বেরলভী
রেজভী |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
বেরলভী (বাংলাদেশে রেজভী নামেও পরিচিত) হলো দক্ষিণ এশিয়ায় ২০ কোটির বেশি অনুসারীদের সুন্নি হানাফি মাযহাবের একটি আন্দোলন।[১] ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলি শহর থেকে এর সূচনা হয় তাই ভারতে এবং পাকিস্তানে বেরলভী বা ব্রেলভী নামে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এরা বেরলভী নামের পাশাপাশি তাদের একটা অংশ রেজভী নামে পরিচিত। এরা আহমদ রেজা খান বেরলভী (১৮৫৬-১৯২১) এর অনুসারী।[২]
প্রচার মাধ্যম এবং একাডেমিয়াতে বেরলভী নাম সাধারণত ব্যবহৃত হয় তবে আন্দোলনের অনুসারীরা প্রায়ই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের শিরোনাম বা সুন্নি হিসাবে নিজেদের পরিচিত দিয়ে থাকেন।[৩]বেরলভীরা ফিকীহ মাসআলায় হানাফী মাযহাবের অনুসারী।[৩] অনুসারীগণ ১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী জশনে জুলুস বা আনন্দ শোভাযাত্রা করেন।[৪] বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এর উদ্যোগে প্রতি বছর জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়।[৪] এছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলদেশে আহমেদ রেজা খান বেরলভীর অনুসারির সংখ্যা কম নয়, চট্টগাম বিভাগে এদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়, পাকিস্তান ও ভারতে তার অনুসারির সংখ্যা অনেক। তারা সুফিবাদে বিশ্বাসি।[৫]
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]বেরেলভী নামটি উত্তর ভারতের শহর বেরেলি থেকে, যেটি আহমদ রেজা খানের (১৮৫৬-১৯২১) জন্মস্থান। আহমদ রেজা খানের নামে তারা বেরলভী বা রেজাখানি নামে বাংলাভাষীদের কাছে বেশি পরিচিত।[৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২]যদিও বেরলভী সাধারণভাবে ব্যবহৃত শব্দ, আন্দোলনটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত-এর শিরোনাম দ্বারাও পরিচিত (উর্দু: اهل سنت وجماعت) সুন্নি সম্প্রদায়ের জন্য ফকিহ নাম, একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের পরিবর্তে মূলধারার সুন্নি হিসেবে তাদের আত্ম-উপলব্ধির উল্লেখ।[১৩][১৪][১৫][১৬]এর অনুসারীদের কাছে আন্দোলন হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, অথবা "ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের মানুষ" এবং তারা নিজেদেরকে সুন্নি বলে উল্লেখ করে। এই পরিভাষাটি দেওবন্দী, আহলে হাদিস, সালাফী এবং নদভীর অনুসারীদের বিরোধিতা করে দক্ষিণ এশিয়ায় সুন্নি ইসলামের একমাত্র বৈধ রূপ বলে ব্যবহৃত হয়।[১৬][১৭][১৮]
বিশ্বাস
[সম্পাদনা]অন্যান্য সুন্নি মুসলমানদের মতো, বেরলভীরাও তাদের বিশ্বাসকে কুরআন ও হাদিসের উপর নির্ভর করে এবং একত্ববাদ (তাওহীদ) ও ইসলামের নবী মুহাম্মদের নবুওয়াতকে বিশ্বাস করেন। বেরলভীরা কাদেরী, চিশতী বা সোহরাওয়ার্দিয়া সূফী তরিকা অনুসরণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ বেরলভীরা ইসলামী ধর্মতত্ত্বের মাতুরিদি মতবাদ এবং ফিকহের হানাফি মযহব অনুসরণ করেন।[১৯][২০]
বেরলভী আন্দোলনের মধ্যে একটি মৌলিক বিশ্বাস হল যে মুহাম্মদ এই জীবনে এবং পরকালীন জীবনে মানুষকে সাহায্য করেন।[২১] এই মতবাদ অনুসারে, মুহাম্মদের (তাওয়াসসুল) মাধ্যমে আল্লাহ সাহায্য করেন। বেরলভী আন্দোলনের সুন্নি মুসলমানরা সাধারণত ইয়া রাসুল্লাল্লাহ -এর মতো বিবৃতি ব্যবহার করে মুহাম্মদের প্রতি আহ্বান করে এই বিশ্বাস নিয়ে যে, মুহাম্মদ অন্যদের সাহায্য করার যে কোন ক্ষমতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে, যিনি মুহাম্মদের মাধ্যমে সাহায্য করেন। মুহাম্মদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য তাই আল্লাহর সাহায্য হিসেবে বিবেচিত হয়।[২১] বেরলভী আন্দোলনের সুন্নি মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, কুরআনে বর্ণিত যে, মুহাম্মদ সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত ২১:১০৭।[২১]মুহাম্মদ তাই এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আল্লাহ তাঁর গুণ, আর-রহমানকে সৃষ্টির প্রতি প্রকাশ করেন।[২১]এই বিশ্বাসের প্রবক্তারা কুরআনকে ৪:৬৪ প্রমাণ হিসেবে দেখেন যে আল্লাহ মুহাম্মদের মাধ্যমে সাহায্য করতে পছন্দ করেন।
