কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
কুমারগ্রাম | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে কুমারগ্রামের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৬°৩৯′৫৪″ উত্তর ৮৯°৪৯′৩০″ পূর্ব / ২৬.৬৬৫° উত্তর ৮৯.৮২৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | আলিপুরদুয়ার |
আয়তন | |
• মোট | ৫১৭.৬৮ বর্গকিমি (১৯৯.৮৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৯৯,৬০৯ |
• জনঘনত্ব | ৩৯০/বর্গকিমি (১,০০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
লোকসভা কেন্দ্র | আলিপুরদুয়ার |
বিধানসভা কেন্দ্র | কুমারগ্রাম |
ওয়েবসাইট | www |
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি প্রশাসনিক বিভাগ (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক)।
ভূগোল
[সম্পাদনা]কুমারগ্রামের স্থানাংক ২৬°৩৯′৫৪″ উত্তর ৮৯°৪৯′৩০″ পূর্ব / ২৬.৬৬৫° উত্তর ৮৯.৮২৫° পূর্ব।
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকটি জেলার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এই ব্লকের পূর্ব সীমান্ত বরাবর সনকা নদী প্রবাহিত। এই অঞ্চলের ভূমিরূপ পাহাড়ি, যা উত্তর-হিমালয় পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত।[১][২]
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে ভুটান রাষ্ট্রের চুখা জেলা, পূর্ব দিকে অসম রাজ্যের কোকরাঝাড় জেলার গোঁসাইগাঁও রাজস্ব সার্কেল/তেহসিল, দক্ষিণ দিকে কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং পশ্চিম দিকে আলিপুরদুয়ার ২ ও কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অবস্থিত।[২][৩][৪]
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৫১৭.৬৮ বর্গ কিলোমিটার। এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৪৪টি গ্রাম সংসদ, ৫৫টি মৌজা, ৫৩টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম ও ৩টি জনগণনা নগর রয়েছে। ব্লকটি কুমারগ্রাম থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অধীনস্থ।[৫] ব্লকের সদর কুমারগ্রাম।[২]
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: চেংমারি, কামাখ্যাগুড়ি ১, কামাখ্যাগুড়ি ২, খোয়ারডাঙা ১, খোয়ারডাঙা ২, কুমারগ্রাম, নিউল্যান্ড, কুমারগ্রাম সঙ্কোশ, রায়ডাক, তুরতুরিখণ্ড, ভলকা বরাবিসা ২, ভলকা বরাবিসা ২।[৬]
জনপরিসংখ্যান
[সম্পাদনা]জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ১৯৯,৬০৯। এর মধ্যে ১৭৪,০৫৮ জন গ্রামাঞ্চলের এবং ২৫,৫৫১ জন শহরাঞ্চলের বাসিন্দা। পুরুষের মোট সংখ্যা ১০২,৫৯২ (৫১%) ও মহিলার মোট সংখ্যা ৯৭,০১৭ (৪৯%)। ২৩,৭৭১ জনের বয়স ছয় বছরের কম। তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৭১,৪১৭ (৩৫.৭৮%) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৫৯,৮৭৭ (৩০.০০%)।[৭]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭৭,৮৯৪; যার মধ্যে ৯১,৪২১ জন ছিল পুরুষ এবং ৮৬,৪৭৩ জন ছিল মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ১৫.৬০ শতাংশ।[৮]
কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনগণনা নগরগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): লস্করপাড়া (৭,১৩৭), দক্ষিণ রামপুর (৬,৯৩২) ও উত্তর কামাখ্যাগুড়ি (১২,০২২)।[৭]
কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪,০০০+ জনসংখ্যাবিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): কার্তিক চা বাগান (৪,৭৭৯), জয়ন্তী চা বাগান (৫,০৯৮), রায়ডাক চা বাগান (৭,৬১৯), মধ্য নরথালি (৪,৫৯৪), পশ্চিম নরথালি (৪,৬৬৫), দক্ষিণ নরথালি (৭,৪৩৩), মধ্য কামাখ্যাগুড়ি (৪,৭৫৯), তেলিপাড়া (৪,১৩৯), নরথালি (৬,৩৩৭), নিউল্যান্ডস চা বাগান (৬,৩৬৯), কুমারগ্রাম চা বাগান (৬,৩২৮), সঙ্কোশ চা বাগান (৬,৬৪৩), কুমারগ্রাম (৫,৩৮৪), মধ্য হলদিবাড়ি (৪,২৫২), বরাবিসা (৪,৪৩৩) ও পূর্ব চকচকা (৪,৫২৩)।[৭]
এই ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): চেংমারি (১,৬৫৮), তুরতুরিখণ্ড (২,৮৪৪) ও ভলকা (৩,৯৪৬)।[৭]
সাক্ষরতা
[সম্পাদনা]২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১২৭,৩৩৫ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৭২.৪৮ শতাংশ); এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরের সংখ্যা ৭১,২০২ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী পুরুষ জনসংখ্যার ৭৮.৭৬ শতাংশ) এবং সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৫৬,১৩৫ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মহিলা জনসংখ্যার ৬৫.৭১ শতাংশ)। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের হার ছিল ১৩.০৫ শতাংশ।[৭]
