কোনিয়া
কোনিয়া | |
---|---|
মহানগর পৌরসভা | |
Location of Konya, Turkey | |
স্থানাঙ্ক: ৩৭°৫২′ উত্তর ৩২°২৯′ পূর্ব / ৩৭.৮৬৭° উত্তর ৩২.৪৮৩° পূর্ব | |
দেশ | তুরস্ক |
প্রশাসনিক অঞ্চল | কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়া |
প্রদেশ | কোনিয়া |
সরকার | |
• নগরপ্রধান | উর ইব্রাহিম আলতাই (ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন দল (একেপি)) |
আয়তন | |
• মহানগর পৌরসভা | ৩৮,৮৭৩ বর্গকিমি (১৫,০০৯ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৬,৬০০ বর্গকিমি (২,৫০০ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৬,৬০০ বর্গকিমি (২,৫০০ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১,০১৬ মিটার (৩,৩৩৩ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০২১ প্রাক্কলন)[১] | |
• মহানগর পৌরসভা | ২২,৭৭,০১৭ |
• জনঘনত্ব | ৫৯/বর্গকিমি (১৫০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ১৩,৯০,০৫১ |
• পৌর এলাকার জনঘনত্ব | ২১০/বর্গকিমি (৫৫০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১৩,৯০,০৫১ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ২১০/বর্গকিমি (৫৫০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | তুস (TRT) (ইউটিসি+৩) |
ডাক সংকেত | ৪২XXX |
এলাকা কোড | (+৯০) ৩৩২ |
অনুমতি-ফলক নম্বর (লাইসেন্স প্লেট) | ৪২ |
ওয়েবসাইট | www |
কোনিয়া (তুর্কি: Konya; আ-ধ্ব-ব: [ˈkoɲ.ja]) পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্র তুরস্কের মধ্যভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। ভৌগোলিকভাবে শহরটি তুরস্কের কেন্দ্রীয় আনাতোলীয় মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ও উর্বর সংকীর্ণ কোনিয়া সমভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত। আরও পশ্চিমে বোজকির পর্বতমালা ও আরও দক্ষিণে বৃষ পর্বতমালার কেন্দ্রীয় পর্বতসারির অভ্যন্তরীণ প্রান্তটি অঞ্চলটিকে ঘিরে রেখেছে। প্রশাসনিকভাবে কোনিয়া শহরটি তুরস্কের বৃহত্তম প্রদেশ কোনিয়া প্রদেশের রাজধানী। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী কোনিয়া মহানগর প্রদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লক্ষ ৭৭ হাজার। ফলে এটি কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ার দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল (আঙ্কারার পরে) এবং সমগ্র তুরস্কের ৭ম সর্বাধিক জনবহুল শহর। কোনিয়া মহানগর পৌরসভাটি ৩১টি পৌরবিভাগ নিয়ে গঠিত। ১৮৭৫ সালে এটি একটি পৌরসভার মর্যাদা পায়। এটির আয়তন ৩৮,৮৭৩ বর্গকিলোমিটার, ফলে এটি আয়তনের বিচারে তুরস্কের বৃহত্তম মহানগরী।
এখানে তুলা, গালিচা ও চামড়ার দ্রব্য উৎপাদন করা হয় ও খনিজ পদার্থের ব্যবসা করা হয়। শহরের আশেপাশের এলাকা ঘোড়া ও উট পালন ও প্রজননের জন্য বিখ্যাত। কোনিয়া প্রদেশটি কৃষিকাজ ও শস্য উৎপাদনের জন্য তুরস্কে গুরুত্বপূর্ণ।
কোনিয়া শহরের সেচ দেওয়া ফুলবাগান ও ফলবাগানগুলি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে কোনিয়াতে বেশ কয়েকটি নান্দনিক মসজিদ (যেমন সেলিমিয়ে মসজিদ ও আজিজিয়ে মসজিদ) এবং মৌলবিয়া বা ঘূর্ণায়মান দরবেশদের একটি মঠ আছে। মঠটিতে মৌলবিয়া গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির সমাধি বা মাজার রয়েছে, যেখানে অনেক মুসলমান তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে আগমন করেন। এছাড়া খ্রিস্টান স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে রয়েছে শহরের অভ্যন্তরে আম্ফিলোকিউসের পুরাতন গির্জা এবং এর কাছাকাছি অবস্থিত কয়েকটি খ্রিস্টান সমাধিমন্দির। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেলজুক বিশ্ববিদ্যালয়টি (১৯৭৫) উল্লেখ্য। আরও আছে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউকসেক ইসলাম ইনস্টিটিউট, যেখানে ইসলাম ধর্মের উপর গবেষণা সম্পাদন করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে কোনিয়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পৌর কেন্দ্রগুলির একটি। শহরের কেন্দ্রে আলেদ্দিন পাহাড়ে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য সম্পাদন করে খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর পূর্বে এখানে লোকবসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি পারসিক সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ফ্রিজিয়া রাজ্যের একটি সীমান্তবর্তী শহর ছিল; তখন এটি ইকোনিউম (Iconium) নামে পরিচিত ছিল। ফ্রিজিয়ার কিংবদন্তি অনুযায়ী মানবজাতিকে ধ্বংসকারী মহাপ্লাবনের পরে প্রথম যে শহরটি জেগে উঠেছিল, তা ছিল এই কোনিয়া। পরবর্তীতে রোমানরা এটিকে লিকাওনিয়া অঞ্চলের সাথে অঙ্গীভূত করে নেয় এবং এটিকে সেই অঞ্চলের রাজধানী বানায়। কোনিয়া খ্রিস্টধর্মের শুরুর দিকের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে ৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে সন্তু পৌল এবং সন্তু বার্নাবাস খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে ছিলেন। তবে সে সময়ে এখানে তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যক ইহুদি অধিবাসীর বাস ছিল, তাই খ্রিস্টধর্ম তেমন প্রসার লাভ করেনি। তবে পরবর্তীতে শহরটি দক্ষিণ গালাতিয়াতে খ্রিস্টধর্মের বিস্তারের একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। বাইজেন্টীয় রোমক সাম্রাজ্যের আমলে শহরটিতে একজন মহাবিশপের আসন ছিল। মধ্যযুগের এটি সেলজুক তুর্কিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রুমের সুলতানাতের রাজধানী ছিল, যেখান থেকে তারা সমগ্র আনাতোলিয়া শাসন করত। সেলজুকেরা ১০৮১ থেকে ১৩৩৪ পর্যন্ত এখানে শাসন করে। সেসময়ই এখানে জালালুদ্দিন রুমির সমাধি ও মঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪৭২ সালে উসমানীয় তুর্কিরা শহরটি দখলে নিয়ে নেয়। ১৮৩২ সালে উসমানীয় তুর্কিরা এখানে মিশরীয়দের পরাজিত করে। ২০শ শতকের প্রথম দুই দশক পর্যন্ত কোনিয়া আঙ্কারাকে ছাপিয়ে গিয়ে মধ্য তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।
কোনিয়া শহরের সাথে ইস্তাম্বুল ও তুরস্কের রাজধানীর আঙ্কারা দ্রুতগতির রেল সংযোগ আছে। কোনিয়া বিমানবন্দর থেকে ইস্তাম্বুলে উড়ানের (ফ্লাইট) বন্দোবস্ত আছে।