এই আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় মতবাদ হল মুহাম্মদ উভয়ই মানুষ এবং আলো।[২২] মুহাম্মদের শারীরিক জন্মের আগে তার অস্তিত্ব ছিল একটি আলো হিসেবে যা সৃষ্টির পূর্বে থেকেই ছিল। মুহাম্মদের আদি বাস্তবতা সৃষ্টির পূর্বেই বিদ্যমান ছিল, এবং আল্লাহ মুহাম্মদের কারণে সৃষ্টিজগত তৈরি করেছিলেন।[২৩] এই মতবাদের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে কুরআনে নূর (আলো) শব্দটি৫:১৫ মুহাম্মদকে নির্দেশ করে।
নবম শতাব্দীর সুন্নি কুরআনের ব্যাখ্যাকারক সাহল আল-তুস্তারী তার তাফসিরে মুহাম্মদের আদিম আলো সৃষ্টির বর্ণনা দিয়েছেন।[২৪] মনসুর আল-হাল্লাজ (আল-তুস্তারীর ছাত্র) এই মতবাদটি তার বই তা সিন আল-সিরাজ-এ নিশ্চিত করেছেন:[২৫][২৪]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]ভারত
[সম্পাদনা]- মানজার-এ-ইসলাম, বেরেলি, উত্তর প্রদেশ ,ভারত
- আল জামিয়াতুল আশরাফিয়া, আজমগড়, উত্তর প্রদেশ, ভারত
- জামিয়াতুর রেজা, বেরেলি, উত্তর প্রদেশ, ভারত
- আল-জামেয়াতুল-ইসলামিয়া, ফৈজাবাদ, উত্তর প্রদেশ, ভারত
- জামিয়া আমজাদিয়া রজভীয়া, ঘোসি, মাউ, উত্তর প্রদেশ, ভারত।
- জামিয়া নিজামিয়া, হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, ভারত
পাকিস্তান
[সম্পাদনা]সুন্নি ইসলাম ধারাবাহিকের একটি অংশ |
---|
- জামিয়া নঈমীয়া লাহোর, লাহোর, পাকিস্তান।
- জামিয়া নিজামিয়া গাউসিয়া,বাজিরাবাদ, পাঞ্জাব, পাকিস্তান।
- জামিয়া-তুুল-মদিনা, করাচি, পাকিস্তান।
- জামিয়া ফরিদিয়া সাহেবাল, পাঞ্জাব, পাকিস্তান।
বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা পশ্চিম ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
- কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
- মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাজিল হালিশহর, চট্টগ্রাম।
- মাদ্রাসা-এ- তৈয়্যবিয়া হাফিজিয়া কালুরঘাট, চট্টগ্রাম।
সংগঠন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]পাকিস্তান
[সম্পাদনা]- জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান
- সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল
- জামাত আহলে সুন্নত
- তানজিম উল মাদারিস
- সুন্নি তেহরিক
- মজলিস-ই-তাহাফফুজ-ই-খতমে নবুয়ত
ভারত
[সম্পাদনা]প্রতিষ্ঠাতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]- ইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভী
- হামিদ রেজা খান
- মোস্তফা রেজা খান
- নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী
- সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি
- সৈয়দ আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী
- সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা
- সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ
- নুরুল ইসলাম হাশেমী
- মুফতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বেরলভী
- গাজী আকবর আলী বেরলভী
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- দরগাহ-এ-আলা হযরত
- বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের তালিকা
- কওমী মাদ্রাসা
- আলিয়া মাদ্রাসা
- ভারতে ইসলাম
- বাংলাদেশে ইসলাম
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Barelvi - Oxford Reference" (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1093/oi/authority.20110803095446664। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৬।
- ↑ Sanyal, Usha (জুলাই ১৯৯৮)। "Generational Changes in the Leadership of the Ahl-e Sunnat Movement in North India during the Twentieth Century"। Modern Asian Studies (ইংরেজি ভাষায়)। 32 (3): 635–656। আইএসএসএন 1469-8099।
- ↑ ক খ Hewer, C. T. R.; Anderson, Allan (২০০৬)। Understanding Islam: The First Ten Steps (ইংরেজি ভাষায়)। SCM Press। আইএসবিএন 9780334040323।
- ↑ ক খ কালের কণ্ঠ। "এবার ৪৪তম 'জশনে জুলুস'"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২০।
- ↑ Sutherland, Stewart R. (১৯৮৮-০১-০১)। The World's Religions (ইংরেজি ভাষায়)। G.K. Hall। আইএসবিএন 9780816189786।
- ↑ Illustrated Dictionary of the Muslim World, pg. 113. Marshall Cavendish, 2011. আইএসবিএন ৯৭৮০৭৬১৪৭৯২৯১
- ↑ Globalisation, Religion & Development, pg. 53. Eds. Farhang Morady and İsmail Şiriner. London: International Journal of Politics and Economics, 2011.
