ভারতীয় জাদুঘর
স্থাপিত | ১৮১৪ |
---|---|
অবস্থান | চৌরঙ্গী, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
ধরন | জাদুঘর |
সংগ্রহের আকার | ১,০২,৬৪৬ (৩১ মার্চ, ২০০৪-এর হিসেব)[১] |
ওয়েবসাইট | indianmuseumkolkata.org |
ভারতীয় জাদুঘর হল ভারতের বৃহত্তম জাদুঘর। ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে।
কলকাতা জাদুঘর একটি .সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান জাদুঘর। এর ছয়টি বিভাগ রয়েছে – শিল্পকলা, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণীতত্ত্ব ও অর্থনৈতিক উদ্ভিজ্জ। ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে এই প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।[২] এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জাদুঘর। এখন এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের পরিচালনাধীন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৭৮৪ সালে স্যার উইলিয়াম জোন্স এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৯৬ সালে সোসাইটির সদস্যরা মানুষের তৈরি বস্তু ও প্রাকৃতিক সামগ্রী নিয়ে একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮০৮ সালে জাদুঘর তৈরির কাজ শুরু হয়। এই বছরই ভারত সরকার সোসাইটিকে চৌরঙ্গী অঞ্চলে জাদুঘর তৈরির জন্য জমি দেয়।[৩]
১৮১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ডাচ উদ্ভি্দতত্ত্ববিদ ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ (তাকে শ্রীরামপুরের যুদ্ধের সময় বন্দী করা হয়েছিল ও পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল) কলকাতায় জাদুঘর স্থাপনের সমর্থনে একটি চিঠি লেখেন। তিনি বলেছিলেন, এই জাদুঘরে দুটি বিভাগ থাকা উচিত। একটি পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত এবং অপরটি ভূতাত্ত্বিক ও প্রাণিতাত্ত্বিক। তিনি তার সংগ্রহের কিছু সামগ্রীও জাদুঘরে দান করতে চান।[৪]
সোসাইটি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ড. ওয়ালিচ সেই সময় ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাচ্য জাদুঘরের সুপারিনটেন্ডেন্ট। তাকেই ভারতীয় জাদুঘরের প্রথম সাম্মানিক পরিচালক (কিউরেটর) নিযুক্ত করা হয়। ১৮১৪ সালের ১ জুন তিনি কার্যভার গ্রহণ করেন। জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার উৎসাহেই জাদুঘরের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সংগ্রাহকরা ছিলেন ইউরোপীয়। একমাত্র ভারতীয় সংগ্রাহক ছিলেন বাবু রামকমল সেন। ইনি পরে সোসাইটির ভারতীয় সচিব হয়েছিলেন। ড. ওয়ালিচ প্রতিষ্ঠার সময় জাদুঘরকে সবচেয়ে বেশি সামগ্রী দান করেছিলেন। ১৮১৬ সাল পর্যন্ত জাদুঘরে দান করা ৭৪টি সামগ্রীর মধ্যে ৪২টি ছিল উদ্ভিজ্জ।[৫]
ড. ওয়ালিচ পদত্যাগ করার পর মাসিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেতনে কিউরেটর নিয়োগ শুরু হয়। ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটি এই বেতন দিত। এরপর সোসাইটির ব্যাঙ্কার পামার অ্যান্ড কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে সরকার বেতন দিতে শুরু করে। জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের রক্ষনাবেক্ষণের জন্য মাসিক ২০০ টাকা অনুদান দেওয়া শুরু হয়। ১৮৪০ সালে সরকার জাদুঘর ভূতাত্ত্বিক ও খনিজ সংগ্রহ বিভাগ চালুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে আরও ২৫০ টাকা মাসিক অনুদান দিতে শুরু করে শুধুমাত্র ভূতত্ত্ব বিভাগের জন্য। একটি নতুন বাড়ির প্রয়োজন হয় এই সময়। বাড়ির নকশা করেন ওয়াল্টার আর গ্র্যানভিল। ১৮৭৫ সালে ১,৪০,০০০ টাকা ব্যয়ে এই নতুন বাড়িটি তৈরি হয়।[৬] ১৮৭৯ সালে সাউথ কেনসিংটনের ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের সংগ্রহের একাংশ এই জাদুঘরে আসে।[৭]
