দেয়া শৌখিন খেলোয়াড় জন উইলসও দলটিতে ছিল। তাঁরা রাউন্ডআর্ম বোলিংশৈলী উদ্ভাবন করেন। তবে, ১৮০৬ সালে রাউন্ডআর্ম বোলিং করার কোন প্রামাণ্য দলিল নেই।
এইচ. এস. অ্যাল্থাম খেলাটিকে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ঘরোয়া খেলারূপে আখ্যায়িত করেছেন। ১৮১৯ সালের পূর্ব-পর্যন্ত এ খেলা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। অ্যাল্থাম বলেন, তিনি জানেন না কেন খেলাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে, ১৮১০ সাল থেকে নেপলীয় যুদ্ধ এর প্রধান কারণ ছিল এবং ওয়াটারলুর যুদ্ধ ১৮১৫ সালে শুরু হলে খেলাটি বন্ধ হয়ে যাবার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে ধরা যায়। ১৮১৯ সালে সমান শর্তের আলোকে শৌখিনবাদীরা পেশাদারদের সাথে খেলতে সম্মত হয়। তবে, দলটি ছয় উইকেটে হেরে যায়। প্রথম ইনিংসে দল দুটির মধ্যে মাত্র এক রানের পার্থক্য ছিল। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে টম হাওয়ার্ড ও জন শারম্যানের বোলিং তোপে জেন্টলম্যান মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যায়। খেলাটি নতুন লর্ডস মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ খেলাটি জুন, ১৮২০ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে নতুন তারকা বোলার হাওয়ার্ডকে প্রদেয় ব্যক্তি হিসেবে দেয়া হলে জেন্টলম্যান ৭০ রানে জয় তুলে নেয়।
পঞ্চম খেলাটি বেশ দূর্নামের ভাগীদার হয়। ২৩ থেকে ২৫ জুলাই, ১৮২১ তারিখে লর্ডসে খেলার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে, দ্বিতীয় দিন জেন্টলম্যান দল হার মেনে নিয়ে খেলা শেষ করে দেয়। ‘রাজ্যাভিষেক খেলা’ নামে পরিচিত এ খেলাটি জনপ্রিয়তাবিহীন চতুর্থ জর্জের ক্ষমতায় আরোহণ উদযাপনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ডেরেক বার্লি এ ঘটনাটিকে ‘উপযুক্ত অন্ধকার ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জেন্টলম্যান দল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে খুব দ্রুত মাত্র ৬০ রানে অল-আউট হয়। এরপর তারা দীর্ঘ সময় প্রথম দিনের অধিকাংশ সময় ও দ্বিতীয় দিন ফিল্ডিং করে। এ সময় প্লেয়ার্স দল বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ২৭০/৬ থাকা অবস্থায় জেন্টলম্যান দল খেলার মাঠ থেকে প্রতিপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করে ও খেলাটি শেষ হয়ে যায়।
বৈষম্য চিত্র
[সম্পাদনা]এ ঘটনার পর অনেকগুলো বছর খেলা আয়োজন করা হয়নি। চৌদ্দ খেলার মধ্যে বারোটি খেলা ১৮২৪ থেকে ১৮৩৭ সময়কালে আয়োজন করা হয়। প্লেয়ার্সের সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট করা থাকলেও জেন্টলম্যান দলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় থাকতো। একটি খেলায় জেন্টলম্যান দলে আঠারোজন ও দুইটি খেলায় সতেরোজন অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৩২ সালে জেন্টলম্যান দলে স্বাভাবিক উইকেটের তুলনায় ২২×৬ ইঞ্চি করা হয়। ১৮৩৭ সালে ‘বার্ন ডুর খেলা’ নামে পরিচিত খেলায় প্লেয়ার্সের খেলোয়াড়দেরকে ৩৬×১২ ইঞ্চির মাপে স্ট্যাম্প দেয়া হয়েছিল।
আলফ্রেড মিন ও নিকোলাস ফেলিক্সের ন্যায় খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণে ১৮৪০-এর দশকে শৌখিন দলে প্রাণের সঞ্চার ফিরে আসে। ১৮৪২ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত নয়টি খেলা সমান শর্তে অনুষ্ঠিত হয়। জেন্টলম্যান ছয়টি ও প্লেয়ার্স দল দুইটিতে জয় পায় এবং অন্য একটি খেলা ড্র হয়। তবে, দলের সফলতা এখানেই সমাপ্তি ঘটে। ১৮৫৩ সালে স্বান্তনাসূচক জয় পায় ও ১৮৬২ সালে একটি খেলা ড্র করে। জুলাই, ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ২৫টি খেলার প্রত্যেকটিতেই জেন্টলম্যান দল পরাজয়বরণ করেছিল।