- ↑ Elizabeth Sirriyeh, Sufis and Anti-Sufis: The Defense, Rethinking and Rejection of Sufism in the Modern World, pg. 49. London: Routledge, 1999. আইএসবিএন ০-৭০০৭-১০৫৮-২.
- ↑ Rowena Robinson, Tremors of Violence: Muslim Survivors of Ethnic Strife in Western India, pg. 191. Thousand Oaks: Sage Publications, 2005. আইএসবিএন ০৭৬১৯৩৪০৮১
- ↑ Usha Sanyal. Generational Changes in the Leadership of the Ahl-e Sunnat Movement in North India during the Twentieth Century ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে. Modern Asian Studies (1998), Cambridge University Press.
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;oxfordreference Ahl al-Sunnah wa'l-Jamaah
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Riaz, Ali (২০০৮)। Faithful Education: Madrassahs in South Asia। Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-0-8135-4345-1।
... Ahl-e-Sunnat wa Jama'at (People of Sunnah and the Community), commonly referred to as Barelvis, ...
- ↑ Riaz, Ali (২০০৮)। Faithful Education: Madrassahs in South Asia। Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-0-8135-4345-1।
...a defining characteristic of the Ahl-e-Sunnat wa Jama'at, as the name suggests, is the claim that it alone truly represents the sunnah (the Prophetic tradition and conduct), and therby the true Sunni Muslim tradition. ...
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;schism-Jackson-2013-4
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Maheshwari, Anil (২০২১)। "6. Ahl-e-Sunnat: Energising Faith in Rough Times"। Syncretic Islam। Bloomsbury Publishing। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২১।
The Barelvis, like the Deobandis, insisted that they were leaders [not??] of separate sects but of the mainstream Sunni Muslims. And so, they called themselves the Ahl-e-Sunnat wa Jama'at, the classical name for the Sunni community. [note, the first sentence makes no sense without "not" inserted after "leaders"].
- ↑ ক খ C. T. R. Hewer; Allan Anderson (২০০৬)। Understanding Islam: The First Ten Steps। Hymns Ancient and Modern Ltd। পৃষ্ঠা 204। আইএসবিএন 978-0-334-04032-3।
- ↑ Riaz, Ali (২০০৮)। Faithful Education: Madrassahs in South Asia। Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 123। আইএসবিএন 978-0-8135-4345-1।
...were advanced by Imam Ahmad Reza Khan of Bareilly in 1906 as the original form of Islam and as the alternative to the austere path of the Deobandis.
- ↑ Geaves 2006: 148
- ↑ "Deobandi Islam vs. Barelvi Islam in South Asia"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ Schleifer, Abdallah; El-Sharif, Farah; Elgawhary, Tarek; Ahmed, Aftab, সম্পাদকগণ (২০১৭), Persons of the Year, the Muslim 500, the World's 500 Most Influential Muslims, 2018 (পিডিএফ), Amman, Jordan: The Royal Islamic Strategic Studies Centre, আইএসবিএন 978-9957-635-14-5, ৭ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা
- ↑ ক খ গ ঘ علامہ مشتاق احمد نظامی علیہ الرحمہ, وسیلہ نسبت تعظیم, Noor Masjid Ka Ghazi Bazaar - Karachi
- ↑ Ahmed Raza। "Noor o Bashar ::Islamic Books, Books Library"। Faizaneraza.org। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-২৪।
- ↑ Jorgen S. Nielsen (২০১৫), Muslims in Western Europe, Edinburgh University Press, পৃষ্ঠা 218, আইএসবিএন 9781474409353
- ↑ ক খ The Cambridge Companion to Muhammad, Cambridge University Press, ২০১০, পৃষ্ঠা 127, আইএসবিএন 9780521886079
- ↑ Tafsīr al-Tustarī, Royal Aal al-Bayt Institute for Islamic Thought, ২০১১, পৃষ্ঠা 213