ভাষা ও ধর্ম
[সম্পাদনা]ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি, ২০১১ সেন্সাস-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (২০১৪ সালে যে জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়) মোট জনসংখ্যার ৫৫.৮ শতাংশের মাতৃভাষা ছিল বাংলা; এরপর ছিল সাদান/সাদরি (১৪.৩ শতাংশ), নেপালি/গোর্খালি (৬.৯ শতাংশ), হিন্দি (৪.৬ শতাংশ), কুরুখ/ওঁরাও (২.৬ শতাংশ), সাঁওতালি (১.০ শতাংশ), বোড়ো (০.৮ শতাংশ), মুন্ডারি (০.৭ শতাংশ), ভোজপুরি (০.৭ শতাংশ), রাজবংশী (০.৫ শতাংশ), তেলুগু (০.৪ শতাংশ), উর্দু (০.৩ শতাংশ), রাভা (০.৩ শতাংশ), ওডিয়া (০.৩ শতাংশ), খাড়িয়া (০.১ শতাংশ) ও অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষ (১০.৮ শতাংশ)। এই জেলায় বাংলা-ভাষী মানুষের জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫৪.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮১ সালে ৬৮.৫ শতাংশ হয়েছিল। ২০০১ সালে তা আবার কমে ৫৫.৮ শতাংশ হয়। অন্যদিকে সাদান/সাদরি-ভাষী জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০১ সালে হয় ১৪.৩ শতাংশ। তবে নেপালি/গোর্খালি, হিন্দি, কুরুখ/ওঁরাও, সাঁওতালি, মুন্ডা ও রাজবংশী-ভাষী জনসংখ্যার হার হ্রাস পায়।[৯]
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬১ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (সংশোধনী) আইন, ২০১২ অনুয়ায়ী, সারা পশ্চিমবঙ্গেই সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য মহকুমাগুলিতে এবং কালিম্পং জেলায় নেপালিও সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া যে সকল জেলা/মহকুমা/সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পৌরসভায় উর্দুভাষীর সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি সেখানে উর্দুও সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। এই আইনগুলি কার্যকর হওয়ার আগে ইংরেজি ভাষা সরকারি কাজে ব্যবহৃত হত; আইনগুলি পাসের পরও তার ব্যবহার অব্যাহত থাকে।[১০][১১][১২][১৩]
২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট ব্লক বা মহকুমা বা জেলায় জনসংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি অংশের ভাষা হিন্দি, সাঁওতালি, ওডিয়া বা পাঞ্জাবি হলে সংশ্লিষ্ট ভাষাটি সেই অঞ্চলে অতিরিক্ত সরকারি ভাষার মর্যাদা পাবে। এরপর ২০১৮ সালের পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিলে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভাষার তালিকায় কামতাপুরী, রাজবংশী ও কুর্মালিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[১৪][১৫]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের হিন্দুদের মোট সংখ্যা ১৬৪,২২৬; যা মোট জনসংখ্যার ৮২.২৭ শতাংশ। খ্রিস্টানের সংখ্যা ২৩,৯০১ (১১.৯৭ শতাংশ), মুসলমানের সংখ্যা ২৫,৫৯১ (৪.৩৪ শতাংশ), বৌদ্ধের সংখ্যা ১,৫৮৪ (০.৭৯ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ২৫,১৪৩ (১২.৬০ শতাংশ)।[১৬] অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আছে আদিবাসী, মারাং বোরো, সাঁওতাল, সারনাথ, সারি ধর্ম, সর্না, আলছি, বিদিন, সন্ত, সায়েভধর্ম, সেরান, সরন, সারিন, খেরিয়া,[১৭] ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়।[১৬]
দারিদ্র্য
[সম্পাদনা]১৯৯৯-২০০০ শালে এনএসএস ৫৫তম রাউন্ডের কেন্দ্রীয় নমুনা তথ্য ব্যবহার করে গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মাথাপিছু ভোগের একটি পর্যালোচনায় জানা যায়, অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় ৩৫.৭৩ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৬১.৫৩ শতাংশ। এটি দেশের অল্প কয়েকটি জেলার অন্যতম যেখানে শহরাঞ্চলীয় দারিদ্র্যের হার গ্রামীণ দারিদ্র্যের হারের থেকে বেশি।[১৮]
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৬-৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক হারের তুলনায় কিছুটা বেশি। রাজ্যের মোট ২০ শতাংশ মানুষ এই সীমার নিচে বাস করেন।[১৯]
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]জীবিকা
[সম্পাদনা]২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সকল শ্রমিকদের মধ্যে ১২,১৯০ জন কৃষক (১৫.৪১ শতাংশ), ২০,৭৪৪ জন খেতমজুর (২৬.২৩ শতাংশ), ২,৯০৪ জন কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত (৩.৬৭ শতাংশ) এবং ৪৩,২৬৪ জন অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক (৫৪.৭০ শতাংশ)।[২০] ব্লকে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯,০৯৯ (মোট জনসংখ্যার ৩৯.৬৩ শতাংশ) এবং অ-শ্রমিকের সংখ্যা ১২০,৫১০ (মোট জনসংখ্যার ৬০.৩৭ শতাংশ)।[২১]
