ফ্রিদতিয়ফ নানসেন
ফ্রিদতিয়ফ নানসেন | |
---|---|
জন্ম | Store Frøen, Christiania, Norway | ১০ অক্টোবর ১৮৬১
মৃত্যু | ১৩ মে ১৯৩০ Polhøgda, Lysaker, Norway | (বয়স ৬৮)
শিক্ষা | Royal Frederick University |
পেশা |
|
পরিচিতির কারণ | |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান | 5, including Odd |
আত্মীয় |
|
পুরস্কার |
|
স্বাক্ষর | |
ফ্রিদতিয়ফ নানসেন (নরওয়েজীয়: Fridtjof Nansen নরওয়েজীয়: [ˈfrɪ̂tːjɔf ˈnɑ̀nsn̩]) ১০ই অক্টোবর, ১৮৬১ - ১৩ই মে, ১৯৩০) একজন নরওয়েজীয় অভিযাত্রী, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ডানপিটে ছিলেন। শৈশবেই বরফের উপরে স্কি করতে অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ১৮ বছর বয়সে স্কি খেলার একটি বিশ্বরেকর্ড ভাঙেন এবং মোট ১২ বার জাতীয় স্কি শিরোপা জেতেন। তিনি ১৮৮৮ সালে প্রাণীবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন ও ঐ বছরই গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরভাগের উপরে টুপির মতো বসে থাকে বিশাল বরফক্ষেত্রটি অতিক্রমকারী প্রথম অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এর আগে তিনি বের্গেন জাদুঘরে ৬ বছর গবেষক হিসেবে চাকরি করেন এবং সুমেরু অঞ্চলের অমেরুদণ্ডী সামুদ্রিক প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্র বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি ফ্রাম নামের বিশেষ একটি জাহাজ নির্মাণ করিয়ে উত্তর মেরুতে পৌঁছানোর অভিযান চালিয়ে বিফল হলেও তৎকালীন সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তরের বিন্দুটিতে পৌঁছানোর কৃতিত্ব দেখান ও বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন।
দুঃসাহসিক অভিযানগুলি সমাপ্তির পরে নানসেন রাজনীতি ও কূটনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯০৫ সালে নরওয়ে যখন সুইডেনের সাথে ঐক্য থেকে বের হয়ে আসে, তখন তিনি নরওয়েজীয় জাতীয়তাবাদের পক্ষে আন্দোলন করেন। তিনি ১৯০৬ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে নরওয়ের কূটনৈতিক দূত হিসেবে ও ১৯২০ সালে নবগঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে নরওয়ের প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের চোখে একটি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে নরওয়ের অবস্থান সুদৃঢ় করা। ১৯০৭ সালের নভেম্বর মাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, নরওয়ে ও রাশিয়া নরওয়ের স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করলে তাঁর এই উদ্দেশ্য সফল হয়। এ সময়েও তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন এবং ১৯০০ সালে ও ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে সমুদ্রবৈজ্ঞানিক অভিযান পরিচালনা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নানসেন রাশিয়া, জার্মানি ও প্রাক্তন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের প্রায় ৪ লক্ষ যুদ্ধবন্দীকে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করেন এবং ১৯২১ সালে রাশিয়াতে চরম দুর্ভিক্ষ লাঘবের জন্য রেড ক্রসের সাথে ত্রাণ কর্মসূচীর আয়োজন করেন। ১৯২২ সালে তাকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম শরণার্থী বিষয়ক উচ্চ মহাধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করা হয়। ঐ একই বছর অর্থাৎ ১৯২২ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যাবাসন, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্ম ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক উচ্চ মহাধ্যক্ষ হিসেবে ভূমিকার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।[১] তিনি পুরস্কারের অর্থ আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মে ব্যবহার করেন। ১৯২২ সালের পরে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (লিগ অভ নেশনস) রাষ্ট্রহীন শরণার্থীদের জন্য "নানসেন পাসপোর্ট" নামক ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে, যাতে তারা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। ১৯৩১ সালে জেনেভাতে শরণার্থীদের জন্য নানসেন আন্তর্জাতিক কার্যালয় খোলা হয়। পরবর্তীতে নানসেন গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধের পরে উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্থানীয় গ্রিকদেরকে গ্রিসে অভিবাসনের ব্যবস্থা করে দেন। জীবন সায়াহ্নে তিনি আর্মেনীয় শরণার্থীদের ব্যাপারে কাজ করেন।
নানসেনের নাম আজও বহু স্থানে অমর হয়ে আছে। প্রতি বছর জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক উচ্চ মহাধ্যক্ষ (হাই কমিশনার) নানসেন শরণার্থী পুরস্কার প্রদান করেন। সুমেরু অঞ্চলে সাগরের তলদেশে নানসেন অবতলভূমি (বেসিন) নামের একটি ভূতাত্ত্বিক স্থান আছে। এছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল অঞ্চলগুলির বহু পর্বত ও দ্বীপগুলির নাম নানসেনের নামে রাখা হয়েছে। চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহের একটি করে জ্বালামুখের নাম রাখা হয়েছে নানসেন জ্বালামুখ। একটি গ্রহাণুর নাম রাখা হয়েছে ৮৫৩ নানসেন। নরওয়ের নৌবাহিনীর এক শ্রেণীর জাহাজের নাম রাখা হয়েছে "নানসেন শ্রেণী"-র জাহাজ; মূলত বিখ্যাত নরওয়েজীয় অভিযাত্রীদের নামে এরূপ অনেকগুলির শ্রেণী আছে।