শৌখিন ক্রিকেটের সুদিন
[সম্পাদনা]হ্যারি অ্যাল্থামের মতে, ১৮৬০ থেকে ১৮৮০-এর দশক ‘শৌখিন ক্রিকেটর সুদিন’ হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে সরকারী বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা সফলতম ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণকে বুঝানো হয়েছে। এ সময়ে জেন্টলম্যান দল উল্লেখযোগ্য সফলতা পায়। ২৭ খেলায় প্লেয়ার্সের বিপক্ষে জয় পায় ও মাত্র পাঁচটিতে পরাজিত হয় তারা। এর প্রধান ব্যক্তি ছিলেন ডব্লিউ. জি. গ্রেস। অ্যাল্থামের মতে, শক্তির দোলক শৌখিনদের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং আর কখনো শৌখিনদের আধিপত্যে অসমতার সন্ধান খুঁজে পায়নি।
শেষের বছরগুলো
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামাজিক পরিবর্তন শুরু হলে ইংরেজ ক্রিকেটে শৌখিনতত্ত্বের ধারনার বিপক্ষে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ১৯৬৩ সালে সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারকে ‘প্লেয়ার্সের প্রতিবিম্ব পেশাদার’ নামে অভিহিত করা হয়। জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার সর্বশেষ খেলাটি স্কারবোরায় ৮, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফ্রেড ট্রুম্যানের নেতৃত্বাধীন প্লেয়ার্স দল ৭ উইকেটে বিজয়ী হয়। শৌখিনতত্ত্বের বিলোপের ঘটনাটি চার্লস উইলিয়ামস তাঁর রচিত ‘জেন্টলম্যান এন্ড প্লেয়ার্স: দ্য ডেথ অব অ্যামেচারিজম ইন ক্রিকেট’ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।
রেকর্ড
[সম্পাদনা]ফলাফল
[সম্পাদনা]সর্বমোট ২৭৪টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। জেন্টলম্যান ৬৮ ও প্লেয়ার্স ১২৫টি খেলায় জয়লাভ করে। ৮০টি খেলা ড্রয়ে পরিণত হয়। ১৮৮৩ সালের প্রথম খেলাটি টাই হয়েছিল। সকল খেলার ফলাফল জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলার তালিকায় পাওয়া যাবে।
বিশাল ব্যবধানে জয়
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ইনিংস ও ১২৬ রান: ওভাল, ১৮৭৯
- ইনিংস ও ৯৮ রান: লর্ডস, ১৮৭৬
- ইনিংস ও ৮৭ রান: ওভাল, ১৮৬৮
- ২০৬ রান: লর্ডস, ১৮৭৮
- ১৯৩ রান: লর্ডস, ১৮২৯ (জেন্টলম্যানের ১২জন খেলোয়াড় ছিল)
- ১৩৪ রান: লর্ডস, ১৯১৪
- নয় উইকেট: ওভাল, ১৮৭২
- নয় উইকেট: প্রিন্স ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ১৮৭৭
- প্লেয়ার্স
- ইনিংস ও ৩০৫ রান: ওভাল, ১৯৩৪
- ইনিংস ও ২৩১ রান: লর্ডস, ১৯২৪
- ইনিংস ও ১৮১ রান: লর্ডস, ১৮৬০
- ৩৪৫ রান: লর্ডস, ১৮২৩
- ২৮৫ রান: লর্ডস, ১৮৫৮
- ২৪১ রান: ওভাল, ১৯১৪
- দশ উইকেট: সাতবার
সর্বনিম্ন ব্যবধানে জয়
[সম্পাদনা]- টাই
- ওভাল, ১৮৮৩
- জেন্টলম্যান
- চার রান: লর্ডস, ১৮৭০
- পাঁচ রান: লর্ডস, ১৮৮৮
- ছয় রান: স্কারবোরা, ১৯১৩
- এক উইকেট: পাঁচবার
- প্লেয়ার্স
- এক রান: হোভ, ১৮৮১
- দুই রান: লর্ডস, ১৯৫২
- আট রান: ওভাল, ১৮৯৩
- দুই উইকেট: লর্ডস, ১৮৫৬; লর্ডস, ১৮৭৪; লর্ডস, ১৯০০ ও স্কারবোরা, ১৯৫৫
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ৫৭৮: ওভাল, ১৯০৪
- ৫৪২: লর্ডস, ১৯২৬
- ৫১৩: ওভাল, ১৮৭০
- প্লেয়ার্স
- ৬৫১/৭ডি.: ওভাল, ১৯৩৪
- ৬০৮: ওভাল, ১৯২১
- ৫৭৯: লর্ডস, ১৯২৬
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ৩৫: লর্ডস, ৩ জুলাই, ১৮৩৭
- ৩৬: লর্ডস, ১৮৩১
- ৩৭: লর্ডস, ১৯৫৩