টীকা: জনগণনার নথিতে সেই ব্যক্তিকেই কৃষক বিবেচনা করা হয়েছে, যিনি স্বীয়/সরকারি/প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন জমিতে কৃষিকাজ/তত্ত্বাবধানের কাজে নিযুক্ত। যে ব্যক্তি অন্যের জমিতে অর্থ বা সম্পদ বা অংশীদারিত্বের বিনিময়ে শ্রমদান করেন, তাঁকে খেতমজুর ধরা হয়। কুটিরশিল্প সেই শিল্পকেই বলা হয়, যাতে পরিবারে বা গ্রামের মধ্যে এক বা একাধিক সদস্য যুক্ত এবং যে শিল্প ১৯৪৮ সালের কারখানা আইন মোতাবেক কারখানা হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। অন্যান্য শ্রমিকেরা হলেন কৃষক, খেতমজুর বা কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ভিন্ন অন্য উপায়ে যাঁরা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। এঁদের মধ্যে আছেন কারখানা, খনি, বন, পরিবহণ ও অফিসের কর্মচারী, যাঁরা ব্যবসা ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, শিক্ষক, বিনোদনশিল্পী প্রমুখ।[২২]
পরিকাঠামো
[সম্পাদনা]২০১১ সালে প্রকাশিত ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি-তে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৫৩টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৫১টি গ্রামে (৯৬.২৩ শতাংশ) পানীয় জলের সরবরাহ রয়েছে। ২১টি গ্রামে (৩৯.৬২ শতাংশ) ডাকঘর রয়েছে। ৪৭টি গ্রামে (৮৮.৬৮ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন সহ) রয়েছে। ৩৬টি গ্রামে (৬৭.৯২ শতাংশ) পাকা রাস্তা এবং ২১টি গ্রামে (৫৮.৪৯ শতাংশ) পরিবহন সংযোগ (বাস, রেল ও নাব্য জলপথ) রয়েছে। ৫টি গ্রামে (৯.৪৩ শতাংশ) কৃষিঋণ সংস্থা ও ৭টি গ্রামে (১৩.২১ শতাংশ) ব্যাংক পরিষেবা সুলভ।[২৩]
কৃষি
[সম্পাদনা]অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (অধুনা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা) অর্থনীতি মূলত কৃষি ও বাগিচা-নির্ভর। এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা চা ও কাঠের জন্য সুপরিচিত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল হল ধান, পাট, তামাক, সরষে, আখ ও গম। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩,৪৪০ মিলিমিটার, যা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় দ্বিগুণ। এলাকাটি বন্যাপ্রবণ এবং নদীগুলি প্রায়ই গতি পরিবর্তন করে শস্য ও শস্যক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।[২৪]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৬৪টি সারের ডিপো, ৩৯টি বীজের দোকান ও ৪৯টি রেশন দোকান রয়েছে।[২৫]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১০,৫৩৬ হেক্টর জমি থেকে মোট ২১,১৭৫ টন আমন ধান (প্রধান শীতকালীন ফসল); ৮৬৮ হেক্টর জমি থেকে ৩৩৯ টন বোরো ধান; ২,৫০৭ হেক্টর জমি থেকে ৪,৮০৬ টন আউস ধান (গ্রীষ্মকালীন ফসল); ১,২৭২ হেক্টর জমি থেকে ৩,৪৬৬ টন গম; ৮২৩ হেক্টর জমি থেকে ১১,০০৪ টন পাট; ২২২ হেক্টর জমি থেকে ১,৭৩০ টন ভুট্টা; এবং ২,৪৮৩ হেক্টর জমি থেকে ৬৪,৫০৩ টন আলু উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এই ব্লকে মাসকলাই ও তৈলবীজও উৎপাদিত হয়।[২৫]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সেচিত জমির পরিমাণ ৩,৫৩৫ হেক্টর, যার মধ্যে ১,৬৫৫ হেক্টর জমির খালের জলে সেচিত, ১২৫ হেক্টর জমি জলাধারের জলে সেচিত, ৬২৫ হেক্টর জমি নদী থেকে তোলা জলে সেচিত, ৪০ হেক্টর জমি গভীর নলকূপের জলে সেচিত, ৬৯৫ হেক্টর জমি অগভীর নলকূপের জলে সেচিত এবং ৩৯৫ হেক্টর জমি খোলা কূপের জলে সেচিত হয়।[২৫]
ডুয়ার্স-তরাই চা বাগান
[সম্পাদনা]ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে ২২৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়, যা ভারতের সমগ্র চা উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। ডুয়ার্স-তরাই চায়ের বৈশিষ্ট্য হল, এটি একটি উজ্জ্বল, মসৃণ ও সুঠাম পানীয়, যা আসাম চায়ের তুলনায় অতি অল্পই হালকা। ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিল এবং তার উন্নতিসাধন ঘটিয়েছিল ব্রিটিশরা, কিন্তু এতে ভারতীয় শিল্পপতিদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।[২৬][২৭]
ব্যাংক পরিষেবা
[সম্পাদনা]২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এবং একটি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় রয়েছে।[২৫]
অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল
