বিষয়বস্তুতে চলুন

বদিউল আলম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বদিউল আলম
জন্ম৩০ অক্টোবর, ১৯৪৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম
দাম্পত্য সঙ্গীশাহনাজ কাওছার
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন বদিউল আলম (দ্ব্যর্থতা নিরসন)

বদিউল আলম (জন্ম: ৩০ অক্টোবর, ১৯৪৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। []

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

বদিউল আলমের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামপুরা গ্রামে। তার বাবার নাম মোজাম্মেল হক সরকার এবং মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন। তার স্ত্রীরর নাম শাহনাজ কাওছার। তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে। স্বাধীনতার পর নৌবাহিনীর চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে চাকরি নেন। পরে জনতা ব্যাংকে চাকুরি শেষে অবসর নেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বদিউল আলম ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। সেখানে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ৫৭ জন সাবমেরিনার প্রশিক্ষণে ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি। ৩০ মার্চ তারা নয়জন সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে তাদের আটজন ভারতে আসেন। এরপর তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বদিউল আলম পরে মংলা ও চালনা বন্দর অপারেশনে অংশ নেন। []

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট খুব ভোরে চাঁদপুর নৌবন্দরে বিকট শব্দে বিস্ফোরন হয়। ১৫ আগস্ট গভীর রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন চাঁদপুর শহরের কাছে এক বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। ১৩ আগস্ট রাত থেকে গোপন আশ্রয়ে ছিলেন তারা ২০ জন। তারা সবাই নৌ-কমান্ডো। তাদের দলনেতা বদিউল আলম। নিঃশব্দে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন তারা। প্রত্যেকের বুকে বাধা লিমপেট মাইন। কোমরে ড্যাগার। তারা এগিয়ে চলেছেন মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনা দিকে। তাদের টার্গেট ছয়টি জাহাজ, পন্টুন ও বার্জ। সেগুলো মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া। দলনেতা বদিউল আলম ১৮ জনকে ছয় দলে ভাগ করে প্রতিটি টার্গেটের জন্য তিনজনকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। বাকি দুজন নদীর তীরে থাকবেন। বদিউল আলমের নেতৃত্বে কমান্ডোরা নেমে পড়লেন বন্দরসংলগ্ন নদীতে। বর্ষায় মেঘনার মোহনায় ভয়ংকর এক রূপ। অথৈ পানি, প্রবল ঢেউ আর স্রোত। এর মধ্যে তারা অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে সাঁতরিয়ে চলছেন। শত্রুর জাহাজ থেকে অনুসন্ধানী আলো ঘুরছে চারদিকে। বিপজ্জনক এক অবস্থা। সব দলই সফলতার সঙ্গে নির্দিষ্ট টার্গেটে মাইন লাগিয়ে ফিরে চলল নিরাপদ স্থানে। ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বিস্ফোরিত হবে মাইনগুলো। এ সময় হঠাৎ দেখা দিল নতুন বিপদ। যে দিক দিয়ে তারা ফিরে যাবেন, সেখানে নোঙর ফেলেছে রকেট স্টিমার সার্ভিসের জাহাজ ‘গাজী’। পাকিস্তানি সেনা ও গোলাবারুদ নিয়ে খুলনা থেকে এসেছে। সেনারা সব জাহাজে, কেউ নামেনি। ডেকে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা অস্ত্র হাতে পাহারায়। জাহাজটি অন্ধকারে প্রেতচ্ছায়ার মতো নদীর পাড় ঘেঁষে ভেসে আছে পানির ওপর। এই জাহাজটি দেখে তারা চমকে উঠলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। যাওয়ার কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। অল্পক্ষণের মধ্যেই মাইনের বিস্ফোরণ ঘটবে। রাতও প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় প্রথম দলটি দ্রুত একটি বার্জের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। এই বার্জে মাইন লাগানো হয়নি। অন্যরাও তাদের পেছনে সেখানে লুকিয়ে পড়লেন। প্রথমে বিকট একটি শব্দ। দু-তিন মিনিট পর আরেকটি। তারপর একসঙ্গে দু-তিনটি। এরপর খই ফোটার মতো বিস্ফোরণ শুরু হলো। নৌবন্দর থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত এলাকার জলভাগে যেন মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গেল। বিস্ফোরণের গগণবিদারী শব্দে বন্দরসংলগ্ন শহর কয়েকবার কেঁপে উঠল। বন্দর ও জাহাজের ডেকে পাকিস্তানি সেনাদের অস্থির ছোটাছুটির হুলস্থুল কাণ্ড। একটু পর একে একে ডুবতে থাকল মাইন লাগানো জাহাজ-বার্জগুলো। ডুবন্ত জাহাজের ডেক থেকে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনা ও নাবিকেরা এলোমেলো গুলি চালাতে চালাতে লাফিয়ে পড়ে নদীতে। মুহূর্তে কী ঘটে গেল, এখন কী করা উচিত, ভেবে দেখার সময় নেই কারও। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটি জাহাজ-বার্জ তোলপাড় তুলে ডুবে গেল।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৯-০৫-২০১১"। ২০২০-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৯ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯২। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৯। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ

[সম্পাদনা]