রবার্ট মুগাবে
রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে (শোনা উচ্চারণ: [muɡaɓe], ইংরেজি: /muːˈɡɑːbiː/ moo-GAH-bee; (২১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৪–৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)[২][৩] জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন ছিলেন। শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৯৮০ - ১৯৮৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৮৭ সাল থেকে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।[৪] ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে রবার্ট মুগাবে ৩৭ বছর শাসনের পরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।[৫]
১৯৬০-এর দশকে মুগাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জানু)-এর মহাসচিব ছিলেন তিনি এবং তার দল সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক ইয়ান স্মিথের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরের অধিক সময় তাকে রোডেশিয়ার কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে অবস্থান করতে হয়।[৬] এডগার তেকেরের সাথে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়ে রোডেশিয়া ত্যাগ করেন। মোজাম্বিকে অবস্থান করে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা রোডেশিয়ান বুশ ওয়ারে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৯ সালে সমাপ্ত ঐ যুদ্ধে মুগাবে অনেক আফ্রিকাবাসীর মন জয় করে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন রবার্ট মুগাবে।[৭][৮] ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে মুগাবে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে ১ম প্রধানমন্ত্রীত্বে অভিষিক্ত হন। দেশ পুণর্গঠনে পূর্বে যুদ্ধরত দলসহ শ্বেতাঙ্গ রোডেশিয়ান এবং বিবদমান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যে পৌঁছান।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]দক্ষিণ রোডেশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে হারারের জিম্বা জেলার কুতামা জেসুইত মিশনের কাছে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মালাউই পিতা গ্যাব্রিয়েল মাতিবিলি এবং শোনা অধিবাসী মাতা বোনা উভয়েই রোমান ক্যাথলিক ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৩য় ছিলেন। বড় দুই ভাই - মাইকেল এবং দোনাতো উভয়েই তার শৈশবকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৯] তার বাবা গ্যাব্রিয়েল মাতিবিলি একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।[১০] ১৯৩৪ সালে মাইকেলের মৃত্যুর পর মুগাবে পরিবার কাজের সন্ধানে বুলাওয়ে চলে যান।[১১]
মুগাবে ম্যারিস্ট ব্রাদার্স এবং জেসুইট বিদ্যালয়সহ মর্যাদাপূর্ণ কুতামা কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি আইরিশ পাদ্রী ফাদার জেরোম ও'হিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে গড়েন। তরুণ বয়সে মুগাবে সামাজিক কিংবা শারীরিক কোনভাবেই জনপ্রিয় ছিলেন না। অধিকাংশ সময়ই তিনি ধর্মযাজক অথবা তার মায়ের সাথে পড়াশোনা করে সময় কাটাতেন। অন্যান্যদের সাথে খেলতে পছন্দ করতেন না বরং নিজেই নিজের সাথে মজা উপভোগ করতেন।[১০] তার ভাই দোনাতো বলেছিলেন যে একমাত্র বন্ধু হিসেবে ছিল বই।[১২]
শিক্ষক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলেও তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্ট হেয়ারে চলে যান। সেখানে ১৯৫১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হেয়ার থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। সাক্ষাৎ করেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব - জুলিয়াস নায়ারে, হার্বাট চিতেপো, রবার্ট সবুকি এবং কেনেথ কাউন্ডা প্রমূখদের সাথে। এরপর সলিসবেরি (১৯৫৩), গুইলো (১৯৫৪) এবং তাঞ্জানিয়ায় (১৯৫৫-১৯৫৭) পড়াশোনা করেন।
ধারাবাহিকভাবে দূরশিক্ষণ প্রকল্পে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা থেকে - প্রশাসন ও শিক্ষায় স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সটার্নাল প্রোগ্রাম থেকে বিজ্ঞান, আইন বিষয়ে স্নাতক এবং বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।[১৩]
কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে তিনি দু'টি আইন ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও, জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।[১৪]
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]স্বাধীনতা সংগ্রাম
[সম্পাদনা]জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী
[সম্পাদনা]জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি
[সম্পাদনা]পদত্যাগ
[সম্পাদনা]জিম্বাবুয়ে ১৯৮০ সালে স্বাধীন হবার পর থেকেই রবার্ট মুগাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ৩৭ বছর শাসনের পরে তিনি পদত্যাগ করেছেন। দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডার কাছে ২১ নভেম্বর ২০১৭, ৯৩ বছর বয়সী রবার্ট মুগাবে পদত্যাগ পত্র জমা দেন।[১৫]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]রবার্ট মুগাবে ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] তার মৃত্যুর পরদিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তাকে 'জাতীয় বীর' হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়া। জিম্বাবুয়ের জনক ও স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম প্রেসিডেন্ট মুগাবের মৃতদেহ ১১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ দেশটির জাতীয় স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ হারারের 'হিরু একরে' তাকে সমাহিত করা হয়। মৃত্যু পরবর্তী তাকে নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ তাকে 'সত্যিকার আফ্রিকান' ও 'বিপ্লবের প্রতীক' বলে অভিহিত করেন। কেউ আবার তাকে দানব কিংবা দূর্ভোগের কারণ হিসেবেও দেখেন। সংবাদমাধ্যম তাকে 'চিন্তাশীলের গেরিলা' নামেও অভিহিত করেছেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Zimbabwe's founding leader Robert Mugabe dead at 95: sources"। Zimlive। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ১৪ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ "জিম্বাবুয়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি মুগাবের জীবনাবসান"। কালের কণ্ঠ। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ "Zimbabwe ex-President Robert Mugabe dies aged 95"। BBC News। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ Chan, Stephen (২০০৩)। Robert Mugabe: A Life of Power and Violence। পৃষ্ঠা 123।