[সম্পাদনা]পুরুলিয়া জেলা অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এই জাতীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, সারা দেশের ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত; যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলা রয়েছে।[২৮][২৯]
পরিবহণ ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৮টি ফেরি পরিষেবা ও ৪টি প্রান্তিক বাস রুট অবস্থিত।[২৫] ৩১সি নং জাতীয় সড়ক এই ব্লকের উপর দিয়ে গিয়েছে। ব্লকের একমাত্র রেল স্টেশনটি হল কামাখ্যাগুড়ি রেল স্টেশন।
শিক্ষাব্যবস্থা
[সম্পাদনা]২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২,৮৯৮ জন শিক্ষার্থী, ১৪টি মধ্য বিদ্যালয়ে ১,৯০৬ জন শিক্ষার্থী, ৩টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩,৪০২ জন শিক্ষার্থী এবং ১২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে১৭,৪৫৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই ব্লকের ৩টি প্রকৌশল/পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৩০ জন শিক্ষার্থী এবং বিশেষ ও অচিরাচরিত ধারার ৬০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬,৫৫৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ব্লকের একটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ৪,১৪০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।[২৫]
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৫৩টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে সকল গ্রামেই বিদ্যালয় রয়েছে, ৪৬টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ৪০টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় আছে এবং ১৫টি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[৩০]
১৯৯৬ সালে কামাখ্যাগুড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় শহিদ ক্ষুদিরাম মহাবিদ্যালয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এই কলেজে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে পঠনপাঠন চলে।[৩১][৩২]
স্বাস্থ্য পরিষেবা
[সম্পাদনা]২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, কুমারগ্রাম সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল, ২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২টি এনজিও-পরিচালিত/বেসরকারি নার্সিং হোম আছে। এগুলিতে মোট ৭২টি শয্যা ও ৮ জন চিকিৎসক সুলভ (বেসরকারি সহ)। এছাড়া এই ব্লকে ৩৫টি পরিবার কল্যাণ উপকেন্দ্রও আছে। ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলিতে ৫,৪১৪ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ও ৮১,৮৪৬ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুযোগ পান।[২৫]
কামাখ্যাগুড়িতে অবস্থিত ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল আলিপুরদুয়ার ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে কুমারগ্রাম (৬টি শয্যাবিশিষ্ট) ও বরাবিসায় (ডাকঘর কুমারগ্রাম) (৬টি শয্যাবিশিষ্ট)।[৩৩][৩৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "District Census Handbook, Jalpaiguri, Series 20, Part XIIA" (পিডিএফ)। Census of India 2011, page 13 Physiography। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ "District Census Handbook, Jalpaiguri, Series 20, Part XIIA" (পিডিএফ)। Census of India 2011, Fifth page, map of Jalpaiguri district। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০।
- ↑ "Koochbihar CD blocks/ tehsils"। Maps of India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০।
- ↑ "Kokrajhar Revenue Circle/ Tehsil map"। Maps of India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০।
- ↑ "District Statistical Handbook 2014 Jalpaiguri"। Tables 2.1, 2.2। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Directory of District, Subdivision, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal"। Bankura - Revised in March 2008। Panchayats and Rural Development Department, Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "CD block Wise Primary Census Abstract Data(PCA)"। 2011 census: West Bengal – District-wise CD blocks। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২০।
- ↑ "Provisional Population Totals, West Bengal , Table 4"। Census of India 2001, Jalpaiguri district (02)। Census Commissioner of India। ২০১১-০৭-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-২০।