- প্লেয়ার্স
- ২৪: লর্ডস, ১৮২৯ (প্রথম ইনিংস)
- ৩৯: লর্ডস, ১৮২৯ (দ্বিতীয় ইনিংস)
- ৪২: লর্ডস, ১৮৫৩
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ২৩২*: সি. বি. ফ্রাই, লর্ডস, ১৯০৩
- ২১৭: ডব্লিউ. জি. গ্রেস, হোভ, ১৮৭১
- ২১৫: ডব্লিউ. জি. গ্রেস, ওভাল, ১৮৭০
- প্লেয়ার্স
- ২৬৬*: জ্যাক হবস, স্কারবোরা, ১৯২৫
- ২৪৭: ববি অ্যাবল, ওভাল, ১৯০১
- ২৪১: লেন হাটন, স্কারবোরা, ১৯৫৩
খেলার উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ১০২* ও ১৩৬: আর. ই. ফস্টার, লর্ডস, ১৯০০
- ১২৫ ও ১০৩*: কে. এস. দিলীপসিংজী, লর্ডস, ১৯৩০
- প্লেয়ার্স
- ১০৪ ও ১০৯*: জন কিং, লর্ডস, ১৯০৪
ইনিংসে নয় বা ততোধিক উইকেট লাভ
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ৯/৪৬: জন স্টিফেনসন, লর্ডস, ১৯৩৬
- ৯/৮২: ডেভিড বুকানন, ওভাল, ১৮৬৮
- ৯/১০৫: জনি ডগলাস, লর্ডস, ১৯১৪
- প্লেয়ার্স
- ১০/৩৭: অ্যালেক কেনেডি, ওভাল, ১৯২৭
- ১০/৯০: আর্থার ফিল্ডার, লর্ডস, ১৯০৬
- ১০/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ১৭ জুলাই, ১৮৩৭ (দ্বিতীয় ইনিংস; জেন্টলম্যানের ১৬ খেলোয়াড় ছিল)
- ৯/৮৫: সিস পার্কিন, ওভাল, ১৯২০
- ৯/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ৩ জুলাই, ১৮৩৭
খেলায় তেরো বা ততোধিক উইকেট লাভ
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ১৪/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ১৮২৯
- প্লেয়ার্স
- ১৮/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ১৭ জুলাই, ১৮৩৭ (জেন্টলম্যানের ১৬ খেলোয়াড় ছিল)
- ১৪/২২১: আর্থার ফিল্ডার, লর্ডস, ১৯০৬
- ১৩/১৪১: টম রিচার্ডসন, হ্যাস্টিংস, ১৮৯৭
- ১৩/১৪৪: টিচ ফ্রিম্যান, লর্ডস, ১৯২৯
- ১৩/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ১৮৩৫
- ১৩/?: এফ. ডব্লিউ. লিলিহোয়াইট, লর্ডস, ৩ জুলাই, ১৮৩৭
- ১৩/?: জেমস কবেট, লর্ডস, ১৮৩৬ (জেন্টলম্যানের ১৮ খেলোয়াড় ছিল)
ইনিংসে পাঁচ ক্যাচ
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- আলফ্রেড লিটলটন, ওভাল, ১৮৭৭
- এ. জে. ওয়েব, লর্ডস, ১৮৭৭
- প্লেয়ার্স
- লেন হাটন, লর্ডস, ১৯৫২
ইনিংসে চার স্ট্যাম্পিং
[সম্পাদনা]- জেন্টলম্যান
- ই. এইচ. বাড, লর্ডস, ১৮১৯
- প্লেয়ার্স
- উইলিয়াম স্ল্যাটার, লর্ডস, ১৮২৪ (জেন্টলম্যানের ১৪ খেলোয়াড় ছিল)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Trueman, Ball of Fire, p.57.
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- গোলাপের খেলা
- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী পরিবারের তালিকা
- আনুষ্ঠানিক কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ বিজয়ী দলের তালিকা
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- H. S. Altham, A History of Cricket, Volume 1 (to 1914), George Allen & Unwin, 1962
- Derek Birley, A Social History of English Cricket, Aurum, 1999
- Rowland Bowen, Cricket: A History of its Growth and Development, Eyre & Spottiswoode, 1970
- Arthur Haygarth, Scores & Biographies, Volumes 1–11 (1744–1870), Lillywhite, 1862–79
- Fred Trueman, Ball of Fire, Dent, 1976
- Roy Webber, The Playfair Book of Cricket Records, Playfair Books, 1951
- Charles Williams, Gentlemen & Players: The Death of Amateurism in Cricket, Weidenfeld & Nicolson, 2012, আইএসবিএন ৯৭৮০৭৫৩৮২৯২৭১
- Playfair Cricket Annual – various editions
- Wisden Cricketers' Almanack – various editions