- ↑ "দৈনিক ইত্তেফাক: অবশেষে পদত্যাগ করলেন রবার্ট মুগাবে"। ২১ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "HISTORY OF ZIMBABWE"। ২৪ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১২।
- ↑ Viewpoint: Kaunda on Mugabe BBC 12 June 2007
- ↑ Biles, Peter (২৫ আগস্ট ২০০৭)। "Mugabe's hold on Africans"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ Staff reporter (২১ মে ২০০৭)। "Mugabe mourns reclusive brother"। newzimbabwe.com। ৮ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ ক খ Staff (২৯ মার্চ ২০০৭)। "Robert Mugabe: The man behind the fist"। The Economist।
- ↑ Nyarota, Geoffrey (২০০৬)। Against the Grain। পৃষ্ঠা 100।
- ↑ Andrew Norman: Robert Mugabe and the betrayal of Zimbabwe. Book published 2004 by McFarland & co, Jefferson, North Carolina USA.
- ↑ "President bio contents"। Zimbabwean government website। Government of Zimbabwe। ১০ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ Christine Kenyon Jones, The People's University: 150 years of the University of London and its External students (University of London External System, 2008) pp. 148–149 আইএসবিএন ০-৯৫৫৭৬৮৯-১-৮.
- ↑ "বিবিসি বাংলা: মুগাবে পদত্যাগ করেছেন, জিম্বাবুয়েতে উল্লাস"। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- President Mugabe's address to the 63rd session of the United Nations General Assembly, 25 September 2008
- "Mugging Mugabe" (a commentary in defence of Mugabe)
- "The truth about Mugabe" (an anti-Mugabe commentary)
- "Zimbabwe election – a defeat for imperialism"
- "Zimbabwe's silent selective starvation"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- "Robert Mugabe's War to Crush Press Freedom in Zimbabwe"
- Reporters Without Borders profile on Mugabe[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Opening Remarks – 4th African-African American Summit, Harare 1997 (video excerpt)
- Freedom House report on Zimbabwe ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুন ২০০৪ তারিখে
- IFEX– Media Coverage Favours Mugabe
- "Robert Mugabe at UMass" from the WGBH series, Ten O'clock News
- Indict Zimbabwe's demagogue before the International Criminal Court
- "Zimbabwe and the Politics of Torture"
- Human Rights Watch on Zimbabwe
- “Comrade Mugabe is our leader”, War Vets million man march for Mugabe ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে Zimbabwe Metro
- "The Destroyer: Robert Mugabe and the destruction of Zimbabwe".
পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয় | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী হার্বার্ট চিতেপো |
জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের নেতা ১৯৭৫-১৯৮৭ |
জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন - প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টে রূপান্তর |
নতুন রাজনৈতিক দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন - প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টে রূপান্তর হয়েছে
|
জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন - প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টের নেতা ১৯৮৭-বর্তমান |
নির্ধারিত হয়নি |
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
পূর্বসূরী এবেল মুজোরেউয়া জিম্বাবুয়ের রোডেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে |
জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী ১৯৮০-১৯৮৭ |
উত্তরসূরী মর্গ্যান সানগিরাই |
পূর্বসূরী ক্যানান বানানা |
জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট ১৯৮৭-বর্তমান |
নির্ধারিত হয়নি |
কূটনৈতিক পদবী | ||
পূর্বসূরী জৈল সিং |
জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের মহাসচিব ১৯৮৬-১৯৮৯ |
উত্তরসূরী জানেজ দ্রোনোভসেক |
পূর্বসূরী পল বিয়া |
আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতি ১৯৯৭-১৯৯৮ |
উত্তরসূরী ব্লেইজ কমপাউরে |
- ১৯২৪-এ জন্ম
- ২০১৯-এ মৃত্যু
- লন্ডন এক্সটার্নাল সিস্টেম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ফোর্ট শশক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- স্নায়ুযুদ্ধের নেতা
- বর্তমান জাতীয় নেতা
- ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি
- জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি
- জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি কর্মিবৃন্দ
- জিম্বাবুয়ের রাজনীতিবিদ
- জিম্বাবুয়ের বিপ্লবী
- জিম্বাবুয়ের রোমান ক্যাথলিক
- জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের মহাসচিব
- আফ্রিকান বিপ্লবী
- লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- পরিকল্পিত গণহত্যায় অপরাধী
- অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নেতা
- সম্মানসূচক ডিগ্রি ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তি