সাগরদীঘি (মুর্শিদাবাদ)
সাগরদীঘি হল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত পালযুগের একটি প্রত্নস্থল। লোকপ্রবাদ অনুসারে, পালবংশের রাজা মহীপাল (৯৮৮ - ১০৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) এই দীঘিটি খনন করান; যদিও এখানে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে মহীপালের রাজত্বকাল নিরূপিত হয় না।[১]
প্রত্নতাত্ত্বিক পরিচয়
[সম্পাদনা]প্রায় এক মাইল দীর্ঘ এই দীঘিটির নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন হল সাগরদীঘি স্টেশন। দীঘির চারিদিকে উঁচু মাটির ঢিবিগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এখান থেকে পাল-সেনযুগের ভাস্কর্যের নিদর্শন, মুসলমান যুগের মুদ্রা এবং বেশ কিছু মাটির পাত্রের টুকরো পাওয়া গেছে। এর কাছেই লস্করদীঘি নামে আরেকটি ছোট দীঘি আছে এবং 'বশিষ্ঠ বিল' নামে একটি বড় বিল দক্ষিণে চলে গেছে।
সাগরদীঘির একটি শিলালিপি অনুযায়ী, পালবংশের কোন এক রাজা ব্রহ্মহত্যার পাপস্খলনের জন্য ৭৪০ শকাব্দে এই দীঘি উৎসর্গ করেন। দীঘি খননের জন্য দশহাজার মজুর, ছয়হাজার খনক, দশলক্ষ ইট ও দু'লক্ষ কাষ্ঠখন্ড লেগেছিল। এছাড়া, শতসহস্র গরু, প্রচুর কাপড়চোপড় সহ সোনা ও জমি ব্রাহ্মণদের দান করা হয়েছিল।[১]
জনশ্রুতি ও প্রামাণ্যতা
[সম্পাদনা]লোকপ্রবাদ অনুসারে, রাজা মহীপাল উত্তরবঙ্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে পরিবার পরিজন, কুলপুরোহিত ও অনুগত প্রজাদের সঙ্গে নিয়ে রাঢ় অঞ্চলের চন্দনবাটিতে রাজধানী স্থাপনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে তার রানীকে দেখতে গিয়ে এক ব্রাহ্মণসন্তান গাছ থেকে পড়ে মারা যায়। ওই ঘটনায় রাজা দুঃখিত হন এবং ব্রহ্মহত্যার পাপস্খলনের জন্য কুলপুরোহিতের কাছে বিধান চান। কুলপুরোহিত বলেন যে, রানীকে ওই ব্রাহ্মণ যুবকের মৃত্যুর স্থান থেকে পদব্রজে রাজধানীর দিকে যেতে হবে এবং রানীর হেঁটে যাওয়া রাস্তার দৈর্ঘ্য সমান জলাশয় খনন করতে হবে। জলাশয়টি খুব গভীর করে খননের পরও জল ওঠেনি। পরে রাজার প্রতি স্বপ্নাদেশ হয় যে, সাগর নামে এক ধর্মপরায়ণ স্থানীয় কুমোর এসে যদি এক কোদাল মাটি তোলে তবে দীঘিতে জল উঠবে। রাজার আদেশে সাগর এককোদাল মাটি তোলার পরই দীঘি জলে ভরে যায় এবং জলমগ্ন হয়ে তাকে দীঘির জলে আত্মবিসর্জন দিতে হয়। সেই কারণে এই দীঘির নাম হয় 'সাগরদীঘি' বা 'সাগর কুমোরের দীঘি' ; পরে এলাকারও সাগরদীঘি নামকরণ হয়। তবে এখানে প্রাপ্ত শিলালিপিতে উল্লিখিত তারিখ পালবংশীয় রাজা মহীপালের রাজত্বকালের সময়কে নির্দেশ করে না।[১]
তথ্যসূত্রসস
[সম্পাদনা]2.পর্যটনে মুর্শিদাবাদ : দীননাথ মণ্ডল, অণিমা প্রকাশনী, কলকাতা