- ↑ "District Census Handbook Jalpaiguri, Series 20, Part XII A , 2011 census" (পিডিএফ)। page 46: Mother tongue। Directorate of Census Operations West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "West Bengal Official Language Act 1961"। Latest Laws.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০২০।
- ↑ "The West Bengal Official Language Act 1961"। Advocate Tanmoy Law Library। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০২০।
- ↑ "The West Bengal Official Language Act, 1961" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০২০।
- ↑ "Official status for Urdu in some West Bengal Areas"। The Hindu, 2 April 2012। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০২০।
- ↑ "Multilingual Bengal"। The Telegraph, 11 December 2012। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "Kamtapuri, Rajbanshi make it to the list of official languages in Bengal"। Outlook, 28 February 2015। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ "C1 Population by Religious Community"। West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "ST-14 A Details Of Religions Shown Under 'Other Religions And Persuasions' In Main Table"। West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০।
- ↑ "West Bengal Human Development Report 2004" (পিডিএফ)। Page 80: Table 4.5 Per capita consumption in rural and urban areas by district। Development and Planning Department, Government of West Bengal। ১ মে ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "West Bengal: Poverty, Growth and Inequality" (পিডিএফ)। World Bank Group। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook Jalpaiguri, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 33: Distribution of Workers by Sex in Four Categories of Economic Activity in Sub-district 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook Jalpaiguri, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 30: Number and percentage of Main workers, Marginal workers and Non workers by Sex, in Sub-districts, 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook Puruliya, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Census Concepts and Definitions, Page 23। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook, Jalpaiguri, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 81, Table 36: Distribution of villages according to availability of different amenities, 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook, Jalpaiguri, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 15, 18, 19। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "District Statistical Handbook 2014 Jalpaiguri"। Table No. 16.1, 18.1, 18.2, 20.1, 21.2, 4.4, 3.1, 3.2, 3.3 – arranged as per use। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "Tea Growing Regions"। Dooars and Terai। Indian Tea Association। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Dooars-Terai"। Tea Board India। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Backward Regions Grant Funds: Programme Guidelines" (পিডিএফ)। Ministry of Panchayati Raj, Government of India। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "Backward Regions Grant Fund"। Press Release, 14 June 2012। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "District Census Handbook, Jalpaiguri, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 412, Appendix I A: Villages by number of Primary Schools and Appendix I B: Villages by Primary, Middle and Secondary Schools। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
- ↑ "Saheed Kshudiram College"। SKC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০।
- ↑ "Saheed Kshudiram College"। College Admission। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০।
- ↑ "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Rural Hospitals। Government of West Bengal। ৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Primary Health Centres। Government of West Bengal। ২১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০২০।