১৯১৬ সালে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অনুদানে জাদুঘরে প্রাণিতত্ত্ব এবং ১৯৪৫ সালে অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অনুদানে নৃতাত্ত্বিক বিভাগ চালু হয়।[৮]
সংগ্রহ
[সম্পাদনা]২০০৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, জাদুঘরের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে একটি মিশরীয় মমি, ভারহুতের বৌদ্ধ স্তুপ, অশোক স্তম্ভ (ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় প্রতীক), প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিদের ফসিল, শিল্প সংগ্রহ, দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন সামগ্রী ও ভূতাত্ত্বিক প্রস্তর সংগ্রহ।
ভারতের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার বাঙালি শিল্পী সুরজিৎ দাসের হাতে গড়ে উঠা ডায়নোসরের মডেল রয়েছে এখানে। বহু প্রাচীন বস্তু রয়েছে এই সংগ্রহশালায়।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
মানভূম থেকে প্রাপ্ত দেবী দুর্গার প্রস্তর মূর্তি
-
মানব বিবর্তন
-
বুদ্ধের জীবন দৃশাবলি
-
বুদ্ধ দেবী তারা
-
বুদ্ধ, অনুমনিক খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দী
-
অবলোকিতেশ্বর, আনুমানীয় খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী
-
জাদুঘরে রক্ষিত জাতীয় প্রতীক
-
জাদুঘরে রক্ষিত জাতীয় প্রতীক
-
ম্যামথের কঙ্কাল
-
হরিণের কঙ্কাল
-
পাথরের সংগ্রহ
-
মিশরীয় সংগ্রহ
-
বুদ্ধের পদচিহ্ন
-
বুদ্ধমূর্তি
-
জাপানী গাকু ডাইকো
প্রবেশ মূল্য
[সম্পাদনা]প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকদের ঢুকতে গেলে ৭৫ টাকার টিকিট কাটতে হবে। পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের জন্য টিকিটের দাম করা হয়েছে ২০ টাকা। বিদেশিদের জন্য টিকিটের দাম ৫০০ টাকা। স্কুল পড়ুয়াদের জন্য কোনও প্রবেশ মূল্য লাগবে না।
স্মার্ট ফোনের জন্য আলাদা করে দিতে হবে ৫০ টাকা। শুধু ক্যামেরা হলে ধার্য করা হয়েছে ১০০ টাকা। ছোট ভিডিও ক্যামেরা এবং স্ট্যান্ড সহ ক্যামেরার জন্য দিতে হবে যথাক্রমে দুই এবং পাঁচ হাজার টাকা। [৯]
পরিদর্শনের সময়
[সম্পাদনা]সোমবার থেকে শুক্রবার ১০টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং শনি ও রবিবার ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। [১০]
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাহিসাব নিরীক্ষক তৃতীয় অধ্যায়ের ২০০৫ সালের ৪ নং (সিভিল) প্রতিবেদন : সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, পৃ: ৩১
- ↑ Government of India, Ministry of Culture, ANNUAL REPORT 2008-09 p. 27
- ↑ "History of Indian Museum"। Website of the Indian Museum। Ministry of Culture, Government of India। ২০১২। ২৪ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "History of Indian Museum (second page)"। Website of the Indian Museum। Ministry of Culture, Government of India। ২০১২। ১৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Official website of Indian Museum ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে,Biography of Nathaniel Wallich
- ↑ Anon. (1927) A short guide to the Indian Museum. Calcutta
- ↑ Desmond, Ray (1982) The India Museum 1801-1879 Her Majesty's Stationery Office, London, আইএসবিএন ০-১১-৫৮০০৮৮-৩
- ↑ "Appendix K: The Anthropological Survey of India (The Andamanese by George Weber)"। ২০০৫-০৯-১০। ২০০৬-০৫-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-০৪।
- ↑ "Ticket Price"। ২১ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "Time"। ২১ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।